ঢাকা ০১:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাঁদাবাজি করলে পিটুনি সংখ্যালঘুদের গায়ে যেন হাত না পড়ে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

  • আপডেট সময় : ০৩:০৫:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ অগাস্ট ২০২৪
  • ৪৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সংখ্যালঘুদের গায়ে যেন হাত না পড়ে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অন্তর্বর্তীসরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
গতকাল রোববার (১১ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, চাঁদাবাজি করলে যে পার্টিই হোক আমি তাদের বারবার বলছি, চাঁদাবাজি করবেন না। মানুষের দুর্ভোগ বাড়াবেন না। তাহলে আমি জনগণকে বলব, আপনাদের পিটিয়ে ওখানেই ধরে রাখতে। যা করা লাগে আমরা করব। ল অ্যান্ড অর্ডারটা নিয়ে আসতে হবে। দেশ এভাবে চলতে পারে না। তিনি বলেন, এ দেশ আমরা কাউকে লিজ দিতে পারি না। ৩০ লাখ লোকের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এ দেশ পেয়েছি। এই বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা আপনাদের জন্য একটা উন্মুক্ত পরিবেশ করে দিয়েছে। আপনাদের লজ্জা লাগে না? আপনারা তাদের রক্তের ওপর দিয়ে রাজনীতি আর চাঁদাবাজি করেন। আমি ওয়ার্নিং দিচ্ছি প্লিজ ডোন্ট ডু ইট। আমি রাজনৈতিক দলগুলোকে বিনীত অনুরোধ করছি, আপনারা আপনাদের লোক সামলান। না হলে চোখের সামনে দেখেছেন তো, উপর থেকে পড়তে বেশি সময় লাগে না।
পলিটিক্যাল অ্যাক্ট দ্রুত করা হবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, আমি অলরেডি কয়েক জায়গায় কথা বলেছি। একটা ড্রাফট করে আমাকে দেখাতে বলেছি। এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করব। আপনি পলিটিক্যাল পার্টি করেন, আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আপনি পলিটিক্যাল পার্টি করবেন আর চাঁদাবাজি করবেন তা হবে না। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই আন্দোলনে আমাদের প্রায় এক হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছে। পুলিশ সদস্যরা প্রাণ দিয়েছে। তিনি বলেন, এ দেশটা চাটুকারে ভরে গেছে। মিডিয়া পর্যন্ত চাটুকারে ভরে গেছে। আমি সেটা রিপিট করতে চাই না। এই দেশ আপনাদের। মিডিয়ার দেশ। আপনারা যদি আপনাদের কর্তব্য ইউজ না করেন তাহলে আমাদের মুষ্টিমেয় লোকের পক্ষে দেশ পরিচালনা করা সম্ভব না। একটি দলকে কিছুদিন আগে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, এটা রাজনৈতিক বিষয়। এটা আলোচনা হবে। গণভবনের ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে আপনার মতামত কী-এমন প্রশ্নের উত্তরে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যেকোনো ধ্বংসযজ্ঞ খারাপ, সেটা যাই হোক। এগুলো রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এগুলো কোনো ব্যক্তিগত সম্পদ না। আমি এটার নিন্দা জানাই। আমি এটাকে কনডেম করি, এটা ঠিক না। সারাবিশ্বে যখন গণঅভ্যুত্থান হয় সেটা কোনো নিয়মের মধ্যে হয় না। আপনারা কিছুদিন আগে আরেকটি দেশে দেখেছেন। আরব বসন্ত দেখেছেন, এটা হয়। কিন্তু আমরা অত্যন্ত গরিব দেশ। আপনারা দেখেন দুইটা মেট্রোরেল স্টেশন ভাঙা হয়েছে, এখন মেট্রোরেল চলছে না। এগুলো আমাদের সম্পত্তি। এগুলো কেউ পকেটে করে নিয়ে যেতে পারবে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয় তিনি বলেন, এটা প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য যে মাইনোরিটিদের রক্ষা করা। তাদের গায়ে যেন হাত না পড়ে। মেজরিটি রিলিজিয়নের যারা আছেন তাদের এটা পবিত্র কর্তব্য যে তাদের রক্ষা করা। এটা না করে মসজিদে গিয়ে সারাক্ষণ নামাজ পড়লেও সেটার জবাব দিতে হবে।
