ঢাকা ০২:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের নিয়ে পথে পথে উৎসব

  • আপডেট সময় : ০৮:৫২:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪
  • ৮৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : টানা দুইবার সাফ শিরোপা জয়ী বাংলাদেশ ফুটবল দলের মেয়েরা দেশে ফেরার পর তাদের নিয়ে চলছে উৎসব। বিমানবন্দরে তাদের বরণ করে নেওয়ার পর ছাদখোলা বাসে করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে, সেখানে তাদের দেওয়া হবে সংবর্ধনা। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা নেপাল থেকে ফিরে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ২টায়। সেখানে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। বিকাল ৪টার দিকে তারা ছাদ খোলা বাসে করে বিমানবন্দরের টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার পর ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ; চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন’ স্লোগান দিয়ে তাদের স্বাগত জানায় উচ্ছ্বসিত জনতা। বিজয়ী মেয়েদের স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরের সামনের সড়কে জড়ো হয়েছিলেন কয়েকশ মানুষ। হাতে নেড়ে তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকেন। কেউ কেউ ছবিও তোলেন। সমর্থকরা লাল আর সবুজ রঙ ছুড়ে হল্লা করেন। নিচ থেকে ছুড়ে দেন ফুল। ছাদখোলা বাস থেকে ঋতুপর্ণা, সাবিনা, মনিকারাও পতাকা নেড়ে সাড়া দেন। বিমানবন্দরে তাদের বরণ করে নিতে এসছিল ‘আল্ট্রাস’ নামে একটি সংগঠন। ফুটবল অন্তঃপ্রাণ কয়েকজন তরুণদের সংগঠন এটি। সেখানে থাকা আবু তালহা সামি নামে একজন বলেন, “সাফ থেকে নারীদল চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসছে। এটা দেশের গর্ব, দশের গর্ব। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত না। এখান (বিমানবন্দর) থেকে বাফুফে ভবন পর্যন্ত আমরা নারী দলকে নিয়ে উল্লাস করতে-করতে যাব।” নয়ন সর্দার নামে আরেকজন বলেন, “নারীরা সাফ জিতে এল। এটা আনন্দের সংবাদ। আমরা তাদের বরণ করে নিতে এসেছি। পরপর দুইবারের চ্যাম্পিয়ন তারা। মেহেদী হাসান নামে আরেকজন বলেন, “নারী দল পরপর দুইবার চ্যাম্পিয়ন হল। আমরা খুশি, আনন্দিত। আগামী দিনে আমরা চাইব পুরুষ দলও এমন অর্জন এনে দেবে। আমরা তাদের নিয়েও উল্লাস করতে চাই। দেশের ফুটবলের সঙ্গে আমরা আছি।”
বিমানবন্দরের সামনের সড়কে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন দলটির কর্মী-সমর্থকরা। সেখানে আসা তামজিদ হোসেন নামের একজন বলেন, “আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছি। নারী দলের এই বিজয়ে আমরা তথা পুরো দেশ গর্বিত।” নেপালের কাঠমাণ্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে বুধবার স্বাগতিক নেপালের ভক্ত-সমর্থকদের কাঁদিয়ে ২-১ গোলে তাদের হারায় বাংলাদেশ। দুই বছর আগে গোলাম রব্বানী ছোটনের হাত ধরে এ মাঠেই নেপালকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম এই ট্রফির স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। এ বছর পেটার জেমস বাটলারের অধীনে ফের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। তাদের ছাদখোলা বাসে তাই অবশ্যম্ভাবীভাবেই ছিলেন কোচ।
