ঢাকা ০৮:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

বৈশ্বিক দক্ষতায় তারুণ্যের কর্মসামঞ্জস্যতা

  • আপডেট সময় : ০৫:২০:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৬৪ বার পড়া হয়েছে

কাজী বনফুল : বিশ্ব প্রতিনিয়ত নিজের অস্তিত্বের বিকাশ ক্রমশ পরিবর্তনের ধারায় বদলে নিচ্ছে, প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে পৃথিবীর চিন্তা ও ভবিষ্যতের মেরুকেন্দ্র। বদলে যাচ্ছে মানুষের চিন্তার ব্যাপ্তি, বদলে যাচ্ছে পুরাতন জীর্ণ কর্ম ও জীবনব্যবস্থা। আমাদের তারুণ্যের এই নব উদীয়মান প্রজন্মের সবচেয়ে বেশি জরুরি বৈশ্বিক সেই পরিবর্তনের ধারাকে ধরতে পারা। চাঁদের গবেষণাকে অতিক্রম করে বিশ্ব প্রসিদ্ধ মস্তিষ্কের কেন্দ্রবিন্দুর নজর এখন চাঁদের চেয়েও আরও বড় কোনো কিছুকে নিয়ে গবেষণা করা। খুঁজছে নতুন কোনো পৃথিবীর মতো গ্রহ যেখানে নতুন করে জীবনের স্বাদের আস্বাদন পাওয়ার যায় যেখানে ঘটানো যায় প্রাণের স্পন্দন।
পৃথিবীর প্রযুক্তি নাড়া দিচ্ছে মহাকাশের সীমাহীন অস্তিত্বের সীমানাকে। পৃথিবীর নব উদীয়মান তরুণরা নেতৃত্ব দিচ্ছে সেসব নতুন নতুন আবিষ্কারের পথের সন্ধানকে। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে নব চেতনার নব উদীয়মান ধারার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। এর আগে ওয়াশিংটন পোস্টে করা এক প্রতিবেদনে দেখলাম ভবিষ্যৎ নতুন প্রজন্মের চেতনার নব জ্ঞান ও শক্তিকে এমনভাবে কাজে লাগানোর জন্য গবেষণা করা হচ্ছে, যাতে মহাবিশ্বের গবেষণার ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রার সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়। তরুণদের নিয়ে তারা ভাবছে ভবিষ্যতে এমন এক পৃথিবী নির্মাণের, যেখানে কল্পনার জলপ্রপাতের মতো উপচে পড়বে তারুণ্যের সম্ভাব্য শক্তি।
তরুণরা হয়ে উঠছে তাদের চিন্তার মূল সুগন্ধি পুষ্প যাতে তারা সে ঘ্রাণে মাতোয়ারা করতে পারে ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে। কোনোভাবেই যেন তারা পৃথিবীর উচ্ছিষ্ট বা বোঝায় পরিণত না হয়ে ওঠে, এদিকেই তাদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ। তরুণদের নিয়ে তাদের এমন ভবিষ্যৎবাহী চিন্তা সত্যিই আমাদের আশান্বিত করে, উজ্জীবিত করে। আমাদের যেহেতু এগিয়ে যেতেই হবে, পিছিয়ে থাকার যেহেতু কোনো সুযোগ নেই, সেহেতু আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে যেন সেই নব উদীয়মান ধারার বাহকের মতো সামঞ্জস্য করে তুলতে পারি, সেটাই হবে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ ও সাফল্যের অপরিহার্য চাবিকাঠি।
