ঢাকা ০৩:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

করোনায় দেশে এখন নারীর মৃত্যু বেশি কেন?

  • আপডেট সময় : ১২:১২:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ অগাস্ট ২০২১
  • ৯৩ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক : মহামারীর দেড় বছরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে যত পুরুষ মারা গেছে, নারী মারা গেছে তার অর্ধেকেরও কম। মোট সংখ্যার হিসেবে নারীর মৃত্যু কম হলেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারের পর এই আগস্ট মাসেই ব্যতিক্রম দেখা গেল। একটি সংবাদসংস্থা এ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১২ আগস্ট প্রথম দেখা গেল দৈনিক মৃত্যুর খাতায় নারীর সংখ্যা বেশি। ওই দিন ১০৮ জন নারীর মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পুরুষ মারা গিয়েছিল ১০৭ জন। দ্বিতীয়বার এমন ঘটনা দেখা যায় ১৯ আগস্ট, সেদিন ৮৩ জন নারী আর ৭৬ জন পুরুষের মৃত্যু হয়। গত সোমবার আবার দৈনিক মৃত্যুতে পুরুষকে ছাড়িয়ে যায় নারী। সেদিন ৬৪ জন নারীর মৃত্যুর বিপরীতে ৫৩ জন পুরুষ মারা যায়। এর একদিন বাদেও দেখা গেল একই চিত্র। গত মঙ্গলবার দেশে যে ১১৪ জন কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তার ৫৮ জনই নারী, পুরুষ ৫৬ জন।
স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত এপ্রিল থেকে নারীর মৃত্যু বাড়ছে। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ঠিক এক বছর পর গত ১ এপ্রিল পর্যন্ত মারা যাওয়া মানুষের মধ্যে পুরুষ ছিল ৭৫ দশমিক ২০ শতাংশ, নারী ছিল ২৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। এরপর মে, জুন, জুলাইয়ে এসে নারী-পুরুষের ব্যবধান ক্রমান্বয়ে কমছে। জুলাইয়ে নারীর মৃত্যুর হার বেড়ে ২৯ শতাংশে উঠে যায়। অগাস্টের প্রথম সপ্তাহে তা ৩৩ শতাংশ ছাড়ায়। এরপর গত দুই সপ্তাহে মৃত্যুর ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১১ থেকে ২৪ অগাস্ট পর্যন্ত এক হাজার ৯০ জন নারী এবং এক হাজার ২৬২ জন পুরুষ করোনাভাইরাসে মারা গেছেন। শতকরা হিসাবে এই দুই সপ্তাহে নারীর মৃত্যুর হার ৪৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অথচ সামগ্রিক মৃত্যুহারে নারী ৩৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, পুরুষ ৬৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।
মহামারীর শুরু থেকে পুরুষদের মৃত্যুহার বেশি হওয়ার জন্য তাদের ঘরের বাইরে বেশি যাওয়াকে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছিলেন, আক্রান্ত বেশি হচ্ছেন বলেই পুরুষরা মারা যাচ্ছেন বেশি। বিপরীতে নারীদের ঘরের বাইরে কম বের হওয়ার পাশাপাশি তাদের প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধের শক্তি বেশি থাকার কথাও বলছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এখন চিত্র বদলে যাওয়ার কারণ কী? বিশেষজ্ঞরা সম্ভাব্য তিনটি কারণের কথা বলেছেন।
টিকায় বৈষম্য? মহামারী নিয়ন্ত্রণে প্রায় এক বছর বাদে সরকার করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরু করে গত ফেব্রুয়ারিতে। টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষরা এগিয়ে গেলেও নারীরা ঝুঁকিতে রয়ে গেছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা ডা. বে-নজির আহমেদ মনে করেন, হরমোনাল কারণে এতদিন নারীরা সুরক্ষা পাচ্ছিলেন। তবে টিকা নেওয়ার কারণে পুরুষরা এখন এগিয়ে গেছে। তিনি বলেন, “যে পুরুষরা এক ডোজ বা দুই ডোজ টিকা নিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের মৃত্যুহারটা তুলনামূলক কম। পুরুষদের মৃত্যুটা হয়ত সে কারণে কম।
