নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত ৮৮ ভাগ রোগীর মধ্যেই পাওয়া গেছে ডেন-২ প্রকরণের ডেঙ্গু ভাইরাস। ১১ ভাগ রোগীর মধ্যে পাওয়া গেছে ডেন-৩ প্রকরণ। এছাড়া গত বছরের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জিনোম সিকুয়েন্স করে দেখা গেছে, ৫০ ভাগ রোগীর মাঝেই ‘বিপদজনক কসমোপলিটন’ প্রকরণের উপস্থিতি- যা রোগের তীব্রতা ও জটিলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। গত দুই বছর ধরে চট্টগ্রামের ডেঙ্গু রোগীদের নিয়ে চলমান গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধায়নে চলমান এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছে আইসিডিডিআর-বি, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ। কসমোপলিটান ভেরিয়েন্টের কারণেই চট্টগ্রামে রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির হার বেড়ে যাওয়া ও মৃত্যুর হারের ঊর্ধ্বগতি হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানান গবেষকরা। গবেষকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৬৯ ভাগ রোগীই ‘ডেন ২’ সেরোটাইপে আক্রান্ত ছিল, আর এই বছর ৮৮ ভাগ রোগী ‘ডেন ২’ তে আক্রান্ত। গত বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ ছিল পুরুষ, ডেঙ্গু রোগীদের প্রতি পাঁচ জনে একজন ছিল শিশু। এছাড়া চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চট্টগ্রামের ৬০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীর আবাসস্থল পাঁচটি এলাকায়, যেগুলোকে গবেষকরা হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এলাকাগুলো হচ্ছে-বাকলিয়া, চকবাজার, কোতয়ালি, ডবলমুরিং এবং বায়েজিদ বোস্তামী।
এছাড়া গ্রামাঞ্চলের মধ্যে সীতাকুন্ড, হাটহাজারী, পটিয়া, বোয়ালখালী এবং কর্ণফুলী এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে। গত বছর ১ হাজার ৫০০ রোগীর ওপর পরিচালিত এই গবেষণায় ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন ও পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, বিআইটিআইডি, আইসিডিডিআর,বি এবং নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং, রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন ল্যাব। পুরো গবেষণার সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানে ছিল স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন। এই ছয়টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ২০০ রোগীর তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে এবং গবেষণা এখনও চলমান।
গবেষকদের মতে, চট্টগ্রামে পাওয়া কসমোপলিটান লিনিয়েজ বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। বাংলাদেশের অন্য সব অঞ্চল থেকে পাওয়া এরআগের প্রকরণগুলো থেকে চট্টগ্রামে পাওয়া প্রকরণটি উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন। ফাইলোজেনেটিক বিন্যাস তথা তুলনামূলক বিশ্লেষণে পাওয়া যায়- এই প্রকরণগুলো মিয়ানমার এবং ভারতে প্রবাহিত হচ্ছে। গবেষকরা ধারণা করছেন পর্যটক ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের মাধ্যমে এই বিপদজনক প্রকরণটি দেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এই প্রকরণ ডেঙ্গুর তীব্রতা ও মৃত্যুহার বাড়িয়ে দেয়। এই জিনোম সিকুয়েন্সগুলো জিনোমের উন্মুক্ত বৈশ্বিক তথ্যভান্ডার জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটার (জিআইএসএআইডি) -তে গৃহীত হয়েছে। এছাড়া এই গবেষণার দুইটি গবেষণাপত্র ইতোমধ্যে ইউরোপিয়ান জার্নাল অব মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনলজি এবং আমেরিকান জার্নাল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিনে গৃহীত হয়েছে বলে জানান গবেষকরা।
২০২৪ সালে চলমান এই প্রকল্পে আইসিডিডিআরবি’র বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত চট্টগ্রাম অঞ্চলে এই গবেষণা দলে আছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এ সাত্তার ও ডা. আবুল ফয়সাল মো. নুরুদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান এবং এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক ডা. মো. আবদুর রব। গবেষকরা মনে করেন, ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধান ও নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য জিনোম সিকুয়েন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব তথ্য গুরুত্ব সহকারে সরকার গ্রহণ করলে তা পরবর্তী বছরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে অগ্রিম ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে এবং ও জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।
ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু: গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ১২১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে মারা গেছেন ৪ জন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২৪১ জনের এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ হাজার ৫৮২ জন। শনিবার (১৯ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য থেকে এসব জানা যায়। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৩ হাজার ৯৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। যার মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ৮৭৪ জন, বাকি ২ হাজার ৮০ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগে।
‘বিপদজনক কসমোপলিটন’ ডেঙ্গুতে মৃত্যু বাড়াচ্ছে
জনপ্রিয় সংবাদ

