আমাদের তারুণ্যকে যদি বৈশ্বিক এ চলক প্রক্রিয়ার সঙ্গে এখনই যথেষ্ট সচেতনতার সঙ্গে সামঞ্জস্য করে গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে আমাদের পিছিয়ে পড়া বা ডুবে যাওয়াকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। যেখানে উন্নত দেশগুলোতে ছোট ছোট বাচ্চাকে শৈশবের ভেতর দিয়েই প্রস্তুত করা হয় ভবিষ্যৎ পৃথিবীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে নতুন নতুন চিন্তার প্রকোষ্ঠের বাতায়নে, সেখানে আমরা আমাদের বাচ্চাদের মাথায় গেঁথে দিচ্ছি সেই আদি একরোখা জীবন ব্যবস্থার গতানুগতিক পুথি। মাথায় ঢুকিয়ে রেখেছি পুরাতন কালের সেই জীর্ণ চিন্তার একমুখী আবেদন। তাদের মাথাকে ওপরের দিকে তুলতে না দিয়ে জোরপূর্বক চেপে রাখছি নিচের অপ্রশস্ত কামরার মধ্যে, যা একবিংশ শতাব্দীর এই উন্নত ও আধুনিক চিন্তার প্রতিযোগিতার যুগে এসে কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বিগত সরকার তারুণ্যের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল কিরণের পথের সন্ধান খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয়ছে। যেখানে পৃথিবীর সমগ্র উন্নতির বেশির অবদান তরুণদের এবং তাদের দিয়ে নতুনত্বের সন্ধান ও উৎকর্ষতার মধ্যে পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই মূল উদ্দেশ্য, সেখানে বিগত সরকার তরুণদের মাথায় চাপিয়ে দিয়েছে শুধুই একগাদা সার্টিফিকেট নামক কাগজের বোঝা। যেখানে পৃথিবী তরুণদের নিয়ে চিন্তা করছে পরবর্তী কোনো দিগন্তের নতুন কোনো অজানা ঠিকানা খোঁজার, সেখানে বিগত সরকার তরুণদের করেছে শুধুই অনার্স-মাস্টার্সের শিরোপাজয়ী খেলোয়াড়। এই সার্টিফিকেট নামক কাগজ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের বোঝা, অনার্স-মাস্টার্স হয়ে উঠেছে অপ্রয়োজনীয় ও দুর্ভাগ্যজনক বিষয়! এখন সে সার্টিফিকেট নিয়ে তারা প্রতিনিয়ত এক টুকরো রুটির আশায় ঘুরে ফিরছে রাষ্ট্রের দ্বারে দ্বারে, অথচ তাদের দিয়ে পরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা যেত রুটি তৈরির বিরাট কারখানা, কর্মমুখর বিদ্যানিকেতন, জীবনমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা।
চারপাশে অনার্স-মাস্টার্স নামক অসহায়দের কী করুণ ও নিদারুণ চিৎকার-চেঁচামেচি অথচ এ চিৎকার-চেঁচামেচিকে সবাই কী দারুণ আনন্দে উপেক্ষা করেছে ভীষণ পরিহাসে। অথচ তারা সেই অনার্স-মাস্টার্স নামক সার্টিফিকেটের ভারে নুইয়ে পড়েছে খেজুরের মড়া পাতার মতো। আজ সবাই তাদের ডাকছে বেকার নামক অভিশাপ হিসেবে। অথচ এ তারুণ্যকে কত দারুণভাবে রাষ্ট্রের জন্য পৃথিবীর জন্য কাজে লাগানো যেত। কী দারুণভাবে তাদের তৈরি করা যেত ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো।
একটা ছেলে দেখলাম সেদিন মাস্ক পরে রিকশা চালাচ্ছে। তার সঙ্গে কথা বলার পর জানতে পারলাম, সে বাংলাদেশের পড়াশোনা এরই মধ্যে শেষ করেছে মানে অনার্স-মাস্টার্স। সে বলল, ভাই, অনেক চেষ্টা করেছি চাকরি জোটাতে। কিন্তু পারিনি। মানুষের দ্বারে দ্বারে অনেক ঘুরেছি, আশ্বাস পেয়েছি, স্বপ্ন দেখিয়েছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি, বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচেনি। এর চেয়ে নিজেই ইনকাম করছি সেটাই ভালো। ঘরে বৃদ্ধ মা-বাবা আছে, তাদের তো খাওয়াতে হবে। তাই এ পথ বেছে নিয়েছি। এখন প্রতিদিনের ভাতের জোগাড়টাই আসল কথা। তাই এ পথ বেছে নিয়েছি। এমন দৃশ্য আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় আমরা শুধুই সার্টিফিকেটের মেশিন প্রস্তুত করেছি কিন্তু কোনো বিশেষ প্রয়োজনে দক্ষ ও কর্মক্ষম করে তাদের গড়ে তুলতে পারিনি। তাদের জন্য পৃথিবীর বৈশ্বিক প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে নতুন কোনো কর্মপরিকল্পনা আমরা প্রস্তুত করতে পারিনি।