ভবিষ্যতে রাজনীতি অনেক কষ্টকর হবে: ভবিষ্যতে রাজনীতি করা অনেক কষ্টকর হবে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের ওপর যে হামলা হয়েছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মাথার চামড়া খুলে ফেলা, হাত-পা-মাথা থেতলিয়ে ফেলা, এটা টলারেট করার মতো না। হাজার তরুণ মারা গেছে পুলিশ ও অন্যদের গুলিতে, এটাও দুঃখজনক। পুলিশ ছাড়া আমাদের সমাজ চলতে পারে না। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর লুট হওয়ার খবর পাচ্ছি। আমাদের সেনাবাহিনী ও বিজিবি মাঠে আছে কিন্তু এটা তাদের কাজ না। পুলিশের যেটা কাজ, সেটা তারা পারে না। তিনি বলেন, একটা রাষ্ট্র এভাবে চলে না, একজনের ইচ্ছে মতো রাষ্ট্র চালানো যায় না। দেশটা কারো পার্সোনাল প্রপার্টি বা ফ্যামিলি প্রপার্টি না। হাজার হাজার লোক মারার পরেও ক্ষমতায় থাকতে চাওয়ার মানসিকতা। পুলিশকে ব্যবহার করেছে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো। তাদের হাতে গত ১৫-২০ বছর আগে মারণাস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি। এটা ঠিক হয়নি। ভবিষ্যতে রাজনীতি করা অনেক কষ্ট হবে। পুলিশকে আর লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ব্যবহার করতে পারবেন না। পুলিশ কমিশনের মতো পুলিশ চলবে।
এই উপদেষ্টা বলেন, আজ অবস্থা দেখেন, প্রতিদিন সন্ধ্যায় ডাকাতি হচ্ছে। কী করবেন পুলিশ নাই, পুলিশ সদস্যরা ডিমোরালাইজড হয়ে গেছে। আপনাকে মনে রাখতে হবে পুলিশকে ব্যবহার করেছে কে? তাদের ধরেন। আমি চেষ্টা করব। হুকুমদাতা যারা ছিল তাদের শাস্তি হবে, কঠোর শাস্তি হবে। দেশে না পারলে বিদেশে হবে। এটা কোনো কথা হলো না, হুকুম দিয়ে ছেলে-পেলে আর জনগণকে মারবেন, এটা হতে পারে না। আবার আসেন, দেখেন জনগণ কী করে। জনগণ ছিড়ে ফেলবে এবার। এটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কারা পুলিশকে এভাবে ব্যবহার করেছে। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ বাংলাদেশে রাজনীতি হয়ে গেছে চাটুকারদের রাজনীতি। আমরা কোনো রাজনীতিবিদ তৈরি করিনি, চাটুকার তৈরি করেছি। মানুষ মরে যাচ্ছে কিন্তু বলা হচ্ছে, না সব ঠিক আছে। এরকম চাটুকারদের দল দিয়ে রাজনীতি করা যায় না।
চাটুকারিতা করলে গণমাধ্যম বন্ধ: কোনও মিডিয়া চাটুকারিতা করলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, আপনাদের মিডিয়া, অন্তত এই পিরিয়ডে, কোনো মিডিয়া চাটুকারিতা করলে বন্ধ হয়ে যাবে। চাটুকারী মিডিয়া হবেন, বন্ধ করে দেব। অতীতে যা ছিলেন ছিলেন, আমি কোনোটা বন্ধ করতে চাই না। আমি এক কথার মানুষ, চাটুকারিতা করবেন, বন্ধ করে দেব। এই উপদেষ্টা বলেন, আপনারা সত্যি ঘটনা তুলে ধরেন। আপনারা সত্যি ঘটনা তুলে ধরেননি। যদি ধরতেন তাহলে পুলিশের এ অবস্থা হয় না। বারবার বলছেন ‘কিছু হয়নি’। শেম অন ইউ। শেম অন দ্য মিডিয়া ওনার। