ঢাকা ০৩:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢল বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

  • আপডেট সময় : ১২:৩৩:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪
  • ৫০ বার পড়া হয়েছে

দেশের খবর ডেস্ক : কয়েক এলাকায় উন্নতি হলেও নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নোয়াখালীর প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে খাদ্য সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদেও পাঠানো খবর:
নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, এ পর্যন্ত ৫ মৃত্যু
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলে নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে খাদ্য সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর রেগুলেটর ধসে যাওয়ায় এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, নোয়াখালীতে গত কয়েকদিনের ভয়াবহ বন্যায় জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে ৮ উপজেলা আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৮৭ ইউনিয়ন ও ৭ পৌরসভার ১৯ লাখ ৮১ হাজার ৭০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। জেলায় এক হাজার ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে এক লাখ ৮২ হাজার ৩০৯ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে নগদ ৪৫ লাখ টাকা, ৮৮২ মেট্রিকটন চাল ও এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এখনো ৯১৮ মেট্রিকটন চাল মজুত রয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় বন্যায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ৮৮টি মেডিকেল টিম বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছে। জেলা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জানা গেছে, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে ২০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট। এদিকে বন্যায় বেড়েছে সাপের উপদ্রব। গত তিন দিনে নোয়াখালীতে ৬৩ জনকে সাপে কেটেছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সাপে কেটেছে ২৮ জনকে। বন্যার কারণে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে ১০৮ জন। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম বলেন, মেডিকেল টিম ছাড়াও হাসপাতালে সার্বিক চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। সেনবাগ উপজেলার বাসিন্দা খোরশেদ আলম জানান, ফেনীর মুহুরী নদীর উজানের পানি প্রবেশ করায় জেলার সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী উপজেলার আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব উপজেলায় গত দুদিন বৃষ্টি না হলেও উজানের পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়। অনেক জায়গায় ঘরবাড়ি ও সড়ক তলিয়ে গেছে। স্কুলে ঢুকে পড়েছে পানি। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। কবিরহাটের বাসিন্দা মো. সফি উল্যাহ বলেন, বন্যা ও ভারী বর্ষণের কারণে কবিরহাটের সব রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে বন্ধ রয়েছে। বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার ৮টি উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। প্রতিটি বাড়িতে ৩ থেকে ৫ ফুট জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নিচু এলাকাগুলোতে যার পরিমাণ ৬ থেকে ৭ ফুট। বসতঘরে পানি প্রবেশ করায় বাসিন্দারা নিকটস্থ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এলাকার সবগুলো প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। বসত ও রান্নাঘরে পানি ঢুকে পড়ায় খাবার সংকটে রয়েছে বেশিরভাগ মানুষ। জেলার প্রধান সড়কসহ প্রায় ৮০ ভাগ সড়ক কয়েক ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়কগুলোতে যান চলাচল অনেকটাই কম। এছাড়া সোমবার ভোরে জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ২৩ ভেন্ট রেগুলেটরটি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। এতে সাগর থেকে লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে সমগ্র এলাকা প্লাবিত হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, রোববার গভীর রাতের দিকে রেগুলেটরে ফাটল ধরে। আজ ভোরে এটি মাঝ বরাবর দেবে গিয়ে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এতে আশপাশের এলাকায় ব্যাপক বন্যাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহার এবং ফেনীর সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলার মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী