প্রযুক্তি ডেস্ক : ১২৭ আওয়ার্স সিনেমাটি যারা দেখেছেন, তারা জানেন এর কেন্দ্রীয় চরিত্র অ্যারন রালস্টন নামের এক পর্বতারোহী চাপা পরেছিলেন পাথরের নিচে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ অঙ্গরাজ্যে ওই বিপদ থেকে তিনি উদ্ধার পান পাথরে চাপা পড়া নিজের হাত কেটে ফেলে। সত্যি ঘটনা নির্ভর ওই সিনেমা এখন ভর করছে রোবট দুনিয়ায়।
সম্প্রতি এক যুগান্তকারী রোবট বানানোর দাবি করেছেন রোবোটিস্টরা, যা রোলস্টনের মতো অঙ্গচ্ছেদ বা নিজের দেহের অঙ্গ কেটে ফেলার মাধ্যমে বিপজ্জনক পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য একই কৌশলের আশ্রয় নেয় টিকটিকি ও কাঁকড়া।
এ উদ্ভাবনী প্রযুক্তিটি বানিয়েছেন ‘ইয়েল ইউনিভার্সিটি’র রোবোটিস্টরা, যেখানে বিপজ্জনক পরিস্থিতি বা কোনো বাধার মধ্যে টিকে থাকতে রোবটটি নিজের দেহের অঙ্গকে আলাদা করতে পারবে। পাশাপাশি রোবটটি কাজের ধারাও অব্যাহত রাখতে পারবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। এ গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাডভান্সড ম্যাটিরিয়ালস’-এ, যার নেতৃত্বে দিয়েছেন ‘ইয়েল ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক রেবেকা ক্রেমার-বোত্তিগ্লিও। প্রকৃতিতে টিকটিকি ও কাঁকড়ার মতো অনেক প্রাণী বেঁচে থাকার কৌশল হিসাবে নিজের অঙ্গ কেটে ফেলার মতো অবস্থাকে কাজে লাগায়। যেমন— টিকটিকি কোনো শিকারীর হাত থেকে বাঁচতে নিজের লেজ ফেলে দেয়। একইভাবে একটি কাঁকড়াও কোনো শক্ত জায়গা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে এর নখ ফেলে দিতে পারে। বেঁচে থাকার এইসব প্রকৃতিগত কৌশল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘ইয়েল ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা একইরকম সক্ষমতা দিয়ে রোবট বানিয়েছেন।
নিজের ইচ্ছেমতো অঙ্গ কেটে ফেলার এ সক্ষমতার চাবিকাঠি হল নতুন এক উদ্ভাবিত উপাদান, যার নাম ‘বাই-কন্টিনিউয়াস থার্মোপ্লাস্টিক ইলাস্টোমার’। উপাদানটি ঘরের তাপমাত্রায় রাবারেরর মতো শক্ত হলেও ১৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এটি গলে যায়। একে ফোমের মতো সিলিকন কাঠামোর মধ্যে এমবেড করা যায়, যা গলিত থার্মোপ্লাস্টিককে নির্দিষ্ট জায়গায় ধরে রাখে।
কিভাবে কাজ করে? এই পুরো বিষয়টি প্রধানত তিনটি ভাগে কাজ করে। যেমন– জয়েন্ট তৈরি, বন্ধন ও সংযোগ আলাদা করার মাধ্যমে।
● প্রথমে সিলিকনের দুটি অংশ দিয়ে বানানো বিভিন্ন রোবট ও প্রতিটি থার্মোপ্লাস্টিক ইলাস্টোমারের স্তরকে একসঙ্গে মিলিয়ে জয়েন্ট তৈরি করা হয়। ফলে সিলিকনের ফোম উত্তপ্ত হয়ে থার্মোপ্লাস্টিক ইলাস্টোমারকে গলিয়ে তা তরলে পরিণত করে। একইসঙ্গে সিলিকনের কাঠামো এই গলিত তরল উপাদানকে ধরে রাখে। ফলে এটি ছড়িয়ে পড়ে না।
● সিলিকনের দুটি অংশ মিলিত হয়ে এসব গলিত তরলকে ক্রমাগত তরল ভরে পরিণত করে, যা ঠাণ্ডা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শক্ত হয়ে যায় ও এর বিভিন্ন অংশকে একসঙ্গে জুড়ে নেয়।
● এ জয়েন্টটিকে আলাদা করার জন্য উপাদানটিকে পুনরায় গরম করা হলে তা গলে যায় ও জয়েন্টকে দুর্বল করে দেয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন অংশকে সহজেই আলাদা করা যেতে পারে। বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করে এমন রোবটের জন্য এই প্রযুক্তিটি বিশেষভাবে উপযোগী। যেমন– উদ্ধার অভিযানে থাকা রোবটের কোনো অঙ্গ পাথরের নিচে আটকে গেলে দেহের বাকি অংশের থেকে তা আলাদা করে রোবটি নিজের মিশন চালিয়ে যেতে পারবে এ প্রযুক্তির মাধ্যমে। এ গবেষণার প্রধান লেখক ও পিএইচডি শিক্ষার্থী বিলিগে ইয়াং বলেছেন, “চলাচলের সময় রোবটটির দেহের কোনো অংশ যদি বড় পাথরের সঙ্গে আটকে যায় তাহলে পুরো রোবটটিরই অকেজো হয়ে যাওয়ার কথা। তবে জয়েন্ট গলিয়ে ফেলার এ সক্ষমতার ফলে আটকে থাকা হাত বা পা ছাড়াই চলতে পারবে রোবটটি।” নিজেদের ল্যাবে অন্যান্য সফট রোবটের উপর এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করার পরিকল্পনাও করেছে গবেষণা দলটি।