ঢাকা ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

কাঠবিড়ালীর মতো দেখতে মার্মোট-এর দীর্ঘায়ুর রহস্য

  • আপডেট সময় : ০৬:৩৯:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৩৯ বার পড়া হয়েছে

নতুন এক গবেষণায় সম্প্রতি জানা গেছে মার্মোটের দীর্ঘ আয়ু হওয়ার রহস্য। কাঠবিড়াল জাতীয় ছোট আকারের এই প্রাণীরা মানুষের মতোই জীবনের প্রথম দিকে কষ্টের মুখোমুখি হয়, যা এদের স্বাস্থ্য ও জীবনকালের উপর সম্ভবত দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে।
‘কিউমুলেটিভ অ্যাডভার্সিটি ইনডেক্স (সিএআই)’ নামের টুল ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছেন কীভাবে প্রতিকূলতা প্রাণীদের উপর প্রভাব ফেলে। তবে এ টুল ব্যবহার করে প্রাথমিক জীবন কীভাবে বন্য প্রাণীদের উপর প্রভাব ফেলে সে সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। এটি বোঝার জন্য এখন ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফের্নিয়া লস অ্যাঞ্জেলস-এর জীববিজ্ঞানীরা হলুদ-পেটযুক্ত মার্মোটের ‘সিএআই’ তৈরি করেছেন। এজন্য বিজ্ঞানীরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ‘রকি মাউন্টেন বায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরি’র প্রতি। ৬২ বছর ধরে একটানা তথ্য সংগ্রহ করে চলেছে এই গবেষণাগার। এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে ‘ইকোলজি লেটার্স’-এ। একইসঙ্গে একটি রোডম্যাপও দেওয়া হয়েছে অন্যান্য প্রজাতির ক্ষেত্রে এইরকম সূচক তৈরির জন্য। হলুদ-পেটযুক্ত বিভিন্ন মার্মোটের জন্য সিএআই তৈরি করতে ২০০১ সালের পরে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন মেয়ে মার্মোটের উপর নজর দেন গবেষকরা। মেয়ে মার্মোটদের বেছে নেওয়ার কারণ, এরা পুরুষদের থেকে ভিন্ন। এরা যে অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করে সেখানেই এদের থাকার প্রবণতা বেশি থাকে। যার ফলে এদের পুরো জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ট্র্যাক করা সহজ। এ গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন মার্মোট, বাস করে দুটি স্বতন্ত্র গ্রুপে। এদের আলাদা করা হয়েছে ৯৮৪ ফুট দূরত্বে। এই বিভাজনের ফলে ‘আপ-ভ্যালি’ ও ‘ডাউন-ভ্যালি’ মার্মোট দলের জন্য বিভিন্ন পরিবেশগত ও জনসংখ্যাগত অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রতিটি মার্মোটের জীবন জুড়ে চলা নানা ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করেন গবেষকরা, যা এদের বেঁচে থাকাকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে এদের জীবনের প্রথম বছরের কয়েকটি ঘটনা। এরপর হালকা থেকে তীব্র পর্যন্ত প্রতিকূলতার মাত্রা পরিমাপ করতে কম্পিউটার মডেলগুলোতে এসব তথ্য ব্যবহার করেন বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি এসব স্তর কীভাবে মার্মোটের বেঁচে থাকা ও জীবনকালকে প্রভাবিত করে তাও খতিয়ে দেখেন তারা। প্রত্যাশিত ও বিস্ময়কর উভয় ফলাফলই প্রকাশ পেয়েছে এ গবেষণায়। যেমন-এটি কোনও আশ্চর্যের বিষয় ছিল না যে, বেড়ে ওঠার মৌসুম দেরিতে শুরু হওয়ার ফলে মার্মোটদের বেঁচে থাকার হার কমেছে। কারণ, দীর্ঘদিনের শীতনিদ্রা বা হাইবারনেশন থেকে বাঁচতে মার্মোটদের গ্রীষ্মের সময় নিজেদের ওজন যথেষ্ট বাড়াতে হয়। তবে গ্রীষ্মের খরা এদের বেঁচে থাকার ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি বলে অবাক হয়েছেন গবেষকরা। এ গবেষণার অন্যতম অনুসন্ধানের মধ্যে একটি ছিল মার্মোটদের মাতৃত্বকালীন ক্ষতির প্রভাব। মার্মোটছানার বেঁচে থাকার উপর বড় প্রভাব ফেলেছিল এদের মায়েদের মৃত্যুর বিষয়টি। এমনকি ছানাটিকে দুধ ছাড়ানোর পরে মা মারা যাওয়ার বেলাতেও। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, প্রথম বছরে মায়ের উপস্থিতি ছানাটির বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় প্রাপ্তবয়স্ক বিভিন্ন মার্মোটের গড় আয়ু ছিল ৩.৮ বছর। তবে যেসব মার্মোট প্রাথমিক জীবনে প্রতিকূলতার সর্বোচ্চ স্তরের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে সেসব মার্মোটদের আয়ু কম হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি ছিল।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কাঠবিড়ালীর মতো দেখতে মার্মোট-এর দীর্ঘায়ুর রহস্য

