ঢাকা ০৪:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে ড. ইউনূস,হাসিনার ফ্যাসিবাদী দলের স্থান বাংলাদেশে নেই

  • আপডেট সময় : ০৮:৫১:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪
  • ৪৫ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : ক্ষমতাচ্যুত কর্তৃত্ববাদী শাসক শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ‘ফ্যাসিবাদের সব বৈশিষ্ট্য’ প্রকাশ করছে বলে অভিযোগ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘দেশের রাজনীতিতে এ দলের এখন ‘‘কোনো জায়গা’’ নেই।’
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব মন্তব্য করেন। বুধবার (৩০ অক্টোবর) পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে।
পত্রিকাটি বলেছে, এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে অবস্থান স্পষ্ট করলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অধ্যাপক। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে চলে যান দলটির প্রধান ও টানা ১৫ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা শেখ হাসিনা। সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তাঁর অন্তর্বর্তী সরকার এখনই ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইবে না। পত্রিকাটি বলছে, সর্ববৃহৎ প্রতিবেশী দেশের (ভারত) সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক উত্তেজনায় বাড়িয়ে দিতে পারে এমন চিন্তা থেকে হয়তো এ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘স্বল্প মেয়াদে হলেও নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশে তাঁর (শেখ হাসিনা) কোনো জায়গা নেই-আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা নেই।’
‘নিজেদের স্বার্থসিদ্বির জন্য বাড়িয়ে নিতে তারা জনগণকে নিয়ন্ত্রণ (দমন–পীড়ন) করেছে, তারা রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, তারা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করেছে,’ বলেন ড. ইউনূস। তিনি আরও বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো ফ্যাসিস্ট দলের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়।’
শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কুক্ষিগত করা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড পরিচালনা এবং সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোয় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ করেছেন রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীরা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তাঁর দলকে রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে দূরে সরিয়ে রাখা, সংস্কার, নাকি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা উচিত, সে বিষয়ে বিতর্ক চলছে। ড. ইউনূসের ধারণা, আওয়ামী লীগ একটি দুর্বল ও ব্যর্থ দলে পরিণত হতে পারে। তবে তিনি গুরুত্ব দেন যে তাঁর অন্তর্বর্তী প্রশাসন দলটির ভাগ্য নির্ধারণ করবে না। কেননা, এটি কোনো ‘রাজনৈতিক সরকার নয়’।
আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যকার ‘ঐকমত্যের’ ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া নিয়ে তাদেরই (রাজনৈতিক দলগুলোকে) সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
হাসিনা ভারতের কোথায় আছেন, তা পরিষ্কার নয়। সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, তাঁর দল যেকোনো সময় নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত। অর্থনীতির একজন সাবেক অধ্যাপক ও ‘দরিদ্রদের ব্যাংকার’ ড. ইউনূস ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে খ্যাতিমান এই অর্থনীতিবিদকে নিশানা বানান শেখ হাসিনা। তাঁর (হাসিনা) সমালোচকেরা একে প্রতিহিংসার ঘটনা বলে আখ্যায়িত করেন। রাজনীতিতে যোগ দেওয়া বা কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করার ইচ্ছা তাঁর নেই বলে জানিয়েছেন ড. ইউনূস। বলেছেন, নির্বাচনের সময়সূচি (এখনই) ঘোষণা করা হবে না। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘আমাদের কাজ বিভিন্ন বিষয়ের নিষ্পত্তি করা ও নতুন সংস্কার এজেন্ডার বাস্তবায়ন। যখন নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ হবে, তখন আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করব।’
শেখ হাসিনার পতনে তাঁর সরকারের সবচেয়ে বড় বিদেশি সমর্থক ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপোড়ন শুরু হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, তাঁর সরকার শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইবে। তবে তা চাওয়া হবে শুধুই দেশের অভ্যন্তরীণ অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) রায়ের পর। ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও অন্য ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
‘তাঁর (শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে…রায় পেলে ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাঁকে দেশে ফেরত আনার চেষ্টা করব আমরা। আমি মনে করি না যে রায় পাওয়ার আগে আমাদের এটি করার মতো কিছু আছে,’ বলেন ড. ইউনূস।
গত আগস্ট শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন, বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংসতা চালানোর যে অভিযোগ তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তা মিথ্যা। তাঁর মা ‘কোনো বেআইনি কাজ করেননি’, তাই যেকোনো অভিযোগ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত তিনি।
ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নয়াদিল্লির অনেকে এ সরকারের প্রতি বৈরী মনোভাব দেখিয়েছেন। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে সরকার পরিবর্তন হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। শেখ হাসিনা উৎখাত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী হয় দেশের বাইরে পালিয়েছেন, নয় আত্মগোপন করে আছেন।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকালে সহিংসতায় বিক্ষোভকারী, পুলিশ, পথচারীসহ ৮০০ জনের মতো নিহত হয়েছেন। তবে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক নির্যাতন-নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ নিশ্চিত করেনি মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
এ বিষয়ে ড. ইউনূস স্বীকার করেছেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কিছু সহিংসতার ঘটনা এবং তাতে খুব অল্প প্রাণহানি ঘটেছে। অবশ্য তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁদের সংশ্লিষ্টতা থাকায় এসব হামলা হয়েছে। ধর্মীয় পরিচিতির কারণে তাঁদের ওপর হামলা হয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ (আগস্টে হামলার প্রসঙ্গ) আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছেন। সমালোচকেরা ওই বয়ানকে (হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা) ভিন্নরূপ দিয়েছেন।’
নয়াদিল্লির কাছ থেকে সমর্থনের ঘাটতি তাঁর সরকারকে ‘আহত’ করেছে বলেও মন্তব্য করেন নোবেলজয়ী ঐ অধ্যাপক। তবে বলেন, দেশে এলে মোদিকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানানো হবে। তিনি আরও বলেন, ‘এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছি যে আমরা প্রতিবেশী, আমাদের একে অপরের প্রয়োজন, আমাদের মধ্যে অবশ্যই সবচেয়ে ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকতে হবে, যা যেকোনো দুই প্রতিবেশীর মধ্যে থাকা উচিত।’

