ঢাকা ০১:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন

  • আপডেট সময় : ০৫:১৩:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪
  • ৯১ বার পড়া হয়েছে

কাজী আবেদ হোসেন : নিয়ন্ত্রিত হতে যাচ্ছে দ্রব্যমূল্য। ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ’ ও ‘সহনীয় মূল্যে ইলিশপ্রাপ্তির মডেল’ সরকারের কাছে উপস্থাপিত হয়েছে। মোংলা বন্দরের সদস্য কাজী আবেদ হোসেন (যুগ্ম সচিব) এ মডেল দেন। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এ মডেলের প্রস্তাবনা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। যাচাই-বাছাই করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়ে ১৫ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পত্র দেয়। কাজী আবেদ হোসেন ২০০৩ সালে বান্দরবানের পর্যটন স্পট নীলাচলের আবিষ্কারক। তিনি প্রজননের সময় ইলিশ মাছ না ধরার মডেল সৃষ্টি করেন এবং দুটি উপজেলায় ৫ বছর এ মডেল বাস্তবায়ন করে ২০০৯ সালে জাতীয় স্বর্ণপদক পান। এ মডেল ২০১১ থেকে সারা দেশে প্রতিষ্ঠিত ও চলমান।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেলটিতে সরকারের অর্থ ব্যয় হবে না; অতিরিক্ত জনবলের প্রয়োজন নেই; নতুন আইন তৈরির প্রয়োজন নেই; সাধারণ মানুষের সহজে বোধগম্য এবং তাৎক্ষণিক বাস্তবায়ন সম্ভব। রূপরেখা সংক্ষেপে নিম্নরূপÑ
দুটি কমিটি হবে (কোটা আন্দোলনে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর স্মরণেও হতে পারে)।
কমিটি-১ : সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এবং উপজেলার প্রতিটি হাটের সভাপতি ও সেক্রেটারি সদস্য হবেন।
কমিটি-২: উপজেলা প্রশাসন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
উপজেলায় বাস্তবায়ন পদ্ধতিÑ
ক) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তালিকা হবে।
খ) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রুটিন করে দায়িত্ব দেয়া হবে। গ্রামের হাট থেকে তালিকাভুক্ত পণ্যের মৌলিক মূল্য সংগ্রহ করবেন তারা।
গ) প্রতিটি পণ্যের গড়মূল্যের ওপর ‘কমিটি-১’ উপজেলার মূল্য নির্ধারণ করবে; উপজেলার বাজারের সভাপতি সেক্রেটারির আবশ্যিক উপস্থিতিতে।
ঘ) উপজেলার বাজারগুলির দৃশ্যমান স্থানে সাইনবোর্ডে মূল্য তালিকা ২৪ ঘণ্টা প্রদর্শিত হবে।
ঙ) স্থানীয় ডিস চ্যানেলে সরকারি মূল্য প্রচার হবে।
চ) বিক্রেতাকে অবশ্যই তার পণ্যের সরকারি দর সাইনবোর্ডে দেখে বাজারে বিক্রি করতে হবে।
ছ) সিভিল পোশাকে ক্রেতার বেশে ‘কমিটি ২’-এর সদস্যরা বাজারে বিচ্ছিন্নভাবে লক্ষ্য রাখবেন। ব্যত্যয় হলে মোবাইল কোর্ট।
এভাবে ৪৯৫টি বা সব উপজেলায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত হবে।
জেলা ও বিভাগÑ
ক) জেলা ও বিভাগীয় শহরকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করতে হবে।
খ) ইউএনও সরকারি মূল্য তালিকা জগঝ-এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠাবেন।
গ) গড় মূল্যের ওপর ‘কমিটি-১’ জেলার বা বিভাগীয় শহরের মূল্য নির্ধারণ করবে বাজারের সভাপতি সেক্রেটারিদের উপস্থিতিতে।
ঘ) জেলার বাজারগুলির দৃশ্যমান স্থানে সাইন বোর্ডে মূল্য তালিকা ২৪ ঘণ্টা প্রদর্শিত হবে।
ঙ) স্থানীয় ডিশ চ্যানেলে সরকারি মূল্য প্রচার হবে।