এখনো সময় ফুরিয়ে যায়নি, এখনো যথেষ্ট সচেতনতার সঙ্গে যদি ভবিষ্যৎ পৃথিবীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে তরুণদের কাজে লাগানো যায়, তাহলে বেকারত্বের অভিশাপকে বরে রূপান্তর করতে খুব বেশি সময় লাগবে না। যে অঞ্চলে সবাই এক পথের পথিক হয়ে ওঠে, সে অঞ্চলের সেই পথ পথিকের হাঁটার যোগ্যতা হারায়। ধূলি, গর্ত ও কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে সেই পথ, যা পথিকের জন্য আর স্বাস্থ্যকর থাকে না। এক পথে যখন সবাই একসঙ্গে হাঁটে, তখন সে পথ মানুষের জঙ্গলে পরিণত হয়। মানুষে মানুষে ধাক্কাধাক্কির কারণে সৃষ্টি হয় এক অরাজক পরিস্থিতি, যার ফলে কেউ আর সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। অধিকাংশই হয়ে পড়ে গন্তব্যহীন পথভ্রষ্ট পথিক। তাই আমাদের অবশ্যই পথের ভিন্নতা খুঁজতে হবে। কর্মক্ষেত্রে সবার এ একপক্ষীয় পদযাত্রা রুখে দিতে হবে। কর্ম ও জীবনের ভিন্নতা মানুষ ও ভবিষ্যৎ সমাজের জন্য এক সুবৃক্ষের বীজ রোপণ করে, যা বর্তমানে অনুভব করতে না পারলেও ভবিষ্যতে তার ফল প্রাপ্তি অবশ্যই ঘটবে।
বর্তমান সরকার ও রাষ্ট্রকে অবশ্যই ভবিষ্যৎ পৃথিবীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে তরুণদের কাজে লাগাতে হবে। কোনো একপক্ষীয় জীবনব্যবস্থা যেন কোনোভাবেই তাদের ওপর জেঁকে বসতে না পারে, সেদিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। ভবিষ্যৎ পৃথিবী প্রযুক্তি ও জ্ঞাননির্ভর পৃথিবী, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা চাইলেই পৃথিবীর এ সামগ্রিক গতিপথকে পরিবর্তন করতে পারব না কিন্তু অবশ্যই আমরা চাইলে নিজেদের ভবিষ্যৎ সময়ের জন্য প্রস্তুত করতে পারি। বর্তমান সরকারকে নতুন প্রজন্মকে নতুনত্বের সেই ধারার সঙ্গে সমন্বয় করে দক্ষ ও কর্মঠ করে গড়ে তুলতে হবে। বেকারত্বের বোঝা নামক অপশব্দকে কর্মবাহী শব্দে রূপান্তর করতে হবে, মুছে ফেলতে হবে তরুণদের ওপর আরোপিত বেকারত্ব নামক এই অপশব্দের অপবচন। পুরোনোরা যে ভুল করেছে, সে ভুল যেন আর না হয় সেদিকে খুব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নজর দিতে হবে। তরুণদের গড়ে তুলতে হবে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে থাকা যে কারও সঙ্গে জ্ঞান ও আলোর প্রতিযোগিতার যথাযথ প্রতিযোগী হিসেবে। কোনোভাবেই যেন সার্টিফিকেট নামক কাগজের সুপারশপ মাথায় নিয়ে কারও দ্বারা দ্বারে ঘুরে বেড়াতে না হয় তাদের। তরুণরা যেন নিজেরাই একটি সমৃদ্ধ ও বিশুদ্ধ চিন্তার প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে, সেদিকেই থাকুক রাষ্ট্রের বিশেষ নজর। কারণ তরুণরাই ভবিষ্যৎ পৃথিবীর দিকপাল।