আপডেট সময় : ০৬:৩৯:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নতুন এক গবেষণায় সম্প্রতি জানা গেছে মার্মোটের দীর্ঘ আয়ু হওয়ার রহস্য। কাঠবিড়াল জাতীয় ছোট আকারের এই প্রাণীরা মানুষের মতোই জীবনের প্রথম দিকে কষ্টের মুখোমুখি হয়, যা এদের স্বাস্থ্য ও জীবনকালের উপর সম্ভবত দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে।
‘কিউমুলেটিভ অ্যাডভার্সিটি ইনডেক্স (সিএআই)’ নামের টুল ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছেন কীভাবে প্রতিকূলতা প্রাণীদের উপর প্রভাব ফেলে। তবে এ টুল ব্যবহার করে প্রাথমিক জীবন কীভাবে বন্য প্রাণীদের উপর প্রভাব ফেলে সে সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। এটি বোঝার জন্য এখন ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফের্নিয়া লস অ্যাঞ্জেলস-এর জীববিজ্ঞানীরা হলুদ-পেটযুক্ত মার্মোটের ‘সিএআই’ তৈরি করেছেন। এজন্য বিজ্ঞানীরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ‘রকি মাউন্টেন বায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরি’র প্রতি। ৬২ বছর ধরে একটানা তথ্য সংগ্রহ করে চলেছে এই গবেষণাগার। এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে ‘ইকোলজি লেটার্স’-এ। একইসঙ্গে একটি রোডম্যাপও দেওয়া হয়েছে অন্যান্য প্রজাতির ক্ষেত্রে এইরকম সূচক তৈরির জন্য। হলুদ-পেটযুক্ত বিভিন্ন মার্মোটের জন্য সিএআই তৈরি করতে ২০০১ সালের পরে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন মেয়ে মার্মোটের উপর নজর দেন গবেষকরা। মেয়ে মার্মোটদের বেছে নেওয়ার কারণ, এরা পুরুষদের থেকে ভিন্ন। এরা যে অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করে সেখানেই এদের থাকার প্রবণতা বেশি থাকে। যার ফলে এদের পুরো জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ট্র্যাক করা সহজ। এ গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন মার্মোট, বাস করে দুটি স্বতন্ত্র গ্রুপে। এদের আলাদা করা হয়েছে ৯৮৪ ফুট দূরত্বে। এই বিভাজনের ফলে ‘আপ-ভ্যালি’ ও ‘ডাউন-ভ্যালি’ মার্মোট দলের জন্য বিভিন্ন পরিবেশগত ও জনসংখ্যাগত অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রতিটি মার্মোটের জীবন জুড়ে চলা নানা ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করেন গবেষকরা, যা এদের বেঁচে থাকাকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে এদের জীবনের প্রথম বছরের কয়েকটি ঘটনা। এরপর হালকা থেকে তীব্র পর্যন্ত প্রতিকূলতার মাত্রা পরিমাপ করতে কম্পিউটার মডেলগুলোতে এসব তথ্য ব্যবহার করেন বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি এসব স্তর কীভাবে মার্মোটের বেঁচে থাকা ও জীবনকালকে প্রভাবিত করে তাও খতিয়ে দেখেন তারা। প্রত্যাশিত ও বিস্ময়কর উভয় ফলাফলই প্রকাশ পেয়েছে এ গবেষণায়। যেমন-এটি কোনও আশ্চর্যের বিষয় ছিল না যে, বেড়ে ওঠার মৌসুম দেরিতে শুরু হওয়ার ফলে মার্মোটদের বেঁচে থাকার হার কমেছে। কারণ, দীর্ঘদিনের শীতনিদ্রা বা হাইবারনেশন থেকে বাঁচতে মার্মোটদের গ্রীষ্মের সময় নিজেদের ওজন যথেষ্ট বাড়াতে হয়। তবে গ্রীষ্মের খরা এদের বেঁচে থাকার ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি বলে অবাক হয়েছেন গবেষকরা। এ গবেষণার অন্যতম অনুসন্ধানের মধ্যে একটি ছিল মার্মোটদের মাতৃত্বকালীন ক্ষতির প্রভাব। মার্মোটছানার বেঁচে থাকার উপর বড় প্রভাব ফেলেছিল এদের মায়েদের মৃত্যুর বিষয়টি। এমনকি ছানাটিকে দুধ ছাড়ানোর পরে মা মারা যাওয়ার বেলাতেও। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, প্রথম বছরে মায়ের উপস্থিতি ছানাটির বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় প্রাপ্তবয়স্ক বিভিন্ন মার্মোটের গড় আয়ু ছিল ৩.৮ বছর। তবে যেসব মার্মোট প্রাথমিক জীবনে প্রতিকূলতার সর্বোচ্চ স্তরের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে সেসব মার্মোটদের আয়ু কম হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি ছিল।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