ঢাকা ১১:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

সাত সপ্তাহ বেতন নাই, কেউ শোনেও না, ভাবেও না অবরোধে চা শ্রমিকরা

  • আপডেট সময় : ০৮:০৩:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪
  • ৮৭ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির অধীন সিলেটের তিনটি চা বাগানের শ্রমিকরা সাত সপ্তাহ ধরে বেতন না পাওয়ার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেছেন।
রোববার (২৭ অক্টোবর) দুপুরের দিকে সিলেটের এয়ারপোর্ট সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। এতে ওই সড়কে যানচলাচল ব্যাহত হয়। এ সময় শ্রমিকরা স্লোগান দেন- ‘আমাদের বেতন না দিলে, রাজপথ ছাড়ব না’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, চা শ্রমিক জেগেছে’, ‘চা শ্রমিকের সংগ্রাম, চলছে-চলবে’, ‘সাত সপ্তার বেতন, দিতে হবে দিয়ে দাও’, ‘আমাদের বেতন না দিলে, রাজপথ ছাড়ব না’, ‘আমাদের ন্যায্য বেতন, দিতে হবে দিয়ে দাও’, ‘রুটি-রুজির সংগ্রাম, চলছে চলবে’, ‘মালিকপক্ষের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’- ইত্যাদি। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্যমতে, সারাদেশে ন্যাশনাল টি কোম্পানির ফাঁড়ি বাগানসহ ১৬টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে প্রায় ১৭ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাদের ওপর আরও ৩০ হাজার মানুষের ভরণপোষণ নির্ভর করে। ন্যাশনাল টি কোম্পানির আওতাধীন সিলেট বিভাগের আওতাধীন সব চা বাগানেই বেতন বকেয়া পড়েছে। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু গোয়ালা বলেন, সিলেটে এনটিসি মালিকানাধীন লাক্কাতুরা, দলদলি ও কেওয়াছড়া চা বাগানে সাত সপ্তাহ ধরে শ্রমিকদের বেতন বন্ধ রয়েছে। রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শ্রমিকেরা লাক্কাতুরা এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ এসে অনুরোধ করায় দুপুর দেড়টার দিকে সড়ক থেকে শ্রমিকেরা সরেন। বকেয়া বেতনের বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক শ্রমিকদের সঙ্গে রোববার বসবেন বলে জানা যায়।
দলদলি চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি মিন্টু দাস বলেন, “আমাদের শ্রমিকেরা খেয়ে না খেয়ে বকেয়া বেতনের জন্য আন্দোলন চানিয়ে যাচ্ছে। চা শ্রমিক সুনীল কুড়ি বলেন, “আমরা সাত সপ্তাহ ধরে আমরা বেতন পাচ্ছি না। আমাদের বকেয়া বেতন না দিলে রাজপথ ছাড়ব না। শ্রমিকরা না খেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বাগান কর্তৃপক্ষ কিছু জানাচ্ছে না।
“তাই আজ আমরা সড়ক অবরোধ করেছি। প্রত্যেকটা চা শ্রমিকের ঘরে খাবার নাই, ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে আমরা না খেয়ে আছি। আমাদের কথা কেউ শুনে না, সমাজে কেউ ভাবেও না।”
শ্রমিক মালতি লোহার বলেন, “বেতন বন্ধ হওয়ার পর থেকে বাগানের দায়িত্বশীল কেউ আমাদের খোঁজ নিচ্ছে না। চা শ্রমিকরা না খেয়ে মরে গেলেও খোঁজ নেবে না। চা শ্রমিকেরা সবসময় অবহেলিত, আমাদের কথা কেউ ভাবে না। আজ না থেয়ে আন্দোলনে এসেছি। বেতন না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।”
চা শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের বিষয়ে ন্যাশনাল টি কোম্পানি-এনটিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহমুদ হাসানের মোবাইলে কল করা হলে তিনি কেটে দেন। তবে তিনি বুধবার বলেছিলেন, “শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রতিদিন যোগাযোগ হচ্ছে। চা শ্রমিকরা তাদের বকেয়া মজুরি পাবেন; আশা করছি, দ্রুতই আমরা এ সমস্যার সমাধান করতে পারব।”
গত শনিবার ন্যাশনাল টি কোম্পানির লাক্কাতুরা চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহমুদ হাসান বলেছিলেন, ‘‘আমাদের টাকা না থাকায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে পারছি না। আমরা কৃষি ব্যাংকে লোনের জন্য আবেদন করেছি। আশা করছি, সেখান থেকে টাকা পেলে আমরা তাদের বেতন-ভাতাদি দিতে পারব। এখন আমাদের ফ্যাক্টরি বন্ধ রয়েছে।”