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সিরিয়ায় ৭০ বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রথম নারী গভর্নর

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে ড. ইউনূস,হাসিনার ফ্যাসিবাদী দলের স্থান বাংলাদেশে নেই

আপডেট সময় : ০৮:৫১:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

প্রত্যাশা ডেস্ক : ক্ষমতাচ্যুত কর্তৃত্ববাদী শাসক শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ‘ফ্যাসিবাদের সব বৈশিষ্ট্য’ প্রকাশ করছে বলে অভিযোগ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘দেশের রাজনীতিতে এ দলের এখন ‘‘কোনো জায়গা’’ নেই।’
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব মন্তব্য করেন। বুধবার (৩০ অক্টোবর) পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে।
পত্রিকাটি বলেছে, এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে অবস্থান স্পষ্ট করলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অধ্যাপক। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে চলে যান দলটির প্রধান ও টানা ১৫ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা শেখ হাসিনা। সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তাঁর অন্তর্বর্তী সরকার এখনই ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইবে না। পত্রিকাটি বলছে, সর্ববৃহৎ প্রতিবেশী দেশের (ভারত) সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক উত্তেজনায় বাড়িয়ে দিতে পারে এমন চিন্তা থেকে হয়তো এ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘স্বল্প মেয়াদে হলেও নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশে তাঁর (শেখ হাসিনা) কোনো জায়গা নেই-আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা নেই।’
‘নিজেদের স্বার্থসিদ্বির জন্য বাড়িয়ে নিতে তারা জনগণকে নিয়ন্ত্রণ (দমন–পীড়ন) করেছে, তারা রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, তারা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করেছে,’ বলেন ড. ইউনূস। তিনি আরও বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো ফ্যাসিস্ট দলের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়।’
শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কুক্ষিগত করা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড পরিচালনা এবং সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোয় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ করেছেন রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীরা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তাঁর দলকে রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে দূরে সরিয়ে রাখা, সংস্কার, নাকি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা উচিত, সে বিষয়ে বিতর্ক চলছে। ড. ইউনূসের ধারণা, আওয়ামী লীগ একটি দুর্বল ও ব্যর্থ দলে পরিণত হতে পারে। তবে তিনি গুরুত্ব দেন যে তাঁর অন্তর্বর্তী প্রশাসন দলটির ভাগ্য নির্ধারণ করবে না। কেননা, এটি কোনো ‘রাজনৈতিক সরকার নয়’।
আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যকার ‘ঐকমত্যের’ ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া নিয়ে তাদেরই (রাজনৈতিক দলগুলোকে) সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
