ঢাকা ০১:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেশিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়নি ক্লাস, ফিরছে সেশনজট

  • আপডেট সময় : ১১:৫৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৩৩ বার পড়া হয়েছে

২০১৮ সালের পর থেকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট কমতে শুরু করে। ২০২০ সালে করোনার ধাক্কায় দেখা দেয় নতুন শঙ্কা। সংকট কাটিয়ে আবার সেশনজট ‘সহনীয়’ পর্যায়ে আসে ২০২৩ সালে। চলতি বছরের শুরুতেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সেশনজট আরও কমাতে নানা পরামর্শ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এরই মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে জুলাইয়ের শুরু থেকে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। প্রতিদিন নতুন নতুন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্রত্যয় স্কিমের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন শিক্ষকরাও। আন্দোলন যখন চরম আকার ধারণ করে, তখন শিক্ষকদের দাবি মেনে নেয় সরকার। তবে ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পদত্যাগের হিড়িক
সরকার পতনের পর রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য, উপ-উপাচার্যদের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের তীব্র রোষের মুখে। ৪৫টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে। অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার তিন সপ্তাহ পেরোলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি সচল করা যায়নি। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস চালু হলেও প্রশাসনিক শূন্যতায় নানা বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বড় ধরনের সেশনজট হওয়ার শঙ্কার কথা বলছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদরা।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সচল করতে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শূন্য হয়ে পড়া প্রশাসনিক পদগুলো পূরণ করা। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও প্রক্টরের মতো পদগুলো শূন্য থাকায় একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। নানান কারণে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। হলগুলোতে প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষক না থাকায় বড় ঝুঁকির মধ্যে আবাসিক শিক্ষকরাও। ফলে ক্যাম্পাসে এখনো শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত হয়নি। পট-পরিবর্তনের পর এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার ক্ষত কাটাতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। তাদের অভিমত, শিক্ষার্থীদের কিছুটা ছাড় দিয়ে দ্রুত একটি সেমিস্টার শেষ করাতে পারলে সেশনজট কিছুটা কেটে যাবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখন উচিত হবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদদের পরামর্শ নিয়ে রূপরেখা তৈরি করা। সেটা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিতে হবে।
সেশনজট দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
বর্তমানে যে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণিতে তৃতীয়, চতুর্থ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত, তারা করোনার সময়েও সেশনজটে পড়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও হয়েছিলেন দেরিতে। ফলে করোনাকালের জট কাটিয়ে ওঠার পরপরই আবার নতুন করে সেশনজটে পড়তে যাচ্ছেন তারা। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন ইমরান হোসাইন ফাহিম। করোনার কারণে তারা সেশনজটে পড়েছিলেন। মাঝে জট কাটানোর চেষ্টা করেছিল বিভাগটি। তবে ছাত্র আন্দোলন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধে আটকে যায় তার সপ্তম সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা। এতে স্নাতক শেষ করতে আরও এক বছর লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ফাহিম।
ক্লাসে ফিরছেন না বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা, আন্দোলন চলবে