দুই বছর আগে ২০২২ সালেও সাফের শিরোপা জেতার পর ছাদখোলা বাসে নারী ফুটবলারদের অভ্যর্থনা জানিয়েছিল বাংলাদেশ। যে ছাদখোলা বাসে চড়ে মেয়েরা বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবনে যান, রাজধানীতে বিভিন্ন স্থানে সেটা আবার সাজানো হয়েছিল সরকারের বিভিন্ন নেতাদের ছবি দিয়ে। সেবার ছাদখোলা বাসে একপাশে বড় করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অন্যদিকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের ছবি সাঁটানো হয়। ছিল বাফুফের হর্তা-কর্তাদেরও ছবিও। এ নিয়ে সেসময় সারাদেশে ব্যপক সমালোচনা হয়। তবে গেল ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বাংলাদেশে বদলে গেছে অনেক কিছুই। তার ছোঁয়া লেগেছে বাফুফেতেও। প্রায় দেড় যুগ পর কাজী সালাউদ্দিনের পরিবর্তে নতুন সভাপতি হয়েছেন বিএনপি নেতা তাবিথ আওয়াল। পালাবদলের ছোঁয়ায় এবার ছাদখোলা বাসে ছিল শুধুই চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের ছবি। বাসের পোস্টারে চ্যাম্পিয়ন ট্রফির সঙ্গে অফিসিয়াল ফটোসেশনের সবাইকে রাখা হয়েছে। শুরুর একাদশে থাকা দলের ছবিও ছিল সেখানে। একপাশে ছিল এবছর টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল জেতা ঋতুপর্ণা চাকমার ট্রফি গ্রহণের ছবিও।
ঋতুপর্ণা চাকমার ছবির উপরে ছিল স্পন্সরদের লোগো। নারী ফুটবলে দীর্ঘদিনের স্পন্সর ঢাকা ব্যাংক। সেই ২০১৬ সাল থেকে নারী ফুটবলের সঙ্গে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে। উৎসবের এই উপলক্ষ্যে বাফুফে স্মরণ রেখেছে তাদেরও। এছাড়া দলের বেভারেজ পার্টনার পুষ্টি, ট্যাকনিক্যাল পার্টনার আমরাও বছরব্যাপী বাফুফেকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তাই তাদের লোগোও ছিল বিশেষ এই স্থানে। বিকেল সাড়ে ৪টায় বিমাবন্দর থেকে চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের বাসটি বের হয়ে যায়। এরপর তাদের নিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠে ছাদখোলা বাসটি। এফডিসি মোড়ে নেমে সাত রাস্তার মোড় হয়ে মগবাজার ফ্লাইওভার দিয়ে কাকরাইল হয়ে যায় পল্টনে। এরপর নটরডেম কলেজর সামনে দিয়ে শাপলা চত্বর পার হয়ে সাবিনা-ঋতুপর্ণারা সন্ধ্যায় পৌঁছান বাফুফে ভবনে।
তিন ঘণ্টা শহর প্রদক্ষিণের পর বাফুফে ভবনে সাবিনারা
সেই বিকালে এয়ারপোর্ট থেকে রওনা দিয়েছিলেন সাবিনা-মনিকারা। রাস্তার দুই পাশে অনেকেই তাদের অভিবাদন জানিয়েছেন। নির্দিষ্ট রুট দিয়ে বাফুফে ভবনে আসতে তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এই সময়ের পুরোটাই মেয়েরা নানাভাবে মেতে ছিল। এয়ারপোর্টে ছাদখোলা বাস ছাড়ার আগে সমর্থকরা ফ্লেয়ারের মাধ্যমে রঙিন ধোঁয়া উড়িয়েছে। বাফুফে ভবনে এসেও একই চিত্র। সমর্থকরা অন্ধকার ভেদ করে ধোঁয়া উড়িয়ে সাবিনাদের বরণ করে নেন। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বিকাল সোয়া পাঁচটায় আসেন বাফুফে ভবনে। সাবিনারা আসার পর বাফুফের তৃতীয় তলায় কনফারেন্স রুমে যান উপদেষ্টা। সেখানে খেলোয়াড়দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি। তার সঙ্গে আছেন মন্ত্রণালয় ও এনএসসির কর্মকর্তারা। টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ২টায় ঢাকায় এসে পৌঁছায় বাংলাদেশ দল। ঐতিহাসিক এই অর্জনের পর তাদের বরণ করে নিতে প্রস্তুত ছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। তাদের জন্য বিমানবন্দরে ছাদখোলা বাস প্রস্তুত ছিল। তাতে চড়ে শহর প্রদক্ষিণ করে পুরো দল। বিআরটিসির বাসটি খেলোয়াড়দের ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছিল। দুই পাশে চ্যাম্পিয়ন দলের ছবিও স্থাপিত হয়। বাসের মাঝখানে ট্রফি নিয়ে ছিল গ্রুপ ছবি। দুই পাশে দুই টুর্নামেন্ট সেরার ছবি। বাম পাশে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা ও ডান পাশে ছিল সেরা গোলকিপার রুপনা চাকমার