ঢাকা ০৫:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

দেশে ডেঙ্গুর ‘ডেনভি-৩’ ধরনের দাপট

  • আপডেট সময় : ০১:৫৯:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২১
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্বি প্রতিবেদক ঢাকায় ডেঙ্গু ভাইরাসের ‘ডেনভি-৩’ ধরনে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এবং দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে মৃত্যুও বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ-বিসিএসআইআর।
গতকাল রোববার ডেঙ্গু ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের তথ্য প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। বলা হয়, বিসিএসআইআরের গবেষণাগারে ২০ জন ডেঙ্গু রোগীর নমুনা থেকে ভাইরাসের জিনবিন্যাস বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তারা সবাই ডেঙ্গু ভাইরাসের ডেনভি-৩ ধরনে আক্রান্ত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিসিএসআইআর এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফতাব আলী বলেন, “ডেঙ্গুর মিউটেশন সংক্রান্ত তেমন গবেষণা না থাকায় এসব মিউটেশনে ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাব শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।”
এ গবেষণার জন্য রাজধানীর শুধুমাত্র একটি হাসপাতাল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সারা দেশে ডেঙ্গুর বিস্তৃতি জানার জন্য আরও অধিক সংখ্যক জিনোম সিকোয়েন্সিং করা প্রয়োজন।”
ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবন রহস্য উন্মোচনের ফলে সহজে এর চিকিৎসা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার জুলাই মাস থেকে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, যাতে দুই মাসে ৪১ মৃত্যু দেখেছে দেশ। সাড়ে ৯ হাজারেরও বেশি রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালে এক লাখের বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। সে বছর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আসা ২৬৬টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ১৪৮ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছিল আইইডিসিআর। এর পরের বছর এর প্রকোপ কিছুটা কম দেখা যায়। এর আগে ২০০০ সালে ডেঙ্গুতে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই বছর এইডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয় ৫ হাজার ৫৫১ জন। এছাড়া ২০১৮ সালে আক্রান্ত ১০ হাজার ১৪৮ জনের মধ্যে ২৬ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংস্থাটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক সেলিম খান। তিনি বলেন, “আমরা ২০টি নমুনার সিকোয়েন্সিং করে দেখেছি, প্রতিটি ডেনভি-৩। এই সেরোটাইপ-৩ এর মাধ্যমে ঢাকার রোগীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। যারা আক্রান্ত হচ্ছে, দ্রুত তাদের প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে।”
মায়ের বুকের দুধ ও রক্ত আদান-প্রদানের মাধ্যমেও ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটে বলে সাম্প্রতিক এক গবেণষণায় তথ্য মিলেছে বলে জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলোজি বিভাগের প্রধান সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, “দেশে গত দশ বছরে ডেনভি-১ ও ২ সেরোটাইপে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়েছে। এবার দেখা যাচ্ছে ডেনভি-৩ ধরনই বেশি।”
দেশে এই ধরন প্রথম শনাক্ত হয় ২০১৭ সালে। যারা আগে ডেনভি-১, ২ এ আক্রান্ত হয়েছেন, তারা নতুন করে ডেনভি-৩ আক্রান্ত হলে সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়ছেন। তাই এবার মৃত্যু বেশি হচ্ছে বলে জানান এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
“যারা ডেনভি-১ ও ২ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন, তারা পুনরায় ডেনভি-৩ এ আক্রান্ত হলে তাদের রক্তক্ষরণ, রক্ত জমাট বাধা, পেট ব্যাথা, পেট ফুলে যাওয়া- এ লক্ষণগুলো বেশি দেখা যাচ্ছে।” তবে একার ডেঙ্গু হলে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হতে অন্তত এক বছর সময় লাগে বলে জানান তিনি। “প্রথমবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে জ্বর ছাড়া তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ হয় না। কিন্তু দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে এই ভাইরাসে মৃত্যুহার বেড়ে যাবে।” ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরণের মধ্যে ডেনভি-১ ও ৪ এর ক্ষতি করার ক্ষমতা ডেনভি-২ ও ৩ এর তুলনায় বেশি বলেও তিনি জানান। বিসিএসআইআরের ডেঙ্গুর জিনোম সিকোয়েন্সিং ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন সাইফ উল্লাহ মুন্সী। অন্যদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নতুন আপদ ‘মব সন্ত্রাস’, আতঙ্কে সারা দেশ