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘৭ জুলাই থেকে আমাদের সপ্তম সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। শিক্ষকদের আন্দোলনে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। এখন কবে থেকে এ পরীক্ষা হবে, তা কেউ জানে না। বিভাগ থেকে শিক্ষকরা কিছুই বলতে পারছেন না। তবে ক্যাম্পাস খোলার পর এক সপ্তাহ সময় দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন শিক্ষকরা। এখন ক্যাম্পাস খোলা। কিন্তু ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। আমরা সব মিলিয়ে ১২-১৩ মাস পিছিয়ে যাচ্ছি।’ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী অনিশা দাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘তিনমাসেরও বেশি সময় আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ। শিগগির যথারীতি ক্লাস শুরু না হলে আমরা বড় সেশনজটে পড়ে যাবো। শিক্ষাজীবনে জটে পড়লে ক্যারিয়ারেও পিছিয়ে পড়তে হবে। আমরা চাই, দ্রুত স্বাভাবিকভাবে ক্লাস-পরীক্ষা হোক।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন নাজমুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। অথচ স্বাভাবিক নিয়মে তার সপ্তম সেমিস্টারে থাকার কথা। তিনি বলেন, ‘আগে কিছুটা জট ছিল। আন্দোলনের কারণে সব কিছু আরও পিছিয়ে গেলো। এখন অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। আশ্বাস দিচ্ছেন জট কাটিয়ে নিয়মিত ধারায় ফেরানোর। আদৌ তা বাস্তবায়ন হবে কি না, জানি না। যে অবস্থা তাতে সামনে সেশনজট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছি।’
অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়নি ক্লাস, ফের ফিরছে সেশনজট
একই শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হন সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সেশনজট বাড়ছেই। এখন আমাদের শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার কথা। অথচ মাত্র পঞ্চম সেমিস্টারে উঠলাম। সামনে আরও জট বাড়বে। কবে শিক্ষাজীবন শেষ হবে, তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা পড়েছি।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘তিনমাস যখন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকে, সেটার প্রভাব পড়ে তিন বছরে। তিন মাসের ক্ষত পুষিয়ে নেওয়ার জন্য উচ্চপর্যায়ের পরিকল্পনা জরুরি। সেটা হুট করে সিলেবাস এড়িয়ে করাটাও কাম্য নয়। দক্ষ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত থাকতে হবে। একই সঙ্গে যারা দক্ষ তাদের নিয়ে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে আলাদা কমিটি করা যেতে পারে। সেগুলো অনুসরণ করে ক্লাস এবং পরীক্ষা নিলে হয়তো দ্রুত এটা কাটানো যেতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ‘সংযোগহীন’ ইউজিসি
দেশের সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তদারকি করে ইউজিসি। অথচ সরকার পতনের পর এ সংস্থাটিও টালমাটাল। চেয়ারম্যান পদ ছেড়েছেন অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ। অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরও সরে যান। পুনরায় চিঠি দিয়ে তাকে রুটিন দায়িত্ব দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবুও অফিস করছেন না তিনি। অন্যদিকে তার পদত্যাগের দাবিতে প্রতিদিনই ইউজিসিতে বিক্ষোভ হচ্ছে। প্রবেশপথে টাঙানো হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুনও। ৫ আগস্টের পর টানা ২০ দিন অনুপস্থিত থেকে মেয়াদকাল শেষ করেছেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। আরেক সদস্য অধ্যাপক জাকির হোসেনও মাত্র দুদিন অফিস করেছেন। দুদিন পর একদিন আসেন সদস্য অধ্যাপক হাসিনা খান। দুই মেয়াদে ছুটি বাড়িয়ে অনেকটা আত্মগোপনে অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন। সচিবকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। নতুন দায়িত্ব পাওয়া ড. মো. ফখরুল ইসলাম চেয়ারম্যান ও সদস্যবিহীন ইউজিসিতে শুধুই দর্শক।
বেহাল এমন দশায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযোগবিহীন হয়ে পড়েছে ইউজিসি। সেশনজট এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইউজিসি থেকে কোনো পরামর্শ দেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে সংস্থাটির সচিব ফখরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে চেয়ারম্যান নেই। সদস্যরাও অনিয়মিত। কেউ ছুটিতে, কেউ অসুস্থ। তাদের অনুপস্থিতিতে আমার তেমন কিছু করার নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বারবার বিষয়টি জানিয়েছি। অচলাবস্থা কাটাতে তাগাদা দিয়েছি। সরকার সুদৃষ্টি না দিলে ইউজিসির অচলাবস্থা কাটবে না।’ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অমাদের জানানো হচ্ছে, শর্ট সিলেবাস, বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট, কুইজসহ বিভিন্নভাবে চলতি সেমিস্টারটা দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। এটা আমাদের নির্দেশনায় তারা করেননি। তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে করেছেন। এটা একটা ভালো উদ্যোগ হতে পারে। সরকার এ নিয়ে কোনো পরামর্শ ইউজিসিকে দিতে বললে তখন বিষয়টি বিবেচনা করা যাবে। সেটাও ইউজিসিতে যিনি চেয়ারম্যান, সদস্য থাকবেন, তারা বলবেন। আমি এটা বলতে পারি না।’