ট্রফি নেয়ার মুহূর্ত। বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে এক্সপ্রেসওয়ে, এফডিসি, সাত রাস্তার মোড়, মগবাজার ফ্লাইওভার, কাকরাইল, পল্টন, নটরডেম কলেজ ও শাপলা চত্বর ঘুরে বাফুফে ভবনে থামে বাস। ঢাকায় বিমানবন্দরে নেমে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের কোচ, অধিনায়কসহ অন্যরা। কথা বলতে এসে তাদের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। জাতীয় দলের সাবিনা খাতুন টানা দ্বিতীয়বারের মতো অধিনায়ক হয়ে শিরোপা জিতেছেন। নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে এসে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রথমেই ধন্যবাদ দিতে চাই দেশের মানুষকে, যারা এই জয়ের জন্য অধীর আগ্রহে ছিলেন। সকলকে খুশি করতে পেরে দলের ও বাফুফের সবাই অনেক আনন্দিত। সর্বপ্রথম ধন্যবাদ দিতে চাই সাবেক প্রেসিডেন্ট কাজী সালাউদ্দিন স্যার ও উইমেন্স কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট তাবিথ আওয়াল স্যার ও নতুন কমিটিকে। সকলের দোয়া ও সমর্থনে আজ এই সফলতা এসেছে।’
চ্যাম্পিয়ন ফুটবলারদের ২০ লাখ টাকা পুরস্কার দেবে বিসিবি
নেপালকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। এমন সাফল্যের পর তাদের জন্য ২০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এর আগে চট্টগ্রাম টেস্ট চলাকালে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, ‘বিসিবি থেকে পুরস্কৃত করা হবে। তাদেরকে কিছুটা পুরস্কৃত করতে পারব ভেবে আমি খুশি। পরপর দুইবার তারা আমাদের গর্বিত করেছে। ’ তখন অবশ্য পরিমাণটা ঘোষণা করেননি ফারুক। দুই বছর আগেও সাফ জিতেছিল মেয়েরা। তখন বিসিবি সভাপতি ছিলেন নাজমুল হাসান পাপন। তার বোর্ড সেবার ৫০ লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার দিয়েছিল। .
এদিকে দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে আসরের ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে মেয়েদের সাফের শিরোপা ধরে রাখে বাংলাদেশ। হিমালয়ের দেশে আবারও সফলতার খুঁটি গেড়ে তারা নিজেদের নিয়ে গেলেন অনন্য এক উচ্চতায়।
নিজ জেলায় খোলা ট্রাকে সংবর্ধনা পাবেন সাফজয়ী ঋতুপর্ণা-রূপনা
পাহাড়ের তিন খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা, রূপনা ও মনিকাকে নিজজেলায় খোলা ট্রাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। ছুটি শেষে নিজ জেলায় ফিরলেই তাদের এই সংর্বধনা দেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তারা বাড়ি ফিরলেই সংবর্ধনা দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, গতবার যেভাবে দেওয়া হয়েছে, এবারও ক্রীড়া সংস্থা থেকে তাদের একইভাবে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। ছাদ খোলা বা খোলা ট্রাকে ঘাগড়া থেকে রাঙামাটি শহরে ঘুরে স্টেডিয়ামে সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা হবে। এর জন্য দুই কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা কখন ফিরবে সেই হিসেবে নির্ধারণ করা হবে। তাদের বাড়িতে যাবেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি জানান, যেহেতু মাঠে সংবর্ধনা দেওয়া হবে- তাই বাড়ি যাওয়ার বিষয়টি এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। গেলে জানাবো। উল্লেখ্য, বুধবার নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে মনিকা ও দেশের হয়ে জয়সূচক গোলটি করেন ঋতুপর্ণা। ২-১ গোলে বিজয়ী হয় বাংলাদেশ। আর ফাইনাল খেলায় সেরা খেলোয়াড় হন ঋতুপর্ণা ও টুর্নামেন্টে মাত্র ৪টা গোল হজম করায় সেরা গোলরক্ষক হন রূপনা চাকমা।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের নিয়ে পথে পথে উৎসব