চ) বিক্রেতাকে অবশ্যই তার পণ্যের সরকারি দর সাইনবোর্ডে দেখে বাজারে বিক্রি করতে হবে।
ছ) সিভিল পোশাকে ক্রেতার বেশে ‘কমিটি ২’-এর সদস্যরা বাজারে বিচ্ছিন্নভাবে লক্ষ রাখবেন। ব্যত্যয় হলে মোবাইল কোর্ট।
এভাবে ৬৪ জেলা ও বিভাগীয় শহরে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত হবে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামÑ
ক) অনেক অঞ্চলে বিভক্ত হবে বাজারগুলো।
খ) জগঝ-এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসন হতে প্রেরিত দেশের সকল জেলার মূল্যের ওপর গড় মূল্য হবে।
গ) পরিবহন ও লাভ বিবেচনায় ‘কমিটি-১’ মূল্য নির্ধারণ করবে বাজারের সভাপতি-সেক্রেটারিদের উপস্থিতি।
ঘ) ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারগুলোর দৃশ্যমান স্থানে সাইনবোর্ডে মূল্য তালিকা ২৪ ঘণ্টা প্রদর্শিত হবে।
ঙ) সব সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সরকারি মূল্য প্রচার হবে।
বিক্রেতাকে অবশ্যই তার পণ্যের সরকারি দর সাইনবোর্ডে দেখে বাজারে বিক্রি করতে হবে।
চ) সিভিল পোশাকে ক্রেতার বেশে ‘কমিটি ২’-এর সদস্যরা বাজারে বিচ্ছিন্নভাবে লক্ষ্য রাখবেন। ব্যত্যয় হলে মোবাইল কোর্ট।
ছ) প্রয়োজনে সিটি কর্পোরেশনের ও বিভাগীয় প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় হবে।
এভাবে সারা দেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত হবে।
স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনায় থাকবেÑ
১) উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম থেকে মালগাড়িতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য রাত ২টা ৩০ মিনিটের মধ্যে ঢাকায় আসবে। যানজট এড়াতে ভোর ৬টার মধ্যে ট্রাকে করে সব বাজারে পণ্য যাবে। মালগাড়িতে পরিবহনে কোন ভাড়া দিতে হবে না।
২) পচনশীল পণ্যের ট্রাকে কোন টোল দিতে হবে না।
৩) উল্লেখযোগ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানের ভাড়া সরকার নির্ধারণ করবে।
৩) মডেলটিকে আরও প্রয়োগযোগ্য করতে অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞজন সমন্বয়ে একটি গবেষণা কমিটি হবে।
৪) কোনো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি বা দেশে ঘাটতি দেখা দিলে তা রপ্তানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে।
৫) সীমান্ত দিয়ে পাচার বন্ধে বিজিবির নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে।
বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য বিষয়Ñ
১) আড়ত ও ঈড়ষফ ঝঃড়ৎধমব সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত থাকবে। মৌসুম ছাড়া ২০ দিনের বেশি মজুদ নয় (আলু ছাড়া)।
২) গ্রামে হাটের প্রান্তিক মূল্যে ঊর্ধ্বগতি হলে এ মডেলের সাথে নতুন ভাবনা সংযোজিত হবে।
৩) কৃষক (যদি থাকেন) ও হাট প্রতিনিধি পর পর দুই সভায় অনুপস্থিত থাকলে ব্যবস্থা।
৪) দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিলে গবেষণা কমিটির জরুরি সভা।
৫) তৃণমূল থেকে একটা শৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে সড়কে ও বাজারে সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি, ফড়িয়া, মজুদদারীর সুযোগ নেই।
৬) ০২-০৩ মাস পর মডেলের পরিবর্ধন বা পরিমার্জন করা।
