খুলনা সংবাদদাতা : খুলনার ব্যস্ততম গল্লামারীর মোড়ে প্রতিদিনই যানজট লেগেই থাকে। গল্লামারী সেতুর দুই পাড়ের দীর্ঘ যানজটের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষ সঠিক সময় গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না। মাঝেমধ্যে যানজটের ভয়াবহতা এতটাই তীব্র থাকে, পাঁচ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। এর মুখ্য কারণ ইজিবাইকের নৈরাজ্য। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সকালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ইংরেজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক মো. সামিউল হক গল্লামারী এলাকার তীব্র যানজটের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, লাইসেন্সের বাইরে কয়েক গুণ বেশি ইজিবাইক চলছে। এতে যানজট অসহনীয় হয়ে উঠছে। প্রতিনিয়ত শহরে ইজিবাইক বৃদ্ধির কারণে যাতায়াতে ভোগান্তি বাড়ছে নগরবাসীর। স্বল্প দূরত্বের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে সীমাহীন দুর্ভোগ ও সময়ের অপচয় হচ্ছে। ময়লাপোতার মোড়ের বাসিন্দা মো. হেলাল হোসেন বলেন, মোড়ে সারাদিন যানজট লেগে থাকে। সড়কে কোনো শৃঙ্খলা নেই। অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান না হওয়া, বিশেষ করে ইজিবাইকগুলোর অবাধ চলাচল শহরে অসহনীয় যানজট সৃষ্টি করছে। প্রয়োজনের অধিক এসব ইজিবাইকের কারণে যানজট কমছে না। ট্রাফিক পুলিশ গা ছাড়া ডিউটি করছে। অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে তাদের দৃশ্যমান অভিযান নেই। খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সূত্রে জানা গেছে, মহানগরে ৮ হাজার ইজিবাইক, ২ হাজার ৯৮টি মালবাহী ইজিবাইক ও ১৭ হাজার রিকশার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, নগরীতে বৈধ ইজিবাইকের সংখ্যা ৮ হাজার হলেও সড়কে চলছে এর দ্বিগুণ। মাসোয়ারা, ভুয়া ব্লু-বুক ও স্টিকার ব্যবহারসহ নানা উপায়ে চলছে অবৈধ এসব ইজিবাইক। ফলে মোড়ে মোড়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ঘটছে দুর্ঘটনা। চরম ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর গল্লামারী মোড়, ময়লাপোতা মোড়, ডাকবাংলোর মোড়, পিকচার প্যালেস মোড়, সদর থানার মোড়, শিববাড়ির মোড়, সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল, নিউ মার্কেটের সামনে, শান্তিধাম মোড়, পিটিআই মোড়ে প্রতিনিয়ত দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। রাস্তা পারাপারেও ভোগান্তির অন্ত নেই। যাত্রী ওঠানামা করতে রাস্তার সব জায়গায় দাঁড়াচ্ছে ইজিবাইক চালকরা। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। স্থানীয় কয়েকজন বলেন, উৎখাত হওয়া সরকারের আমলে বাস, সিএনজি, ইজিবাইক, ব্যাটারি চালিত রিকশাওয়ালা যা ইচ্ছা, তাই করতো। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর তাদের সাহস আরও বেড়ে গেছে। আইন তো মানেই না, সরকারের কথা বললেও পাত্তা দেয় না। তাদের ভাষ্য, ‘আগের সরকার পারে নাই, এই সরকার কি করবো?’ এজাজ নামে এক ইজিবাইক চালক জানান, তাদের অধিকাংশই নিয়ম মানে না। তারা মানতে চাইলে নানা রকম কথা শুনতে হয়। মানুষও নানা কথা শোনায়। ট্রাফিক সদস্যরাও কিছু করে না। শহরের বাইরে থেকে ইজিবাইক নগরীতে ঢুকে চলাচল করায় সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) খুলনা মহানগর শাখার উপদেষ্টা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, কেসিসির অনুমোদনের বাইরে সড়কে অনেক বেশি ইজিবাইক চলছে। এসব গাড়ির বেশির ভাগ চালক ট্রাফিক আইন না জানায় নগরীর বিভিন্ন সড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শাহরিয়ার মোহাম্মদ মিয়াজী বলেন, যানজট সমস্যার দ্রুত ও কার্যকর সমাধান করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। অবৈধ ইজিবাইক ইঞ্জিন চালিত রিকশা বন্ধের জন্য প্রথমে মাইকিং করা হবে। পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশা করি দ্রুতই নগরবাসী একটা পরিবর্তন দেখতে পাবেন।