ঢাকা ০২:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উজিরপুর থেকে সংগৃহীত কথ্যভাষার শব্দগুলো

  • আপডেট সময় : ০৮:৪০:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪
  • ৭৮ বার পড়া হয়েছে

শাহ আলম ডাকুয়া

বরিশাল জেলার ‘উজিরপুর উপজেলা’ সন্ধ্যা নদী তীরের এক প্রাচীন জনপদ। এখানে প্রকৃতি যেমন উদার হস্তে তার সৌন্দর্যের ডালি মেলে ধরেছে তেমনি এখানের মানুষের ভাষায়ও রয়েছে বৈচিত্র্য। উজিরপুরের কথ্যভাষা বরিশাল জেলার কথ্যভাষারই এক রূপ।

উজিরপুরের গ্রামীণ জনপদের মানুষ এমন কতগুলো শব্দ উচ্চারণ করে যা বাংলা ভাষার বর্ণমালার শব্দ দিয়ে সঠিকভাবে বুঝানো যায় না।

যেমন ‘হাটে গেছিলি’ ‘হাট’ কথাটি এমনভাবে উচ্চারণ করা হয়- তা না হাট না আট। ‘হ’ আর ‘আ’-এর মধ্যবর্তী একটা উচ্চারণ। যা লিখতে গেলে কাছাকাছি ‘‘আডে” উচ্চারণ করতে হয়। এরকম অনেক শব্দই আছে যার প্রকৃত উচ্চারণ ব্যঞ্জনবর্ণ ও স্বরবর্ণ দিয়ে করা যায় না।

এখানে উজিরপুর তথা বরিশাল অঞ্চলে কথ্যভাষায় ব্যঞ্জনবর্ণের শেষ বর্ণ ‘হ’ দিয়ে ব্যবহৃত উল্লেখযোগ্য কিছু শব্দ দেয়া হলো-

‘হ’ বর্ণ দিয়ে উজিরপুরে কথ্যভাষায় ব্যবহৃত শব্দসমূহ
হই=সই, দোস্ত
হডি=শটি (হলুদ গাছের মতো)
হতাইয়া ভাই/বোন=সৎ মায়ের সন্তান
হতারো=সতেরো (১৭)
হতিন= সতিন (স্বামীর দুই বউ)
হপায়/হপ্পায়=সবেমাত্র/কেবল
হপ্পোন/হপ্পন= স্বপ্ন
হবরি/হবরি ক্যালা=পেয়ারা/সবরি কলা
হয়াল/হয়ালি=তাল দেয়া/হু হা করা/জি হুজুর
হরতা= রর্শিতে গিঁট দিয়ে মালার মতো বানানো/সুবারি কাটার লোহার যন্ত্র
হরপুডি=সরপুঁটি মাছ
হরা=সরা, পাতিলের ঢাকনা
হলা=কাঠি/নারিকেলের শলাকা
হলাচিংগোইর=গলদা চিংড়ি
হলোক= আলোকিত/পরিষ্কার হওয়া
হহালে=সকালে
হাক্কা=সাঁকো/চাড়/বাঁশের সাঁকো
হাচ্ছাইও=সত্যি
হাছতোর =শাস্ত্র, শ্লোক
হান্নিহে পাওয়া=বিদিশা ভাব, মানসিক সমস্যা
হানহি=দুমুখো সাপ
হানদান=ঢুকানো/প্রবেশ করা (গরুগুলা এ্যাহাচালায় হানদা)/খাওয়া
হাতোর=সাঁতার
হাজি=টুকরি, বাঁশের তৈরি ঝুরি/হজ করে এলে তাকে হাজি বলে
হাল=সূক্ষ্ম কোনো বস্তু (নহের মদ্দে হাল হানছে)/লাঙল-গরু দিয়ে চাষ করাকে হাল চাষ/হাল নিয়া আয়
হারোনতো=মোটাসোটা, পুষ্ট (ষাঁড়ডা ম্যালা হারোনতো অইছে)
হাবডাহাবডি=জড়াইয়া ধরা
হিটকান=বাঁকা হাসি
হিজান= সেদ্ধ করা/সেদ্ধ
হাহি=গলার চারদিকে/কবজির চারপাশে অল্প করে কাটা/হাহি দেওয়া
হাছতা=সস্তা
হালি=শালিকা/৪টায় ১ হালি
হালান= ফেলে দেওয়া (বিয়ায় ম্যালা খাওন বাচছে-পরে হালাইয়া দেছে
হিহান= শিখান/শিখানো
হিতান=শিতান/শিতানের বালিশটা সরা
হিবডি= বোতলের ছিপি (হিবডিডা ভালো কইররা আটকা)
হিন্দুর=সিঁদুর
হিদলা=ময়লা/শ্যাওলার আস্তরণ/পিছিল কালো ময়লা
হিদনা/হেদনা/হিদনাগো/হেনহাগো/হেনহা/= সেদিন/হেদিন
হুদাহুদি=খালি খালি/শুধু শুধু
হুতাননাহান= সুতার মতো
হুটকি=শুঁটকি
হুগনা/হুগাইননা=শুকনো
হিহৈন/হ্যাত=নাকের মধ্যের শ্লেষ্মা
হুরুজফাডা=নারিকেলের মধ্যে নষ্ট/এক ধরনের রোগ
হুররা=তরকারি/সালুনের ঝোল
হুম্মুর হুম্মুর=ওজনওয়ালা কিছুর পতন
হুমুনদি=বউয়ের বড় ভাই/গালি
হুমুক/হুমুইকদা=সামনে
হুবাজান/হুবা=ফুফা/ফুপা
হেহানে/হেহাইনদা= সেখান থেকে
হেদনা/হেনহা=সেদিন
হ্যালে/হেলে= তাহলে
হেবিলে=যেভাবে (যেবিলে কইছি হেবিলে গ্যালেই মামু বাড়ি যাইতারবি)
হেতখুন=যতক্ষণ
হোন=চিমটা/কথা শোনা
হোদ অইয়া/হোদ দেওয়া=হত্যা করা/জীবন শেষ হওয়ার পথে
হোতাইয়া পড়া=দুর্বল বা নেতিয়ে পড়া
হোচা/হোছা=শৌচকর্ম করা/মাছ ধরার একপ্রকার বাঁশের তিন কোনা ঝুড়ি
হোগা/হোগা মারা=পায়ুপথ/ক্ষতি করা (হোগা মাইররা ঝোগা করা)
হোয়া=শসা
হোমান=সমান
হোমাচার=সমাচার
হোমকে/হোমনে= সামনে
হৌররা=সরিষা
হৌরের পো=শালা/এক প্রকার গালি/শ্বশুরের ছেলে
হৌর হরা= কোনো জিনিস গুছিয়ে রাখা
হ্যালেগ্গা=অবহেলা করা
(এখানে হ বর্ণের প্রায় ৬৮টি আঞ্চলিক শব্দ দেয়া হলো)