৭) বন্যা বা অন্য কারণে কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে আড়তে ও ঈড়ষফ ঝঃড়ৎধমব-এ ১৫ দিনের বেশি মজুদ নয় (আলু ছাড়া)।
৮) সাধারণ মানুষকে জানাতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে।
৯) বিভিন্ন অঢ়ঢ়ং তৈরি ও সংযোজনের মাধ্যমে পদ্ধতিকে আরও সহজ করতে হবে।
উৎপাদন বৃদ্ধিকরণে পদক্ষেপÑ
= ডিজেলের মূল্য কমানো।
= হাওর, নদী, বিলে মৎস্য চাষ।
১) প্রজনন মৌসুমে মাছ না ধরা।
২) খাঁচা পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ।
=ভাসমান সবজি চাষ।
=অধিক ঘনত্বে চিংড়ি ও অন্য মাছ চাষ।
=কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে উপজেলার নির্দিষ্ট স্থানে সিসি ক্যামেরার আওতায় কৃষি ভর্তুকি প্রদান।
=মাছ, মুরগি ও পশুখাদ্য প্রস্তুতের কারখানা এবং গাভী পালনে ভর্তুকি।
=হাওড়ে হাঁস চাষ ও হ্যাচারিতে ডিম ফুটানো।
চাঁদাবাজি রোধে পদক্ষেপÑ
=কেবল ৫০ হাজার টাকায় একটি অঢ়ঢ়ং ফবাবষড়ঢ় করা হয়েছে; যা চাঁদাবাজি ও মাদক সন্ত্রাস নিরসনে ব্যবহৃত হতে পারে। এ অঢ়ঢ়ং-এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও ফোনকলকারীর নিকটবর্তী সেন্টারে দায়িত্বরত পুলিশ বা ঔড়রহঃ ঋড়ৎপব-এর কাছে একসাথে নক (কহড়পশ) হবে।
=প্রতিদিনের টহধঃঃবহফবফ জবঢ়ড়ৎঃ যাবে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের কাছে।
=টহধঃঃবহফবফ জবঢ়ড়ৎঃ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের পাক্ষিক সভা।
=টহল দলে এক পুলিশ বা যৌথ বাহিনীর (ঔড়রহঃ ঋড়ৎপব) এক সদস্য ২ মাসের মধ্যে দু’বার নয়।
=এছাড়া শুধু দ্রব্যমূল্য পরিবহন সংক্রান্ত জরুরি সেবা নম্বর থাকবে ১১১।
লক্ষ্যণীয় বিষয়Ñ
১. ইড়ঃঃড়স ঃড় ঞড়ঢ় অঢ়ঢ়ৎড়ধপয।
২. প্রান্তিক কৃষক বা উৎপাদনকারীর ওপর কোনো চাপ নেই।
৩. এক উপজেলার এক সপ্তাহের মূল্য গ্রহণের জন্য সর্বোচ্চ ৫ জন সরকারি ব্যক্তি প্রয়োজন।
৪. ভূপ্রকৃতি, যোগাযোগ, মৌসুম ও উৎপাদনের কারণে ২ উপজেলা বা জেলায় একই পণ্যের দামে ভিন্নতা হতে পারে। তবে ঢাকা বা চট্টগ্রামের শহর এলাকায় দাম এক হবে।
৫. দেশব্যাপী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার দর যাচাই মাত্র একবার এবং তা গ্রামের হাটে।
৬. গুণগত মান বিবেচনায় মূল্যে নিম্নসীমা-ঊর্ধ্বসীমা থাকবে। যেমনÑ টমেটো ১৭ থেকে ২১ টাকা।
৭. বড় বা ছোট উপজেলা হলেও ব্যবস্থাপনায় সমস্যা নেই।
৮. বাজার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে দ্রব্যমূল্য নির্ধারিত হবে বিধায় দেশব্যাপী বিক্রেতা সমাজ সন্তুষ্ট ও আশ্বস্ত থাকবেন।
৯. গ্রামের হাটে এক বস্তা বাঁধাকপি ২০ টাকা, অন্যদিকে ঐদিনে ঢাকায় ১টি ৪০ টাকাÑ এমন অব্যবস্থাপনা বন্ধ হবে।
১০. কৃষক মূল্য না পেয়ে সবজি রাস্তায় ফেলে দেয়া বা গবাদিপশুকে খাওয়ানোর দৃশ্য আর হবে না।
১১. মূল্যে পরিমিতি ও জবাবদিহিতা আসবে বিধায় কৃষক, ব্যবসায়ী, ভোক্তার মধ্যে সেতুবন্ধন রচিত হবে।
১২. উৎপাদক বা কৃষকের বিক্রয়ের সুবিধা বৃদ্ধি। কারণ গ্রামের বাজারে মূল্য না পেলে বিনা ভাড়ায় শহরে পরিবহনের সুযোগ।
১৩. ঋববফ মূল্য নিয়ন্ত্রণ করলে কমবে দুধ, ডিম, মাছ, মুরগি, গরুর মাংস ও উপজাত (ঘি, মিষ্টি, কেক) ইত্যাদির দাম।
সরকারের অনুমোদন হলে এ মডেলের অনুসরণে গুদামজাতকৃত, আমদানিকৃত ও অন্যান্য পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ পরবর্তীতে প্রণীত হবে।
