ঢাকা ১২:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

আফগানিস্তানে জন্মানোটাই কি আমাদের অপরাধ

  • আপডেট সময় : ০১:২০:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ৯৭ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : আফগানিস্তানের টিভি উপস্থাপক সানাম খাতারি। এখন বাড়ি থেকে বের হতে পারেন না। তালেবান যোদ্ধাদের আদেশে তাকেসহ অনেককেই অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সানাম কথা বলেন ইরানিয়ান সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট মাসিহ আলিনেজাদের সাথে। তিনি বলেন, উপস্থাপনার কারণ ছাড়াও অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ায় লাখো দর্শক আমাকে চেনে। দুর্ভাগ্যবশত আমরা একটা কালো সময় পার করছি আর নিজেদেরকে বাসায় বন্দি রাখতে বাধ্য হচ্ছি।
নীরবতা ভেঙে কথা বলেছেন আফগান নারী সানাম। তালেবান ক্ষমতা দখলের আগে তিনি টেলিভিশনে উপস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। এখন তিনি নিরাপত্তার জন্য নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন। বিশ্বকে তিনি বলতে চান- তালেবান বদলায়নি, আফগান নারীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসুন।
আপনি বলছেন আপনি টিভি উপস্থাপক। সবাই জানতে চায় আপনি কাজে ফিরতে পারলেন কিনা? তালেবান সিএনএনকে বলেছে নারীরা কাজে ফিরতে পারবেন? আপনার অভিজ্ঞতা কী? আপনি কি বাসায়?
সানাম: হ্যাঁ, বলছে। ওরা বলছে নারীরা চাইলে কাজে ফিরতে পারবে, বলছে সাংবাদিক কাজ করতে পারবে, অফিসে যেতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমরা অফিসে যেতে পারছি না, তালেবান যোদ্ধাদের প্রহরা রয়েছে। তাদের হাতে বন্দুক, তারা আমাদের পথ রোধ করে। আমরা অফিসে ঢোকার অনুমতি পাইনি।
মানে আপনি যখন অফিসে যেতে চান তালেবান আপনার পথ রোধ করে আর বাসায় ফিরে যেতে বলে?
হ্যাঁ, তারা আমাদের অফিসে ঢুকতে দেয়নি। যদিও তারা ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে জানিয়েছে যে নারীদের আটকানো হবে না। তারা আমাদের অফিসে ঢুকতে দিচ্ছে না এবং আমরা বাসায় বসে আছি।
রাস্তার অবস্থা কী? নারীরা কি বের হতে পারছেন?
তালেবানরা যখনই এলো নারীরা যেন হারিয়ে গেলো। এখন তারা প্রায় অদৃশ্য। তালেবানের চাপিয়ে দেওয়া হিজাব পরার চেয়ে অনেকে বাসায় বসে থাকাটাকেই বেছে নিয়েছে।
সানাম, অনেকে ভয় পেয়েছেন নিশ্চয়। আপনি যেন নতুন করে বিপদে না পরেন, আমি আপনার ছবিতে চেহারা ব্লার (ঘোলা) করে দিব সেটা নিশ্চিত থাকুন। কোন পর্যায়ে এসে আপনি আমার সাথে কথা বলছেন? ভয় করছে না?
আমি এমন অবস্থায় আছি যে, সব ভয় দূর হয়ে গেছে। তারা যা করেছে তা যথেষ্ট হয়ে গেছে। এখন আর ভয় পাওয়া কাজের কিছু হবে না। আমি এখন আমার জীবনটাকেই বুঝি। আমি বাসায় বন্দি, আমরা নিজেদের লুকিয়ে রেখেছি, কেউ জানে না আমরা কে কোথায় থাকছি। আমাদের জীবন অন্তরীণ। বাইরে যাওয়ার অনুমতি আমাদের নেই।
আমি জানি ইরানি আর আফগান নারীদের জন্য গাড়ি চালানো একধরনের স্বাধীনতা। কেমন মনে হলো যখন সেই গাড়ি আপনার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়?
আপনি জানেন, এটা আমার জন্য খুব সেনসিটিভ ইস্যু। এটা শুধু একটা গাড়ির বিষয় না। এটা আমার জীবন। এটা তৈরি করতে আমাকে গাধার খাটুনি খাটতে হয়েছে। জন্মের পর থেকে এটা আমার কাছে অনেক বড় কিছু। তারা আমার সামনে দিয়ে গাড়িটা নিয়ে গেলো আমি তাকিয়ে দেখলাম, কিছু করতে পারলাম না। আফগানিস্তানে জন্মানোটাই কি আমাদের অপরাধ।আফগানিস্তানের নারীদের কি কোনও অধিকারই নেই। কেন আমরা যা পরতে চাই পরতে পারব না, যা করতে চাই করতে পারব না। কেন? অন্য অনেক মুসলিম দেশে নারীরা তাদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকে।