সংগ্রহকারী : শাহ আলম ডাকুয়া
সংগ্রহস্থান : হস্তিশুন্ড, বামরাইল, উজিরপুর, বরিশাল
সংগ্রহকাল : ১৯৮০ ইংরেজি
মোবাইল : ০১৯৮৫-১৮৪৬৯৮

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

উজিরপুর থেকে সংগৃহীত কথ্যভাষার শব্দগুলো

আপডেট সময় : ০৮:৪০:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

শাহ আলম ডাকুয়া

বরিশাল জেলার ‘উজিরপুর উপজেলা’ সন্ধ্যা নদী তীরের এক প্রাচীন জনপদ। এখানে প্রকৃতি যেমন উদার হস্তে তার সৌন্দর্যের ডালি মেলে ধরেছে তেমনি এখানের মানুষের ভাষায়ও রয়েছে বৈচিত্র্য। উজিরপুরের কথ্যভাষা বরিশাল জেলার কথ্যভাষারই এক রূপ।

উজিরপুরের গ্রামীণ জনপদের মানুষ এমন কতগুলো শব্দ উচ্চারণ করে যা বাংলা ভাষার বর্ণমালার শব্দ দিয়ে সঠিকভাবে বুঝানো যায় না।

যেমন ‘হাটে গেছিলি’ ‘হাট’ কথাটি এমনভাবে উচ্চারণ করা হয়- তা না হাট না আট। ‘হ’ আর ‘আ’-এর মধ্যবর্তী একটা উচ্চারণ। যা লিখতে গেলে কাছাকাছি ‘‘আডে” উচ্চারণ করতে হয়। এরকম অনেক শব্দই আছে যার প্রকৃত উচ্চারণ ব্যঞ্জনবর্ণ ও স্বরবর্ণ দিয়ে করা যায় না।

এখানে উজিরপুর তথা বরিশাল অঞ্চলে কথ্যভাষায় ব্যঞ্জনবর্ণের শেষ বর্ণ ‘হ’ দিয়ে ব্যবহৃত উল্লেখযোগ্য কিছু শব্দ দেয়া হলো-