কোথাও ক্লাস হচ্ছে, কোথাও হচ্ছে না
৭ আগস্ট থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে বলে ঘোষণা দেয় আইএসপিআর। তবে সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় খোলা সম্ভব হয়নি। সেই ঘোষণার প্রায় দুই সপ্তাহ পর ১৮ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা হয়। তবে ক্লাস শুরু হয়নি অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে। কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে, কয়েকটিতে সশরীরে ক্লাস শুরু হলেও তাতে উপস্থিতি ছিল খুবই কম। পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন অনার্স কলেজেও শিক্ষকরা অনুপস্থিত। ফলে উচ্চশিক্ষার কোনো পর্যায়েই পুরোদমে ক্লাস চালু করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) কয়েকদিন ধরে ক্লাস চলছে। সেখানেও উপস্থিতি কম বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়নি ক্লাস, ফের ফিরছে সেশনজট
ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তথ্যমতে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি) নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনোটাতেই নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। কোথাও কোথাও অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার কিছু তথ্যও রয়েছে ইউজিসির কাছে। সেটাও কিছু শিক্ষকের স্বউদ্যোগে চলছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারকি সংস্থাটি।
বিশেষ পরিকল্পনা জরুরি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছাত্ররা আন্দোলন করেছে। তাদের মধ্যে এখনো ক্রেজটা রয়ে গেছে। প্রায় এক মাস পার হতে যাচ্ছে। তবুও সেভাবে তাদের ক্লাসে ফেরানো যায়নি। এখানে কারও দোষ দিয়েও লাভ হবে না। এটাই বাস্তবতা। তবে আমাদের পরিকল্পনা করে দ্রুত সংকট কাটানোর পদক্ষেপ নিতে তো আপত্তি নেই।’ উচ্চশিক্ষায় সংকট কাটাতে এখন করণীয় কী—এমন প্রশ্নে এ শিক্ষাবিদ বলেন, ‘সরকারের যিনি শিক্ষাখাত দেখছেন, তার উচিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জ্যেষ্ঠ যেসব অধ্যাপক রয়েছেন, যারা একাডেমিশিয়ান হিসেবে পরিচিত বা বিশেষজ্ঞ; তাদের সঙ্গে আলাপ করা। প্রয়োজনে একটা কমিটি করে দেওয়া যেতে পারে। কীভাবে সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দ্রুত একটা সেমিস্টার শেষ করে দেওয়া যায়, সেটা অবশ্যই ভাবা উচিত। এটা কেন্দ্রীয়ভাবে করলে বিশৃঙ্খলা থাকবে না। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রশাসনে কেউ নেই। একই সঙ্গে যাতে একেবারে একটা সেমিস্টারের সিলেবাস শিক্ষার্থীদের নাগালের বাইরে থেকে না যায়, সেদিকেও শিক্ষকদের নজর দিতে হবে।’
যা বলছেন নতুন উপাচার্যরা
অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শূন্য হয়ে পড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ দুজন দায়িত্ব নিলেও এখনো প্রশাসনিক কাজ শুরু করতে পারেননি। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রশাসনে গতি আনার কাজে হাত দিয়েছি। ক্লাস ও পরীক্ষা, অর্থাৎ একাডেমিক কাজ শুরু করতে পারিনি। আমি দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে ক্লাস শুরু করানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।’ নতুন এ উপাচার্য বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি৷ প্রক্টরিয়াল বডি ঠিক করছি। নিরাপত্তা ইস্যুতে কাজ শুরু হয়েছে। এখন একাডেমিক কাজের দিকে নজর দেবো। সবার সহযোগিতা পেলে আশা করি, দ্রুত এ অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।’ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের অধীনে সারাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান। এটা নিয়ন্ত্রণে এনে কাজ করাটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং হলেও অসাধ্য তো নয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি সবার আগে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিতে জোর দিয়েছি। তারা ফিরলে দ্রুত সব স্বাভাবিক হবে। আশা করছি, চলতি সপ্তাহে ক্লাস পুরোদমে শুরু করা সম্ভব হবে।’

