নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে গত এক দিনে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা আরও কিছুটা কমে এসেছে, তবে বেড়েছে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে পৌনে ৩৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে দেশে ৫ হাজার ৭১৭ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১১৭ জনের। এক দিনে মৃত্যুর এই সংখ্যা গত সাত সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম। সর্বশেষ ৩০ জুন এর চেয়ে কম মৃত্যু হয়েছিল। সেদিন মোট ১১৫ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গত এক দিনে নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্ত রোগীর হার দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা আগের দিনের চেয়ে সামান্য বেশি। সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৪ লাখ ৬৭ হাজার ৭১৫ জন জন কোভিড রোগী শনাক্ত হল; তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে মোট ২৫ হাজার ৩৯৯ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রোববার তার আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪ হাজার ৮০৪ জন নতুন রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছিল। আর মৃত্যু হয়েছিল ১৩৯ জনের। সেই হিসেবে গত এক দিনে মৃত্যু কমলেও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। যে ১১৭ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৬৪ জন নারী আর ৫৩ জন পুরুষ। দেশে কোভিডে মৃতদের ৬৫ শতাংশই যেখানে পুরুষ, সেখানে এক দিনে পুরুষের চেয়ে বেশি নারীর মৃত্যুর ঘটনা বিরল।
গত ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন, তাদের ৪০ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শুধু ঢাকা বিভাগেই ৩ হাজার ৩৬৮ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে, যা দিনের মোট আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি। আগের দিন এ বিভাগে ২ হাজার ৮৩৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
সরকারি হিসাবে গত এক দিনে দেশে সেরে উঠেছেন আরও ৮ হাজার ৯৮২ জন। তাদের নিয়ে এই পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠলেন ১৩ লাখ ৭২ হাজার ৮৫৬ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এই মুহূর্তে সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা ৬৯ হাজার ৪৬০ জন, যা আগের দিন ৭২ হাজার ৮৪২ জন ছিল। এক সপ্তাহ আগেও সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ছিল লাখের বেশি। করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে জুন মাস থেকে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছিল। মহামারীর দেড় বছরে গত জুলাই হয়ে উঠেছিল সবচেয়ে বিপর্যস্ত মাস। মাঝ অগাস্টের পর থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে।
সাপ্তাহিক পরিস্থিতির যে হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সোমবার দিয়েছে, তাতে ১৬ থেকে ২২ অগাস্ট- এই এক সপ্তাহে ২ লাখ ৪০ হাজার ৯৯৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৩ হাজার ৯৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। পরীক্ষার এই সংখ্যা আগের সপ্তাহের (৯ থেকে ১৫ অগাস্ট ) তুলনায় ১৭ শতাংশ কম। আর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩৪ শতাংশ কম। গত এক সপ্তাহে কোভিডে মারা গেছেন মোট ১ হাজার ১০৭ জন, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ২৭ শতাংশ কম।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গত জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে ১৪ লাখ পেরিয়ে যায় গত ১৩ অগাস্ট। তার আগে ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২০ অগাস্ট তা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার আগে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪৪ লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ২১ কোটি ১৭ লাখের বেশি রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ৩৬ হাজার ৭৮৯টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৮৬ লাখ ৮৬ হাজার ৩০৬টি নমুনা। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। গত এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ২ হাজার ৭২৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের গাজীপুরে ১২৩ জন এবং নারায়ণগঞ্জে ৯৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ২১৯ জন, নোয়াখালীতে ১২৮ জন এবং কুমিল্লায় ২০৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। অন্য বিভাগগুলোর বিভিন্ন জেলার মধ্যে সিলেটে ১০৫ জন, কুষ্টিয়ায় ১০২ জন এবং ময়মনসিংহে ১৩৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে। ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ২৪ জন, অর্থাৎ, অর্ধেকের বেশিই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ২৯ জনের মধ্যে ৯ জন কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা ছিলেন। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ১০ জন, বরিশাল বিভাগে ১ জন, খুলনা বিভাগে ১১ জন, রংপুর বিভাগে ৯ জন, সিলেট বিভাগে ১৩ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে। মৃত ১১৭ জনের মধ্যে ৭৪ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ২৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৬ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৯ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের মধ্যে ৯৭ জন সরকারি হাসপাতালে, ১৭ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ৩ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।