ঢাকা ১১:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে না: আইন উপদেষ্টা

  • আপডেট সময় : ০২:৩৮:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৪
  • ১১৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সমীচীন হবে না বলে মনে করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে, তখন আপনি দেখেছেন আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে প্রতিবাদ করা হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমি না, যদি না কোনো জঙ্গিবাদী কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় তারা লিপ্ত থাকে।”
উপদেষ্টা বলেন, “সত্যিকার অর্থে যদি কোনো রাজনৈতিক দল জঙ্গিবাদী কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় জড়িত থাকে, তাহলে প্রচণ্ড সততার সঙ্গে তদন্ত করে এমন কিছু (নিষিদ্ধ) করা যেতে পারে।’
বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে সংগঠন করার স্বাধীনতার বিষয়টি তুলে ধরে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দল, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তাদের অবদান ছিল। কিন্তু গেল ১৫ বছরে তারা যা করেছে, সেটা তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বর্বরতম ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল আওয়ামী লীগ।
“এই কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যক্তিগত দায় থাকতে পারে, নেতাদের সামষ্টিক দায় থাকতে পারে, কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি না।” এক মাসের বেশি সময় ধরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যান। ওই আন্দোলনের মধ্যে কয়েকশ মানুষের প্রাণ যায়, সেসব ঘটনায় এখন মেখ হাসিনাসহ তার সরকারের মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হচ্ছে। জুলাইয়ের সেসব নিহতের ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করারও উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আন্দোলন দমনে ভূমিকার জন্য আওয়ামী লীগকে অনেকে এখন ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যায়িত করছেন। একটি দলকে কখন সন্ত্রাসী সংগঠন বলা উচিত– এমন প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, “যারা বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতি নস্যাৎ করতে চায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বৈষম্যহীন ও শোষণহীন সমাজকে ধ্বংস করার জন্য যারা পরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র সংগ্রাম করে, তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন বলা উচিত। তবে মতামত প্রকাশ যতটা অবারিত রাখা যায়, ততটাই ভালো।”
আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ চালানোর অভিযোগে গত ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবির এবং তাদের সহ অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। ২৮ দিনের মাথায় গতকাল বুধবার সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী, এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির বা এর কোনো অঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও সহিংসতায় সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রমাণ সরকার ‘পায়নি’। এ বিষয়ে এক প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “আমাদের সমাজে কিছু মহল থেকে বহু বছর যাবত জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠত। আওয়ামী লীগ এটা কখনোই করে নাই। ১৫ বছর ক্ষমতায় আছে, কিন্তু কখনোই করে নাই। তারপর এমন একটা বিশেষ মুহুর্তে তারা এটা করেছে, তখন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলছিল।
“তারা ছাত্র-জনতার এই গণঅভ্যত্থানকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জামাত, বিএনপি, জঙ্গীদের সন্ত্রাস’ আখ্যায়িত করে এই আন্দোলনকে নির্মমভাবে দমন করার চেষ্টায় রত ছিল। তারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে হঠাৎ করে একটা প্রজ্ঞাপন জারি করে। আওয়ামী লীগ যে গণঅভ্যুত্থানকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলতে চেয়েছে, আমরা তো সেটার পার্ট হতে পারি না। সেই ন্যারেটিভের পার্ট তো আমরা হতে পারি না।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ কোনো নীতিগত অবস্থান থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে নাই। তারা রাজনৈতিক অপকৌশলের জন্য, আন্দোলনকে নির্মমভাবে দমন করার জন্য এই ইস্যুটাকে এভাবে ব্যবহার করেছে।”
আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এলে ২২ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন পাওয়ার পর রিভিউ প্যানেল গঠন করা হয়। সেই প্যানেলের মতামতের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের পর গতকাল বুধবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তারা পরীক্ষা করে দেখেছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যেভাবে ছাত্র-জনতার গণ বিপ্লবকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল, জঙ্গী তৎপরতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল এটার ভিত্তিতে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। “এটা সত্যি না। এটা ছাত্র-জনতার বিপ্লব ছিল। ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে একটা দলের ওপর চাপিয়ে দিয়ে তাকে নিষিদ্ধ করা, আমরা এই মিথ্যা ন্যারেটিভের পার্ট হতে পারি না।”
বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের আদালতে তোলার সময় আইনজীবীরা যে বিশৃঙ্খা করছেন, সে বিষয়েও আই্ন উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, আদালত চত্বরেরে হামলাগুলো ‘কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না’।
“একটি দলকে, একটি মন্ত্রিসভাকে, তার সাথে থাকা লোককে জনগণের শত্রুর পর্যায়ে নিয়ে আসা– এটা তো সাবেক সরকারের দায়ভার। তারা এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছে যে জনরোষের তৈরি হয়েছে। সেখানে অনেক বিক্ষুব্ধ মানুষ থাকে, যারা ১৫ বছরে চাকরি হারিয়েছে, জীবিকা হারিয়ে লুকিয়ে থেকেছে, গুম-হত্যার শিকার পরিবার আছে। “এখন মানুষের এত ক্ষোভ, এতো ক্রোধ এগুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সেটাকে সমর্থন করছি না। আমি পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি, ‘আপনারা বাধা দিচ্ছেন না কেন?’ তারা বলল, যে জনতা আছে, তাদের যদি যথেষ্ট বাধা দেয়, তাহলে পরিস্থিতি তো অন্য দিকে মোড় রেবে। আগের সরকার পুলিশকে জনগণের এত বড় শত্রুতে রূপান্তর করেছিল যে পুলিশ সাহস করে তাদেরকে বাধা দিতে পারে না।”
সংঘর্ষের মধ্যে হতাহতের ঘটনায় বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী, পুলিশ কর্মকর্তাদের আসামি করার বিষয়ে এক প্রশ্নে আসিফ নজরুল বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে কেউ যদি মামলা করে, ধরেন, আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আপনার সন্তান মারা গেছে। এখন আপনার সন্তান যদি মারা গিয়ে থাকে, তাহলে যে এলাকায় মারা গেছে, শুধু সেই এলাকার পুলিশকেই মামলা দেবেন? আপনি তো দেখেছেন আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী বলেছেন, ওবায়দুল কাদের কী বলেছেন, দীপু মনি, নওফেল, আরাফাত কী বলেছেন, আপনার মনে পড়বে না?
“এখন আপনি যদি উনাদের বিরুদ্ধে মামলা দেন, রাষ্ট্রের কোনো অধিকার নাই ‘আপনি মামলা করতে পারবেন না’ বলার। আমাদের একটাই করণীয় আছে, পুলিশের কাছে মামলা হলে পুলিশ তদন্ত করবে। সুস্পষ্ট তথ্য না পেলে পুলিশ ডিসচার্জ করে দিবে। আদালতের কাছে যদি মামলা দেয়, আদালত তদন্তপূর্বক এফআইআর দিতে বলবে।”
উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের যে কাজ, আমরা তদন্ত বা বিচার কাজে ডিউ প্রসেস বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করব। আপনাদের কাছে এটা আমার কমিটমেন্ট। এখন আমরা তো আদালতের কাজে হস্কক্ষেপ করতে পারি না। আমরা এমনও শুনেছি, আদালতের ওপরও চাপ আছে। স্থানীয় পর্যায়ে একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী, যার অত্যাচারে ১৫ বছর মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। তারা চায় যে এক্ষুণি তার বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হোক। আদালত তার সাধ্যমতো চেষ্টা করে এসব চাপ এড়ানোর জন্য। আপনারা মনে কইরেন না আমরা কেউই চেষ্টা করছি না। আমরা চেষ্টা করছি।”
দেশে ফিরলে গ্রেফতার হবেন না সাকিব, আশা আইন উপদেষ্টার: হত্যা মামলার আসামি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান দেশে ফিরলে গ্রেফতার হবেন না বলে আশা প্রকাশ করেছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