‘হ’ বর্ণ দিয়ে উজিরপুরে কথ্যভাষায় ব্যবহৃত শব্দসমূহ
হই=সই, দোস্ত
হডি=শটি (হলুদ গাছের মতো)
হতাইয়া ভাই/বোন=সৎ মায়ের সন্তান
হতারো=সতেরো (১৭)
হতিন= সতিন (স্বামীর দুই বউ)
হপায়/হপ্পায়=সবেমাত্র/কেবল
হপ্পোন/হপ্পন= স্বপ্ন
হবরি/হবরি ক্যালা=পেয়ারা/সবরি কলা
হয়াল/হয়ালি=তাল দেয়া/হু হা করা/জি হুজুর
হরতা= রর্শিতে গিঁট দিয়ে মালার মতো বানানো/সুবারি কাটার লোহার যন্ত্র
হরপুডি=সরপুঁটি মাছ
হরা=সরা, পাতিলের ঢাকনা
হলা=কাঠি/নারিকেলের শলাকা
হলাচিংগোইর=গলদা চিংড়ি
হলোক= আলোকিত/পরিষ্কার হওয়া
হহালে=সকালে
হাক্কা=সাঁকো/চাড়/বাঁশের সাঁকো
হাচ্ছাইও=সত্যি
হাছতোর =শাস্ত্র, শ্লোক
হান্নিহে পাওয়া=বিদিশা ভাব, মানসিক সমস্যা
হানহি=দুমুখো সাপ
হানদান=ঢুকানো/প্রবেশ করা (গরুগুলা এ্যাহাচালায় হানদা)/খাওয়া
হাতোর=সাঁতার
হাজি=টুকরি, বাঁশের তৈরি ঝুরি/হজ করে এলে তাকে হাজি বলে
হাল=সূক্ষ্ম কোনো বস্তু (নহের মদ্দে হাল হানছে)/লাঙল-গরু দিয়ে চাষ করাকে হাল চাষ/হাল নিয়া আয়
হারোনতো=মোটাসোটা, পুষ্ট (ষাঁড়ডা ম্যালা হারোনতো অইছে)
হাবডাহাবডি=জড়াইয়া ধরা
হিটকান=বাঁকা হাসি
হিজান= সেদ্ধ করা/সেদ্ধ
হাহি=গলার চারদিকে/কবজির চারপাশে অল্প করে কাটা/হাহি দেওয়া
হাছতা=সস্তা
হালি=শালিকা/৪টায় ১ হালি
হালান= ফেলে দেওয়া (বিয়ায় ম্যালা খাওন বাচছে-পরে হালাইয়া দেছে
হিহান= শিখান/শিখানো
হিতান=শিতান/শিতানের বালিশটা সরা
হিবডি= বোতলের ছিপি (হিবডিডা ভালো কইররা আটকা)
হিন্দুর=সিঁদুর
হিদলা=ময়লা/শ্যাওলার আস্তরণ/পিছিল কালো ময়লা
হিদনা/হেদনা/হিদনাগো/হেনহাগো/হেনহা/= সেদিন/হেদিন
হুদাহুদি=খালি খালি/শুধু শুধু
হুতাননাহান= সুতার মতো
হুটকি=শুঁটকি
হুগনা/হুগাইননা=শুকনো
হিহৈন/হ্যাত=নাকের মধ্যের শ্লেষ্মা
হুরুজফাডা=নারিকেলের মধ্যে নষ্ট/এক ধরনের রোগ
হুররা=তরকারি/সালুনের ঝোল
হুম্মুর হুম্মুর=ওজনওয়ালা কিছুর পতন
হুমুনদি=বউয়ের বড় ভাই/গালি
হুমুক/হুমুইকদা=সামনে
হুবাজান/হুবা=ফুফা/ফুপা
হেহানে/হেহাইনদা= সেখান থেকে
হেদনা/হেনহা=সেদিন
হ্যালে/হেলে= তাহলে
হেবিলে=যেভাবে (যেবিলে কইছি হেবিলে গ্যালেই মামু বাড়ি যাইতারবি)
হেতখুন=যতক্ষণ
হোন=চিমটা/কথা শোনা
হোদ অইয়া/হোদ দেওয়া=হত্যা করা/জীবন শেষ হওয়ার পথে
হোতাইয়া পড়া=দুর্বল বা নেতিয়ে পড়া
হোচা/হোছা=শৌচকর্ম করা/মাছ ধরার একপ্রকার বাঁশের তিন কোনা ঝুড়ি
হোগা/হোগা মারা=পায়ুপথ/ক্ষতি করা (হোগা মাইররা ঝোগা করা)
হোয়া=শসা
হোমান=সমান
হোমাচার=সমাচার
হোমকে/হোমনে= সামনে
হৌররা=সরিষা
হৌরের পো=শালা/এক প্রকার গালি/শ্বশুরের ছেলে
হৌর হরা= কোনো জিনিস গুছিয়ে রাখা
হ্যালেগ্গা=অবহেলা করা
(এখানে হ বর্ণের প্রায় ৬৮টি আঞ্চলিক শব্দ দেয়া হলো)

সংগ্রহকারী : শাহ আলম ডাকুয়া
সংগ্রহস্থান : হস্তিশুন্ড, বামরাইল, উজিরপুর, বরিশাল
সংগ্রহকাল : ১৯৮০ ইংরেজি
মোবাইল : ০১৯৮৫-১৮৪৬৯৮