ঢাকা ০১:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫

আজ থেকে মিলবে হাঁড়িভাঙা আম

  • আপডেট সময় : ১১:৩৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুন ২০২৪
  • ৭৯ বার পড়া হয়েছে

রংপুর সংবাদদাতা: রংপুরে আজ বৃহস্পতিবার থেকে বাজারে মিলবে সুস্বাদু হাঁড়িভাঙা আম। ইতোমধ্যে এই আম জিআই পণ্যের স্বীকৃতিও পেয়েছে। রংপুর অঞ্চলকে অর্থনীতির পথে এগিয়ে নেওয়া সুস্বাদু হাঁড়িভাঙা আমের কদর এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে পৌঁছে গেছে। চলতি বছর প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙার ফলন হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২শ কোটি টাকার ওপরে হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন এখানকার আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। মৌসুমজুড়ে এ আমের চাহিদা বেশি থাকায় দাম কিছুটা বেশি পান বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এ বছর বিরূপ আবহাওয়ার কারণে আমের আকার ছোট হওয়ার পাশাপাশি ফলন কম হয়েছে। এতে দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বাগান মালিকরা।
রংপুরের মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ ও সদর উপজেলার বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে বাগানগুলোতে চলছে শেষ সময়ের পরিচর্যা। তবে আমের আকার ও ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেন বাগান মালিকরা। পদাগঞ্জের বাগানমালিক রেজাউল করিম জানান, এবার মুকুল আসার সময় খরা হওয়ায় গাছে ঠিকভাবে মুকুল আটকানো যায়নি। এরপর আমের গুটি আসার পর ঝড়বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ গুটি ঝড়ে গেছে। সে কারণে এবার আমের ফলন কম হয়েছে। আওলাদ হোসেন নামে অপর এক বাগান মালিক জানান, ‘মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ ও সদর উপজেলায় সদ্যপুস্করিণী, মমিনপুর ও চন্দনপাট ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষ আমের ওপর নির্ভরশীল। বছরের এই সময় আম বেচে যে টাকা পাবো তাই দিয়ে আমাদের সংসার চলে। এবার খরাসহ বিরূপ আবহাওয়ার কারণে আমের ফলন কম হয়েছে।’
তিনি বলেন, গতবার যে আম ৪ থেকে ৫টাতে এক কেজি হয়েছে, এবার সেখানে ৭ থেকে ৮টায় এক কেজি হবে। আমের আকার ছোট হলে দামও কম পাওয়া যায়। এবার আমের পর্যাপ্ত দাম না পেলে আমচাষিদের লোকসানে পড়তে হবে। হাঁড়িভাঙা পাকলে এই আম ৩ থেকে ৪ দিনের বেশি রাখা যায় না। সংরক্ষণের জন্য নেই কোনো পদ্ধতি। এই আম সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়া চাষিরা পেলে স্থানীয় পর্যায়ে চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও পাঠানো সহজ হতো। হাঁড়িভাঙা আমের গোড়াপত্তনকারী নফল উদ্দিন পাইকারের ছেলে আমচাষি আমজাদ হোসেন পাইকার জানান, দীর্ঘদিন থেকে শুনে আসছি হাঁড়িভাঙা আমের লাইফলাইন নিয়ে কাজ করছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। সেটির অগ্রগতির কোনো সুফল আমরা দেখছি না। হাঁড়িভাঙা আম জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে কোনো অধিদপ্তর থেকে এর কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। অনেক চাষি ও ব্যবসায়ী জিআই পণ্যের সুফল সম্পর্কেও অবগত না। হাঁড়িভাঙা আমের প্রসিদ্ধ এলাকা পদাগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা। নেই আবাসিক সুবিধা, ব্যাংকিং ব্যবস্থাসহ আমের স্থায়ী শেডযুক্ত বাজার। হাঁড়িভাঙা আম সংরক্ষণে গবেষণা জরুরি বলে দাবি করে আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, এই আম পরিবহনের জন্য বিশেষ বাস ও ট্রেন সার্ভিস চালু করা দরকার। একইসঙ্গে ন্যায্য দাম নিশ্চিতকরণে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। পদাগঞ্জ হাটের রাস্তাঘাটের সংস্কার এবং হাটে আম বিক্রির শেড নির্মাণ, ব্যাংকিং সুবিধা বাড়ানো, পাবলিক টয়লেট স্থাপন ও বৃষ্টির সময় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জোর দাবি তাদের।
রংপুর কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, হাঁড়িভাঙা আম সংরক্ষণে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা করছে। তবে কবে নাগাদ গবেষণার ফলাফল পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত বলতে পারছে না অধিদপ্তরটি। এই আমের লাইফলাইন নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে গবেষণামূলক কাজ করা হচ্ছে। হাঁড়িভাঙা আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ কারণে সংরক্ষণে গবেষণা এখন আরও বেশি গুরুত্ব বহন করে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, চলতি বছর জেলায় ৩ হাজার ৩৫৯ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙার চাষাবাদ করা হয়েছে এক হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন। শুরুর দিকে প্রতি কেজি আম ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। তবে আমের আকার ও পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় দামের হেরফের হয়। আমের মৌসুমে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বাজার ব্যবস্থাপনাসহ সব ধরনের সহযোগিতার জন্য সার্বক্ষণিক তদারকির কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, ২০ জুন থেকে বাজারে আসবে হাঁড়িভাঙা আম। আমের বাজারজাত করতে যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, তা মনিটরিং করা হবে। বিশেষ করে আম পরিবহনে ব্যবসায়ীদের যেন কোনো হয়রানির শিকার হতে না হয়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি সরকারি পরিবহন সুবিধার বিষয়টিও দেখা হবে।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আজ থেকে মিলবে হাঁড়িভাঙা আম