গতকাল বুধবার (২৮ আগস্ট) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টি আপনাদের নজর এসেছে কি না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে আসিফ নজরুল বলেন, এটাও তো আওয়ামী লীগই শুরু করেছিল। সাকিব তো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য কিছু বয়ে আনেনি, সে নিজে অনেক কিছু অর্জন করেছে। ফুটবলার আমিনুল হক বাংলাদেশের জন্য পুরস্কার বয়ে এনেছিল, জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন ছিল। আমিনুলকে যেভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল, আপনারা কি সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন? আমিনুলকে জেলে ভরা হয়েছিল। সাকিবের বিরুদ্ধে তো শুধু মামলা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, এটা পুলিশ প্রশাসনের ব্যাপার, আমরা যতটুকু বলার সেটা বলার চেষ্টা করেছি। মামলা হওয়া মানে তো গ্রেফতার নয়। আমার বিশ্বাস আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে, যেন কেউ অতি উৎসাহী হয়ে গ্রেফতার করতে না যায়। তিনি বলেন, আমি আশা করি সাকিব গ্রেফতার হবে না। আমি যতদূর জানি আমাদের পুলিশ বাহিনীকে একটা নির্দেশনা দেওয়া আছে।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চাই না, এমন বক্তব্য দিইনি: তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমি নই। যদি শক্তভাবে জঙ্গি তৎপরতা, রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা- সত্যিকার অর্থেই সে রকম কিছু থাকে, সেটাও অত্যন্ত সততার সঙ্গে তদন্ত করে দেখে হয়তো এটা (নিষিদ্ধ) করা যেতে পারে। আসিফ নজরুল বলেন, জেনারেল রুল হিসেবে আমাদের সংবিধানে সংগঠন করার স্বাধীনতা আছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া দল। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে দলটির অবদান ছিল। গত ১৫ বছরে তারা যা করেছে, সেটা তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না, সেটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না। তারা বাংলাদেশের ইতিহাসে বর্বরতম ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা মনে হয় না সমীচীন হবে।
সিইসির কথায় পরিচালিত হওয়ার কারণ নেই: ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে মন্তব্য করেছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রথম রিয়ালাইজ করা উচিত, তাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা কী ছিল। ‘ভুয়া নির্বাচন’ করা তাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল? সেটা আগে নিজেরা বিবেচনা করুক। তারা আগে আত্মসমালোচনা করুক, তারপর দেখা যাক। কোথায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একটা লেখা দেখলাম, উনি এখন আগের সরকারকে স্বৈরাচারী অগণতান্ত্রিক সরকার বলছেন। ‘এটা (৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন) দরকার কি দরকার না, সেটা ওনার কথায় আমাদের পরিচালিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের যথেষ্ট আইন বিশেষজ্ঞ আছেন। আমরা সব দিকে দৃষ্টি রেখে এটা করবো’- বলেন আইন উপদেষ্টা।
আদালত চত্বরে আসামির ওপর হামলা গ্রহণযোগ্য নয়: বিগত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিভিন্ন আদালতে উঠানোর সময় হামলার ঘটনা ঘটছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইন উপদেষ্টা বলেন, আদালত চত্বরে যে হামলা হচ্ছে সেটা কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আপনাদের কি মনে আছে একজন অগ্রজ সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান সাহেব, উনাকে আদালতে কি নির্মমভাবে রক্তাক্ত করা হয়েছিল, তখন আপনারা সবাই কি প্রশ্নটা করেছিলেন? নিউজটা কি দেখাতে পেরেছিলেন? তিনি বলেন, আরও অনেকভাবে অনেক সাংবাদিককে অপদস্ত করা হয়েছে। আমি নাম নেবো না, আপনারা তো রিপোর্টই করতে পারতেন না। আপনাদের (সাংবাদিক) কারও কারও সরাসরি ইন্ধন ছিল এসব কাজে। তবে আদালতে যাওয়ার সময় কাউকে আক্রমণ করা উচিত নয়। এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ‘তবে আপনারা প্রেক্ষাপটটা বুঝবেন। সেখানে অনেক বিক্ষুব্ধ মানুষ থাকেন, যারা ১৫ বছর চাকরি হারিয়ে ছিলেন, জীবনের নিরাপত্তার ভয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। গুম ও হত্যার শিকার পরিবার আছে। মানুষের এত ক্ষোভ, এত ক্রোধ! সেই ক্ষোভ ও ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সেই বহিঃপ্রকাশকে সমর্থন করছি না।’
