বিনোদন ডেস্ক: শিল্পকলা একাডেমির পদত্যাগী মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর দুর্নীতির তদন্ত করে তাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন থিয়েটারকর্মীরা। একই সাথে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ও পথনাটক পরিষদের গণতান্ত্রিক রূপান্তরেরও দাবি তুলেছেন তারা। সোমবার বিকেলে সেগুনবাগিচার জাতীয় নাট্যশালার সামনে ‘বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীগণ’ এর সমাবেশ থেকে এসব দাবি তোলা হয়।
এদিকে এক যুগ পর লাকীর পদত্যাগের খবর মিষ্টি বিতরণ করেছে একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে মহাপরিচালকের স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হয়ে কর্মস্থলে নানা রকম বৈষম্য-বঞ্চনার শিকার হচ্ছিলেন তারা। তার পদত্যাগের মধ্যদিয়ে শিল্পকলায় একটি দুর্নীতিমুক্ত, স্বাধীন কর্ম-পরিবেশ পাওয়ার আশাও তাদের। থিয়েটার কর্মীদের সমাবেশে আয়োজকদের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান অভিনেত্রী শাহানা রহমান সুমি।
বক্তব্য দেন প্রাচ্যনাটের কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন, তাড়ুয়ার বাকার বকুল, অপেরার নাহিদ স্মৃতি, আরণ্যক নাট্যদলের ফয়েজ জহির, বটতলার কাজী রোকসানা রুমা, মোহাম্মদ আলী হায়দার প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে ওঠা সকল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম আর দলীয় লেজুড়বৃত্তির অভিযোগ তদন্ত করে তাকে বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতির পদ থেকেও থেকে পদত্যাগ করার দাবি জানানো হয়। এছাড়া শিল্পকলা একাডেমির অন্য যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম আর দলীয় লেজুড়বৃত্তির অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়। শাহানা রহমান সুমি বলেন, “গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনে নিজেদের মধ্যে কোন্দল, অর্থনৈতিক অস্বচ্ছতা মামলা মোকদ্দমায় গিয়ে ঠেকেছে। বারবার বলার পরেও একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন তারা করেননি। এমনকি তাদের নিয়ে কোনো গঠনমূলক সমালোচনা করলেও কলম, কি-বোর্ড নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে তারা ঝাঁপিয়ে পড়তেন। অনিয়ম আর দুর্নীতিতে ডুবে ছিল গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন।” সব লোভ, ক্ষমতা আর স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে থিয়েটারকে গুরুত্ব দেবেন বলে প্রত্যাশার কথা জানান সমাবেশের আয়োজকেরা। এজন্য গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের গঠনতন্ত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবিও তোলেন তারা।
সরকার পতনের পর পরিবর্তনের ধাক্কায় সোমবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ ছাড়েন লিয়াকত আলী লাকী, যিনি ওই পদ আঁকড়ে ছিলেন এক যুগ ধরে। লিয়াকত আলী লাকী শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল। সবশেষ ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ সপ্তমবারের মত তার মেয়াদ বাড়ানো হয়। এত দীর্ঘ সময় এই দায়িত্বে থাকার নজির আর কারো নেই। দীর্ঘদিন ধরে লাকীর শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে থাকা নিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ক্ষোভ তৈরি হয়। দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল তাকে। লাকী বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতির পদেও রয়েছেন। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায়ও সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। তার প্রতিক্রিয়ায় ফেডারেশন ছাড়ে ঢাকা থিয়েটার। গত বছরের জুনেও ‘সাধারণ নাট্যকর্মীবৃন্দ’ ব্যানারে লিয়াকত আলী লাকীকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করে সংস্কৃতিকর্মীদের একটি অংশ। তখনও নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন তিনি।
লাকীর দুর্নীতির বিচার দাবি থিয়েটারকর্মীদের
জনপ্রিয় সংবাদ