“আর নারীদের টিকাগ্রহণের হার কম। পুরুষরা আগে যে সুরক্ষাটা পেত না, তারা বেশি আক্রান্ত হত, বেশি মারা যেত, নারীরা হরমোন দিয়ে যে সুবিধা পেত, এখন পুরুষরা ভ্যাকসিন দিয়ে সমমানের একটা সুরক্ষা পাচ্ছে।” স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন এক কোটি ৭২ লাখ ৪২ হাজার ৪৭৯ জন। যার মধ্যে পুরুষ ৯৯ লাখ ৬৮ হাজার ৯৩৪ জন, নারী ৭২ লাখ ৭৩ হাজার ৫৪৫ জন। আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর স্বীকার করেন, টিকাদানের শুরুতে নারীরা পিছিয়ে ছিলেন। “নারীরা তুলনামূলকভাবে কম টিকা নিয়েছেন। আমাদের ক্যাম্পেইনের ফলে ওই বৈষম্যটা কমে এসেছে। ক্যাম্পেইনের ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের নারীদের আমরা বেশি প্রাধান্য দিয়েছি, যদিও প্রথমদিকে অনেক কম নারী এসেছে।”
পরীক্ষা কম? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নারীরা আক্রান্ত হলেও পরীক্ষা করানো হচ্ছে না। ফলে তারা ঝুঁকিতে থেকে যাচ্ছেন। এজন্য সামাজিক কারণকে দায়ী করে ডা. আলমগীর বলেন, “নারীরা সর্বংসহা, তাদের পরীক্ষা না করালেও চলবে- এই ধরনের স্টিগমার কারণে নারীরা পরীক্ষা করাচ্ছেন না।” তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস গ্রামাঞ্চলে ছড়ানোর পর নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। আবার দেখা যাচ্ছে, নারীরা সময়মত ট্রিটমেন্ট নেন না। অনেক সময় তারা অসুস্থতার কথা বলেনও না। যখন শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তখন বোঝা যায়।
“আমাদের দেশে সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীরা এমনিতেই হাসপাতালে যেতে চান না, আবার পুরুষকে যত দ্রুত নেওয়া হয়, নারীকে নেওয়া হয় না।”
ডেল্টার বিস্তার? ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, “আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, সেটা হচ্ছে- ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। হরমোনাল কারণে যে সুরক্ষা নারীরা পেতেন, সেটা হয়ত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে পাচ্ছেন না। যেমন শিশুরা কিন্তু এখন তুলনামূলক সংক্রমিত হচ্ছে বেশি।” আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেনও মনে করেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে নারীদের মধ্যে সংক্রমণ বাড়ছে, যা মৃত্যুহারও বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, “নারীরা বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন বিধায় বেশি মারা যাচ্ছেন। আগে দেখা যেত, পরিবারের সবাই সংক্রমিত হচ্ছে না। এখন কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একই পরিবারের সবাই সংক্রমিত হচ্ছে। সবাই আক্রান্ত হলে তার মধ্যে মেয়েরাও পড়ছেন। কাজেই নারীরা সংক্রমিত হচ্ছেন বেশি।” ডা. মুশতাক বলেন, “নারীদের মাঝে সংক্রমণ আগে কম ছিল, তাই মৃত্যুও কিছুটা কম ছিল। এখন যেহেতু সংক্রমণ বেশি, তাই আনুপাতিক হারে মৃত্যুটাও বেশি হয়ে গেছে। এটা আমার ধারণা।”
নারীরা এখন বেশি সংক্রমিত হচ্ছে কি না, সে তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাওয়া যায়নি। মোটাদাগে তিনটি কারণ বললেও নারীর মৃত্যুর এই প্রবণতার প্রকৃত চিত্র জানতে আরও অপেক্ষা করতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ডা. বে-নজির বলেন, “পুরুষরা কতজন আক্রান্ত হচ্ছেন, নারীরা কতজন আক্রান্ত হচ্ছেন এবং সেই আক্রান্তদের মধ্যে কতজন মারা যাচ্ছেন; এগুলো দেখা দরকার। “এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং আমাদের এ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে যে, নারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকলে সেটার কারণ কী?”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

করোনায় দেশে এখন নারীর মৃত্যু বেশি কেন?

