ঢাকা ০৫:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

টাকায় কী সুখ মেলে?

  • আপডেট সময় : ১১:০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪
  • ৭৯ বার পড়া হয়েছে

‘হ্যাপি মানি: দি সায়েন্স অফ হ্যাপিয়ার স্পেন্ডিং’ বইয়ের এই সহ-লেখক দাবি করে বলেন, “অর্থ দিয়ে অবশ্যই সুখ কেনা যায়। আর যদি কেউ বলেন যায় না, তাহলে সে যেন তার টাকাগুলো আমাকে দিয়ে দেয়।” নিউ জার্সির প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি’র ‘সেন্টার ফর হেল্থ অ্যান্ড ওয়েল-বিইং’য়ের গবেষক ড্যানিয়েল কাহনেম্যান ২০১০ সালের একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন- নির্দিষ্ট একটা আয়ের সাথে সুখের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তারপর সেটা পড়তির দিকে থাকে। তবে ২০২৩ সালে ‘ইউনিভার্সিটি অফ পেনসালভিনিয়া’র গবেষকরা, এই গবেষণার ওপর পুনরায় পর্যবেক্ষণ চালান।
পাশাপাশি ‘ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়া’র আরেকটি গবেষণার সাথে মিলিয়ে তারা জানান- আয় যতই হোক, যারা সাধারণত কম সুখী তাদের ক্ষেত্রেই অসুখী থাকার মাত্রা বেশি।
কতটা সুখী এবং কত টাকা আছে- এই বিষয়টা বাদ দিয়ে ইতিবাচক বা নেতিবাচক অভিজ্ঞতার পর সুখের ভিত্তি রেখার দিকে ফিরে যেতে হয়। ডান ব্যাখ্যা করেন, “এই ধারণাকে বলা হয় ‘হেডোনিক অ্যাডাপ্টেশন’ বা আনন্দবাদের অভিযোজন। আমরা অনেক কিছুই আত্মস্থ করি, তাই না। তবে ‘হেডোনিক অ্যাডাপ্টেশন’ হল আনন্দ অনুভব করা।” যেমন- একটি নতুন গাড়ি কেনার পর যে আনন্দ পাওয়া যা, সময় গেলে সেই অনুভূতি সাধারণ পর্যায়ে নেমে আসে। এই মনোবিজ্ঞানি বলেন, “আয় বৃদ্ধি পেলে অবশ্যই মানুষ সুখী হয়। তবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। কারণ ভালো কিছু হওয়ার পর সেই সুখানুভূতি থেকে আমরা সবসময় সুখের ভিত্তি রেখায় ফিরে যাই।”
যদি অর্থ-কড়ি সেভাবে কামানো হয় তবে খরচ করার ব্যাপারেও মনোযোগী হওয়া উচিত। ডান বলেন, “কারণ টাকা থাকা মানেই যে, সুখের বৃষ্টি স্বয়ংক্রিয় ভাবে ঝরতে থাকবে- সেটা ঠিক না” এজন্য তিনি টাকা খরচের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেন।
পণ্য নয়, অভিজ্ঞতা ক্রয় করুন: “যে কোনো পণ্য বা জিনিস কেনার আনন্দ বেশি সময় দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তবে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারলে প্রাকৃতিকভাবেই সুখী হওয়া যায়” বলেন, ডান। তাই টাকা খরচ করে নতুন সোফা কেনার চাইতে, ভ্রমণ ও খাবারের স্বাদ গ্রহণ করার মতো কাজ করলে সুখ উপভোগ করা যাবে বেশি।
উপহার হিসেবে খরচ করা: যা মনে চাইল তাই কিনে ফেললাম- এরকম করলে বেশিক্ষণ আনন্দ পাওয়া সম্ভব না। বরং অর্থ খরচ করার ক্ষেত্রে একটু সময় নিতে হবে। কোনো বিশেষ পছন্দের জিনিস কেনার মাঝে আত্মতৃপ্তি মাত্রা বেশি। চোখে পড়লো কিনে ফেললাম- এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
সময় কেনা: ডান বলেন, “এই ধারণাটা হল নিজেকে সময় দেওয়ার ক্ষেত্রে সেবা পাওয়ার জন্য টাকা খরচ করা।” তাই ঘর, বাগান বা ছাদ পরিষ্কার কিংবা এই ধরনের যেসব কাজ নিজে করা যায়, সেগুলো করার জন্য অন্যকে ভাড়া করতে পারেন। আর নিজে সেই সময়টা উপভোগ করুন। যা কিনা অর্থ খরচ করে সময় কেনাকেই বোঝায়।
আগে কেনা, পরে ব্যবহার: যে কোনো জিনিস কেনার পর, কয়েকদিন অপেক্ষার পর ব্যবহার করলে তৃপ্তিকর অনুভূতি বেশি পাওয়া যায়। কারণ ততদিন টাকার পরিমাণটা মনে থাকে কম। ব্যবহার করা জিনিসটা গুরুত্ব বাড়ে তুলনামূলকভাবে।
দান করা: মনে করুন- অর্থ দানের মাধ্যমে আনন্দ বিলাচ্ছেন। তাই কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠানে টাকা দেওয়া, বন্ধুদের খাওয়ানো, কোনো অপরিচিত মানুষকে আর্থিক সাহায্য করার মাধ্যমে যে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়, সেটা অর্থ দিয়ে সুখ কেনারই নামান্তর।

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

টাকায় কী সুখ মেলে?