বলেন, রেগুলেটরের আশপাশের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হচ্ছে। এরআগে কোম্পানীগঞ্জের ৬৭ আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫ হাজার আশ্রিত থাকলেও এর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল বলেন বলেন, রেগুলেটর ধসে গেলেও বন্যার পানি নিষ্কাশনে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না। তবে প্রতিদিনকার ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জোয়ার আসলে আগে এ পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে পারতো না এখন তা লোকালয়ে প্রবেশ করবে। জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, সরেজমিন পরিদর্শনে আছি। আমরা চেষ্টা করছি দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং টিমকে রেগুলেটর এলাকায় নিয়োজিত করা হচ্ছে।
শাহরাস্তিতে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি
চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, চাঁদপুরের শাহারাস্তি উপজেলায় উজানের পানি নেমে গত দুই দিনে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ বন্যার কবলে পড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার। গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত উপজেলার সুচিপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বাড়িঘর পানির নিচে এবং রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। একইসঙ্গে তলিয়ে গেছে মাছের ঘের এবং গবাদি পশুর ঘর। সূচিপারা ডিগ্রি কলেজে আশ্রয় নিয়েছে আড়াই শতাধিক মানুষ। তারা গত তিনদিন এই আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবার-পরিজন নিয়ে আছেন। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন গবাদি পশুসহ হাঁস মুরগি। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা জাকির হোসেন বেপারী বলেন, বাড়ি ঘরে পানি উঠে যাওয়ার কারণে বৃদ্ধা মাসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি। কবে পানি কমবে সেই চিন্তায় আছি। তানিয়া আক্তার নামে গৃহবধূ বলেন, আমরা শিশুদের নিয়ে গত দুই দিন এই আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। আমাদের বাড়িঘর সব পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন কি অবস্থায় আছে তাও জানি না। পার্শ্ববর্তী পাথৈর গ্রামের মাহিন হোসেন বলেন, আমাদের গ্রামের উত্তর ও দক্ষিণপাড়া সব বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। আমাদের দেখার জন্য এখন পর্যন্ত কেউ আসেনি। আমরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি। একই গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, আজকে চারদিন আমাদের এলাকায় পানি। কুমিল্লা ও ফেনীর পানি আমাদের এলাকায় আসায় ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ডাকাতিয়া নদী দিয়ে বানের পানি প্রবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কমছে না। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সজাগ ফাউন্ডেশনের সদস্য ফয়েজ আহমেদ বলেন, পানিবন্দি মানুষদের খুঁজে খুঁজে খাবার সামগ্রী দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। এই মুহূর্তে দুর্গত মানুষের পাশে সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন। শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়াসির আরাফাত বলেন, উপজেলার দক্ষিণে ছয়টি ইউনিয়নে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এই পর্যন্ত পাঁচশতাধিক পরিবার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে আরও পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা সবাইকে সহযোগিতায় কাজ করছি। অন্যদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। এদিকে দুপুরে উপজেলার সূচিপাড়ার ডিগ্রি কলেজ আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসানসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
লক্ষ্মীপুরে পানি বাড়ছেই, ত্রাণের জন্য হাহাকার
লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা জানান, লক্ষ্মীপুরে টানা বৃষ্টি ও বন্যার পানি ঢুকে প্রায় ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। অন্যদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ কষ্ট করে বাড়িঘরেই রয়েছেন। বাকিরা উজানে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন। নোয়াখালী থেকে অনবরত বন্যার পানি রহমতখালী খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরে ঢুকছে। দুর্গম এলাকাগুলোতে পানিবন্দিদের জন্য কোনো খাবার যাচ্ছে না। ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে মানুষ। দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছাতে পর্যাপ্ত নৌকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে রোববার (২৫ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলায় ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে বন্যার পানি ৬ ইঞ্চি বেড়ে গেছে। নোয়াখালীর মুছাপুর স্লুইচগেট ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এর প্রভাব লক্ষ্মীপুরেও পড়বে। জানা গেছে, জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ এখন পানির নিচে তলিয়ে আছে। ডুবে গেছে, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলি ক্ষেত ও বহু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কোথাও কোথাও ৪-৫ ফুট পানি রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে মানুষ দুঃসহ জীবন পার করছে। জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৫৮টি ইউনিয়নের প্রায় প্রত্যেকটি এলাকাতেই পানি ঢুকে পড়েছে। মানুষজন খাদ্য সংকটে রয়েছে বলেও জানা গেছে। লক্ষ্মীপুরে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে- সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ, দিঘলী, চরশাহী, উত্তর জয়পুর, মান্দারী, দত্তপাড়া, বাঙ্গাখাঁ, লাহারকান্দি, তেওয়ারীগঞ্জ, ভবানীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের রহমতখালী খাল সংলগ্ন লামচরী, সমসেরাবাদ, বাঞ্চানগর, মধ্য বাঞ্চানগর এলাকা, চররুহিতা, পার্বতীনগর, কমলনগরের তোরাবগঞ্জ, চরকাদিরা, রামগতির চরপোড়াগাছা, চরবাদাম, রামগঞ্জের লামচর, কাঞ্চনপুর, চন্ডিপুর, ভাটরা, ভোলাকোট, রামগঞ্জ পৌরসভা, ভাদুর, করপাড়া, দরবেশপুর, রায়পুরের সোনাপুর, কেরোয়া, চরপাতা, বামনী, চরমোহনা, রায়পুর, দক্ষিণ চরআবাবিল ইউনিয়ন ও রায়পুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা বন্যা কবলিত হয়েছে। এর মধ্যে দিঘলী, চরশাহীসহ দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। ওইসব এলাকার মানুষ খাদ্য সংকটে হাহাকার করছে। যে যেভাবে পারছেন ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত নৌকা না থাকায় উদ্ধারকারী ও ত্রাণ সহায়তাকারীরা দুর্গম এলাকাগুলোতে যেতে পারছেন না বলে জানা গেছে। মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সেলিম জানান, ৪ দিন ধরে তিনি খায়রুল এনাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে উঠেছেন। পানি বেশি হওয়ায় কেউই ঠিকমতো সেখানে গিয়ে তাদের খোঁজ নিচ্ছে না। কোনো খাবারও জোটেনি তাদের।
বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের বাসিন্দা রাবেয়া বেগম বলেন, বাড়িতে প্রচুর পানি। থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। এজন্য স্বামী-সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়ি মান্দারী যাদৈয়া গ্রামে এসেছি। এছাড়া আশপাশের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও জায়গা নেই। বাবার বাড়িতেও পানি। সবাই একসঙ্গে থাকব, বাঁচলে সবাই একসঙ্গে বাঁচব। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৫৫ মেট্রিক টন জিআর চাল ও ১০ লাখ নগদ টাকা (জিআর ক্যাশ) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সদর উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন, রায়পুরে ২৫ মেট্রিক টন, রামগঞ্জে ৫০ মেট্রিক টন, রামগতিতে ২০ মেট্রিক টন ও কমলনগরে ৩০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে প্রত্যেক উপজেলার জন্য দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, রোববার (২৫ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরে ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বন্যার পানি ৬ ইঞ্চি বৃদ্ধি পেয়েছে। রহমতখালী খাল হয়ে নোয়াখালীর পানি লক্ষ্মীপুরে অনবরত ঢুকছে। মুছাপুরের স্লুইচ গেট ভেঙে গেছে। এতে এর একটি অংশের পানি বেগমগঞ্জ হয়ে লক্ষ্মীপুরে প্রবেশের শঙ্কা রয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান বলেন, জেলায় বর্তমানে ৭ লাখ ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ২৩ হাজার ৪০৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৯৪৩ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খিচুড়ি রান্না করে পরিবেশন করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক দুর্গম এলাকায় যারা আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যাননি, তাদের জন্য শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা জেলার সর্বত্র ত্রাণ বিতরণ করছে।