লেখক: যুগ্ম সচিব, মোংলা বন্দর

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন

আপডেট সময় : ০৫:১৩:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

কাজী আবেদ হোসেন : নিয়ন্ত্রিত হতে যাচ্ছে দ্রব্যমূল্য। ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ’ ও ‘সহনীয় মূল্যে ইলিশপ্রাপ্তির মডেল’ সরকারের কাছে উপস্থাপিত হয়েছে। মোংলা বন্দরের সদস্য কাজী আবেদ হোসেন (যুগ্ম সচিব) এ মডেল দেন। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এ মডেলের প্রস্তাবনা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। যাচাই-বাছাই করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়ে ১৫ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পত্র দেয়। কাজী আবেদ হোসেন ২০০৩ সালে বান্দরবানের পর্যটন স্পট নীলাচলের আবিষ্কারক। তিনি প্রজননের সময় ইলিশ মাছ না ধরার মডেল সৃষ্টি করেন এবং দুটি উপজেলায় ৫ বছর এ মডেল বাস্তবায়ন করে ২০০৯ সালে জাতীয় স্বর্ণপদক পান। এ মডেল ২০১১ থেকে সারা দেশে প্রতিষ্ঠিত ও চলমান।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেলটিতে সরকারের অর্থ ব্যয় হবে না; অতিরিক্ত জনবলের প্রয়োজন নেই; নতুন আইন তৈরির প্রয়োজন নেই; সাধারণ মানুষের সহজে বোধগম্য এবং তাৎক্ষণিক বাস্তবায়ন সম্ভব। রূপরেখা সংক্ষেপে নিম্নরূপÑ
দুটি কমিটি হবে (কোটা আন্দোলনে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর স্মরণেও হতে পারে)।
কমিটি-১ : সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এবং উপজেলার প্রতিটি হাটের সভাপতি ও সেক্রেটারি সদস্য হবেন।
কমিটি-২: উপজেলা প্রশাসন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
উপজেলায় বাস্তবায়ন পদ্ধতিÑ
ক) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তালিকা হবে।
খ) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রুটিন করে দায়িত্ব দেয়া হবে। গ্রামের হাট থেকে তালিকাভুক্ত পণ্যের মৌলিক মূল্য সংগ্রহ করবেন তারা।
গ) প্রতিটি পণ্যের গড়মূল্যের ওপর ‘কমিটি-১’ উপজেলার মূল্য নির্ধারণ করবে; উপজেলার বাজারের সভাপতি সেক্রেটারির আবশ্যিক উপস্থিতিতে।
ঘ) উপজেলার বাজারগুলির দৃশ্যমান স্থানে সাইনবোর্ডে মূল্য তালিকা ২৪ ঘণ্টা প্রদর্শিত হবে।
ঙ) স্থানীয় ডিস চ্যানেলে সরকারি মূল্য প্রচার হবে।
চ) বিক্রেতাকে অবশ্যই তার পণ্যের সরকারি দর সাইনবোর্ডে দেখে বাজারে বিক্রি করতে হবে।
ছ) সিভিল পোশাকে ক্রেতার বেশে ‘কমিটি ২’-এর সদস্যরা বাজারে বিচ্ছিন্নভাবে লক্ষ্য রাখবেন। ব্যত্যয় হলে মোবাইল কোর্ট।
এভাবে ৪৯৫টি বা সব উপজেলায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত হবে।
জেলা ও বিভাগÑ
ক) জেলা ও বিভাগীয় শহরকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করতে হবে।
খ) ইউএনও সরকারি মূল্য তালিকা জগঝ-এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠাবেন।
গ) গড় মূল্যের ওপর ‘কমিটি-১’ জেলার বা বিভাগীয় শহরের মূল্য নির্ধারণ করবে বাজারের সভাপতি সেক্রেটারিদের উপস্থিতিতে।
ঘ) জেলার বাজারগুলির দৃশ্যমান স্থানে সাইন বোর্ডে মূল্য তালিকা ২৪ ঘণ্টা প্রদর্শিত হবে।
ঙ) স্থানীয় ডিশ চ্যানেলে সরকারি মূল্য প্রচার হবে।
চ) বিক্রেতাকে অবশ্যই তার পণ্যের সরকারি দর সাইনবোর্ডে দেখে বাজারে বিক্রি করতে হবে।
