রাজধানীর গুলশান থানার বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোন এলাকার ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে ডিউটিরত কনস্টেবল মনিরুল ইসলামকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় কাউসার আলী নামে অপর এক পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে কী নিয়ে তর্ক ও কী কারণে কনস্টেবল কাউসার উত্তেজিত ছিলেন সে বিষয়ে এখনো কিছু জানাতে পারেনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তদন্ত করে সেটি বের করা হবে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।
গতকাল রোববার (৯ জুন) দুপুরে ডিএমপি সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপ্স) ড. খ. মহিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, দুই পুলিশ সদস্যের মধ্যে কোনো বিরোধ ছিল এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই। কাউসারের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি কিন্তু বিরোধের কোনো তথ্য পাইনি। পাশাপাশি অভিযুক্ত কাউসারের গত এক দুই মাসের ডিউটির রেকর্ড দেখেছি। রেকর্ডে দেখা গেছে কাউসার যথাযথভাবে ডিউটি করেছেন। গুলি করার আগে তাদের মধ্যে কী বিষয়ে তর্ক হয়েছিল এখনো তা নিশ্চিত হতে পারেনি আমরা। সেটি পরে তদন্তে জানা যাবে। ডিএমপির এ কর্মকর্তা বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে অভিযুক্ত কনস্টেবল কাউসার আহমেদ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। গুলি করেই তিনি হতভম্ব। এ কারণে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছিল যে, ‘এটা কীভাবে হয়ে গেল। আমি জানি না।’ প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে ৮ থেকে ৯ রাউন্ড গুলি সে ছুড়েছিল। এর কম-বেশি হতে পারে।
‘অর্থাৎ নিজের সহকর্মীর সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা ঘটার পরে তিনি মানসিকভাবে নার্ভাস থাকেন। যে কারণে ঘটনা ঘটার পরও অস্ত্র রেখে কনস্টেবল কাউসার সেখানে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। কারণ তিনি হয়ত স্ট্রেস নিতে পারছিলেন না। ঘটনার পরে তিনি বুঝতে পেরেছেন হয়ত কত বড় অন্যায় ও অমানবিক কাজ করে ফেলেছেন। এক-দুদিন গেলে বোঝা যাবে গুলি করার কারণ।’ অতিরিক্ত ডিউটির কারণে কনস্টেবল কাউসার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে ড. খ. মহিদ বলেন, না। ডিউটির কারণে কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি। আর এখন কোথাও ডিউটির অতিরিক্ত চাপ নেই। স্বাভাবিকভাবেই ডিউটি করছেন সবাই। সামগ্রিকভাবে পুলিশ সদস্যদের কাউন্সেলিংয়ের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাউন্সেলিংয়ের সিস্টেম নেই। তবে আমাদের নিয়মিত ব্রিফিংগুলোতে কী করা যাবে, কী করা যাবে না সে সম্পর্কে বলা হয়। এটাও এক ধরনের কাউন্সেলিং।
পাগলের বেশ ধরেছেন কাউসার, খুলছেন না মুখ: রাজধানীর গুলশান থানাধীন বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোন এলাকার ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে ডিউটিরত কনস্টেবল মনিরুল ইসলামকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় কাউসার আলী নামে অপর এক পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে থানায় নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও মুখ খুলছেন না তিনি। পুলিশ বলছে, পাগলের বেশ ধরেছেন কনস্টেবল কাউসার। কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না তিনি। অন্যদিকে কনস্টেবল মনিরুল ইসলামকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় গুলশান থানায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। মামলার বাদী হবেন নিহত কনস্টেবল মনিরুলের বড় ভাই। তিনিও পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করেন। কনস্টেবল মনিরুল ইসলামের বাড়ি নেত্রকোনায়।
রাজধানীর গুলশান-বারিধারার কূটনীতিক এলাকায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে গুলিতে নিহত হন কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম। গত শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টা থেকে ১২টা ৫ মিনিটের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন জাপান দূতাবাসের এক গাড়িচালকও। তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরেকজন বাইসাইকেল আরোহীও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে তার সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। ঘটনার খবরে ঘটনাস্থলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত হন। মোতায়েন করা হয় সোয়াট টিম। পরে রাত পৌনে ২টার দিকে ঘাতক কনস্টেবলকে হেফাজতে নেয় গুলশান থানা-পুলিশ। গত শনিবার (৮ জুন) দিবাগত ২টায় মিনিটে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হোন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন। ঘাতক কাউসার সম্পর্কে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে কাউসার আলী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। গত ৫-৬ দিন ধরে সে কারো সঙ্গে ঠিকভাবে কথা বলতেন না। বলতে গেলে সে চুপচাপ ছিলেন। ঘটনা ঘটিয়েও ভারসাম্যহীন আচরণ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মনিরুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করার পর কাউসার আলী ঘটনাস্থলে আশপাশে ঘোরাফেরা করছিলেন। কিছু সময় তিনি দূতাবাসের সামনে বসেছিলেন। তার ঘুরাফেরা ও আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। রাতেই ডিএমপির ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুল ইসলাম সরকার বলেন, আমাদের মনে হচ্ছে কাউসার আলী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলেন। প্রাথমিকভাবে আমরা আক্রমণকারী পুলিশ সদস্যের ব্যাপারে যতটুকু জেনেছি সে পাঁচ, ছয় দিন থেকে খুব চুপচাপ ছিলেন। তার অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলছিলেন না। তার ব্যাচমেটদের সঙ্গে কথা বলে এসব জেনেছি। ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে এসে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ঘটনাস্থলে আমাদের লোক ছিল, ঘটনা যে ঘটিয়েছে সেও আমাদের লোক। আসলে ঘটনাটা কি কারণে ঘটেছে সেটা আমরা জানার চেষ্টা করছি।
গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রিফাত রহমান শামীম বলেন, রাতেই ঘাতক কনস্টেবল কাউসারকে নিরস্ত্র করে হেফাজতে নেওয়া হয়। তাকে থানা হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, কিন্তু নিরুত্তাপ কনস্টেবল কাউসার। ডিসি রিফাত বলেন, তিনি দীর্ঘদিন পুলিশে কর্মরত। পাগলের বেশ ধরেছেন তিনি। ঘটনা স্পর্শকাতর। ঘটনা গুরুতর। এই অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে জানে কনস্টেবল কাউসার। সংগত কারণে সে পাগলের বেশ ধরতে পারে। মুখে কুলুপ এঁটেছেন, অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর সে দিচ্ছেন না।