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আপনারা টকশোতে কাকে ডাকা যাবে, কাকে ডাকা যাবে না লিস্ট করেন। সেখানে জ্ঞানগর্ভ কোনো আলোচনা হয় না। আটকে গেলেই চলে যান ৭৫-এ কী হয়েছিল। অনুগ্রহ করে তাদের ডাকবেন না, চাটুকারদের ডাকবেন না। দয়া করে সঠিক তথ্য তুলে ধরেন, যাতে যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদের চোখটা যেন খোলে। একটা দেশ ডুবে কখন? যখন মিডিয়া সত্য কথা বলে না, মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে। সবার বিচার হওয়া উচিত, মিডিয়া ওনারদেরও। নির্বাচনে চুরি হচ্ছে, বলে কোনো সমস্যা নেই। ভোট খুব ভালো হয়েছে। দয়া করে দেশটাকে বাঁচান। যেটা হয়েছে সেটার তদন্ত হবে। দেশে তদন্ত হবে, আন্তর্জাতিক তদন্ত হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যা হয়েছে হয়েছে, ইতিহাসকে ফেরত আনতে পারব না। আমরা মনে করি আওয়ামী লীগ অনেক পুরোনো পার্টি, সেখানে নতুন নেতৃত্ব আসবে। তারা এ শিক্ষাটা গ্রহণ করবে। আমি চেষ্টা করব, যাতে পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট থাকে। সে অনুযায়ী দল চালাতে পারলে চালাবেন, নয়তো বন্ধ করে দেবেন। পুলিশ প্রধানদের বলব, আপনারা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করবেন না। যাদের টার্গেট করছেন তারা আপনার সন্তান। রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে কিন্তু সেখানকার পুলিশ কমিশনারকে এখনও সরানো হয়নি, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রথমে বলেছি, এটা মার্ডার। আমরা এ ধরনের লোক চাই না, যারা গাইড করতে পারে না। পুলিশ সদস্যদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ওনাদের কয়েকজন প্রতিনিধি আসবে, তাদের শতভাগ কথা শুনব। তারা এমন কোনো দাবি করেননি, যেটা পূরণ করা সম্ভব নয়। কিছু জায়গায় হয়ত দেরি হবে। আপনারা থানায় ফিরে যান।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

চাঁদাবাজি করলে পিটুনি সংখ্যালঘুদের গায়ে যেন হাত না পড়ে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আপডেট সময় : ০৩:০৫:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ অগাস্ট ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : সংখ্যালঘুদের গায়ে যেন হাত না পড়ে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অন্তর্বর্তীসরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
গতকাল রোববার (১১ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, চাঁদাবাজি করলে যে পার্টিই হোক আমি তাদের বারবার বলছি, চাঁদাবাজি করবেন না। মানুষের দুর্ভোগ বাড়াবেন না। তাহলে আমি জনগণকে বলব, আপনাদের পিটিয়ে ওখানেই ধরে রাখতে। যা করা লাগে আমরা করব। ল অ্যান্ড অর্ডারটা নিয়ে আসতে হবে। দেশ এভাবে চলতে পারে না। তিনি বলেন, এ দেশ আমরা কাউকে লিজ দিতে পারি না। ৩০ লাখ লোকের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এ দেশ পেয়েছি। এই বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা আপনাদের জন্য একটা উন্মুক্ত পরিবেশ করে দিয়েছে। আপনাদের লজ্জা লাগে না? আপনারা তাদের রক্তের ওপর দিয়ে রাজনীতি আর চাঁদাবাজি করেন। আমি ওয়ার্নিং দিচ্ছি প্লিজ ডোন্ট ডু ইট। আমি রাজনৈতিক দলগুলোকে বিনীত অনুরোধ করছি, আপনারা আপনাদের লোক সামলান। না হলে চোখের সামনে দেখেছেন তো, উপর থেকে পড়তে বেশি সময় লাগে না।