ছ) সিভিল পোশাকে ক্রেতার বেশে ‘কমিটি ২’-এর সদস্যরা বাজারে বিচ্ছিন্নভাবে লক্ষ রাখবেন। ব্যত্যয় হলে মোবাইল কোর্ট।
এভাবে ৬৪ জেলা ও বিভাগীয় শহরে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত হবে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামÑ
ক) অনেক অঞ্চলে বিভক্ত হবে বাজারগুলো।
খ) জগঝ-এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসন হতে প্রেরিত দেশের সকল জেলার মূল্যের ওপর গড় মূল্য হবে।
গ) পরিবহন ও লাভ বিবেচনায় ‘কমিটি-১’ মূল্য নির্ধারণ করবে বাজারের সভাপতি-সেক্রেটারিদের উপস্থিতি।
ঘ) ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারগুলোর দৃশ্যমান স্থানে সাইনবোর্ডে মূল্য তালিকা ২৪ ঘণ্টা প্রদর্শিত হবে।
ঙ) সব সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সরকারি মূল্য প্রচার হবে।
বিক্রেতাকে অবশ্যই তার পণ্যের সরকারি দর সাইনবোর্ডে দেখে বাজারে বিক্রি করতে হবে।
চ) সিভিল পোশাকে ক্রেতার বেশে ‘কমিটি ২’-এর সদস্যরা বাজারে বিচ্ছিন্নভাবে লক্ষ্য রাখবেন। ব্যত্যয় হলে মোবাইল কোর্ট।
ছ) প্রয়োজনে সিটি কর্পোরেশনের ও বিভাগীয় প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় হবে।
এভাবে সারা দেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত হবে।
স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনায় থাকবেÑ
১) উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম থেকে মালগাড়িতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য রাত ২টা ৩০ মিনিটের মধ্যে ঢাকায় আসবে। যানজট এড়াতে ভোর ৬টার মধ্যে ট্রাকে করে সব বাজারে পণ্য যাবে। মালগাড়িতে পরিবহনে কোন ভাড়া দিতে হবে না।
২) পচনশীল পণ্যের ট্রাকে কোন টোল দিতে হবে না।
৩) উল্লেখযোগ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানের ভাড়া সরকার নির্ধারণ করবে।
৩) মডেলটিকে আরও প্রয়োগযোগ্য করতে অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞজন সমন্বয়ে একটি গবেষণা কমিটি হবে।
৪) কোনো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি বা দেশে ঘাটতি দেখা দিলে তা রপ্তানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে।
৫) সীমান্ত দিয়ে পাচার বন্ধে বিজিবির নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে।
বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য বিষয়Ñ
১) আড়ত ও ঈড়ষফ ঝঃড়ৎধমব সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত থাকবে। মৌসুম ছাড়া ২০ দিনের বেশি মজুদ নয় (আলু ছাড়া)।
২) গ্রামে হাটের প্রান্তিক মূল্যে ঊর্ধ্বগতি হলে এ মডেলের সাথে নতুন ভাবনা সংযোজিত হবে।
৩) কৃষক (যদি থাকেন) ও হাট প্রতিনিধি পর পর দুই সভায় অনুপস্থিত থাকলে ব্যবস্থা।
৪) দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিলে গবেষণা কমিটির জরুরি সভা।
৫) তৃণমূল থেকে একটা শৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে সড়কে ও বাজারে সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি, ফড়িয়া, মজুদদারীর সুযোগ নেই।
৬) ০২-০৩ মাস পর মডেলের পরিবর্ধন বা পরিমার্জন করা।
৭) বন্যা বা অন্য কারণে কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে আড়তে ও ঈড়ষফ ঝঃড়ৎধমব-এ ১৫ দিনের বেশি মজুদ নয় (আলু ছাড়া)।