আপডেট সময় : ০৮:৫২:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : টানা দুইবার সাফ শিরোপা জয়ী বাংলাদেশ ফুটবল দলের মেয়েরা দেশে ফেরার পর তাদের নিয়ে চলছে উৎসব। বিমানবন্দরে তাদের বরণ করে নেওয়ার পর ছাদখোলা বাসে করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে, সেখানে তাদের দেওয়া হবে সংবর্ধনা। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা নেপাল থেকে ফিরে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ২টায়। সেখানে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। বিকাল ৪টার দিকে তারা ছাদ খোলা বাসে করে বিমানবন্দরের টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার পর ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ; চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন’ স্লোগান দিয়ে তাদের স্বাগত জানায় উচ্ছ্বসিত জনতা। বিজয়ী মেয়েদের স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরের সামনের সড়কে জড়ো হয়েছিলেন কয়েকশ মানুষ। হাতে নেড়ে তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকেন। কেউ কেউ ছবিও তোলেন। সমর্থকরা লাল আর সবুজ রঙ ছুড়ে হল্লা করেন। নিচ থেকে ছুড়ে দেন ফুল। ছাদখোলা বাস থেকে ঋতুপর্ণা, সাবিনা, মনিকারাও পতাকা নেড়ে সাড়া দেন। বিমানবন্দরে তাদের বরণ করে নিতে এসছিল ‘আল্ট্রাস’ নামে একটি সংগঠন। ফুটবল অন্তঃপ্রাণ কয়েকজন তরুণদের সংগঠন এটি। সেখানে থাকা আবু তালহা সামি নামে একজন বলেন, “সাফ থেকে নারীদল চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসছে। এটা দেশের গর্ব, দশের গর্ব। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত না। এখান (বিমানবন্দর) থেকে বাফুফে ভবন পর্যন্ত আমরা নারী দলকে নিয়ে উল্লাস করতে-করতে যাব।” নয়ন সর্দার নামে আরেকজন বলেন, “নারীরা সাফ জিতে এল। এটা আনন্দের সংবাদ। আমরা তাদের বরণ করে নিতে এসেছি। পরপর দুইবারের চ্যাম্পিয়ন তারা। মেহেদী হাসান নামে আরেকজন বলেন, “নারী দল পরপর দুইবার চ্যাম্পিয়ন হল। আমরা খুশি, আনন্দিত। আগামী দিনে আমরা চাইব পুরুষ দলও এমন অর্জন এনে দেবে। আমরা তাদের নিয়েও উল্লাস করতে চাই। দেশের ফুটবলের সঙ্গে আমরা আছি।”
বিমানবন্দরের সামনের সড়কে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন দলটির কর্মী-সমর্থকরা। সেখানে আসা তামজিদ হোসেন নামের একজন বলেন, “আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছি। নারী দলের এই বিজয়ে আমরা তথা পুরো দেশ গর্বিত।” নেপালের কাঠমাণ্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে বুধবার স্বাগতিক নেপালের ভক্ত-সমর্থকদের কাঁদিয়ে ২-১ গোলে তাদের হারায় বাংলাদেশ। দুই বছর আগে গোলাম রব্বানী ছোটনের হাত ধরে এ মাঠেই নেপালকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম এই ট্রফির স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। এ বছর পেটার জেমস বাটলারের অধীনে ফের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। তাদের ছাদখোলা বাসে তাই অবশ্যম্ভাবীভাবেই ছিলেন কোচ।