আপডেট সময় : ১২:১২:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ অগাস্ট ২০২১

নারী ও শিশু ডেস্ক : মহামারীর দেড় বছরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে যত পুরুষ মারা গেছে, নারী মারা গেছে তার অর্ধেকেরও কম। মোট সংখ্যার হিসেবে নারীর মৃত্যু কম হলেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারের পর এই আগস্ট মাসেই ব্যতিক্রম দেখা গেল। একটি সংবাদসংস্থা এ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১২ আগস্ট প্রথম দেখা গেল দৈনিক মৃত্যুর খাতায় নারীর সংখ্যা বেশি। ওই দিন ১০৮ জন নারীর মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পুরুষ মারা গিয়েছিল ১০৭ জন। দ্বিতীয়বার এমন ঘটনা দেখা যায় ১৯ আগস্ট, সেদিন ৮৩ জন নারী আর ৭৬ জন পুরুষের মৃত্যু হয়। গত সোমবার আবার দৈনিক মৃত্যুতে পুরুষকে ছাড়িয়ে যায় নারী। সেদিন ৬৪ জন নারীর মৃত্যুর বিপরীতে ৫৩ জন পুরুষ মারা যায়। এর একদিন বাদেও দেখা গেল একই চিত্র। গত মঙ্গলবার দেশে যে ১১৪ জন কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তার ৫৮ জনই নারী, পুরুষ ৫৬ জন।
স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত এপ্রিল থেকে নারীর মৃত্যু বাড়ছে। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ঠিক এক বছর পর গত ১ এপ্রিল পর্যন্ত মারা যাওয়া মানুষের মধ্যে পুরুষ ছিল ৭৫ দশমিক ২০ শতাংশ, নারী ছিল ২৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। এরপর মে, জুন, জুলাইয়ে এসে নারী-পুরুষের ব্যবধান ক্রমান্বয়ে কমছে। জুলাইয়ে নারীর মৃত্যুর হার বেড়ে ২৯ শতাংশে উঠে যায়। অগাস্টের প্রথম সপ্তাহে তা ৩৩ শতাংশ ছাড়ায়। এরপর গত দুই সপ্তাহে মৃত্যুর ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১১ থেকে ২৪ অগাস্ট পর্যন্ত এক হাজার ৯০ জন নারী এবং এক হাজার ২৬২ জন পুরুষ করোনাভাইরাসে মারা গেছেন। শতকরা হিসাবে এই দুই সপ্তাহে নারীর মৃত্যুর হার ৪৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অথচ সামগ্রিক মৃত্যুহারে নারী ৩৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, পুরুষ ৬৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।
মহামারীর শুরু থেকে পুরুষদের মৃত্যুহার বেশি হওয়ার জন্য তাদের ঘরের বাইরে বেশি যাওয়াকে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছিলেন, আক্রান্ত বেশি হচ্ছেন বলেই পুরুষরা মারা যাচ্ছেন বেশি। বিপরীতে নারীদের ঘরের বাইরে কম বের হওয়ার পাশাপাশি তাদের প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধের শক্তি বেশি থাকার কথাও বলছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এখন চিত্র বদলে যাওয়ার কারণ কী? বিশেষজ্ঞরা সম্ভাব্য তিনটি কারণের কথা বলেছেন।
টিকায় বৈষম্য? মহামারী নিয়ন্ত্রণে প্রায় এক বছর বাদে সরকার করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরু করে গত ফেব্রুয়ারিতে। টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষরা এগিয়ে গেলেও নারীরা ঝুঁকিতে রয়ে গেছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা ডা. বে-নজির আহমেদ মনে করেন, হরমোনাল কারণে এতদিন নারীরা সুরক্ষা পাচ্ছিলেন। তবে টিকা নেওয়ার কারণে পুরুষরা এখন এগিয়ে গেছে। তিনি বলেন, “যে পুরুষরা এক ডোজ বা দুই ডোজ টিকা নিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের মৃত্যুহারটা তুলনামূলক কম। পুরুষদের মৃত্যুটা হয়ত সে কারণে কম।
