আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাগদাদে এক শীর্ষ সম্মেলনে ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার নিয়ে দেশটির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত আরব রাষ্ট্রগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইরাক। তেহরান ও পারস্য উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকবারই দুই পক্ষকে মুখোমুখি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল; এই বৈরিতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যেই বাগদাদে ওই সম্মেলন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ইয়েমেনের যুদ্ধ, লেবাননের সমস্যা ও আঞ্চলিক পানি সংকট নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি এ সম্মেলন সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সৌহার্দ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে একটি পদক্ষেপ হতে পারে বলে আশা কর্মকর্তাদের। তবে সম্মেলনে কোন পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠানো হবে, তেহরান বা রিয়াদ কেউই এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
রয়টার্স লিখেছে, দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে টানাপোড়েন আরও তীব্র হয় ২০১৯ সালে। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে সৌদি তেলক্ষেত্রে এক হামলায় দেশটির তেলের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে যায়। রিয়াদ ওই হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করলেও তেহরান প্রথম থেকেই তা অস্বীকার করে আসছে। কট্টর সুন্নি শাসনাধীন সৌদি আরব ও শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরান ইয়েমেনের যুদ্ধেও প্রতিপক্ষ দুই শিবিরে অবস্থান করছে। ২০১৬ সালে দেশ দুটি একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কও ছিন্ন করে। তবে চলতি বছর এপ্রিলে ইরাকে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে ফের সরাসরি কথাবার্তা শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ইরানের সঙ্গে নতুন করে পরমাণু আলোচনা শুরু করে তেহরানের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে পারে, এ নিয়ে সৌদি শাসকদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। তেমনটা হলে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে আরও প্রভাবশালী হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা রিয়াদের। এজন্যই সৌদি আরব তাদের দৃষ্টিতে ‘ইরানের হামলা’ বিষয়ক নিরাপত্তা উদ্বেগ বাদ না দিয়েই উত্তেজনা কমাতে তেহরানের সঙ্গে বসতে চাইছে, বলছেন পর্যবেক্ষকরা। ইরাকি কর্মকর্তাদের আশা, ইরানের নতুন কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বাগদাদের শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেবেন। শনিবার বৈঠকটি হওয়ার কথা রয়েছে। ইরানের পাশাপাশি সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ উপসাগরীয় আরব দেশের প্রভাবশালী মন্ত্রীরাও বৈঠকে থাকবেন বলে অনুমান আয়োজকদের। “আমরা যদি এমনকী পররাষ্ট্র মন্ত্রীদেরও এক টেবিলে বসাতে পারি তাহলে এটি ইরান ও উপসাগরীয় আরবদের মধ্যে উত্তেজনা অবসানের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হবে,” বলেছেন ইরাকি প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল-কাদিমির ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা। কাদিমির ঘনিষ্ঠ এক রাজনীতিক বলেছেন, তেহরান ও উপসাগরীয় আরব দেশগুলো তাদের মধ্যে সরাসরি আলোচনা বাড়াতে প্রস্তুত বলে বাগদাদ ‘ইতিবাচক সঙ্কেত’ পেয়েছে। এখন পর্যন্ত কেবল কুয়েতই বাগদাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে। দেশটি তাদের প্রধানমন্ত্রীকে সম্মেলনে পাঠাচ্ছে। উগসাগরীয় আরব দেশগুলোর শাসকদের মিত্র হিসেবে পরিচিত মিশর ও জর্ডানের পাশাপাশি তুরস্ক এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকেও বাগদাদের এই শীর্ষ বৈঠকে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সৌদি আরব ও ইরানের বৈরিতা কমাতে চায় ইরাক
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