দুই বছর আগে ২০২২ সালেও সাফের শিরোপা জেতার পর ছাদখোলা বাসে নারী ফুটবলারদের অভ্যর্থনা জানিয়েছিল বাংলাদেশ। যে ছাদখোলা বাসে চড়ে মেয়েরা বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবনে যান, রাজধানীতে বিভিন্ন স্থানে সেটা আবার সাজানো হয়েছিল সরকারের বিভিন্ন নেতাদের ছবি দিয়ে। সেবার ছাদখোলা বাসে একপাশে বড় করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অন্যদিকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের ছবি সাঁটানো হয়। ছিল বাফুফের হর্তা-কর্তাদেরও ছবিও। এ নিয়ে সেসময় সারাদেশে ব্যপক সমালোচনা হয়। তবে গেল ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বাংলাদেশে বদলে গেছে অনেক কিছুই। তার ছোঁয়া লেগেছে বাফুফেতেও। প্রায় দেড় যুগ পর কাজী সালাউদ্দিনের পরিবর্তে নতুন সভাপতি হয়েছেন বিএনপি নেতা তাবিথ আওয়াল। পালাবদলের ছোঁয়ায় এবার ছাদখোলা বাসে ছিল শুধুই চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের ছবি। বাসের পোস্টারে চ্যাম্পিয়ন ট্রফির সঙ্গে অফিসিয়াল ফটোসেশনের সবাইকে রাখা হয়েছে। শুরুর একাদশে থাকা দলের ছবিও ছিল সেখানে। একপাশে ছিল এবছর টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল জেতা ঋতুপর্ণা চাকমার ট্রফি গ্রহণের ছবিও।
ঋতুপর্ণা চাকমার ছবির উপরে ছিল স্পন্সরদের লোগো। নারী ফুটবলে দীর্ঘদিনের স্পন্সর ঢাকা ব্যাংক। সেই ২০১৬ সাল থেকে নারী ফুটবলের সঙ্গে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে। উৎসবের এই উপলক্ষ্যে বাফুফে স্মরণ রেখেছে তাদেরও। এছাড়া দলের বেভারেজ পার্টনার পুষ্টি, ট্যাকনিক্যাল পার্টনার আমরাও বছরব্যাপী বাফুফেকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তাই তাদের লোগোও ছিল বিশেষ এই স্থানে। বিকেল সাড়ে ৪টায় বিমাবন্দর থেকে চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের বাসটি বের হয়ে যায়। এরপর তাদের নিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠে ছাদখোলা বাসটি। এফডিসি মোড়ে নেমে সাত রাস্তার মোড় হয়ে মগবাজার ফ্লাইওভার দিয়ে কাকরাইল হয়ে যায় পল্টনে। এরপর নটরডেম কলেজর সামনে দিয়ে শাপলা চত্বর পার হয়ে সাবিনা-ঋতুপর্ণারা সন্ধ্যায় পৌঁছান বাফুফে ভবনে।
তিন ঘণ্টা শহর প্রদক্ষিণের পর বাফুফে ভবনে সাবিনারা
সেই বিকালে এয়ারপোর্ট থেকে রওনা দিয়েছিলেন সাবিনা-মনিকারা। রাস্তার দুই পাশে অনেকেই তাদের অভিবাদন জানিয়েছেন। নির্দিষ্ট রুট দিয়ে বাফুফে ভবনে আসতে তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এই সময়ের পুরোটাই মেয়েরা নানাভাবে মেতে ছিল। এয়ারপোর্টে ছাদখোলা বাস ছাড়ার আগে সমর্থকরা ফ্লেয়ারের মাধ্যমে রঙিন ধোঁয়া উড়িয়েছে। বাফুফে ভবনে এসেও একই চিত্র। সমর্থকরা অন্ধকার ভেদ করে ধোঁয়া উড়িয়ে সাবিনাদের বরণ করে নেন। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বিকাল সোয়া পাঁচটায় আসেন বাফুফে ভবনে। সাবিনারা আসার পর বাফুফের তৃতীয় তলায় কনফারেন্স রুমে যান উপদেষ্টা। সেখানে খেলোয়াড়দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি। তার সঙ্গে আছেন মন্ত্রণালয় ও এনএসসির কর্মকর্তারা। টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ২টায় ঢাকায় এসে পৌঁছায় বাংলাদেশ দল। ঐতিহাসিক এই অর্জনের পর তাদের বরণ করে নিতে প্রস্তুত ছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। তাদের জন্য বিমানবন্দরে ছাদখোলা বাস প্রস্তুত ছিল। তাতে চড়ে শহর প্রদক্ষিণ করে পুরো দল। বিআরটিসির বাসটি খেলোয়াড়দের ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছিল। দুই পাশে চ্যাম্পিয়ন দলের ছবিও স্থাপিত হয়। বাসের মাঝখানে ট্রফি নিয়ে ছিল গ্রুপ ছবি। দুই পাশে দুই টুর্নামেন্ট সেরার ছবি। বাম পাশে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা ও ডান পাশে ছিল সেরা গোলকিপার রুপনা চাকমার ট্রফি নেয়ার