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাত সপ্তাহ বেতন নাই, কেউ শোনেও না, ভাবেও না অবরোধে চা শ্রমিকরা

আপডেট সময় : ০৮:০৩:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪

প্রত্যাশা ডেস্ক : রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির অধীন সিলেটের তিনটি চা বাগানের শ্রমিকরা সাত সপ্তাহ ধরে বেতন না পাওয়ার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেছেন।
রোববার (২৭ অক্টোবর) দুপুরের দিকে সিলেটের এয়ারপোর্ট সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। এতে ওই সড়কে যানচলাচল ব্যাহত হয়। এ সময় শ্রমিকরা স্লোগান দেন- ‘আমাদের বেতন না দিলে, রাজপথ ছাড়ব না’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, চা শ্রমিক জেগেছে’, ‘চা শ্রমিকের সংগ্রাম, চলছে-চলবে’, ‘সাত সপ্তার বেতন, দিতে হবে দিয়ে দাও’, ‘আমাদের বেতন না দিলে, রাজপথ ছাড়ব না’, ‘আমাদের ন্যায্য বেতন, দিতে হবে দিয়ে দাও’, ‘রুটি-রুজির সংগ্রাম, চলছে চলবে’, ‘মালিকপক্ষের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’- ইত্যাদি। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্যমতে, সারাদেশে ন্যাশনাল টি কোম্পানির ফাঁড়ি বাগানসহ ১৬টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে প্রায় ১৭ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাদের ওপর আরও ৩০ হাজার মানুষের ভরণপোষণ নির্ভর করে। ন্যাশনাল টি কোম্পানির আওতাধীন সিলেট বিভাগের আওতাধীন সব চা বাগানেই বেতন বকেয়া পড়েছে। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু গোয়ালা বলেন, সিলেটে এনটিসি মালিকানাধীন লাক্কাতুরা, দলদলি ও কেওয়াছড়া চা বাগানে সাত সপ্তাহ ধরে শ্রমিকদের বেতন বন্ধ রয়েছে। রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শ্রমিকেরা লাক্কাতুরা এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ এসে অনুরোধ করায় দুপুর দেড়টার দিকে সড়ক থেকে শ্রমিকেরা সরেন। বকেয়া বেতনের বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক শ্রমিকদের সঙ্গে রোববার বসবেন বলে জানা যায়।
দলদলি চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি মিন্টু দাস বলেন, “আমাদের শ্রমিকেরা খেয়ে না খেয়ে বকেয়া বেতনের জন্য আন্দোলন চানিয়ে যাচ্ছে। চা শ্রমিক সুনীল কুড়ি বলেন, “আমরা সাত সপ্তাহ ধরে আমরা বেতন পাচ্ছি না। আমাদের বকেয়া বেতন না দিলে রাজপথ ছাড়ব না। শ্রমিকরা না খেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বাগান কর্তৃপক্ষ কিছু জানাচ্ছে না।
“তাই আজ আমরা সড়ক অবরোধ করেছি। প্রত্যেকটা চা শ্রমিকের ঘরে খাবার নাই, ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে আমরা না খেয়ে আছি। আমাদের কথা কেউ শুনে না, সমাজে কেউ ভাবেও না।”
শ্রমিক মালতি লোহার বলেন, “বেতন বন্ধ হওয়ার পর থেকে বাগানের দায়িত্বশীল কেউ আমাদের খোঁজ নিচ্ছে না। চা শ্রমিকরা না খেয়ে মরে গেলেও খোঁজ নেবে না। চা শ্রমিকেরা সবসময় অবহেলিত, আমাদের কথা কেউ ভাবে না। আজ না থেয়ে আন্দোলনে এসেছি। বেতন না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।”
চা শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের বিষয়ে ন্যাশনাল টি কোম্পানি-এনটিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহমুদ হাসানের মোবাইলে কল করা হলে তিনি কেটে দেন। তবে তিনি বুধবার বলেছিলেন, “শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রতিদিন যোগাযোগ হচ্ছে। চা শ্রমিকরা তাদের বকেয়া মজুরি পাবেন; আশা করছি, দ্রুতই আমরা এ সমস্যার সমাধান করতে পারব।”
গত শনিবার ন্যাশনাল টি কোম্পানির লাক্কাতুরা চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহমুদ হাসান বলেছিলেন, ‘‘আমাদের টাকা না থাকায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে পারছি না। আমরা কৃষি ব্যাংকে লোনের জন্য আবেদন করেছি। আশা করছি, সেখান থেকে টাকা পেলে আমরা তাদের বেতন-ভাতাদি দিতে পারব। এখন আমাদের ফ্যাক্টরি বন্ধ রয়েছে।”