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বেশিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়নি ক্লাস, ফিরছে সেশনজট

আপডেট সময় : ১১:৫৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

২০১৮ সালের পর থেকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট কমতে শুরু করে। ২০২০ সালে করোনার ধাক্কায় দেখা দেয় নতুন শঙ্কা। সংকট কাটিয়ে আবার সেশনজট ‘সহনীয়’ পর্যায়ে আসে ২০২৩ সালে। চলতি বছরের শুরুতেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সেশনজট আরও কমাতে নানা পরামর্শ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এরই মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে জুলাইয়ের শুরু থেকে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। প্রতিদিন নতুন নতুন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্রত্যয় স্কিমের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন শিক্ষকরাও। আন্দোলন যখন চরম আকার ধারণ করে, তখন শিক্ষকদের দাবি মেনে নেয় সরকার। তবে ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পদত্যাগের হিড়িক
সরকার পতনের পর রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য, উপ-উপাচার্যদের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের তীব্র রোষের মুখে। ৪৫টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে। অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার তিন সপ্তাহ পেরোলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি সচল করা যায়নি। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস চালু হলেও প্রশাসনিক শূন্যতায় নানা বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বড় ধরনের সেশনজট হওয়ার শঙ্কার কথা বলছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদরা।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সচল করতে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শূন্য হয়ে পড়া প্রশাসনিক পদগুলো পূরণ করা। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও প্রক্টরের মতো পদগুলো শূন্য থাকায় একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। নানান কারণে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। হলগুলোতে প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষক না থাকায় বড় ঝুঁকির মধ্যে আবাসিক শিক্ষকরাও। ফলে ক্যাম্পাসে এখনো শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত হয়নি। পট-পরিবর্তনের পর এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার ক্ষত কাটাতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। তাদের অভিমত, শিক্ষার্থীদের কিছুটা ছাড় দিয়ে দ্রুত একটি সেমিস্টার শেষ করাতে পারলে সেশনজট কিছুটা কেটে যাবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখন উচিত হবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদদের পরামর্শ নিয়ে রূপরেখা তৈরি করা। সেটা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিতে হবে।
সেশনজট দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
বর্তমানে যে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণিতে তৃতীয়, চতুর্থ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত, তারা করোনার সময়েও সেশনজটে পড়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও হয়েছিলেন দেরিতে। ফলে করোনাকালের জট কাটিয়ে ওঠার পরপরই আবার নতুন করে সেশনজটে পড়তে যাচ্ছেন তারা। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন ইমরান হোসাইন ফাহিম। করোনার কারণে তারা সেশনজটে পড়েছিলেন। মাঝে জট কাটানোর চেষ্টা করেছিল বিভাগটি। তবে ছাত্র আন্দোলন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধে আটকে যায় তার সপ্তম সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা। এতে স্নাতক শেষ করতে আরও এক বছর লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ফাহিম।
ক্লাসে ফিরছেন না বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা, আন্দোলন চলবে