দেশে ডেঙ্গুর ‘ডেনভি-৩’ ধরনের দাপট

আপডেট সময় : ০১:৫৯:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২১

নিজস্বি প্রতিবেদক ঢাকায় ডেঙ্গু ভাইরাসের ‘ডেনভি-৩’ ধরনে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এবং দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে মৃত্যুও বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ-বিসিএসআইআর।
গতকাল রোববার ডেঙ্গু ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের তথ্য প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। বলা হয়, বিসিএসআইআরের গবেষণাগারে ২০ জন ডেঙ্গু রোগীর নমুনা থেকে ভাইরাসের জিনবিন্যাস বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তারা সবাই ডেঙ্গু ভাইরাসের ডেনভি-৩ ধরনে আক্রান্ত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিসিএসআইআর এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফতাব আলী বলেন, “ডেঙ্গুর মিউটেশন সংক্রান্ত তেমন গবেষণা না থাকায় এসব মিউটেশনে ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাব শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।”
এ গবেষণার জন্য রাজধানীর শুধুমাত্র একটি হাসপাতাল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সারা দেশে ডেঙ্গুর বিস্তৃতি জানার জন্য আরও অধিক সংখ্যক জিনোম সিকোয়েন্সিং করা প্রয়োজন।”
ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবন রহস্য উন্মোচনের ফলে সহজে এর চিকিৎসা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার জুলাই মাস থেকে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, যাতে দুই মাসে ৪১ মৃত্যু দেখেছে দেশ। সাড়ে ৯ হাজারেরও বেশি রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালে এক লাখের বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। সে বছর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আসা ২৬৬টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ১৪৮ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছিল আইইডিসিআর। এর পরের বছর এর প্রকোপ কিছুটা কম দেখা যায়। এর আগে ২০০০ সালে ডেঙ্গুতে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই বছর এইডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয় ৫ হাজার ৫৫১ জন। এছাড়া ২০১৮ সালে আক্রান্ত ১০ হাজার ১৪৮ জনের মধ্যে ২৬ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংস্থাটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক সেলিম খান। তিনি বলেন, “আমরা ২০টি নমুনার সিকোয়েন্সিং করে দেখেছি, প্রতিটি ডেনভি-৩। এই সেরোটাইপ-৩ এর মাধ্যমে ঢাকার রোগীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। যারা আক্রান্ত হচ্ছে, দ্রুত তাদের প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে।”
মায়ের বুকের দুধ ও রক্ত আদান-প্রদানের মাধ্যমেও ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটে বলে সাম্প্রতিক এক গবেণষণায় তথ্য মিলেছে বলে জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলোজি বিভাগের প্রধান সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, “দেশে গত দশ বছরে ডেনভি-১ ও ২ সেরোটাইপে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়েছে। এবার দেখা যাচ্ছে ডেনভি-৩ ধরনই বেশি।”
দেশে এই ধরন প্রথম শনাক্ত হয় ২০১৭ সালে। যারা আগে ডেনভি-১, ২ এ আক্রান্ত হয়েছেন, তারা নতুন করে ডেনভি-৩ আক্রান্ত হলে সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়ছেন। তাই এবার মৃত্যু বেশি হচ্ছে বলে জানান এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
“যারা ডেনভি-১ ও ২ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন, তারা পুনরায় ডেনভি-৩ এ আক্রান্ত হলে তাদের রক্তক্ষরণ, রক্ত জমাট বাধা, পেট ব্যাথা, পেট ফুলে যাওয়া- এ লক্ষণগুলো বেশি দেখা যাচ্ছে।” তবে একার ডেঙ্গু হলে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হতে অন্তত এক বছর সময় লাগে বলে জানান তিনি। “প্রথমবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে জ্বর ছাড়া তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ হয় না। কিন্তু দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে এই ভাইরাসে মৃত্যুহার বেড়ে যাবে।” ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরণের মধ্যে ডেনভি-১ ও ৪ এর ক্ষতি করার ক্ষমতা ডেনভি-২ ও ৩ এর তুলনায় বেশি বলেও তিনি জানান। বিসিএসআইআরের ডেঙ্গুর জিনোম সিকোয়েন্সিং ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন সাইফ উল্লাহ মুন্সী। অন্যদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।