লেখক: প্রাবন্ধিক

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বৈশ্বিক দক্ষতায় তারুণ্যের কর্মসামঞ্জস্যতা

আপডেট সময় : ০৫:২০:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কাজী বনফুল : বিশ্ব প্রতিনিয়ত নিজের অস্তিত্বের বিকাশ ক্রমশ পরিবর্তনের ধারায় বদলে নিচ্ছে, প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে পৃথিবীর চিন্তা ও ভবিষ্যতের মেরুকেন্দ্র। বদলে যাচ্ছে মানুষের চিন্তার ব্যাপ্তি, বদলে যাচ্ছে পুরাতন জীর্ণ কর্ম ও জীবনব্যবস্থা। আমাদের তারুণ্যের এই নব উদীয়মান প্রজন্মের সবচেয়ে বেশি জরুরি বৈশ্বিক সেই পরিবর্তনের ধারাকে ধরতে পারা। চাঁদের গবেষণাকে অতিক্রম করে বিশ্ব প্রসিদ্ধ মস্তিষ্কের কেন্দ্রবিন্দুর নজর এখন চাঁদের চেয়েও আরও বড় কোনো কিছুকে নিয়ে গবেষণা করা। খুঁজছে নতুন কোনো পৃথিবীর মতো গ্রহ যেখানে নতুন করে জীবনের স্বাদের আস্বাদন পাওয়ার যায় যেখানে ঘটানো যায় প্রাণের স্পন্দন।
পৃথিবীর প্রযুক্তি নাড়া দিচ্ছে মহাকাশের সীমাহীন অস্তিত্বের সীমানাকে। পৃথিবীর নব উদীয়মান তরুণরা নেতৃত্ব দিচ্ছে সেসব নতুন নতুন আবিষ্কারের পথের সন্ধানকে। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে নব চেতনার নব উদীয়মান ধারার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। এর আগে ওয়াশিংটন পোস্টে করা এক প্রতিবেদনে দেখলাম ভবিষ্যৎ নতুন প্রজন্মের চেতনার নব জ্ঞান ও শক্তিকে এমনভাবে কাজে লাগানোর জন্য গবেষণা করা হচ্ছে, যাতে মহাবিশ্বের গবেষণার ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রার সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়। তরুণদের নিয়ে তারা ভাবছে ভবিষ্যতে এমন এক পৃথিবী নির্মাণের, যেখানে কল্পনার জলপ্রপাতের মতো উপচে পড়বে তারুণ্যের সম্ভাব্য শক্তি।
তরুণরা হয়ে উঠছে তাদের চিন্তার মূল সুগন্ধি পুষ্প যাতে তারা সে ঘ্রাণে মাতোয়ারা করতে পারে ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে। কোনোভাবেই যেন তারা পৃথিবীর উচ্ছিষ্ট বা বোঝায় পরিণত না হয়ে ওঠে, এদিকেই তাদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ। তরুণদের নিয়ে তাদের এমন ভবিষ্যৎবাহী চিন্তা সত্যিই আমাদের আশান্বিত করে, উজ্জীবিত করে। আমাদের যেহেতু এগিয়ে যেতেই হবে, পিছিয়ে থাকার যেহেতু কোনো সুযোগ নেই, সেহেতু আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে যেন সেই নব উদীয়মান ধারার বাহকের মতো সামঞ্জস্য করে তুলতে পারি, সেটাই হবে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ ও সাফল্যের অপরিহার্য চাবিকাঠি।