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘৭ জুলাই থেকে আমাদের সপ্তম সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। শিক্ষকদের আন্দোলনে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। এখন কবে থেকে এ পরীক্ষা হবে, তা কেউ জানে না। বিভাগ থেকে শিক্ষকরা কিছুই বলতে পারছেন না। তবে ক্যাম্পাস খোলার পর এক সপ্তাহ সময় দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন শিক্ষকরা। এখন ক্যাম্পাস খোলা। কিন্তু ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। আমরা সব মিলিয়ে ১২-১৩ মাস পিছিয়ে যাচ্ছি।’ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী অনিশা দাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘তিনমাসেরও বেশি সময় আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ। শিগগির যথারীতি ক্লাস শুরু না হলে আমরা বড় সেশনজটে পড়ে যাবো। শিক্ষাজীবনে জটে পড়লে ক্যারিয়ারেও পিছিয়ে পড়তে হবে। আমরা চাই, দ্রুত স্বাভাবিকভাবে ক্লাস-পরীক্ষা হোক।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন নাজমুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। অথচ স্বাভাবিক নিয়মে তার সপ্তম সেমিস্টারে থাকার কথা। তিনি বলেন, ‘আগে কিছুটা জট ছিল। আন্দোলনের কারণে সব কিছু আরও পিছিয়ে গেলো। এখন অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। আশ্বাস দিচ্ছেন জট কাটিয়ে নিয়মিত ধারায় ফেরানোর। আদৌ তা বাস্তবায়ন হবে কি না, জানি না। যে অবস্থা তাতে সামনে সেশনজট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছি।’
অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়নি ক্লাস, ফের ফিরছে সেশনজট
একই শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হন সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সেশনজট বাড়ছেই। এখন আমাদের শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার কথা। অথচ মাত্র পঞ্চম সেমিস্টারে উঠলাম। সামনে আরও জট বাড়বে। কবে শিক্ষাজীবন শেষ হবে, তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা পড়েছি।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘তিনমাস যখন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকে, সেটার প্রভাব পড়ে তিন বছরে। তিন মাসের ক্ষত পুষিয়ে নেওয়ার জন্য উচ্চপর্যায়ের পরিকল্পনা জরুরি। সেটা হুট করে সিলেবাস এড়িয়ে করাটাও কাম্য নয়। দক্ষ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত থাকতে হবে। একই সঙ্গে যারা দক্ষ তাদের নিয়ে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে আলাদা কমিটি করা যেতে পারে। সেগুলো অনুসরণ করে ক্লাস এবং পরীক্ষা নিলে হয়তো দ্রুত এটা কাটানো যেতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ‘সংযোগহীন’ ইউজিসি
দেশের সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তদারকি করে ইউজিসি। অথচ সরকার পতনের পর এ সংস্থাটিও টালমাটাল। চেয়ারম্যান পদ ছেড়েছেন অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ। অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরও সরে যান। পুনরায় চিঠি দিয়ে তাকে রুটিন দায়িত্ব দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবুও অফিস করছেন না তিনি। অন্যদিকে তার পদত্যাগের দাবিতে প্রতিদিনই ইউজিসিতে বিক্ষোভ হচ্ছে। প্রবেশপথে টাঙানো হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুনও। ৫ আগস্টের পর টানা ২০ দিন অনুপস্থিত থেকে মেয়াদকাল শেষ করেছেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। আরেক সদস্য অধ্যাপক জাকির হোসেনও মাত্র দুদিন অফিস করেছেন। দুদিন পর একদিন আসেন সদস্য অধ্যাপক হাসিনা খান। দুই মেয়াদে ছুটি বাড়িয়ে অনেকটা আত্মগোপনে অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন। সচিবকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। নতুন দায়িত্ব পাওয়া ড. মো. ফখরুল ইসলাম চেয়ারম্যান ও সদস্যবিহীন ইউজিসিতে শুধুই দর্শক।
বেহাল এমন দশায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযোগবিহীন হয়ে পড়েছে ইউজিসি। সেশনজট এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইউজিসি থেকে কোনো পরামর্শ দেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে সংস্থাটির সচিব ফখরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে চেয়ারম্যান নেই। সদস্যরাও অনিয়মিত। কেউ ছুটিতে, কেউ অসুস্থ। তাদের অনুপস্থিতিতে আমার তেমন কিছু করার নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বারবার বিষয়টি জানিয়েছি। অচলাবস্থা কাটাতে তাগাদা দিয়েছি। সরকার সুদৃষ্টি না দিলে ইউজিসির অচলাবস্থা কাটবে না।’ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অমাদের জানানো হচ্ছে, শর্ট সিলেবাস, বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট, কুইজসহ বিভিন্নভাবে চলতি সেমিস্টারটা দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। এটা আমাদের নির্দেশনায় তারা করেননি। তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে করেছেন। এটা একটা ভালো উদ্যোগ হতে পারে। সরকার এ নিয়ে কোনো পরামর্শ ইউজিসিকে দিতে বললে তখন বিষয়টি বিবেচনা করা যাবে। সেটাও ইউজিসিতে যিনি চেয়ারম্যান, সদস্য থাকবেন, তারা বলবেন। আমি এটা বলতে পারি না।’
