ঢাকা ১২:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ভারতে ‘শহীদ’ তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন ৩০০ মুসলিম

  • আপডেট সময় : ০১:০১:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২১
  • ৪৯ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে নিহত ৩০০ মুসলিমের শহীদের সম্মান বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। দেশটির ইতিহাস গবেষণা কাউন্সিল শহীদের তালিকা থেকে তাদের বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। বিবিসি জানিয়েছে, বাদ পড়তে যাওয়া এসব যোদ্ধা বর্তমানের কেরালা রাজ্যের মালাবার অঞ্চলে ১৯২১ সালে ‘মোপলা বিদ্রোহ’ নামে একটি ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। ১০০ বছর আগে মালাবার অঞ্চলে ভারিয়ানকুন্নাথু কুঞ্জাহামেদ হাজী, আলি মুসলিয়ারদের নেতৃত্বে মোপলা বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। ওই সশস্ত্র সংগ্রামে প্রায় ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল বলে প্রচলিত ইতিহাস থেকে জানা যায়, যার মধ্যে ২৩৩৯ জন বিদ্রোহীও ছিল। এই বিদ্রোহীদের মধ্যে ১০০ জনকে গ্রেফতার করে একটি বদ্ধ ট্রেনের কামরায় চাপিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ৬৪ জনের মৃত্যু হয়। যারা বেঁচেছিলেন, তারা একে অপরের পেশাব পান করে জীবনরক্ষা করতে বাধ্য হন। সে বছরের ১০ই নভেম্বরের ওই ঘটনা ‘ওয়াগন ট্র্যাজেডি’ নামে ইতিহাসে পরিচিত। সেই আন্দোলনে নিহত ৩৮৭ জনকে স্বাধীনতা সংগ্রামের ‘শহীদ’ বলতে রাজী নয় ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ হিস্টোরিকাল রিসার্চ (আইসিএইচআর)।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত দিয়ে ডিকশনারি অফ মার্টার্স- ইন্ডিয়াস ফ্রিডাম স্ট্রাগল নামের যে গ্রন্থমালা প্রকাশ করেছিল আইসিএইচআর, তার পঞ্চম খন্ডে মোপলা বিদ্রোহীদের শহীদই বলা হয়। কিন্তু এখন কাউন্সিলের তিন সদস্যের এক কমিটি ঠিক করেছে যে ওই গ্রন্থ থেকে ৩৮৭ জন মোপলা বিদ্রোহীর নাম সরিয়ে দেওয়া উচিত। তিন সদস্যের ওই কমিটির প্রধান, অধ্যাপক সি. আই. আইসাক বলছেন, ১৯২১-এর ওই বিদ্রোহ কোনোভাবেই জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ছিল না। সেটি ছিল ধর্মীয় সহিংসতা। তার দাবি, ওই বিদ্রোহকে কখনই স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ বলা যায় না। ওটা ছিল একটা ধর্মীয় সহিংসতা। জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরকরণের প্রচেষ্টা ছিল সেটি।
তার নেতৃত্বাধীন কমিটি যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে- তার কী কী প্রমাণ পেয়েছেন, এই প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আইসাক বিবিসিকে বলছিলেন, ‘নিশ্চয়ই। আমরা বহু নথি যাচাই করেছি। এর মধ্যে ব্রিটিশ প্রশাসনের নথিপত্র যেমন আছে, তেমনই আর্য সমাজের নথি রয়েছে। আবার মালাবার অঞ্চলের ডেপুটি কালেক্টরের নথিও আছে। এছাড়াও সমসাময়িক সংবাদপত্র, নানা আদালতের নথি, ইত্যাদি খতিয়ে দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তবে ইতিহাসবিদরা এমন মন্তব্যকে অবাস্তব বলে মত দিয়েছেন। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, ব্রিটিশ প্রশাসন ভারিয়ানকুন্নাথু কুঞ্জাহামেদ হাজীকে একজন দস্যু বা লুঠেরা বলে মনে করত। তাই ব্রিটিশ নথি বা সেই সময়ের আদালতের চার্জশিট- যা অধ্যাপক আইসাকের কমিটি যাচাই করেছে, সেখানে এরকম ভাষ্যই থাকবে বলে ধরে নেয়া যায়। কেরালা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক আশরাফ কাডাক্কাল বলছিলেন যে মাস ছয়েক ভারিয়ানকুন্নাথু কুঞ্জাহামেদ হাজী মালাবার অঞ্চল থেকে ব্রিটিশ প্রশাসনকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিলেন, সেই সময়ে তিনি সেখানে মালয়লা নাদ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, মালয়লা নাদ কথাটার স্থানীয় অর্থ হল যারা মালায়লাম ভাষায় কথা বলেন, তাদের জায়গা। হাজি তো খিলাফত নাম দেন নি তার প্রশাসনের। তিনি নিজস্ব অর্থ ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। শরিয়ত আইন বলবত করা কথা ভেবেছিলেন, সেটাও ওখানকার হিন্দু বাসিন্দাদের ওপরে বলবত হত না।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আয়নাঘরের পরতে পরতে নির্যাতনের চিহ্ন

