মিরসরাই সংবাদদাতা: মিরসরাইয়ে গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি জমিতে শীতকালীন সবজির চাষ করা হবে। গেল বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমন-রোপার পর কৃষকরা শীতকালীন সবজি ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষকরা সবজির চাষের জন্য জমি তৈরির পর বীজ বপন শুরু করেছেন। শরৎকালীন সবজি উৎপাদন গত বছরের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগে নেমে এলেও শীতকালীন সবজি উৎপাদন গতবারের তুলনায় এ বছর বাড়বে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ সালে শরৎকালীন (খরিদ-২) আবাদ করা হয় ২২০ হেক্টর জমিতে। সবজি উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ৮৭ মেট্রিক টন। কিন্তু চলতি বছর শরৎকালীন সবজি (খরিদ-২) আবাদ হয় মাত্র ১২৫ হেক্টর জমিতে। আবাদের পর অতিবৃষ্টি ও বন্যায় প্রায় ৯০ হেক্টর আবাদি ক্ষেত পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। এতে ৫৪০ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষকরা। বন্যা-পরবর্তী নতুন করে আরও ২৭ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ করেন কৃষকরা। সবজি উৎপাদনের পরিমাণ ছিল মাত্র ৭শ’ মেট্রিক টন; যা গত বছরের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ। ২০২৩-২৪ সালে শীতকালীন (রবি) সবজি আবাদ করা হয়েছিল ১ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে। সবজি উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৪৫ হাজার ৭২২ মেট্রিক টন। চলতি বছর মাত্র রবি মৌসুম শুরু হয়েছে। সবজি আবাদের জন্য এক হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বেশ কিছু জমিতে আমন-রোপা না হওয়ার কারণে শীতকালীন সবজির আবাদ বাড়তে পারে।
সরেজমিন খইয়াছড়া ইউনিয়নের কলঘর, নিশ্চিন্তা, মসজিদিয়া, মিরসরাই সদরের ইউনিয়নের মহায়াহা এলাকা, মিরসরাই পৌর সদর পূর্ব পাশে দেখা গেছে, উঁচু জমিগুলোয় কৃষকরা শীতকালীন সবজি, শিম, বরবটি, লাউ, ফুল কপি, বাঁধা কপি, মুলা, লালশাক, পালং শাক, মুলার শাকসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি আবাদ করেছেন। কৃষক নুরনবী জানান, বৃষ্টির কারণে জমিগুলো বেশি ভেজা থাকায় সবজি লাগাতে কিছুটা দেরি হয়েছে। গেল বন্যার পরপর বিশেষ করে বরবটি লাগাতে পারলে এখন বাজারের চাহিদা মেটানো যেত। কারণ বরবটি রোপণ করার ২০-২২ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। খইয়াছড়া ইউনিয়নের ছড়ারকুল এলাকার কৃষক কালামিয়া জানান, দুই দফায় শরৎকালীন সবজি আবাদ করেও বন্যার কারণে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এখন শীতকালীন সবজি শিম, লাউ, পুঁইশাক আবাদ করেছে। আরেক কৃষক হারুন জানান, তারা প্রায় এক একর বরবটি ক্ষেত বন্যায় নষ্ট হয়েছে। এখন শীতকালীন সবজি আবাদ করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় জানান, গেল বন্যার কারণে উপজেলায় আমন চারা সংকটের কারণে প্রায় এক হাজার ৮০০ হেক্টর জমি অনাবাদি রয়ে গেছে। ওই জমিগুলো শীতকালীন সবজিসহ সরিষার আবাদ করবেন কৃষকরা। এর জন্য সরকারিভাবে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের সবজির বীজ প্রণোদনা দেওয়া হবে। তাই তিনি আশা করছেন গতবারের তুলনায় এ বছর শীতকালীন সবজির উৎপাদন অনেক বেশি হবে।