“আর নারীদের টিকাগ্রহণের হার কম। পুরুষরা আগে যে সুরক্ষাটা পেত না, তারা বেশি আক্রান্ত হত, বেশি মারা যেত, নারীরা হরমোন দিয়ে যে সুবিধা পেত, এখন পুরুষরা ভ্যাকসিন দিয়ে সমমানের একটা সুরক্ষা পাচ্ছে।” স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন এক কোটি ৭২ লাখ ৪২ হাজার ৪৭৯ জন। যার মধ্যে পুরুষ ৯৯ লাখ ৬৮ হাজার ৯৩৪ জন, নারী ৭২ লাখ ৭৩ হাজার ৫৪৫ জন। আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর স্বীকার করেন, টিকাদানের শুরুতে নারীরা পিছিয়ে ছিলেন। “নারীরা তুলনামূলকভাবে কম টিকা নিয়েছেন। আমাদের ক্যাম্পেইনের ফলে ওই বৈষম্যটা কমে এসেছে। ক্যাম্পেইনের ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের নারীদের আমরা বেশি প্রাধান্য দিয়েছি, যদিও প্রথমদিকে অনেক কম নারী এসেছে।”
পরীক্ষা কম? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নারীরা আক্রান্ত হলেও পরীক্ষা করানো হচ্ছে না। ফলে তারা ঝুঁকিতে থেকে যাচ্ছেন। এজন্য সামাজিক কারণকে দায়ী করে ডা. আলমগীর বলেন, “নারীরা সর্বংসহা, তাদের পরীক্ষা না করালেও চলবে- এই ধরনের স্টিগমার কারণে নারীরা পরীক্ষা করাচ্ছেন না।” তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস গ্রামাঞ্চলে ছড়ানোর পর নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। আবার দেখা যাচ্ছে, নারীরা সময়মত ট্রিটমেন্ট নেন না। অনেক সময় তারা অসুস্থতার কথা বলেনও না। যখন শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তখন বোঝা যায়।
“আমাদের দেশে সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীরা এমনিতেই হাসপাতালে যেতে চান না, আবার পুরুষকে যত দ্রুত নেওয়া হয়, নারীকে নেওয়া হয় না।”
ডেল্টার বিস্তার? ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, “আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, সেটা হচ্ছে- ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। হরমোনাল কারণে যে সুরক্ষা নারীরা পেতেন, সেটা হয়ত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে পাচ্ছেন না। যেমন শিশুরা কিন্তু এখন তুলনামূলক সংক্রমিত হচ্ছে বেশি।” আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেনও মনে করেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে নারীদের মধ্যে সংক্রমণ বাড়ছে, যা মৃত্যুহারও বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, “নারীরা বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন বিধায় বেশি মারা যাচ্ছেন। আগে দেখা যেত, পরিবারের সবাই সংক্রমিত হচ্ছে না। এখন কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একই পরিবারের সবাই সংক্রমিত হচ্ছে। সবাই আক্রান্ত হলে তার মধ্যে মেয়েরাও পড়ছেন। কাজেই নারীরা সংক্রমিত হচ্ছেন বেশি।” ডা. মুশতাক বলেন, “নারীদের মাঝে সংক্রমণ আগে কম ছিল, তাই মৃত্যুও কিছুটা কম ছিল। এখন যেহেতু সংক্রমণ বেশি, তাই আনুপাতিক হারে মৃত্যুটাও বেশি হয়ে গেছে। এটা আমার ধারণা।”
নারীরা এখন বেশি সংক্রমিত হচ্ছে কি না, সে তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাওয়া যায়নি। মোটাদাগে তিনটি কারণ বললেও নারীর মৃত্যুর এই প্রবণতার প্রকৃত চিত্র জানতে আরও অপেক্ষা করতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ডা. বে-নজির বলেন, “পুরুষরা কতজন আক্রান্ত হচ্ছেন, নারীরা কতজন আক্রান্ত হচ্ছেন এবং সেই আক্রান্তদের মধ্যে কতজন মারা যাচ্ছেন; এগুলো দেখা দরকার। “এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং আমাদের এ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে যে, নারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকলে সেটার কারণ কী?”