প্রত্যাশা ডেস্ক : কর ফাঁকি বন্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর আইনে নতুন বিধান যুক্ত করেছে। নতুন বিধানে এখন থেকে স্বামী, স্ত্রী বা নিজের পোষ্যের নামে থাকা সব সম্পদের হিসাব রিটার্নে আলাদা ফরমে উল্লেখ করতে হবে। আর রিটার্নে মিথ্যা তথ্য দেয়ার প্রমাণ মিললে এনবিআর করদাতার হিসাব জব্দের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারবে। আর এনবিআরের ওই আইনি ক্ষমতা রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কর ফাঁকি দিতে নিয়মিত রিটার্ন জমাদানকারী করদাতাদের ৬০ শতাংশই নিজের নামে সম্পদ না করে স্বামী, স্ত্রী, সন্তান বা পোষ্যের নামে করেছে। আর একই কাজ করেছে নিয়মিত রিটার্ন জমা দেয় না এমন করদাতাদের ৮০ শতাংশ। গত ৩ করবর্ষে বিভিন্ন কর অঞ্চলে জমা পড়া রিটার্নের তথ্য যাচাই করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এমন চিত্র পেয়েছে। সাধারণত সুপার ট্যাক্স গ্রুপ বা উচ্চ আয়ের করদাতাদের মধ্যেই রাজস্ব ফাঁকি দিতে নিজের নামে সম্পদ না করে স্বামী, স্ত্রী বা নাবালক সন্তান বা পোষ্যদের নামে সম্পদ করার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। রিটার্ন জমা দিয়েছে এমন ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৪৫ শতাংশই একাধিক ব্যবসা থেকে অর্থ এবং সব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করলেও কর ফাঁকি দিতে নিজের নামে ব্যবসার লাইসেন্স না করে স্বামী, স্ত্রী, পোষ্যের বা সন্তানদের নামে করেছে। তারা ওসব ব্যবসার আয়-ব্যয়ের হিসাব রিটার্নে উল্লেখ করে না।
সূত্র জানায়, নিয়মিত রিটার্ন জমা দেয় এমন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৫ শতাংশ এবং উচ্চ পদে চাকরি করা বেসরকারি কর্মকর্তাদের ৩৫ শতাংশ নিজের নামে বাড়ি ও গাড়ি না করে স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানের নামে করেছে। তবে চিকিৎসক, শিল্পী, খেলোয়াড়দের মধ্যে এ প্রবণতা কম। নিয়মিত রিটার্ন জমা দিয়েছে এমন চিকিৎসকদের ২২ শতাংশ, শিল্পীদের ১৭ শতাংশ ও খেলোয়াড়দের ৯ শতাংশ নিজের নামে সম্পদ না করে স্বামী, স্ত্রী, সন্তান বা পোষ্যের নামে করে কর ফাঁকি দিয়েছে। নিয়মিত রিটার্ন জমা দিয়েছে এমন বিলাসবহুল গাড়ির মালিকদের ৯০ শতাংশই রাজস্ব ফাঁকি দিতে নিজের নামে গাড়ির নিবন্ধন না নিয়ে স্বামী, স্ত্রী, পোষ্য বা সন্তানের নামে নিয়েছে। আর নিয়মিত রিটার্ন জমা দিয়েছে অভিজাত এলাকায় বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিকদের ৪০ শতাংশই নিজের নামে নিবন্ধন না নিয়ে স্বামী, স্ত্রী, সন্তান বা পোষ্যর নামে নিয়েছে। ওসব সম্পদের তথ্য আয়কর রিটার্নে গোপন করা হয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের মালিকদের মধ্যে যারা নিয়মিত রিটার্ন জমা দিয়েছে তাদের ৩০ শতাংশ কর ফাঁকি দিতে নিজের নামে ওই সম্পদ না রেখে স্বামী, স্ত্রী, সন্তান ও পোষ্যদের নামে দিয়ে দিয়েছেন। ওসব সম্পদের তথ্যও রিটার্নে উল্লেখ করা হয়নি।
সূত্র আরো জানায়, চলতি করবর্ষে করদাতার মোট সম্পদের পরিমাণ ৪০ লাখ টাকার বেশি হলে, একটি ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক হলে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় গৃহ-সম্পত্তিতে বিনিয়োগ বা বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিক হলেই রিটার্নে আলাদা সম্পদের বিবরণী দাখিল করতে হবে। ওসব শর্তের একটি পূরণ করলেই বাধ্যতামূলকভাবে নিজের, স্ত্রী বা স্বামী, নাবালক সন্তান বা পোষ্যদের নামে কোথায় কী সম্পদ আছে তা জানিয়ে আয়কর রিটার্নের সঙ্গে সম্পদের বিবরণীও জমা দিতে হবে। সেক্ষেত্রে এনবিআরের আইটি ১০বি বা আইটি ১০বি ২০১৬ ফরম পূরণ করে এ তথ্য জানাতে হবে।
কর ফাঁকি বন্ধে আয়কর আইনে নতুন বিধান যুক্ত করেছে এনবিআর
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