ঢাকা ০২:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫

প্রস্তুতি ছাড়া রাতারাতি আইন করায় আজকের এই পরিস্থিতি

  • আপডেট সময় : ০৯:৫৯:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০২৪
  • ৭৮ বার পড়া হয়েছে

মো. আখতারুল ইসলাম : সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম কোনোভাবেই প্রত্যাশার বিষয় নয়। কখনও কোনো আইন এভাবে কেউ পাস করে? কৌশলে রাতারাতি একটি আইন তৈরি করা হয়েছে, যা আমাদের (বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক) জন্য প্রযোজ্য না। ধারণা করছি, সঠিক প্রস্তুতি ছাড়া ইচ্ছে করেই আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। আর এসব নিয়ে মিটিং মিছিল করাও তো শিক্ষকের কাজ নয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা থাকবেন পাঠদান এবং গবেষণা নিয়ে। দেশের ৩৫টা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই এই বিষয়ে একমত। অথচ, তাদের (শিক্ষক) নিয়ে আলোচনায় বসা হচ্ছে না। এত অহংকার কোথা থেকে আসে? আলোচনা করার মতো প্রয়োজনই মনে করছেন না।
প্রত্যয় স্কিম নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো আলোচনা নেই। এই আলোচনার জন্য তো বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। আমরা অংক জানি এবং পড়াই। আলোচনা করতে আসুন। আমরা সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতে পারবো। কিন্তু উনারা (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ) আলাপ করতে আসবেন না। তাহলে কীভাবে কী হবে? প্রথমে তো আমাদের না জানিয়ে করা হলো। পরে আমরা জানার পর যখন যোগাযোগ করলাম। নিজেরা স্মারকলিপি দিলাম। আশা করলাম শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
শিক্ষামন্ত্রী যদি অনুভব করেন তবে অতিদ্রুত আলোচনায় আসবেন। এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজ কী না এই বিতর্কে যাবো না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাজ কী এটা আমরা পড়াই না। যারা পলিটিক্যাল সায়েন্স কিংবা পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন পড়ান তারা ভালো জানবেন। আমি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক কিন্তু এই দায়িত্ব যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপরই বর্তায় এটা বুঝি। এটা বইপুস্তক পড়ে বুঝতে হয় না। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কোন মন্ত্রনালয়গুলোকে ডাকবেন। তারপর আমাদের নিয়ে বসবেন। ব্যবস্থা তো শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরই করতে হবে। তারা দায়িত্ব তো এড়াতে পারবেন না। শিক্ষকদের নিয়ে কিভাবে প্রতারণা করা হচ্ছে তা প্রধানমন্ত্রীকে দেখাতে চাই। এই স্কিমের বিশেষজ্ঞ নিয়ে তিনি আমাদের সঙ্গে বসলে আমি নিজেই হোয়াইট বোর্ড আর মার্কার নিয়ে অংক কষে কয়েক মিনিটেই বুঝিতে দিতে পারবো আমাদের কতটা বঞ্চিত করা হচ্ছে।
তবুও তারা আলোচনায় বসবেন না। কারণ, এখন তারা বলছে, এটা আমাদের জন্য নয়। বলা হচ্ছে, পরবর্তী প্রজন্ম এ বিষয়ে তো জেনেই আসবে। তাই অংক কষারও প্রয়োজন নেই। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এই পেশায় এত সুযোগ বঞ্চিত করলে কে আসবে?
এখন যে বৈষম্য করা হচ্ছে সেটা বুঝতে অংক কষতে হয় না। এটা চরম অসৎ উদ্দেশ্য। এই পেশায় যেন মেধাবীরা না আসে সেজন্যই এমন পেনশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখনই মেধাবীরা এই পেশায় আসতে চায় না। শিক্ষক নিয়োগে কিছুদিন দেরি হলেই তারা অন্য পেশায় অনেক বেশি বেতনে ঢুকে পড়ে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন বেতনে এই প্রজন্ম কেন আসবে? তারা মনে করে ভবিষ্যতটা হয়তো ভালো যাবে। কিন্তু এমনিতেই বেতন কম এবং বাড়ানোও হয় না। এর মধ্যে যদি আবার পেনশনের এই অবস্থা হয় তাহলে কী অবস্থা হবে? এখন সারা বিশ্বই খোলা তাদের জন্য। উন্নত দেশগুলোতে খুব সহজেই যাওয়া যাচ্ছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবীদের পাওয়া যাবে না। এছাড়া পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে যারা ফিরে আসেন তারাও অনীহা প্রকাশ করবে। অথচ সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রদেরই শিক্ষক ও গবেষক হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সেই সুযোগ শেষ হতে যাচ্ছে।
লেখক: অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; সভাপতি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।