আমাদের তারুণ্যকে যদি বৈশ্বিক এ চলক প্রক্রিয়ার সঙ্গে এখনই যথেষ্ট সচেতনতার সঙ্গে সামঞ্জস্য করে গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে আমাদের পিছিয়ে পড়া বা ডুবে যাওয়াকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। যেখানে উন্নত দেশগুলোতে ছোট ছোট বাচ্চাকে শৈশবের ভেতর দিয়েই প্রস্তুত করা হয় ভবিষ্যৎ পৃথিবীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে নতুন নতুন চিন্তার প্রকোষ্ঠের বাতায়নে, সেখানে আমরা আমাদের বাচ্চাদের মাথায় গেঁথে দিচ্ছি সেই আদি একরোখা জীবন ব্যবস্থার গতানুগতিক পুথি। মাথায় ঢুকিয়ে রেখেছি পুরাতন কালের সেই জীর্ণ চিন্তার একমুখী আবেদন। তাদের মাথাকে ওপরের দিকে তুলতে না দিয়ে জোরপূর্বক চেপে রাখছি নিচের অপ্রশস্ত কামরার মধ্যে, যা একবিংশ শতাব্দীর এই উন্নত ও আধুনিক চিন্তার প্রতিযোগিতার যুগে এসে কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বিগত সরকার তারুণ্যের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল কিরণের পথের সন্ধান খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয়ছে। যেখানে পৃথিবীর সমগ্র উন্নতির বেশির অবদান তরুণদের এবং তাদের দিয়ে নতুনত্বের সন্ধান ও উৎকর্ষতার মধ্যে পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই মূল উদ্দেশ্য, সেখানে বিগত সরকার তরুণদের মাথায় চাপিয়ে দিয়েছে শুধুই একগাদা সার্টিফিকেট নামক কাগজের বোঝা। যেখানে পৃথিবী তরুণদের নিয়ে চিন্তা করছে পরবর্তী কোনো দিগন্তের নতুন কোনো অজানা ঠিকানা খোঁজার, সেখানে বিগত সরকার তরুণদের করেছে শুধুই অনার্স-মাস্টার্সের শিরোপাজয়ী খেলোয়াড়। এই সার্টিফিকেট নামক কাগজ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের বোঝা, অনার্স-মাস্টার্স হয়ে উঠেছে অপ্রয়োজনীয় ও দুর্ভাগ্যজনক বিষয়! এখন সে সার্টিফিকেট নিয়ে তারা প্রতিনিয়ত এক টুকরো রুটির আশায় ঘুরে ফিরছে রাষ্ট্রের দ্বারে দ্বারে, অথচ তাদের দিয়ে পরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা যেত রুটি তৈরির বিরাট কারখানা, কর্মমুখর বিদ্যানিকেতন, জীবনমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা।
চারপাশে অনার্স-মাস্টার্স নামক অসহায়দের কী করুণ ও নিদারুণ চিৎকার-চেঁচামেচি অথচ এ চিৎকার-চেঁচামেচিকে সবাই কী দারুণ আনন্দে উপেক্ষা করেছে ভীষণ পরিহাসে। অথচ তারা সেই অনার্স-মাস্টার্স নামক সার্টিফিকেটের ভারে নুইয়ে পড়েছে খেজুরের মড়া পাতার মতো। আজ সবাই তাদের ডাকছে বেকার নামক অভিশাপ হিসেবে। অথচ এ তারুণ্যকে কত দারুণভাবে রাষ্ট্রের জন্য পৃথিবীর জন্য কাজে লাগানো যেত। কী দারুণভাবে তাদের তৈরি করা যেত ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো।
একটা ছেলে দেখলাম সেদিন মাস্ক পরে রিকশা চালাচ্ছে। তার সঙ্গে কথা বলার পর জানতে পারলাম, সে বাংলাদেশের পড়াশোনা এরই মধ্যে শেষ করেছে মানে অনার্স-মাস্টার্স। সে বলল, ভাই, অনেক চেষ্টা করেছি চাকরি জোটাতে। কিন্তু পারিনি। মানুষের দ্বারে দ্বারে অনেক ঘুরেছি, আশ্বাস পেয়েছি, স্বপ্ন দেখিয়েছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি, বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচেনি। এর চেয়ে নিজেই ইনকাম করছি সেটাই ভালো। ঘরে বৃদ্ধ মা-বাবা আছে, তাদের তো খাওয়াতে হবে। তাই এ পথ বেছে নিয়েছি। এখন প্রতিদিনের ভাতের জোগাড়টাই আসল কথা। তাই এ পথ বেছে নিয়েছি। এমন দৃশ্য আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় আমরা শুধুই সার্টিফিকেটের মেশিন প্রস্তুত করেছি কিন্তু কোনো বিশেষ প্রয়োজনে দক্ষ ও কর্মক্ষম করে তাদের গড়ে তুলতে পারিনি। তাদের জন্য পৃথিবীর বৈশ্বিক প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে নতুন কোনো কর্মপরিকল্পনা আমরা প্রস্তুত করতে পারিনি।