আমি ভাবতেই পারি না, রাতারাতি কীভাবে জীবন চেঞ্জ হয়ে যায়? আমি নিজে গাড়ি চালাতে পছন্দ করি এবং নিজেকে তখন স্বাধীন মনে হয়। আর আপনার জীবন বদলে গেলো। তার ওপর তালেবান বলছে নারীকে স্বাধীনতা দেওয়া হবে। কি মনে হচ্ছে আপনার?
আফগান নারীদের প্রতি তারা কখনও সংবেদনশীলতা দেখায়নি। তারা কখনও আফগান নারীদের তাদের মতো করে জীবনযাপনের অধিকার দেয়নি। আমাদের পেশার জায়গায় আমরা স্বাধীনতা চাই। অন্য শহরে যাওয়ার স্বাধীনতা চাই, আনন্দ করার স্বাধীনতা চাই। কেবল তালেবান সমস্যা না। অনেক আফগান পুরুষও এমন। যে মুহূর্তে তালেবান এসেছে সব আশা শেষ। আমি তালেবানের আগের সময় দেখিনি। সেসময় আমার বয়স ছিল ১। আমি সেসময়ের ভয়াবহতা পরিবার, বন্ধু-স্বজনদের কাছে শুনেছি। কিন্তু এবার আমি ভুক্তভোগী। তালেবানের শীর্ষ নেতারা বলছেন তারা এবার নারীদের অধিকার লঙ্ঘন করবেন না। নারীরা সমাজে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করবে। কিন্তু তারা অবশ্যই হিজাব পরবে। সবকিছুর সাথে নারীর হিজাবকে কেন যুক্ত করতে হবে? আমরা নারীরা ঠিক করবো আমি কী পরবো না পরবো, আমার সেই অধিকার থাকতে হবে। তালেবানরা কি তাদের দাবি মোতাবেক আদৌ বদলেছে? আমার অভিজ্ঞতা তা বলে না। তাদের নেতাদের জনসংযোগের ধরন বদলেছে মাত্র।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আফগানিস্তানে জন্মানোটাই কি আমাদের অপরাধ