আপডেট সময় : ১১:৩৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুন ২০২৪

রংপুর সংবাদদাতা: রংপুরে আজ বৃহস্পতিবার থেকে বাজারে মিলবে সুস্বাদু হাঁড়িভাঙা আম। ইতোমধ্যে এই আম জিআই পণ্যের স্বীকৃতিও পেয়েছে। রংপুর অঞ্চলকে অর্থনীতির পথে এগিয়ে নেওয়া সুস্বাদু হাঁড়িভাঙা আমের কদর এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে পৌঁছে গেছে। চলতি বছর প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙার ফলন হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২শ কোটি টাকার ওপরে হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন এখানকার আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। মৌসুমজুড়ে এ আমের চাহিদা বেশি থাকায় দাম কিছুটা বেশি পান বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এ বছর বিরূপ আবহাওয়ার কারণে আমের আকার ছোট হওয়ার পাশাপাশি ফলন কম হয়েছে। এতে দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বাগান মালিকরা।
রংপুরের মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ ও সদর উপজেলার বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে বাগানগুলোতে চলছে শেষ সময়ের পরিচর্যা। তবে আমের আকার ও ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেন বাগান মালিকরা। পদাগঞ্জের বাগানমালিক রেজাউল করিম জানান, এবার মুকুল আসার সময় খরা হওয়ায় গাছে ঠিকভাবে মুকুল আটকানো যায়নি। এরপর আমের গুটি আসার পর ঝড়বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ গুটি ঝড়ে গেছে। সে কারণে এবার আমের ফলন কম হয়েছে। আওলাদ হোসেন নামে অপর এক বাগান মালিক জানান, ‘মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ ও সদর উপজেলায় সদ্যপুস্করিণী, মমিনপুর ও চন্দনপাট ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষ আমের ওপর নির্ভরশীল। বছরের এই সময় আম বেচে যে টাকা পাবো তাই দিয়ে আমাদের সংসার চলে। এবার খরাসহ বিরূপ আবহাওয়ার কারণে আমের ফলন কম হয়েছে।’
তিনি বলেন, গতবার যে আম ৪ থেকে ৫টাতে এক কেজি হয়েছে, এবার সেখানে ৭ থেকে ৮টায় এক কেজি হবে। আমের আকার ছোট হলে দামও কম পাওয়া যায়। এবার আমের পর্যাপ্ত দাম না পেলে আমচাষিদের লোকসানে পড়তে হবে। হাঁড়িভাঙা পাকলে এই আম ৩ থেকে ৪ দিনের বেশি রাখা যায় না। সংরক্ষণের জন্য নেই কোনো পদ্ধতি। এই আম সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়া চাষিরা পেলে স্থানীয় পর্যায়ে চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও পাঠানো সহজ হতো। হাঁড়িভাঙা আমের গোড়াপত্তনকারী নফল উদ্দিন পাইকারের ছেলে আমচাষি আমজাদ হোসেন পাইকার জানান, দীর্ঘদিন থেকে শুনে আসছি হাঁড়িভাঙা আমের লাইফলাইন নিয়ে কাজ করছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। সেটির অগ্রগতির কোনো সুফল আমরা দেখছি না। হাঁড়িভাঙা আম জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে কোনো অধিদপ্তর থেকে এর কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। অনেক চাষি ও ব্যবসায়ী জিআই পণ্যের সুফল সম্পর্কেও অবগত না। হাঁড়িভাঙা আমের প্রসিদ্ধ এলাকা পদাগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা। নেই আবাসিক সুবিধা, ব্যাংকিং ব্যবস্থাসহ আমের স্থায়ী শেডযুক্ত বাজার। হাঁড়িভাঙা আম সংরক্ষণে গবেষণা জরুরি বলে দাবি করে আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, এই আম পরিবহনের জন্য বিশেষ বাস ও ট্রেন সার্ভিস চালু করা দরকার। একইসঙ্গে ন্যায্য দাম নিশ্চিতকরণে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। পদাগঞ্জ হাটের রাস্তাঘাটের সংস্কার এবং হাটে আম বিক্রির শেড নির্মাণ, ব্যাংকিং সুবিধা বাড়ানো, পাবলিক টয়লেট স্থাপন ও বৃষ্টির সময় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জোর দাবি তাদের।
রংপুর কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, হাঁড়িভাঙা আম সংরক্ষণে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা করছে। তবে কবে নাগাদ গবেষণার ফলাফল পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত বলতে পারছে না অধিদপ্তরটি। এই আমের লাইফলাইন নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে গবেষণামূলক কাজ করা হচ্ছে। হাঁড়িভাঙা আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ কারণে সংরক্ষণে গবেষণা এখন আরও বেশি গুরুত্ব বহন করে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, চলতি বছর জেলায় ৩ হাজার ৩৫৯ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙার চাষাবাদ করা হয়েছে এক হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন। শুরুর দিকে প্রতি কেজি আম ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। তবে আমের আকার ও পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় দামের হেরফের হয়। আমের মৌসুমে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বাজার ব্যবস্থাপনাসহ সব ধরনের সহযোগিতার জন্য সার্বক্ষণিক তদারকির কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, ২০ জুন থেকে বাজারে আসবে হাঁড়িভাঙা আম। আমের বাজারজাত করতে যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, তা মনিটরিং করা হবে। বিশেষ করে আম পরিবহনে ব্যবসায়ীদের যেন কোনো হয়রানির শিকার হতে না হয়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি সরকারি পরিবহন সুবিধার বিষয়টিও দেখা হবে।