পলিটিক্যাল অ্যাক্ট দ্রুত করা হবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, আমি অলরেডি কয়েক জায়গায় কথা বলেছি। একটা ড্রাফট করে আমাকে দেখাতে বলেছি। এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করব। আপনি পলিটিক্যাল পার্টি করেন, আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আপনি পলিটিক্যাল পার্টি করবেন আর চাঁদাবাজি করবেন তা হবে না। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই আন্দোলনে আমাদের প্রায় এক হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছে। পুলিশ সদস্যরা প্রাণ দিয়েছে। তিনি বলেন, এ দেশটা চাটুকারে ভরে গেছে। মিডিয়া পর্যন্ত চাটুকারে ভরে গেছে। আমি সেটা রিপিট করতে চাই না। এই দেশ আপনাদের। মিডিয়ার দেশ। আপনারা যদি আপনাদের কর্তব্য ইউজ না করেন তাহলে আমাদের মুষ্টিমেয় লোকের পক্ষে দেশ পরিচালনা করা সম্ভব না। একটি দলকে কিছুদিন আগে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, এটা রাজনৈতিক বিষয়। এটা আলোচনা হবে। গণভবনের ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে আপনার মতামত কী-এমন প্রশ্নের উত্তরে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যেকোনো ধ্বংসযজ্ঞ খারাপ, সেটা যাই হোক। এগুলো রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এগুলো কোনো ব্যক্তিগত সম্পদ না। আমি এটার নিন্দা জানাই। আমি এটাকে কনডেম করি, এটা ঠিক না। সারাবিশ্বে যখন গণঅভ্যুত্থান হয় সেটা কোনো নিয়মের মধ্যে হয় না। আপনারা কিছুদিন আগে আরেকটি দেশে দেখেছেন। আরব বসন্ত দেখেছেন, এটা হয়। কিন্তু আমরা অত্যন্ত গরিব দেশ। আপনারা দেখেন দুইটা মেট্রোরেল স্টেশন ভাঙা হয়েছে, এখন মেট্রোরেল চলছে না। এগুলো আমাদের সম্পত্তি। এগুলো কেউ পকেটে করে নিয়ে যেতে পারবে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয় তিনি বলেন, এটা প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য যে মাইনোরিটিদের রক্ষা করা। তাদের গায়ে যেন হাত না পড়ে। মেজরিটি রিলিজিয়নের যারা আছেন তাদের এটা পবিত্র কর্তব্য যে তাদের রক্ষা করা। এটা না করে মসজিদে গিয়ে সারাক্ষণ নামাজ পড়লেও সেটার জবাব দিতে হবে।
ভবিষ্যতে রাজনীতি অনেক কষ্টকর হবে: ভবিষ্যতে রাজনীতি করা অনেক কষ্টকর হবে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের ওপর যে হামলা হয়েছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মাথার চামড়া খুলে ফেলা, হাত-পা-মাথা থেতলিয়ে ফেলা, এটা টলারেট করার মতো না। হাজার তরুণ মারা গেছে পুলিশ ও অন্যদের গুলিতে, এটাও দুঃখজনক। পুলিশ ছাড়া আমাদের সমাজ চলতে পারে না। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর লুট হওয়ার খবর পাচ্ছি। আমাদের সেনাবাহিনী ও বিজিবি মাঠে আছে কিন্তু এটা তাদের কাজ না। পুলিশের যেটা কাজ, সেটা তারা পারে না। তিনি বলেন, একটা রাষ্ট্র এভাবে চলে না, একজনের ইচ্ছে মতো রাষ্ট্র চালানো যায় না। দেশটা কারো পার্সোনাল প্রপার্টি বা ফ্যামিলি প্রপার্টি না। হাজার হাজার লোক মারার পরেও ক্ষমতায় থাকতে চাওয়ার মানসিকতা। পুলিশকে ব্যবহার করেছে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো। তাদের হাতে গত ১৫-২০ বছর আগে মারণাস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি। এটা ঠিক হয়নি। ভবিষ্যতে রাজনীতি করা অনেক কষ্ট হবে। পুলিশকে আর লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ব্যবহার করতে পারবেন না। পুলিশ কমিশনের মতো পুলিশ চলবে।
