ঢাকা ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

পাস করা শিক্ষার্থীর নাম বদলে অকৃতকার্যের নাম বসাতো চক্রটি

  • আপডেট সময় : ১২:১৪:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২১
  • ১১৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর ধানমন্ডির একটি স্কুল থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি পাস করেন নূর তাবাসসুম নামে এক শিক্ষার্থী। ঢাকা বোর্ড থেকে পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি পাস করা তাবাসসুমের মায়ের মোবাইল ফোনে হঠাৎ একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। বার্তাটিতে লেখা ছিল আপনার নাম পরিবর্তন হয়ে নূর রিমতি করা হয়েছে। কোনো ধরনের আবেদন ছাড়া নাম পরিবর্তনের এমন বার্তা পেয়ে তাবাসসুমের পরিবার স্কুলে যোগাযোগ করে। স্কুল থেকে বলা হয় বোর্ডে যোগাযোগ করতে। আর তখনই বাজে বিপত্তি। বোর্ডে অভিযোগ দিতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ তুলতে গিয়ে দেখা যায়, নূর তাবাসসুমের নাম, বাবার নাম ও মায়ের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে ১০ বছর পড়াশোনা করেও সনদ পাননি নূর তাবাসসুম।
পরে তাবাসসুমের পরিবার ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তদন্তে নামার পর সামনে আসে জাল সনদ চক্রের নাম।
গত শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, রমনা ও চকবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে সনদ জালিয়াতি চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল প্রবেশ পত্র, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সনদ ও অনলাইন রেজাল্ট শিটের কপি জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নূর রিমতি, জামাল হোসেন, এ. কে, এম মোস্তফা কামাল, মো. মারুফ, ফারুক আহম্মেদ স্বপন, মাহির আলমা ও আবেদ আলী।
গতকাল শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানান। হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তারকৃত নূর রিমতি ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় রাজধানীর সিটি মডেল কলেজ থেকে অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হয়। কিন্তু তার ইতালি যাওয়ার জন্য এসএসসির সনদের প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন তার মামা জাল সনদ তৈরির জন্য চক্রের জামাল হোসেনের মাধ্যমে মোস্তফা কামালের সঙ্গে তিন লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তি অনুযায়ী মোস্তফা কামাল শিক্ষা বোর্ডের দালাল চক্র গ্রেপ্তারকৃত মো. মারুফ, মাহবুব আলম, ফারুক আহম্মেদ স্বপন ও আবেদ আজাদের সঙ্গে সমন্বয় করে নূর তাবাসসুমের সার্টিফিকেট সংক্রান্ত পিএসসি, জেএসজি এবং এসএসসি পাসের সকল তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর তারা প্রথমে শিক্ষার্থীর বাবার নাম, মায়ের নাম সংশোধনের জন্য শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত ফরমেটে আবেদন করেন। হাফিজ আক্তার আরও বলেন, শিক্ষা বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের টাকার বিনিময়ে শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটের ফলাফল আর্কাইভে নির্ধারিত ফরমেটে সংরক্ষিত কৃতকার্য প্রকৃত শিক্ষার্থী নূর তাবাসসুমের তথ্য পরিবর্তন করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী নূর রিমতির তথ্যগুলো আপলোডের মাধ্যমে জাল সনদ তৈরি করে। পরবর্তীতে জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে নেয়। এমনকি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটেও পরিবর্তিত শিক্ষার্থীর সংশোধিত তথ্য দেখায়। ডিবির প্রধান আরও বলেন, প্রতারক চক্রটি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডসহ অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, জন্ম তারিখসহ অন্যান্য তথ্য পরিবর্তন করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের তথ্য সংযোজন করে জাল সনদ তৈরির মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পাস করা শিক্ষার্থীর নাম বদলে অকৃতকার্যের নাম বসাতো চক্রটি

আপডেট সময় : ১২:১৪:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর ধানমন্ডির একটি স্কুল থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি পাস করেন নূর তাবাসসুম নামে এক শিক্ষার্থী। ঢাকা বোর্ড থেকে পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি পাস করা তাবাসসুমের মায়ের মোবাইল ফোনে হঠাৎ একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। বার্তাটিতে লেখা ছিল আপনার নাম পরিবর্তন হয়ে নূর রিমতি করা হয়েছে। কোনো ধরনের আবেদন ছাড়া নাম পরিবর্তনের এমন বার্তা পেয়ে তাবাসসুমের পরিবার স্কুলে যোগাযোগ করে। স্কুল থেকে বলা হয় বোর্ডে যোগাযোগ করতে। আর তখনই বাজে বিপত্তি। বোর্ডে অভিযোগ দিতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ তুলতে গিয়ে দেখা যায়, নূর তাবাসসুমের নাম, বাবার নাম ও মায়ের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে ১০ বছর পড়াশোনা করেও সনদ পাননি নূর তাবাসসুম।
পরে তাবাসসুমের পরিবার ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তদন্তে নামার পর সামনে আসে জাল সনদ চক্রের নাম।
গত শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, রমনা ও চকবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে সনদ জালিয়াতি চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল প্রবেশ পত্র, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সনদ ও অনলাইন রেজাল্ট শিটের কপি জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নূর রিমতি, জামাল হোসেন, এ. কে, এম মোস্তফা কামাল, মো. মারুফ, ফারুক আহম্মেদ স্বপন, মাহির আলমা ও আবেদ আলী।
গতকাল শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানান। হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তারকৃত নূর রিমতি ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় রাজধানীর সিটি মডেল কলেজ থেকে অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হয়। কিন্তু তার ইতালি যাওয়ার জন্য এসএসসির সনদের প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন তার মামা জাল সনদ তৈরির জন্য চক্রের জামাল হোসেনের মাধ্যমে মোস্তফা কামালের সঙ্গে তিন লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তি অনুযায়ী মোস্তফা কামাল শিক্ষা বোর্ডের দালাল চক্র গ্রেপ্তারকৃত মো. মারুফ, মাহবুব আলম, ফারুক আহম্মেদ স্বপন ও আবেদ আজাদের সঙ্গে সমন্বয় করে নূর তাবাসসুমের সার্টিফিকেট সংক্রান্ত পিএসসি, জেএসজি এবং এসএসসি পাসের সকল তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর তারা প্রথমে শিক্ষার্থীর বাবার নাম, মায়ের নাম সংশোধনের জন্য শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত ফরমেটে আবেদন করেন। হাফিজ আক্তার আরও বলেন, শিক্ষা বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের টাকার বিনিময়ে শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটের ফলাফল আর্কাইভে নির্ধারিত ফরমেটে সংরক্ষিত কৃতকার্য প্রকৃত শিক্ষার্থী নূর তাবাসসুমের তথ্য পরিবর্তন করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী নূর রিমতির তথ্যগুলো আপলোডের মাধ্যমে জাল সনদ তৈরি করে। পরবর্তীতে জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে নেয়। এমনকি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটেও পরিবর্তিত শিক্ষার্থীর সংশোধিত তথ্য দেখায়। ডিবির প্রধান আরও বলেন, প্রতারক চক্রটি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডসহ অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, জন্ম তারিখসহ অন্যান্য তথ্য পরিবর্তন করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের তথ্য সংযোজন করে জাল সনদ তৈরির মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।