কোথাও ক্লাস হচ্ছে, কোথাও হচ্ছে না
৭ আগস্ট থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে বলে ঘোষণা দেয় আইএসপিআর। তবে সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় খোলা সম্ভব হয়নি। সেই ঘোষণার প্রায় দুই সপ্তাহ পর ১৮ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা হয়। তবে ক্লাস শুরু হয়নি অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে। কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে, কয়েকটিতে সশরীরে ক্লাস শুরু হলেও তাতে উপস্থিতি ছিল খুবই কম। পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন অনার্স কলেজেও শিক্ষকরা অনুপস্থিত। ফলে উচ্চশিক্ষার কোনো পর্যায়েই পুরোদমে ক্লাস চালু করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) কয়েকদিন ধরে ক্লাস চলছে। সেখানেও উপস্থিতি কম বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়নি ক্লাস, ফের ফিরছে সেশনজট
ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তথ্যমতে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি) নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনোটাতেই নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। কোথাও কোথাও অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার কিছু তথ্যও রয়েছে ইউজিসির কাছে। সেটাও কিছু শিক্ষকের স্বউদ্যোগে চলছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারকি সংস্থাটি।
বিশেষ পরিকল্পনা জরুরি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছাত্ররা আন্দোলন করেছে। তাদের মধ্যে এখনো ক্রেজটা রয়ে গেছে। প্রায় এক মাস পার হতে যাচ্ছে। তবুও সেভাবে তাদের ক্লাসে ফেরানো যায়নি। এখানে কারও দোষ দিয়েও লাভ হবে না। এটাই বাস্তবতা। তবে আমাদের পরিকল্পনা করে দ্রুত সংকট কাটানোর পদক্ষেপ নিতে তো আপত্তি নেই।’ উচ্চশিক্ষায় সংকট কাটাতে এখন করণীয় কী—এমন প্রশ্নে এ শিক্ষাবিদ বলেন, ‘সরকারের যিনি শিক্ষাখাত দেখছেন, তার উচিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জ্যেষ্ঠ যেসব অধ্যাপক রয়েছেন, যারা একাডেমিশিয়ান হিসেবে পরিচিত বা বিশেষজ্ঞ; তাদের সঙ্গে আলাপ করা। প্রয়োজনে একটা কমিটি করে দেওয়া যেতে পারে। কীভাবে সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দ্রুত একটা সেমিস্টার শেষ করে দেওয়া যায়, সেটা অবশ্যই ভাবা উচিত। এটা কেন্দ্রীয়ভাবে করলে বিশৃঙ্খলা থাকবে না। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রশাসনে কেউ নেই। একই সঙ্গে যাতে একেবারে একটা সেমিস্টারের সিলেবাস শিক্ষার্থীদের নাগালের বাইরে থেকে না যায়, সেদিকেও শিক্ষকদের নজর দিতে হবে।’
যা বলছেন নতুন উপাচার্যরা
অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শূন্য হয়ে পড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ দুজন দায়িত্ব নিলেও এখনো প্রশাসনিক কাজ শুরু করতে পারেননি। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রশাসনে গতি আনার কাজে হাত দিয়েছি। ক্লাস ও পরীক্ষা, অর্থাৎ একাডেমিক কাজ শুরু করতে পারিনি। আমি দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে ক্লাস শুরু করানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।’ নতুন এ উপাচার্য বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি৷ প্রক্টরিয়াল বডি ঠিক করছি। নিরাপত্তা ইস্যুতে কাজ শুরু হয়েছে। এখন একাডেমিক কাজের দিকে নজর দেবো। সবার সহযোগিতা পেলে আশা করি, দ্রুত এ অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।’ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের অধীনে সারাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান। এটা নিয়ন্ত্রণে এনে কাজ করাটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং হলেও অসাধ্য তো নয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি সবার আগে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিতে জোর দিয়েছি। তারা ফিরলে দ্রুত সব স্বাভাবিক হবে। আশা করছি, চলতি সপ্তাহে ক্লাস পুরোদমে শুরু করা সম্ভব হবে।’