আপডেট সময় : ০১:২০:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

প্রত্যাশা ডেস্ক : আফগানিস্তানের টিভি উপস্থাপক সানাম খাতারি। এখন বাড়ি থেকে বের হতে পারেন না। তালেবান যোদ্ধাদের আদেশে তাকেসহ অনেককেই অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সানাম কথা বলেন ইরানিয়ান সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট মাসিহ আলিনেজাদের সাথে। তিনি বলেন, উপস্থাপনার কারণ ছাড়াও অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ায় লাখো দর্শক আমাকে চেনে। দুর্ভাগ্যবশত আমরা একটা কালো সময় পার করছি আর নিজেদেরকে বাসায় বন্দি রাখতে বাধ্য হচ্ছি।
নীরবতা ভেঙে কথা বলেছেন আফগান নারী সানাম। তালেবান ক্ষমতা দখলের আগে তিনি টেলিভিশনে উপস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। এখন তিনি নিরাপত্তার জন্য নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন। বিশ্বকে তিনি বলতে চান- তালেবান বদলায়নি, আফগান নারীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসুন।
আপনি বলছেন আপনি টিভি উপস্থাপক। সবাই জানতে চায় আপনি কাজে ফিরতে পারলেন কিনা? তালেবান সিএনএনকে বলেছে নারীরা কাজে ফিরতে পারবেন? আপনার অভিজ্ঞতা কী? আপনি কি বাসায়?
সানাম: হ্যাঁ, বলছে। ওরা বলছে নারীরা চাইলে কাজে ফিরতে পারবে, বলছে সাংবাদিক কাজ করতে পারবে, অফিসে যেতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমরা অফিসে যেতে পারছি না, তালেবান যোদ্ধাদের প্রহরা রয়েছে। তাদের হাতে বন্দুক, তারা আমাদের পথ রোধ করে। আমরা অফিসে ঢোকার অনুমতি পাইনি।
মানে আপনি যখন অফিসে যেতে চান তালেবান আপনার পথ রোধ করে আর বাসায় ফিরে যেতে বলে?
হ্যাঁ, তারা আমাদের অফিসে ঢুকতে দেয়নি। যদিও তারা ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে জানিয়েছে যে নারীদের আটকানো হবে না। তারা আমাদের অফিসে ঢুকতে দিচ্ছে না এবং আমরা বাসায় বসে আছি।
রাস্তার অবস্থা কী? নারীরা কি বের হতে পারছেন?
তালেবানরা যখনই এলো নারীরা যেন হারিয়ে গেলো। এখন তারা প্রায় অদৃশ্য। তালেবানের চাপিয়ে দেওয়া হিজাব পরার চেয়ে অনেকে বাসায় বসে থাকাটাকেই বেছে নিয়েছে।
সানাম, অনেকে ভয় পেয়েছেন নিশ্চয়। আপনি যেন নতুন করে বিপদে না পরেন, আমি আপনার ছবিতে চেহারা ব্লার (ঘোলা) করে দিব সেটা নিশ্চিত থাকুন। কোন পর্যায়ে এসে আপনি আমার সাথে কথা বলছেন? ভয় করছে না?
আমি এমন অবস্থায় আছি যে, সব ভয় দূর হয়ে গেছে। তারা যা করেছে তা যথেষ্ট হয়ে গেছে। এখন আর ভয় পাওয়া কাজের কিছু হবে না। আমি এখন আমার জীবনটাকেই বুঝি। আমি বাসায় বন্দি, আমরা নিজেদের লুকিয়ে রেখেছি, কেউ জানে না আমরা কে কোথায় থাকছি। আমাদের জীবন অন্তরীণ। বাইরে যাওয়ার অনুমতি আমাদের নেই।
আমি জানি ইরানি আর আফগান নারীদের জন্য গাড়ি চালানো একধরনের স্বাধীনতা। কেমন মনে হলো যখন সেই গাড়ি আপনার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়?
আপনি জানেন, এটা আমার জন্য খুব সেনসিটিভ ইস্যু। এটা শুধু একটা গাড়ির বিষয় না। এটা আমার জীবন। এটা তৈরি করতে আমাকে গাধার খাটুনি খাটতে হয়েছে। জন্মের পর থেকে এটা আমার কাছে অনেক বড় কিছু। তারা আমার সামনে দিয়ে গাড়িটা নিয়ে গেলো আমি তাকিয়ে দেখলাম, কিছু করতে পারলাম না। আফগানিস্তানে জন্মানোটাই কি আমাদের অপরাধ।আফগানিস্তানের নারীদের কি কোনও অধিকারই নেই। কেন আমরা যা পরতে চাই পরতে পারব না, যা করতে চাই করতে পারব না। কেন? অন্য অনেক মুসলিম দেশে নারীরা তাদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকে।

আমি ভাবতেই পারি না, রাতারাতি কীভাবে জীবন চেঞ্জ হয়ে যায়? আমি নিজে গাড়ি চালাতে পছন্দ করি এবং নিজেকে তখন স্বাধীন মনে হয়। আর আপনার জীবন বদলে গেলো। তার ওপর তালেবান বলছে নারীকে স্বাধীনতা দেওয়া হবে। কি মনে হচ্ছে আপনার?
আফগান নারীদের প্রতি তারা কখনও সংবেদনশীলতা দেখায়নি। তারা কখনও আফগান নারীদের তাদের মতো করে জীবনযাপনের অধিকার দেয়নি। আমাদের পেশার জায়গায় আমরা স্বাধীনতা চাই। অন্য শহরে যাওয়ার স্বাধীনতা চাই, আনন্দ করার স্বাধীনতা চাই। কেবল তালেবান সমস্যা না। অনেক আফগান পুরুষও এমন। যে মুহূর্তে তালেবান এসেছে সব আশা শেষ। আমি তালেবানের আগের সময় দেখিনি। সেসময় আমার বয়স ছিল ১। আমি সেসময়ের ভয়াবহতা পরিবার, বন্ধু-স্বজনদের কাছে শুনেছি। কিন্তু এবার আমি ভুক্তভোগী। তালেবানের শীর্ষ নেতারা বলছেন তারা এবার নারীদের অধিকার লঙ্ঘন করবেন না। নারীরা সমাজে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করবে। কিন্তু তারা অবশ্যই হিজাব পরবে। সবকিছুর সাথে নারীর হিজাবকে কেন যুক্ত করতে হবে? আমরা নারীরা ঠিক করবো আমি কী পরবো না পরবো, আমার সেই অধিকার থাকতে হবে। তালেবানরা কি তাদের দাবি মোতাবেক আদৌ বদলেছে? আমার অভিজ্ঞতা তা বলে না। তাদের নেতাদের জনসংযোগের ধরন বদলেছে মাত্র।