এই উপদেষ্টা বলেন, আজ অবস্থা দেখেন, প্রতিদিন সন্ধ্যায় ডাকাতি হচ্ছে। কী করবেন পুলিশ নাই, পুলিশ সদস্যরা ডিমোরালাইজড হয়ে গেছে। আপনাকে মনে রাখতে হবে পুলিশকে ব্যবহার করেছে কে? তাদের ধরেন। আমি চেষ্টা করব। হুকুমদাতা যারা ছিল তাদের শাস্তি হবে, কঠোর শাস্তি হবে। দেশে না পারলে বিদেশে হবে। এটা কোনো কথা হলো না, হুকুম দিয়ে ছেলে-পেলে আর জনগণকে মারবেন, এটা হতে পারে না। আবার আসেন, দেখেন জনগণ কী করে। জনগণ ছিড়ে ফেলবে এবার। এটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কারা পুলিশকে এভাবে ব্যবহার করেছে। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ বাংলাদেশে রাজনীতি হয়ে গেছে চাটুকারদের রাজনীতি। আমরা কোনো রাজনীতিবিদ তৈরি করিনি, চাটুকার তৈরি করেছি। মানুষ মরে যাচ্ছে কিন্তু বলা হচ্ছে, না সব ঠিক আছে। এরকম চাটুকারদের দল দিয়ে রাজনীতি করা যায় না।
চাটুকারিতা করলে গণমাধ্যম বন্ধ: কোনও মিডিয়া চাটুকারিতা করলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, আপনাদের মিডিয়া, অন্তত এই পিরিয়ডে, কোনো মিডিয়া চাটুকারিতা করলে বন্ধ হয়ে যাবে। চাটুকারী মিডিয়া হবেন, বন্ধ করে দেব। অতীতে যা ছিলেন ছিলেন, আমি কোনোটা বন্ধ করতে চাই না। আমি এক কথার মানুষ, চাটুকারিতা করবেন, বন্ধ করে দেব। এই উপদেষ্টা বলেন, আপনারা সত্যি ঘটনা তুলে ধরেন। আপনারা সত্যি ঘটনা তুলে ধরেননি। যদি ধরতেন তাহলে পুলিশের এ অবস্থা হয় না। বারবার বলছেন ‘কিছু হয়নি’। শেম অন ইউ। শেম অন দ্য মিডিয়া ওনার। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আপনারা টকশোতে কাকে ডাকা যাবে, কাকে ডাকা যাবে না লিস্ট করেন। সেখানে জ্ঞানগর্ভ কোনো আলোচনা হয় না। আটকে গেলেই চলে যান ৭৫-এ কী হয়েছিল। অনুগ্রহ করে তাদের ডাকবেন না, চাটুকারদের ডাকবেন না। দয়া করে সঠিক তথ্য তুলে ধরেন, যাতে যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদের চোখটা যেন খোলে। একটা দেশ ডুবে কখন? যখন মিডিয়া সত্য কথা বলে না, মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে। সবার বিচার হওয়া উচিত, মিডিয়া ওনারদেরও। নির্বাচনে চুরি হচ্ছে, বলে কোনো সমস্যা নেই। ভোট খুব ভালো হয়েছে। দয়া করে দেশটাকে বাঁচান। যেটা হয়েছে সেটার তদন্ত হবে। দেশে তদন্ত হবে, আন্তর্জাতিক তদন্ত হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যা হয়েছে হয়েছে, ইতিহাসকে ফেরত আনতে পারব না। আমরা মনে করি আওয়ামী লীগ অনেক পুরোনো পার্টি, সেখানে নতুন নেতৃত্ব আসবে। তারা এ শিক্ষাটা গ্রহণ করবে। আমি চেষ্টা করব, যাতে পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট থাকে। সে অনুযায়ী দল চালাতে পারলে চালাবেন, নয়তো বন্ধ করে দেবেন। পুলিশ প্রধানদের বলব, আপনারা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করবেন না। যাদের টার্গেট করছেন তারা আপনার সন্তান। রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে কিন্তু সেখানকার পুলিশ কমিশনারকে এখনও সরানো হয়নি, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রথমে বলেছি, এটা মার্ডার। আমরা এ ধরনের লোক চাই না, যারা গাইড করতে পারে না। পুলিশ সদস্যদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ওনাদের কয়েকজন প্রতিনিধি আসবে, তাদের শতভাগ কথা শুনব। তারা এমন কোনো দাবি করেননি, যেটা পূরণ করা সম্ভব নয়। কিছু জায়গায় হয়ত দেরি হবে। আপনারা থানায় ফিরে যান।