আসিফ নজরুল বলেন, এই ভিড়টা (আদালত প্রাঙ্গণে) কমানোর কী কী উপায় আছে, সেটি আমরা চিন্তা করছি। রাজনৈতিক দলগুলোকে বলেছি, আপনাদের কর্মী-টর্মী থাকলে তাদের থামানোর চেষ্টা করেন। যত্রতত্র নানা ধরনের মামলা হচ্ছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, নিহতের পরিবার যদি উনাদের বিরুদ্ধে মামলা দেন, রাষ্ট্রের অধিকার নেই আপনি মামলা করতে পারবেন না এটা বলার। পুলিশের কাছে মামলা হলে পুলিশ তদন্ত করে সুস্পষ্ট তথ্য না পেলে ডিসচার্জ করে দেবে। আদালতে মামলা দিলে আদালত তদন্তপূর্বক এফআইআর নিতে বলবে। আমরা তদন্ত ও বিচারকাজে ডিউ প্রসেস বজায় রাখার চেষ্টা করবো। আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, আমি আপনাদের জানাবো আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কী কী কাজ করা হচ্ছে। একটা স্টেপের কথা বলার লোভ আমি সামলাতে পারছি না। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কিছু মামলা চিহ্নিত করেছি। আমাদের আইন মন্ত্রণালয় থেকে যা যা করার সেই করণীয় ঠিক করেছি। এরমধ্যে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড মামলা অন্যতম।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে না: আইন উপদেষ্টা

আপডেট সময় : ০২:৩৮:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সমীচীন হবে না বলে মনে করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে, তখন আপনি দেখেছেন আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে প্রতিবাদ করা হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমি না, যদি না কোনো জঙ্গিবাদী কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় তারা লিপ্ত থাকে।”
উপদেষ্টা বলেন, “সত্যিকার অর্থে যদি কোনো রাজনৈতিক দল জঙ্গিবাদী কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় জড়িত থাকে, তাহলে প্রচণ্ড সততার সঙ্গে তদন্ত করে এমন কিছু (নিষিদ্ধ) করা যেতে পারে।’
বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে সংগঠন করার স্বাধীনতার বিষয়টি তুলে ধরে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দল, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তাদের অবদান ছিল। কিন্তু গেল ১৫ বছরে তারা যা করেছে, সেটা তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বর্বরতম ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল আওয়ামী লীগ।
“এই কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যক্তিগত দায় থাকতে পারে, নেতাদের সামষ্টিক দায় থাকতে পারে, কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি না।” এক মাসের বেশি সময় ধরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যান। ওই আন্দোলনের মধ্যে কয়েকশ মানুষের প্রাণ যায়, সেসব ঘটনায় এখন মেখ হাসিনাসহ তার সরকারের মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হচ্ছে। জুলাইয়ের সেসব নিহতের ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করারও উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আন্দোলন দমনে ভূমিকার জন্য আওয়ামী লীগকে অনেকে এখন ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যায়িত করছেন। একটি দলকে কখন সন্ত্রাসী সংগঠন বলা উচিত– এমন প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, “যারা বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতি নস্যাৎ করতে চায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বৈষম্যহীন ও শোষণহীন সমাজকে ধ্বংস করার জন্য যারা পরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র সংগ্রাম করে, তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন বলা উচিত। তবে মতামত প্রকাশ যতটা অবারিত রাখা যায়, ততটাই ভালো।”
আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ চালানোর অভিযোগে গত ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবির এবং তাদের সহ অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। ২৮ দিনের মাথায় গতকাল বুধবার সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী, এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির বা এর কোনো অঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও সহিংসতায় সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রমাণ সরকার ‘পায়নি’। এ বিষয়ে এক প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “আমাদের সমাজে কিছু মহল থেকে বহু বছর যাবত জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠত। আওয়ামী লীগ এটা কখনোই করে নাই। ১৫ বছর ক্ষমতায় আছে, কিন্তু কখনোই করে নাই। তারপর এমন একটা বিশেষ মুহুর্তে তারা এটা করেছে, তখন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলছিল।
“তারা ছাত্র-জনতার এই গণঅভ্যত্থানকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জামাত, বিএনপি, জঙ্গীদের সন্ত্রাস’ আখ্যায়িত করে এই আন্দোলনকে নির্মমভাবে দমন করার চেষ্টায় রত ছিল। তারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে হঠাৎ করে একটা প্রজ্ঞাপন জারি করে। আওয়ামী লীগ যে গণঅভ্যুত্থানকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলতে চেয়েছে, আমরা তো সেটার পার্ট হতে পারি না। সেই ন্যারেটিভের পার্ট তো আমরা হতে পারি না।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ কোনো নীতিগত অবস্থান থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে নাই। তারা রাজনৈতিক অপকৌশলের জন্য, আন্দোলনকে নির্মমভাবে দমন করার জন্য এই ইস্যুটাকে এভাবে ব্যবহার করেছে।”
আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এলে ২২ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন পাওয়ার পর রিভিউ প্যানেল গঠন করা হয়। সেই প্যানেলের মতামতের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের পর গতকাল বুধবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তারা পরীক্ষা করে দেখেছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যেভাবে ছাত্র-জনতার গণ বিপ্লবকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল, জঙ্গী তৎপরতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল এটার ভিত্তিতে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। “এটা সত্যি না। এটা ছাত্র-জনতার বিপ্লব ছিল। ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে একটা দলের ওপর চাপিয়ে দিয়ে তাকে নিষিদ্ধ করা, আমরা এই মিথ্যা ন্যারেটিভের পার্ট হতে পারি না।”
বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের আদালতে তোলার সময় আইনজীবীরা যে বিশৃঙ্খা করছেন, সে বিষয়েও আই্ন উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, আদালত চত্বরেরে হামলাগুলো ‘কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না’।
“একটি দলকে, একটি মন্ত্রিসভাকে, তার সাথে থাকা লোককে জনগণের শত্রুর পর্যায়ে নিয়ে আসা– এটা তো সাবেক সরকারের দায়ভার। তারা এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছে যে জনরোষের তৈরি হয়েছে। সেখানে অনেক বিক্ষুব্ধ মানুষ থাকে, যারা ১৫ বছরে চাকরি হারিয়েছে, জীবিকা হারিয়ে লুকিয়ে থেকেছে, গুম-হত্যার শিকার পরিবার আছে। “এখন মানুষের এত ক্ষোভ, এতো ক্রোধ এগুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সেটাকে সমর্থন করছি না। আমি পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি, ‘আপনারা বাধা দিচ্ছেন না কেন?’ তারা বলল, যে জনতা আছে, তাদের যদি যথেষ্ট বাধা দেয়, তাহলে পরিস্থিতি তো অন্য দিকে মোড় রেবে। আগের সরকার পুলিশকে জনগণের এত বড় শত্রুতে রূপান্তর করেছিল যে পুলিশ সাহস করে তাদেরকে বাধা দিতে পারে না।”
সংঘর্ষের মধ্যে হতাহতের ঘটনায় বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী, পুলিশ কর্মকর্তাদের আসামি করার বিষয়ে এক প্রশ্নে আসিফ নজরুল বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে কেউ যদি মামলা করে, ধরেন, আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আপনার সন্তান মারা গেছে। এখন আপনার সন্তান যদি মারা গিয়ে থাকে, তাহলে যে এলাকায় মারা গেছে, শুধু সেই এলাকার পুলিশকেই মামলা দেবেন? আপনি তো দেখেছেন আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী বলেছেন, ওবায়দুল কাদের কী বলেছেন, দীপু মনি, নওফেল, আরাফাত কী বলেছেন, আপনার মনে পড়বে না?