 

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রস্তুতি ছাড়া রাতারাতি আইন করায় আজকের এই পরিস্থিতি

আপডেট সময় : ০৯:৫৯:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০২৪

মো. আখতারুল ইসলাম : সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম কোনোভাবেই প্রত্যাশার বিষয় নয়। কখনও কোনো আইন এভাবে কেউ পাস করে? কৌশলে রাতারাতি একটি আইন তৈরি করা হয়েছে, যা আমাদের (বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক) জন্য প্রযোজ্য না। ধারণা করছি, সঠিক প্রস্তুতি ছাড়া ইচ্ছে করেই আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। আর এসব নিয়ে মিটিং মিছিল করাও তো শিক্ষকের কাজ নয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা থাকবেন পাঠদান এবং গবেষণা নিয়ে। দেশের ৩৫টা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই এই বিষয়ে একমত। অথচ, তাদের (শিক্ষক) নিয়ে আলোচনায় বসা হচ্ছে না। এত অহংকার কোথা থেকে আসে? আলোচনা করার মতো প্রয়োজনই মনে করছেন না।
প্রত্যয় স্কিম নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো আলোচনা নেই। এই আলোচনার জন্য তো বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। আমরা অংক জানি এবং পড়াই। আলোচনা করতে আসুন। আমরা সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতে পারবো। কিন্তু উনারা (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ) আলাপ করতে আসবেন না। তাহলে কীভাবে কী হবে? প্রথমে তো আমাদের না জানিয়ে করা হলো। পরে আমরা জানার পর যখন যোগাযোগ করলাম। নিজেরা স্মারকলিপি দিলাম। আশা করলাম শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
শিক্ষামন্ত্রী যদি অনুভব করেন তবে অতিদ্রুত আলোচনায় আসবেন। এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজ কী না এই বিতর্কে যাবো না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাজ কী এটা আমরা পড়াই না। যারা পলিটিক্যাল সায়েন্স কিংবা পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন পড়ান তারা ভালো জানবেন। আমি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক কিন্তু এই দায়িত্ব যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপরই বর্তায় এটা বুঝি। এটা বইপুস্তক পড়ে বুঝতে হয় না। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কোন মন্ত্রনালয়গুলোকে ডাকবেন। তারপর আমাদের নিয়ে বসবেন। ব্যবস্থা তো শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরই করতে হবে। তারা দায়িত্ব তো এড়াতে পারবেন না। শিক্ষকদের নিয়ে কিভাবে প্রতারণা করা হচ্ছে তা প্রধানমন্ত্রীকে দেখাতে চাই। এই স্কিমের বিশেষজ্ঞ নিয়ে তিনি আমাদের সঙ্গে বসলে আমি নিজেই হোয়াইট বোর্ড আর মার্কার নিয়ে অংক কষে কয়েক মিনিটেই বুঝিতে দিতে পারবো আমাদের কতটা বঞ্চিত করা হচ্ছে।
তবুও তারা আলোচনায় বসবেন না। কারণ, এখন তারা বলছে, এটা আমাদের জন্য নয়। বলা হচ্ছে, পরবর্তী প্রজন্ম এ বিষয়ে তো জেনেই আসবে। তাই অংক কষারও প্রয়োজন নেই। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এই পেশায় এত সুযোগ বঞ্চিত করলে কে আসবে?
এখন যে বৈষম্য করা হচ্ছে সেটা বুঝতে অংক কষতে হয় না। এটা চরম অসৎ উদ্দেশ্য। এই পেশায় যেন মেধাবীরা না আসে সেজন্যই এমন পেনশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখনই মেধাবীরা এই পেশায় আসতে চায় না। শিক্ষক নিয়োগে কিছুদিন দেরি হলেই তারা অন্য পেশায় অনেক বেশি বেতনে ঢুকে পড়ে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন বেতনে এই প্রজন্ম কেন আসবে? তারা মনে করে ভবিষ্যতটা হয়তো ভালো যাবে। কিন্তু এমনিতেই বেতন কম এবং বাড়ানোও হয় না। এর মধ্যে যদি আবার পেনশনের এই অবস্থা হয় তাহলে কী অবস্থা হবে? এখন সারা বিশ্বই খোলা তাদের জন্য। উন্নত দেশগুলোতে খুব সহজেই যাওয়া যাচ্ছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবীদের পাওয়া যাবে না। এছাড়া পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে যারা ফিরে আসেন তারাও অনীহা প্রকাশ করবে। অথচ সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রদেরই শিক্ষক ও গবেষক হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সেই সুযোগ শেষ হতে যাচ্ছে।
লেখক: অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; সভাপতি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।