হাসিনা ভারতের কোথায় আছেন, তা পরিষ্কার নয়। সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, তাঁর দল যেকোনো সময় নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত। অর্থনীতির একজন সাবেক অধ্যাপক ও ‘দরিদ্রদের ব্যাংকার’ ড. ইউনূস ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে খ্যাতিমান এই অর্থনীতিবিদকে নিশানা বানান শেখ হাসিনা। তাঁর (হাসিনা) সমালোচকেরা একে প্রতিহিংসার ঘটনা বলে আখ্যায়িত করেন। রাজনীতিতে যোগ দেওয়া বা কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করার ইচ্ছা তাঁর নেই বলে জানিয়েছেন ড. ইউনূস। বলেছেন, নির্বাচনের সময়সূচি (এখনই) ঘোষণা করা হবে না। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘আমাদের কাজ বিভিন্ন বিষয়ের নিষ্পত্তি করা ও নতুন সংস্কার এজেন্ডার বাস্তবায়ন। যখন নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ হবে, তখন আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করব।’
শেখ হাসিনার পতনে তাঁর সরকারের সবচেয়ে বড় বিদেশি সমর্থক ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপোড়ন শুরু হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, তাঁর সরকার শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইবে। তবে তা চাওয়া হবে শুধুই দেশের অভ্যন্তরীণ অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) রায়ের পর। ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও অন্য ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
‘তাঁর (শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে…রায় পেলে ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাঁকে দেশে ফেরত আনার চেষ্টা করব আমরা। আমি মনে করি না যে রায় পাওয়ার আগে আমাদের এটি করার মতো কিছু আছে,’ বলেন ড. ইউনূস।
গত আগস্ট শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন, বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংসতা চালানোর যে অভিযোগ তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তা মিথ্যা। তাঁর মা ‘কোনো বেআইনি কাজ করেননি’, তাই যেকোনো অভিযোগ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত তিনি।
ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নয়াদিল্লির অনেকে এ সরকারের প্রতি বৈরী মনোভাব দেখিয়েছেন। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে সরকার পরিবর্তন হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। শেখ হাসিনা উৎখাত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী হয় দেশের বাইরে পালিয়েছেন, নয় আত্মগোপন করে আছেন।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকালে সহিংসতায় বিক্ষোভকারী, পুলিশ, পথচারীসহ ৮০০ জনের মতো নিহত হয়েছেন। তবে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক নির্যাতন-নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ নিশ্চিত করেনি মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
এ বিষয়ে ড. ইউনূস স্বীকার করেছেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কিছু সহিংসতার ঘটনা এবং তাতে খুব অল্প প্রাণহানি ঘটেছে। অবশ্য তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁদের সংশ্লিষ্টতা থাকায় এসব হামলা হয়েছে। ধর্মীয় পরিচিতির কারণে তাঁদের ওপর হামলা হয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ (আগস্টে হামলার প্রসঙ্গ) আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছেন। সমালোচকেরা ওই বয়ানকে (হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা) ভিন্নরূপ দিয়েছেন।’
নয়াদিল্লির কাছ থেকে সমর্থনের ঘাটতি তাঁর সরকারকে ‘আহত’ করেছে বলেও মন্তব্য করেন নোবেলজয়ী ঐ অধ্যাপক। তবে বলেন, দেশে এলে মোদিকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানানো হবে। তিনি আরও বলেন, ‘এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছি যে আমরা প্রতিবেশী, আমাদের একে অপরের প্রয়োজন, আমাদের মধ্যে অবশ্যই সবচেয়ে ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকতে হবে, যা যেকোনো দুই প্রতিবেশীর মধ্যে থাকা উচিত।’