দিনাজপুর সংবাদদাতা : দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব কটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ। চীন থেকে অয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) না আসা পর্যন্ত চালু হচ্ছে না তিন ইউনিটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। চরম লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে রংপুর বিভাগের আট জেলা। বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এক মাস ছয় দিন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ থাকার পর গত ৬ সেপ্টেম্বর বিকাল সোয়া পাঁচটায় তৃতীয় ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছিল। সচল হওয়ার দুই দিন পরেই গত সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ফের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এ ইউনিট থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হতো। বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর ছিদ্দিক মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। জানা যায়, বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হারবিন ইন্টারন্যাশনাল। চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ ৫ বছর। আগামী বছর শেষ হবে তাদের চুক্তির মেয়াদ। চুক্তি মোতাবেক উৎপাদন সচল রাখতে মেরামত ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের কথা থাকলেও তা করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে বারবার ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। সে কারণেই ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের মধ্যে প্রতিটি ইউনিট সচল রাখতে প্রয়োজন হয় দুটি করে ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প। ২০২২ সাল থেকেই তৃতীয় ইউনিটের দুটির মধ্যে একটি পাম্প নষ্ট থাকায় যেকোনো সময় বন্ধের ঝুঁকি নিয়ে বিকল্প হিসেবে একটি ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প দিয়ে চলে আসছিল এর উৎপাদন কার্যক্রম। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) চালু হওয়া তৃতীয় ইউনিটটির অয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) নষ্ট হওয়ায় ফের বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। সেই সঙ্গে রাত পৌনে ৯টায় সংস্কারকাজের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১ নম্বর ইউনিটটি। ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও মাত্র ৬০-৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো তাতে। অপর দুই নম্বর ইউনিটটিও ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও সেটিতেও মাত্র ৬৫-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। তিনটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দৈনিক কয়লার প্রয়োজন প্রায় ৫ হাজার ২০০ টন। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কোল ইয়ার্ডে বর্তমানে মজুদ আছে প্রায় ২ লাখ টন কয়লা। কয়লাখনি থেকে কয়লা সরবরাহ করার ওপর নির্ভর করে চলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। এই প্রথম বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির তিনটি ইউনিটই বন্ধ রয়েছে। বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিটি ইউনিটে দুটি করে অয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) থাকে। সেটি তেল সরবরাহের মাধ্যমে জ্বালানি হিসেবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখে। তৃতীয় ইউনিটের দুটির মধ্যে একটি অয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) ২০২২ সালের অক্টোবরে বিকল হয়ে যায়। রিজার্ভে থাকা অপর অয়েল পাম্পটিও সোমবার বিকল হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় তৃতীয় ইউনিটটি। বিষয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে জানিয়ে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, তারা দুই সপ্তাহ সময় চেয়েছে। চীন থেকে অয়েল পাম্প এলেই চালু হবে ইউনিট। ২০০৬ সালে ১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির পাশে স্থাপিত হয় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। চীনা কারিগরি সহায়তায় স্থাপন করা হয় এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।