প্রযুক্তি ডেস্ক : সূর্যালোককে বিদ্যুতে রূপান্তর করার ক্ষেত্রে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে বাড়িতে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তৈরি এক সোলার প্যানেল।
সম্প্রতি পরবর্তী প্রজন্মের একটি সৌরকোষ উন্মোচন করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্টার্টআপ কোম্পানি ‘অক্সফোর্ড পিভি’, যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রচলিত সিলিকনভিত্তিক সৌর প্যানেলের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে ‘পেরোভস্কাইট’, যা ‘মিরাকল ম্যাটিরিয়াল’ নামেও পরিচিত। এর সৌর কোষে সিলিকনের ওপর পেরোভস্কাইট বসিয়েছে কোম্পানিটি। ফলে, এটি বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায় ২৭ শতাংশ কার্যকারিতা অর্জন করেছে, যা বর্তমানে প্রচলিত একই আকারের সেরা সিলিকন মডিউলের তুলনায় প্রায় দুই শতাংশ বেশি। সোলার প্যানেলটির আয়তন প্রায় এক দশমিক ছয় বর্গমিটার। এর ভর ২৫ কেজিরও কম। আর একে বাড়ির বিভিন্ন বৈদ্যুতিক পণ্যে ব্যবহারের জন্য ‘সবচেয়ে উপযোগী আকার’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে অক্সফোর্ড পিভি।
“রেকর্ড গড়া এই মডিউলে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় অগ্রগতি ফুটে উঠেছে,” বলেন অক্সফোর্ড পিভি’র প্রধান নির্বাহী ডেভিড ওয়ার্ড।
“এই সোলার প্যানেলে বাড়ির মালিকদের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ও ইউটিলিটি গ্রাহকরা ২০ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। এতে শুধু প্যানেল বসানোর খরচই কমে আসবে না, বরং কার্বন মুক্ত বিশ্ব তৈরির যাত্রাও ত্বরান্বিত হবে। এমনকি অর্থবহ উপায়ে গোটা বিশ্বের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা রূপান্তরেও ভূমিকা রাখতে পারে এটি।”
সম্প্রতি পেরোভস্কাইট ও সিলিকন দিয়ে গঠিত সৌর কোষ থেকে ৩৪ দশমিক ছয় শতাংশ বিদ্যুৎ রূপান্তরের কার্যকারিতা অর্জন করেছিলেন চীনা গবেষকরা। তবে, সেটি অর্জিত হয়েছিল পরীক্ষাগারের পরিবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। আর এমন সক্ষমতা বাণিজ্যিক পরিসরে অর্জনের ক্ষেত্রে এখনও অনেক পথ পাড়ি দেওয়া বাকি। তবে এর কিছুদিন পরই বাণিজ্যিক আকারের সোলার প্যানেলে নতুন এ রেকর্ড গড়ার ঘোষণা এল। অক্সফোর্ড পিভি’র সর্বশেষ এই সাফল্যের আগে, বাণিজ্যিক সোলার মডিউল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কার্যকারিতার ক্ষেত্রে আগের রেকর্ডটি ছিল ২৫ শতাংশ, যা অর্জিত হয়েছিল ছয় মাসেরও কম সময় আগে। “গত এক দশক ধরে কোম্পানির গবেষণা দলটি সৌর কোষে সিলিকনের ওপর পেরোভস্কাইট বসানোর সম্ভাবনা যাচাই করে আসছিল, যার ফলে আগের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়া সম্ভব হয়েছে,” বলেন অক্সফোর্ড পিভি’র প্রযুক্তি প্রধান ক্রিস কেইস। “এখন আমরা এই উচ্চ কার্যকারিতাসম্পন্ন সৌর প্রযুক্তির বাণিজ্যিক ব্যবহার নিশ্চিত করার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছি, যা আমাদের পুরোপুরি বিদ্যুতায়নের ভবিষ্যৎ লক্ষমাত্রা অর্জনেও সহায়ক হবে।”
জার্মানির ব্র্যান্ডেনবার্গ শহরে এরইমধ্যে একটি কারখানা বানাচ্ছে কোম্পানিটি, যেখান থেকে এই পরবর্তী প্রজন্মের সৌর কোষ উৎপাদনের গতি আরও বেড়ে যাবে বলে আশা তাদের।