“এখন আপনি যদি উনাদের বিরুদ্ধে মামলা দেন, রাষ্ট্রের কোনো অধিকার নাই ‘আপনি মামলা করতে পারবেন না’ বলার। আমাদের একটাই করণীয় আছে, পুলিশের কাছে মামলা হলে পুলিশ তদন্ত করবে। সুস্পষ্ট তথ্য না পেলে পুলিশ ডিসচার্জ করে দিবে। আদালতের কাছে যদি মামলা দেয়, আদালত তদন্তপূর্বক এফআইআর দিতে বলবে।”
উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের যে কাজ, আমরা তদন্ত বা বিচার কাজে ডিউ প্রসেস বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করব। আপনাদের কাছে এটা আমার কমিটমেন্ট। এখন আমরা তো আদালতের কাজে হস্কক্ষেপ করতে পারি না। আমরা এমনও শুনেছি, আদালতের ওপরও চাপ আছে। স্থানীয় পর্যায়ে একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী, যার অত্যাচারে ১৫ বছর মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। তারা চায় যে এক্ষুণি তার বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হোক। আদালত তার সাধ্যমতো চেষ্টা করে এসব চাপ এড়ানোর জন্য। আপনারা মনে কইরেন না আমরা কেউই চেষ্টা করছি না। আমরা চেষ্টা করছি।”
দেশে ফিরলে গ্রেফতার হবেন না সাকিব, আশা আইন উপদেষ্টার: হত্যা মামলার আসামি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান দেশে ফিরলে গ্রেফতার হবেন না বলে আশা প্রকাশ করেছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
গতকাল বুধবার (২৮ আগস্ট) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টি আপনাদের নজর এসেছে কি না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে আসিফ নজরুল বলেন, এটাও তো আওয়ামী লীগই শুরু করেছিল। সাকিব তো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য কিছু বয়ে আনেনি, সে নিজে অনেক কিছু অর্জন করেছে। ফুটবলার আমিনুল হক বাংলাদেশের জন্য পুরস্কার বয়ে এনেছিল, জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন ছিল। আমিনুলকে যেভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল, আপনারা কি সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন? আমিনুলকে জেলে ভরা হয়েছিল। সাকিবের বিরুদ্ধে তো শুধু মামলা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, এটা পুলিশ প্রশাসনের ব্যাপার, আমরা যতটুকু বলার সেটা বলার চেষ্টা করেছি। মামলা হওয়া মানে তো গ্রেফতার নয়। আমার বিশ্বাস আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে, যেন কেউ অতি উৎসাহী হয়ে গ্রেফতার করতে না যায়। তিনি বলেন, আমি আশা করি সাকিব গ্রেফতার হবে না। আমি যতদূর জানি আমাদের পুলিশ বাহিনীকে একটা নির্দেশনা দেওয়া আছে।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চাই না, এমন বক্তব্য দিইনি: তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমি নই। যদি শক্তভাবে জঙ্গি তৎপরতা, রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা- সত্যিকার অর্থেই সে রকম কিছু থাকে, সেটাও অত্যন্ত সততার সঙ্গে তদন্ত করে দেখে হয়তো এটা (নিষিদ্ধ) করা যেতে পারে। আসিফ নজরুল বলেন, জেনারেল রুল হিসেবে আমাদের সংবিধানে সংগঠন করার স্বাধীনতা আছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া দল। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে দলটির অবদান ছিল। গত ১৫ বছরে তারা যা করেছে, সেটা তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না, সেটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না। তারা বাংলাদেশের ইতিহাসে বর্বরতম ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা মনে হয় না সমীচীন হবে।