 

 

 

 

 

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢল বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

আপডেট সময় : ১২:৩৩:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪

দেশের খবর ডেস্ক : কয়েক এলাকায় উন্নতি হলেও নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নোয়াখালীর প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে খাদ্য সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদেও পাঠানো খবর:
নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, এ পর্যন্ত ৫ মৃত্যু
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলে নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে খাদ্য সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর রেগুলেটর ধসে যাওয়ায় এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, নোয়াখালীতে গত কয়েকদিনের ভয়াবহ বন্যায় জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে ৮ উপজেলা আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৮৭ ইউনিয়ন ও ৭ পৌরসভার ১৯ লাখ ৮১ হাজার ৭০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। জেলায় এক হাজার ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে এক লাখ ৮২ হাজার ৩০৯ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে নগদ ৪৫ লাখ টাকা, ৮৮২ মেট্রিকটন চাল ও এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এখনো ৯১৮ মেট্রিকটন চাল মজুত রয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় বন্যায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ৮৮টি মেডিকেল টিম বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছে। জেলা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জানা গেছে, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে ২০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট। এদিকে বন্যায় বেড়েছে সাপের উপদ্রব। গত তিন দিনে নোয়াখালীতে ৬৩ জনকে সাপে কেটেছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সাপে কেটেছে ২৮ জনকে। বন্যার কারণে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে ১০৮ জন। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম বলেন, মেডিকেল টিম ছাড়াও হাসপাতালে সার্বিক চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। সেনবাগ উপজেলার বাসিন্দা খোরশেদ আলম জানান, ফেনীর মুহুরী নদীর উজানের পানি প্রবেশ করায় জেলার সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী উপজেলার আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব উপজেলায় গত দুদিন বৃষ্টি না হলেও উজানের পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়। অনেক জায়গায় ঘরবাড়ি ও সড়ক তলিয়ে গেছে। স্কুলে ঢুকে পড়েছে পানি। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। কবিরহাটের বাসিন্দা মো. সফি উল্যাহ বলেন, বন্যা ও ভারী বর্ষণের কারণে কবিরহাটের সব রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে বন্ধ রয়েছে। বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার ৮টি উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। প্রতিটি বাড়িতে ৩ থেকে ৫ ফুট জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নিচু এলাকাগুলোতে যার পরিমাণ ৬ থেকে ৭ ফুট। বসতঘরে পানি প্রবেশ করায় বাসিন্দারা নিকটস্থ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এলাকার সবগুলো প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। বসত ও রান্নাঘরে পানি ঢুকে পড়ায় খাবার সংকটে রয়েছে বেশিরভাগ মানুষ। জেলার প্রধান সড়কসহ প্রায় ৮০ ভাগ সড়ক কয়েক ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়কগুলোতে যান চলাচল অনেকটাই কম। এছাড়া সোমবার ভোরে জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ২৩ ভেন্ট রেগুলেটরটি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। এতে সাগর থেকে লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে সমগ্র এলাকা প্লাবিত হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, রোববার গভীর রাতের দিকে রেগুলেটরে ফাটল ধরে। আজ ভোরে এটি মাঝ বরাবর দেবে গিয়ে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এতে আশপাশের এলাকায় ব্যাপক বন্যাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহার এবং ফেনীর সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলার মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী বলেন, রেগুলেটরের আশপাশের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হচ্ছে। এরআগে কোম্পানীগঞ্জের ৬৭ আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫ হাজার আশ্রিত থাকলেও এর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল বলেন বলেন, রেগুলেটর ধসে গেলেও বন্যার পানি নিষ্কাশনে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না। তবে প্রতিদিনকার ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জোয়ার আসলে আগে এ পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে পারতো না এখন তা লোকালয়ে প্রবেশ করবে। জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, সরেজমিন পরিদর্শনে আছি। আমরা চেষ্টা করছি দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং টিমকে রেগুলেটর এলাকায় নিয়োজিত করা হচ্ছে।
শাহরাস্তিতে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি
চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, চাঁদপুরের শাহারাস্তি উপজেলায় উজানের পানি নেমে গত দুই দিনে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ বন্যার কবলে পড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার। গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত উপজেলার সুচিপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বাড়িঘর পানির নিচে এবং রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। একইসঙ্গে তলিয়ে গেছে মাছের ঘের এবং গবাদি পশুর ঘর। সূচিপারা ডিগ্রি কলেজে আশ্রয় নিয়েছে আড়াই শতাধিক মানুষ। তারা গত তিনদিন এই আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবার-পরিজন নিয়ে আছেন। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন গবাদি পশুসহ হাঁস মুরগি। