মতিউর রহমান মানিক মোল্লা
উজিরপুর উপজেলা। বরিশালের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেকটাই দখল করে আছে এ উপজেলার সংস্কৃতি। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মানুষের মুখে মুখে যে সব শব্দ, বাক্য উচ্চারিত তা যেন আমাদের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। গ্রামের সহজ-সরল মানুষের এসব কথাবার্তার মধ্যে নীতিকথা, জ্ঞান, শিক্ষণীয় তথ্য লুকিয়ে থাকে। যুগ যুগ ধরে মৌখিকভাবে এসব লোককথা, ছড়া, নীতিকথার প্রচলন হয়ে আসছে। শত শত বছর আগের সেই কথাগুলো এখনো গ্রামের মানুষের মৌখিক মাধ্যমে বেঁচে আছে। নগরসভ্যতা যেভাবে আমাদের মন-মানসিকতাকে প্রভাবিত করছে তাতে অদূর-ভবিষ্যতে এসব হয়তো ভুলেও যেতে পারে মানুষেরা। লোকপরম্পরায় এসব কথা এলাকাভেদে ভিন্নতা লক্ষ করা যায়।
১.ছাল নাই কুত্তার বাগা নাম (হস্তিশুন্ড, উজিরপুর)
২. ল্যাজ নাই কুত্তার বাগা তার ফাল (মশাং, ওটরা)
৩. ল্যাজ নাই কুহুরের বাগা তার নাম (কালিহাতি, বামরাইল)
৪. ছাল নাই কুত্তার বাগা তার নাম (মুন্ডপাশা, শিকারপুর)
৫. ছাল নাই কুহুরের বাগা হ্যার নাম (গাজিরপাড়, বড়াকোঠা)
শব্দ পরিচিতি : ছাল=চামড়া, ফাল=লাফালাফি, কুহুর=কুত্তা/কুকুর, হ্যার=তার, বাগা=বাঘ
প্রেক্ষাপট : সমাজে এমন কত মানুষ আছে যারা নিজের অবস্থানের চেয়ে বেশি ভাব ধরে। বাড়িতে পান্তা খেয়ে এসে বাজারে গল্প করে রুই মাছের মাথা দিয়ে খেয়ে এসেছে। আবার পকেটে টাকা-পয়সা না থাকলেও প্রকাশ করে সে অনেক ধনী। এসব লোক অন্য গেলে গল্প করে- ‘আমাদের গ্রামে আমার উপরে আর কোনো মাতবর নেই। আমি যা বলবো গ্রামে তাই হবে। আমি সবার উপরে।’ এজন্য প্রবাদবাক্যটিতে বাঘের কথা বলা হয়েছে। বনের মধ্যে বাঘ যেমন দাপট দেখায় তেমনি সমাজের এই চরিত্রের লোকগুলো নিজেকে বড় করে জাহির করতে চায়। এই প্রবাদবাক্যটি বাংলাদেশের অন্য এলাকায়ও শোনা গেছে।
সংগ্রহকারী : মতিউর রহমান মানিক মোল্লা
সংগ্রহের স্থান: হস্তিশুন্ড, বামরাইল, উজিরপুর
সংগ্রহের সময় : ২০২২ ইংরেজি
মোবাইল-০১৭১২০০৭৮৪৮