৮) সাধারণ মানুষকে জানাতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে।
৯) বিভিন্ন অঢ়ঢ়ং তৈরি ও সংযোজনের মাধ্যমে পদ্ধতিকে আরও সহজ করতে হবে।
উৎপাদন বৃদ্ধিকরণে পদক্ষেপÑ
= ডিজেলের মূল্য কমানো।
= হাওর, নদী, বিলে মৎস্য চাষ।
১) প্রজনন মৌসুমে মাছ না ধরা।
২) খাঁচা পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ।
=ভাসমান সবজি চাষ।
=অধিক ঘনত্বে চিংড়ি ও অন্য মাছ চাষ।
=কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে উপজেলার নির্দিষ্ট স্থানে সিসি ক্যামেরার আওতায় কৃষি ভর্তুকি প্রদান।
=মাছ, মুরগি ও পশুখাদ্য প্রস্তুতের কারখানা এবং গাভী পালনে ভর্তুকি।
=হাওড়ে হাঁস চাষ ও হ্যাচারিতে ডিম ফুটানো।
চাঁদাবাজি রোধে পদক্ষেপÑ
=কেবল ৫০ হাজার টাকায় একটি অঢ়ঢ়ং ফবাবষড়ঢ় করা হয়েছে; যা চাঁদাবাজি ও মাদক সন্ত্রাস নিরসনে ব্যবহৃত হতে পারে। এ অঢ়ঢ়ং-এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও ফোনকলকারীর নিকটবর্তী সেন্টারে দায়িত্বরত পুলিশ বা ঔড়রহঃ ঋড়ৎপব-এর কাছে একসাথে নক (কহড়পশ) হবে।
=প্রতিদিনের টহধঃঃবহফবফ জবঢ়ড়ৎঃ যাবে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের কাছে।
=টহধঃঃবহফবফ জবঢ়ড়ৎঃ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের পাক্ষিক সভা।
=টহল দলে এক পুলিশ বা যৌথ বাহিনীর (ঔড়রহঃ ঋড়ৎপব) এক সদস্য ২ মাসের মধ্যে দু’বার নয়।
=এছাড়া শুধু দ্রব্যমূল্য পরিবহন সংক্রান্ত জরুরি সেবা নম্বর থাকবে ১১১।
লক্ষ্যণীয় বিষয়Ñ
১. ইড়ঃঃড়স ঃড় ঞড়ঢ় অঢ়ঢ়ৎড়ধপয।
২. প্রান্তিক কৃষক বা উৎপাদনকারীর ওপর কোনো চাপ নেই।
৩. এক উপজেলার এক সপ্তাহের মূল্য গ্রহণের জন্য সর্বোচ্চ ৫ জন সরকারি ব্যক্তি প্রয়োজন।
৪. ভূপ্রকৃতি, যোগাযোগ, মৌসুম ও উৎপাদনের কারণে ২ উপজেলা বা জেলায় একই পণ্যের দামে ভিন্নতা হতে পারে। তবে ঢাকা বা চট্টগ্রামের শহর এলাকায় দাম এক হবে।
৫. দেশব্যাপী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার দর যাচাই মাত্র একবার এবং তা গ্রামের হাটে।
৬. গুণগত মান বিবেচনায় মূল্যে নিম্নসীমা-ঊর্ধ্বসীমা থাকবে। যেমনÑ টমেটো ১৭ থেকে ২১ টাকা।
৭. বড় বা ছোট উপজেলা হলেও ব্যবস্থাপনায় সমস্যা নেই।
৮. বাজার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে দ্রব্যমূল্য নির্ধারিত হবে বিধায় দেশব্যাপী বিক্রেতা সমাজ সন্তুষ্ট ও আশ্বস্ত থাকবেন।
৯. গ্রামের হাটে এক বস্তা বাঁধাকপি ২০ টাকা, অন্যদিকে ঐদিনে ঢাকায় ১টি ৪০ টাকাÑ এমন অব্যবস্থাপনা বন্ধ হবে।
১০. কৃষক মূল্য না পেয়ে সবজি রাস্তায় ফেলে দেয়া বা গবাদিপশুকে খাওয়ানোর দৃশ্য আর হবে না।
১১. মূল্যে পরিমিতি ও জবাবদিহিতা আসবে বিধায় কৃষক, ব্যবসায়ী, ভোক্তার মধ্যে সেতুবন্ধন রচিত হবে।
১২. উৎপাদক বা কৃষকের বিক্রয়ের সুবিধা বৃদ্ধি। কারণ গ্রামের বাজারে মূল্য না পেলে বিনা ভাড়ায় শহরে পরিবহনের সুযোগ।
১৩. ঋববফ মূল্য নিয়ন্ত্রণ করলে কমবে দুধ, ডিম, মাছ, মুরগি, গরুর মাংস ও উপজাত (ঘি, মিষ্টি, কেক) ইত্যাদির দাম।
সরকারের অনুমোদন হলে এ মডেলের অনুসরণে গুদামজাতকৃত, আমদানিকৃত ও অন্যান্য পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ পরবর্তীতে প্রণীত হবে।
লেখক: যুগ্ম সচিব, মোংলা বন্দর