এখনো সময় ফুরিয়ে যায়নি, এখনো যথেষ্ট সচেতনতার সঙ্গে যদি ভবিষ্যৎ পৃথিবীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে তরুণদের কাজে লাগানো যায়, তাহলে বেকারত্বের অভিশাপকে বরে রূপান্তর করতে খুব বেশি সময় লাগবে না। যে অঞ্চলে সবাই এক পথের পথিক হয়ে ওঠে, সে অঞ্চলের সেই পথ পথিকের হাঁটার যোগ্যতা হারায়। ধূলি, গর্ত ও কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে সেই পথ, যা পথিকের জন্য আর স্বাস্থ্যকর থাকে না। এক পথে যখন সবাই একসঙ্গে হাঁটে, তখন সে পথ মানুষের জঙ্গলে পরিণত হয়। মানুষে মানুষে ধাক্কাধাক্কির কারণে সৃষ্টি হয় এক অরাজক পরিস্থিতি, যার ফলে কেউ আর সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। অধিকাংশই হয়ে পড়ে গন্তব্যহীন পথভ্রষ্ট পথিক। তাই আমাদের অবশ্যই পথের ভিন্নতা খুঁজতে হবে। কর্মক্ষেত্রে সবার এ একপক্ষীয় পদযাত্রা রুখে দিতে হবে। কর্ম ও জীবনের ভিন্নতা মানুষ ও ভবিষ্যৎ সমাজের জন্য এক সুবৃক্ষের বীজ রোপণ করে, যা বর্তমানে অনুভব করতে না পারলেও ভবিষ্যতে তার ফল প্রাপ্তি অবশ্যই ঘটবে।
বর্তমান সরকার ও রাষ্ট্রকে অবশ্যই ভবিষ্যৎ পৃথিবীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে তরুণদের কাজে লাগাতে হবে। কোনো একপক্ষীয় জীবনব্যবস্থা যেন কোনোভাবেই তাদের ওপর জেঁকে বসতে না পারে, সেদিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। ভবিষ্যৎ পৃথিবী প্রযুক্তি ও জ্ঞাননির্ভর পৃথিবী, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা চাইলেই পৃথিবীর এ সামগ্রিক গতিপথকে পরিবর্তন করতে পারব না কিন্তু অবশ্যই আমরা চাইলে নিজেদের ভবিষ্যৎ সময়ের জন্য প্রস্তুত করতে পারি। বর্তমান সরকারকে নতুন প্রজন্মকে নতুনত্বের সেই ধারার সঙ্গে সমন্বয় করে দক্ষ ও কর্মঠ করে গড়ে তুলতে হবে। বেকারত্বের বোঝা নামক অপশব্দকে কর্মবাহী শব্দে রূপান্তর করতে হবে, মুছে ফেলতে হবে তরুণদের ওপর আরোপিত বেকারত্ব নামক এই অপশব্দের অপবচন। পুরোনোরা যে ভুল করেছে, সে ভুল যেন আর না হয় সেদিকে খুব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নজর দিতে হবে। তরুণদের গড়ে তুলতে হবে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে থাকা যে কারও সঙ্গে জ্ঞান ও আলোর প্রতিযোগিতার যথাযথ প্রতিযোগী হিসেবে। কোনোভাবেই যেন সার্টিফিকেট নামক কাগজের সুপারশপ মাথায় নিয়ে কারও দ্বারা দ্বারে ঘুরে বেড়াতে না হয় তাদের। তরুণরা যেন নিজেরাই একটি সমৃদ্ধ ও বিশুদ্ধ চিন্তার প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে, সেদিকেই থাকুক রাষ্ট্রের বিশেষ নজর। কারণ তরুণরাই ভবিষ্যৎ পৃথিবীর দিকপাল।
লেখক: প্রাবন্ধিক