সিইসির কথায় পরিচালিত হওয়ার কারণ নেই: ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে মন্তব্য করেছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রথম রিয়ালাইজ করা উচিত, তাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা কী ছিল। ‘ভুয়া নির্বাচন’ করা তাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল? সেটা আগে নিজেরা বিবেচনা করুক। তারা আগে আত্মসমালোচনা করুক, তারপর দেখা যাক। কোথায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একটা লেখা দেখলাম, উনি এখন আগের সরকারকে স্বৈরাচারী অগণতান্ত্রিক সরকার বলছেন। ‘এটা (৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন) দরকার কি দরকার না, সেটা ওনার কথায় আমাদের পরিচালিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের যথেষ্ট আইন বিশেষজ্ঞ আছেন। আমরা সব দিকে দৃষ্টি রেখে এটা করবো’- বলেন আইন উপদেষ্টা।
আদালত চত্বরে আসামির ওপর হামলা গ্রহণযোগ্য নয়: বিগত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিভিন্ন আদালতে উঠানোর সময় হামলার ঘটনা ঘটছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইন উপদেষ্টা বলেন, আদালত চত্বরে যে হামলা হচ্ছে সেটা কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আপনাদের কি মনে আছে একজন অগ্রজ সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান সাহেব, উনাকে আদালতে কি নির্মমভাবে রক্তাক্ত করা হয়েছিল, তখন আপনারা সবাই কি প্রশ্নটা করেছিলেন? নিউজটা কি দেখাতে পেরেছিলেন? তিনি বলেন, আরও অনেকভাবে অনেক সাংবাদিককে অপদস্ত করা হয়েছে। আমি নাম নেবো না, আপনারা তো রিপোর্টই করতে পারতেন না। আপনাদের (সাংবাদিক) কারও কারও সরাসরি ইন্ধন ছিল এসব কাজে। তবে আদালতে যাওয়ার সময় কাউকে আক্রমণ করা উচিত নয়। এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ‘তবে আপনারা প্রেক্ষাপটটা বুঝবেন। সেখানে অনেক বিক্ষুব্ধ মানুষ থাকেন, যারা ১৫ বছর চাকরি হারিয়ে ছিলেন, জীবনের নিরাপত্তার ভয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। গুম ও হত্যার শিকার পরিবার আছে। মানুষের এত ক্ষোভ, এত ক্রোধ! সেই ক্ষোভ ও ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সেই বহিঃপ্রকাশকে সমর্থন করছি না।’
আসিফ নজরুল বলেন, এই ভিড়টা (আদালত প্রাঙ্গণে) কমানোর কী কী উপায় আছে, সেটি আমরা চিন্তা করছি। রাজনৈতিক দলগুলোকে বলেছি, আপনাদের কর্মী-টর্মী থাকলে তাদের থামানোর চেষ্টা করেন। যত্রতত্র নানা ধরনের মামলা হচ্ছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, নিহতের পরিবার যদি উনাদের বিরুদ্ধে মামলা দেন, রাষ্ট্রের অধিকার নেই আপনি মামলা করতে পারবেন না এটা বলার। পুলিশের কাছে মামলা হলে পুলিশ তদন্ত করে সুস্পষ্ট তথ্য না পেলে ডিসচার্জ করে দেবে। আদালতে মামলা দিলে আদালত তদন্তপূর্বক এফআইআর নিতে বলবে। আমরা তদন্ত ও বিচারকাজে ডিউ প্রসেস বজায় রাখার চেষ্টা করবো। আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, আমি আপনাদের জানাবো আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কী কী কাজ করা হচ্ছে। একটা স্টেপের কথা বলার লোভ আমি সামলাতে পারছি না। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কিছু মামলা চিহ্নিত করেছি। আমাদের আইন মন্ত্রণালয় থেকে যা যা করার সেই করণীয় ঠিক করেছি। এরমধ্যে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড মামলা অন্যতম।