বিনোদন প্রতিবেদক : সংগীতশিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল স্মরণে রাজধানীর মহিলা সমিতি মিলনায়তনে ‘সেদিনের এক বিকেলে’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় সম্প্রতি। অনুষ্ঠানে অতিথিদের স্মৃতিচারণের মধ্যদিয়ে জুয়েলের সংগীত জীবন, কর্মজীবন ও বন্ধুত্বের নানা দিক উঠে আসে। সংগীত শিল্পী বাপ্পা মজুমদার, রাশিদ খান ও মাসুদুজ্জামানের উপস্থাপনায় স্মৃতিচারণমূলক আলোচনায় অংশ নেন সংগীতশিল্পী নকীব খান, গীতিকার জুলফিকার রাসেল, নির্মাতা সৈয়দ আওলাদ ও আ কা রেজা গালিব, অভিনেতা গাউসুল আলম শাওন, আবৃত্তিকার শিমুল মুস্তাফাসহ জুয়েল পরিবারের সদস্য ও বন্ধুরা। যে অনুষ্ঠানে জুয়েলের কথা ও গানের সূত্র ধরে বক্তাদের কণ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে স্মৃতিকাতরতা। অনুষ্ঠানে বাপ্পা মজুমদার জুয়েলের গাওয়া জনপ্রিয় কিছু গান পরিবেশন করেন এবং শিমুল মুস্তাফা আবৃত্তি করেন। এছাড়া, অডিও-ভিজুয়াল প্রদর্শনের মাধ্যমে জুয়েলের বৈচিত্র্যময় জীবনের বিভিন্ন দিকের ওপর আলোকপাত করা হয়। শিল্পীর নিকটতম বন্ধুরা ৪ অক্টোবর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বন্ধু জুয়েলের স্মৃতিকে চির অম্লান করে রাখার উদ্দেশ্যেই এ আয়োজন বলে আয়োজকরা জানান। বাংলাদেশে মেলোডি ধাঁচের গানে দর্শক শ্রোতার কাছে প্রিয় নাম জুয়েল। ১০টি একক অ্যালবামসহ ৫০-এর অধিক যৌথ অ্যালবামে গান করেন জুয়েল। তার গানের মধ্যে ‘সেদিনের এক বিকেলে’, ‘চোখের ভেতর স্বপ্ন থাকে’, ‘সামনে তোমার চাঁদের পাহাড়’, ‘আমার আছে অন্ধকার’, ‘খুব সকালে’ গানগুলো উল্লেখযোগ্য।
হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন বহুগুণে গুণান্বিত একজন মানুষ। দেশের টেলিভিশন মিডিয়ায় সফল অনুষ্ঠান নির্মাতা হিসেবেও সমাদৃত। ‘বলতে চাই’, ‘মিথস্ক্রিয়া’, ‘মিউজিক ক্যাফে’, ‘লাক্স সুপার স্টার’, ‘নতুন ঢাকের বাজনা’, ‘সরাসরি’ তার নির্মিত উল্লেখযোগ্য টিভি অনুষ্ঠান। এছাড়াও ‘সেরা রাঁধুনি’, ‘স্পেলিং বি’, ‘বাউলিয়ানা’, ‘ক্ষুদে গানরাজ’ ইত্যাদি রিয়ালিটি শো-গুলো দর্শকের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। জুয়েল চ্যানেল আইয়ের হেড অব ইভেন্ট এবং মাছরাঙা টেলিভিশনে হেড অব প্রোগ্রাম হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ছিলেন একজন সফল ইভেন্ট আয়োজক। দেশ ও দেশের বাইরে তারকাদের নিয়ে অনেক বড় ইভেন্টের আয়োজন করে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। দেশের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে বহু তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেন। একজন উপস্থাপক হিসেবেও তিনি টেলিভিশন ও টেলিভিশনের বাইরে নানা অনুষ্ঠানে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি প্রামাণ্যচিত্রও নির্মাণ করেছেন। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতর ও সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং কর্পোরেটদের জন্য ডকুমেন্টারি, বিজ্ঞাপনচিত্র, সচেতনতামূলক অডিও-ভিজুয়াল নির্মাণ করেছেন অসংখ্য। পেশাগত জীবনের বাইরে ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ ছিল তার অন্যতম শখ। তার ফটোগ্রাফি নিয়ে একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছিল। গত ৩০ জুলাই রাজধানীর একটি হাসপাতালে অকালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। তিনি দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ক্যানসারে ভুগছিলেন।