আপডেট সময় : ১১:০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪

‘হ্যাপি মানি: দি সায়েন্স অফ হ্যাপিয়ার স্পেন্ডিং’ বইয়ের এই সহ-লেখক দাবি করে বলেন, “অর্থ দিয়ে অবশ্যই সুখ কেনা যায়। আর যদি কেউ বলেন যায় না, তাহলে সে যেন তার টাকাগুলো আমাকে দিয়ে দেয়।” নিউ জার্সির প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি’র ‘সেন্টার ফর হেল্থ অ্যান্ড ওয়েল-বিইং’য়ের গবেষক ড্যানিয়েল কাহনেম্যান ২০১০ সালের একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন- নির্দিষ্ট একটা আয়ের সাথে সুখের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তারপর সেটা পড়তির দিকে থাকে। তবে ২০২৩ সালে ‘ইউনিভার্সিটি অফ পেনসালভিনিয়া’র গবেষকরা, এই গবেষণার ওপর পুনরায় পর্যবেক্ষণ চালান।
পাশাপাশি ‘ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়া’র আরেকটি গবেষণার সাথে মিলিয়ে তারা জানান- আয় যতই হোক, যারা সাধারণত কম সুখী তাদের ক্ষেত্রেই অসুখী থাকার মাত্রা বেশি।
কতটা সুখী এবং কত টাকা আছে- এই বিষয়টা বাদ দিয়ে ইতিবাচক বা নেতিবাচক অভিজ্ঞতার পর সুখের ভিত্তি রেখার দিকে ফিরে যেতে হয়। ডান ব্যাখ্যা করেন, “এই ধারণাকে বলা হয় ‘হেডোনিক অ্যাডাপ্টেশন’ বা আনন্দবাদের অভিযোজন। আমরা অনেক কিছুই আত্মস্থ করি, তাই না। তবে ‘হেডোনিক অ্যাডাপ্টেশন’ হল আনন্দ অনুভব করা।” যেমন- একটি নতুন গাড়ি কেনার পর যে আনন্দ পাওয়া যা, সময় গেলে সেই অনুভূতি সাধারণ পর্যায়ে নেমে আসে। এই মনোবিজ্ঞানি বলেন, “আয় বৃদ্ধি পেলে অবশ্যই মানুষ সুখী হয়। তবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। কারণ ভালো কিছু হওয়ার পর সেই সুখানুভূতি থেকে আমরা সবসময় সুখের ভিত্তি রেখায় ফিরে যাই।”
যদি অর্থ-কড়ি সেভাবে কামানো হয় তবে খরচ করার ব্যাপারেও মনোযোগী হওয়া উচিত। ডান বলেন, “কারণ টাকা থাকা মানেই যে, সুখের বৃষ্টি স্বয়ংক্রিয় ভাবে ঝরতে থাকবে- সেটা ঠিক না” এজন্য তিনি টাকা খরচের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেন।
পণ্য নয়, অভিজ্ঞতা ক্রয় করুন: “যে কোনো পণ্য বা জিনিস কেনার আনন্দ বেশি সময় দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তবে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারলে প্রাকৃতিকভাবেই সুখী হওয়া যায়” বলেন, ডান। তাই টাকা খরচ করে নতুন সোফা কেনার চাইতে, ভ্রমণ ও খাবারের স্বাদ গ্রহণ করার মতো কাজ করলে সুখ উপভোগ করা যাবে বেশি।
উপহার হিসেবে খরচ করা: যা মনে চাইল তাই কিনে ফেললাম- এরকম করলে বেশিক্ষণ আনন্দ পাওয়া সম্ভব না। বরং অর্থ খরচ করার ক্ষেত্রে একটু সময় নিতে হবে। কোনো বিশেষ পছন্দের জিনিস কেনার মাঝে আত্মতৃপ্তি মাত্রা বেশি। চোখে পড়লো কিনে ফেললাম- এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
সময় কেনা: ডান বলেন, “এই ধারণাটা হল নিজেকে সময় দেওয়ার ক্ষেত্রে সেবা পাওয়ার জন্য টাকা খরচ করা।” তাই ঘর, বাগান বা ছাদ পরিষ্কার কিংবা এই ধরনের যেসব কাজ নিজে করা যায়, সেগুলো করার জন্য অন্যকে ভাড়া করতে পারেন। আর নিজে সেই সময়টা উপভোগ করুন। যা কিনা অর্থ খরচ করে সময় কেনাকেই বোঝায়।
আগে কেনা, পরে ব্যবহার: যে কোনো জিনিস কেনার পর, কয়েকদিন অপেক্ষার পর ব্যবহার করলে তৃপ্তিকর অনুভূতি বেশি পাওয়া যায়। কারণ ততদিন টাকার পরিমাণটা মনে থাকে কম। ব্যবহার করা জিনিসটা গুরুত্ব বাড়ে তুলনামূলকভাবে।
দান করা: মনে করুন- অর্থ দানের মাধ্যমে আনন্দ বিলাচ্ছেন। তাই কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠানে টাকা দেওয়া, বন্ধুদের খাওয়ানো, কোনো অপরিচিত মানুষকে আর্থিক সাহায্য করার মাধ্যমে যে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়, সেটা অর্থ দিয়ে সুখ কেনারই নামান্তর।