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা জাকির হোসেন বেপারী বলেন, বাড়ি ঘরে পানি উঠে যাওয়ার কারণে বৃদ্ধা মাসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি। কবে পানি কমবে সেই চিন্তায় আছি। তানিয়া আক্তার নামে গৃহবধূ বলেন, আমরা শিশুদের নিয়ে গত দুই দিন এই আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। আমাদের বাড়িঘর সব পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন কি অবস্থায় আছে তাও জানি না। পার্শ্ববর্তী পাথৈর গ্রামের মাহিন হোসেন বলেন, আমাদের গ্রামের উত্তর ও দক্ষিণপাড়া সব বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। আমাদের দেখার জন্য এখন পর্যন্ত কেউ আসেনি। আমরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি। একই গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, আজকে চারদিন আমাদের এলাকায় পানি। কুমিল্লা ও ফেনীর পানি আমাদের এলাকায় আসায় ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ডাকাতিয়া নদী দিয়ে বানের পানি প্রবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কমছে না। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সজাগ ফাউন্ডেশনের সদস্য ফয়েজ আহমেদ বলেন, পানিবন্দি মানুষদের খুঁজে খুঁজে খাবার সামগ্রী দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। এই মুহূর্তে দুর্গত মানুষের পাশে সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন। শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়াসির আরাফাত বলেন, উপজেলার দক্ষিণে ছয়টি ইউনিয়নে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এই পর্যন্ত পাঁচশতাধিক পরিবার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে আরও পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা সবাইকে সহযোগিতায় কাজ করছি। অন্যদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। এদিকে দুপুরে উপজেলার সূচিপাড়ার ডিগ্রি কলেজ আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসানসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
লক্ষ্মীপুরে পানি বাড়ছেই, ত্রাণের জন্য হাহাকার
লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা জানান, লক্ষ্মীপুরে টানা বৃষ্টি ও বন্যার পানি ঢুকে প্রায় ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। অন্যদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ কষ্ট করে বাড়িঘরেই রয়েছেন। বাকিরা উজানে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন। নোয়াখালী থেকে অনবরত বন্যার পানি রহমতখালী খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরে ঢুকছে। দুর্গম এলাকাগুলোতে পানিবন্দিদের জন্য কোনো খাবার যাচ্ছে না। ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে মানুষ। দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছাতে পর্যাপ্ত নৌকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে রোববার (২৫ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলায় ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে বন্যার পানি ৬ ইঞ্চি বেড়ে গেছে। নোয়াখালীর মুছাপুর স্লুইচগেট ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এর প্রভাব লক্ষ্মীপুরেও পড়বে। জানা গেছে, জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ এখন পানির নিচে তলিয়ে আছে। ডুবে গেছে, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলি ক্ষেত ও বহু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কোথাও কোথাও ৪-৫ ফুট পানি রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে মানুষ দুঃসহ জীবন পার করছে। জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৫৮টি ইউনিয়নের প্রায় প্রত্যেকটি এলাকাতেই পানি ঢুকে পড়েছে। মানুষজন খাদ্য সংকটে রয়েছে বলেও জানা গেছে। লক্ষ্মীপুরে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে- সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ, দিঘলী, চরশাহী, উত্তর জয়পুর, মান্দারী, দত্তপাড়া, বাঙ্গাখাঁ, লাহারকান্দি, তেওয়ারীগঞ্জ, ভবানীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের রহমতখালী খাল সংলগ্ন লামচরী, সমসেরাবাদ, বাঞ্চানগর, মধ্য বাঞ্চানগর এলাকা, চররুহিতা, পার্বতীনগর, কমলনগরের তোরাবগঞ্জ, চরকাদিরা, রামগতির চরপোড়াগাছা, চরবাদাম, রামগঞ্জের লামচর, কাঞ্চনপুর, চন্ডিপুর, ভাটরা, ভোলাকোট, রামগঞ্জ পৌরসভা, ভাদুর, করপাড়া, দরবেশপুর, রায়পুরের সোনাপুর, কেরোয়া, চরপাতা, বামনী, চরমোহনা, রায়পুর, দক্ষিণ চরআবাবিল ইউনিয়ন ও রায়পুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা বন্যা কবলিত হয়েছে। এর মধ্যে দিঘলী, চরশাহীসহ দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। ওইসব এলাকার মানুষ খাদ্য সংকটে হাহাকার করছে। যে যেভাবে পারছেন ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত নৌকা না থাকায় উদ্ধারকারী ও ত্রাণ সহায়তাকারীরা দুর্গম এলাকাগুলোতে যেতে পারছেন না বলে জানা গেছে। মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সেলিম জানান, ৪ দিন ধরে তিনি খায়রুল এনাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে উঠেছেন। পানি বেশি হওয়ায় কেউই ঠিকমতো সেখানে গিয়ে তাদের খোঁজ নিচ্ছে না। কোনো খাবারও জোটেনি তাদের।
বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের বাসিন্দা রাবেয়া বেগম বলেন, বাড়িতে প্রচুর পানি। থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। এজন্য স্বামী-সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়ি মান্দারী যাদৈয়া গ্রামে এসেছি। এছাড়া আশপাশের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও জায়গা নেই। বাবার বাড়িতেও পানি। সবাই একসঙ্গে থাকব, বাঁচলে সবাই একসঙ্গে বাঁচব। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৫৫ মেট্রিক টন জিআর চাল ও ১০ লাখ নগদ টাকা (জিআর ক্যাশ) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সদর উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন, রায়পুরে ২৫ মেট্রিক টন, রামগঞ্জে ৫০ মেট্রিক টন, রামগতিতে ২০ মেট্রিক টন ও কমলনগরে ৩০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে প্রত্যেক উপজেলার জন্য দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, রোববার (২৫ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরে ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বন্যার পানি ৬ ইঞ্চি বৃদ্ধি পেয়েছে। রহমতখালী খাল হয়ে নোয়াখালীর পানি লক্ষ্মীপুরে অনবরত ঢুকছে। মুছাপুরের স্লুইচ গেট ভেঙে গেছে। এতে এর একটি অংশের পানি বেগমগঞ্জ হয়ে লক্ষ্মীপুরে প্রবেশের শঙ্কা রয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান বলেন, জেলায় বর্তমানে ৭ লাখ ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ২৩ হাজার ৪০৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৯৪৩ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খিচুড়ি রান্না করে পরিবেশন করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক দুর্গম এলাকায় যারা আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যাননি, তাদের জন্য শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা জেলার সর্বত্র ত্রাণ বিতরণ করছে।