ভারতে ‘শহীদ’ তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন ৩০০ মুসলিম

আপডেট সময় : ০১:০১:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২১

প্রত্যাশা ডেস্ক : ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে নিহত ৩০০ মুসলিমের শহীদের সম্মান বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। দেশটির ইতিহাস গবেষণা কাউন্সিল শহীদের তালিকা থেকে তাদের বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। বিবিসি জানিয়েছে, বাদ পড়তে যাওয়া এসব যোদ্ধা বর্তমানের কেরালা রাজ্যের মালাবার অঞ্চলে ১৯২১ সালে ‘মোপলা বিদ্রোহ’ নামে একটি ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। ১০০ বছর আগে মালাবার অঞ্চলে ভারিয়ানকুন্নাথু কুঞ্জাহামেদ হাজী, আলি মুসলিয়ারদের নেতৃত্বে মোপলা বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। ওই সশস্ত্র সংগ্রামে প্রায় ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল বলে প্রচলিত ইতিহাস থেকে জানা যায়, যার মধ্যে ২৩৩৯ জন বিদ্রোহীও ছিল। এই বিদ্রোহীদের মধ্যে ১০০ জনকে গ্রেফতার করে একটি বদ্ধ ট্রেনের কামরায় চাপিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ৬৪ জনের মৃত্যু হয়। যারা বেঁচেছিলেন, তারা একে অপরের পেশাব পান করে জীবনরক্ষা করতে বাধ্য হন। সে বছরের ১০ই নভেম্বরের ওই ঘটনা ‘ওয়াগন ট্র্যাজেডি’ নামে ইতিহাসে পরিচিত। সেই আন্দোলনে নিহত ৩৮৭ জনকে স্বাধীনতা সংগ্রামের ‘শহীদ’ বলতে রাজী নয় ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ হিস্টোরিকাল রিসার্চ (আইসিএইচআর)।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত দিয়ে ডিকশনারি অফ মার্টার্স- ইন্ডিয়াস ফ্রিডাম স্ট্রাগল নামের যে গ্রন্থমালা প্রকাশ করেছিল আইসিএইচআর, তার পঞ্চম খন্ডে মোপলা বিদ্রোহীদের শহীদই বলা হয়। কিন্তু এখন কাউন্সিলের তিন সদস্যের এক কমিটি ঠিক করেছে যে ওই গ্রন্থ থেকে ৩৮৭ জন মোপলা বিদ্রোহীর নাম সরিয়ে দেওয়া উচিত। তিন সদস্যের ওই কমিটির প্রধান, অধ্যাপক সি. আই. আইসাক বলছেন, ১৯২১-এর ওই বিদ্রোহ কোনোভাবেই জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ছিল না। সেটি ছিল ধর্মীয় সহিংসতা। তার দাবি, ওই বিদ্রোহকে কখনই স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ বলা যায় না। ওটা ছিল একটা ধর্মীয় সহিংসতা। জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরকরণের প্রচেষ্টা ছিল সেটি।
তার নেতৃত্বাধীন কমিটি যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে- তার কী কী প্রমাণ পেয়েছেন, এই প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আইসাক বিবিসিকে বলছিলেন, ‘নিশ্চয়ই। আমরা বহু নথি যাচাই করেছি। এর মধ্যে ব্রিটিশ প্রশাসনের নথিপত্র যেমন আছে, তেমনই আর্য সমাজের নথি রয়েছে। আবার মালাবার অঞ্চলের ডেপুটি কালেক্টরের নথিও আছে। এছাড়াও সমসাময়িক সংবাদপত্র, নানা আদালতের নথি, ইত্যাদি খতিয়ে দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তবে ইতিহাসবিদরা এমন মন্তব্যকে অবাস্তব বলে মত দিয়েছেন। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, ব্রিটিশ প্রশাসন ভারিয়ানকুন্নাথু কুঞ্জাহামেদ হাজীকে একজন দস্যু বা লুঠেরা বলে মনে করত। তাই ব্রিটিশ নথি বা সেই সময়ের আদালতের চার্জশিট- যা অধ্যাপক আইসাকের কমিটি যাচাই করেছে, সেখানে এরকম ভাষ্যই থাকবে বলে ধরে নেয়া যায়। কেরালা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক আশরাফ কাডাক্কাল বলছিলেন যে মাস ছয়েক ভারিয়ানকুন্নাথু কুঞ্জাহামেদ হাজী মালাবার অঞ্চল থেকে ব্রিটিশ প্রশাসনকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিলেন, সেই সময়ে তিনি সেখানে মালয়লা নাদ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, মালয়লা নাদ কথাটার স্থানীয় অর্থ হল যারা মালায়লাম ভাষায় কথা বলেন, তাদের জায়গা। হাজি তো খিলাফত নাম দেন নি তার প্রশাসনের। তিনি নিজস্ব অর্থ ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। শরিয়ত আইন বলবত করা কথা ভেবেছিলেন, সেটাও ওখানকার হিন্দু বাসিন্দাদের ওপরে বলবত হত না।