মুহূর্ত। বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে এক্সপ্রেসওয়ে, এফডিসি, সাত রাস্তার মোড়, মগবাজার ফ্লাইওভার, কাকরাইল, পল্টন, নটরডেম কলেজ ও শাপলা চত্বর ঘুরে বাফুফে ভবনে থামে বাস। ঢাকায় বিমানবন্দরে নেমে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের কোচ, অধিনায়কসহ অন্যরা। কথা বলতে এসে তাদের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। জাতীয় দলের সাবিনা খাতুন টানা দ্বিতীয়বারের মতো অধিনায়ক হয়ে শিরোপা জিতেছেন। নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে এসে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রথমেই ধন্যবাদ দিতে চাই দেশের মানুষকে, যারা এই জয়ের জন্য অধীর আগ্রহে ছিলেন। সকলকে খুশি করতে পেরে দলের ও বাফুফের সবাই অনেক আনন্দিত। সর্বপ্রথম ধন্যবাদ দিতে চাই সাবেক প্রেসিডেন্ট কাজী সালাউদ্দিন স্যার ও উইমেন্স কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট তাবিথ আওয়াল স্যার ও নতুন কমিটিকে। সকলের দোয়া ও সমর্থনে আজ এই সফলতা এসেছে।’
চ্যাম্পিয়ন ফুটবলারদের ২০ লাখ টাকা পুরস্কার দেবে বিসিবি
নেপালকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। এমন সাফল্যের পর তাদের জন্য ২০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এর আগে চট্টগ্রাম টেস্ট চলাকালে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, ‘বিসিবি থেকে পুরস্কৃত করা হবে। তাদেরকে কিছুটা পুরস্কৃত করতে পারব ভেবে আমি খুশি। পরপর দুইবার তারা আমাদের গর্বিত করেছে। ’ তখন অবশ্য পরিমাণটা ঘোষণা করেননি ফারুক। দুই বছর আগেও সাফ জিতেছিল মেয়েরা। তখন বিসিবি সভাপতি ছিলেন নাজমুল হাসান পাপন। তার বোর্ড সেবার ৫০ লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার দিয়েছিল। .
এদিকে দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে আসরের ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে মেয়েদের সাফের শিরোপা ধরে রাখে বাংলাদেশ। হিমালয়ের দেশে আবারও সফলতার খুঁটি গেড়ে তারা নিজেদের নিয়ে গেলেন অনন্য এক উচ্চতায়।
নিজ জেলায় খোলা ট্রাকে সংবর্ধনা পাবেন সাফজয়ী ঋতুপর্ণা-রূপনা
পাহাড়ের তিন খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা, রূপনা ও মনিকাকে নিজজেলায় খোলা ট্রাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। ছুটি শেষে নিজ জেলায় ফিরলেই তাদের এই সংর্বধনা দেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তারা বাড়ি ফিরলেই সংবর্ধনা দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, গতবার যেভাবে দেওয়া হয়েছে, এবারও ক্রীড়া সংস্থা থেকে তাদের একইভাবে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। ছাদ খোলা বা খোলা ট্রাকে ঘাগড়া থেকে রাঙামাটি শহরে ঘুরে স্টেডিয়ামে সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা হবে। এর জন্য দুই কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা কখন ফিরবে সেই হিসেবে নির্ধারণ করা হবে। তাদের বাড়িতে যাবেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি জানান, যেহেতু মাঠে সংবর্ধনা দেওয়া হবে- তাই বাড়ি যাওয়ার বিষয়টি এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। গেলে জানাবো। উল্লেখ্য, বুধবার নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে মনিকা ও দেশের হয়ে জয়সূচক গোলটি করেন ঋতুপর্ণা। ২-১ গোলে বিজয়ী হয় বাংলাদেশ। আর ফাইনাল খেলায় সেরা খেলোয়াড় হন ঋতুপর্ণা ও টুর্নামেন্টে মাত্র ৪টা গোল হজম করায় সেরা গোলরক্ষক হন রূপনা চাকমা।