ঢাকা ০১:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫

হিন্দু আইন সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে

  • আপডেট সময় : ১১:০০:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ অগাস্ট ২০২১
  • ১২৭ বার পড়া হয়েছে

পুলক ঘটক : বাংলাদেশ সরকার হিন্দু আইন সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সরকারের কেউ বলেনি তারা আইন সংশোধন করবে কিংবা করতে যাচ্ছে। আমরা কিছু মানুষ হিন্দু আইন সংস্কারের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছি এবং একটি সংগঠন গড়ে তোলার জন্য সমাজের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছি।
এই অবস্থায় নারীর অধিকার বিরোধী, মানবাধিকার বিরোধী অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়াশীল একটি হিন্দু তালেবানি চক্র হিন্দু আইন সংস্কারের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করা হবে- এই কথা প্রচার করে তারা লোকজন জড়ো করার চেষ্টা করেছে। তারপরও তাদের কর্মসূচিতে মাত্র ২১৯ জন মানুষ উপস্থিত ছিল। এরা হিন্দু সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী নয়। তাদের কর্মসূচিতে বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তাদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল অপরিপক্ক চিন্তার ফসল। কারণ তারা হাওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কার সাথে কি জন্য লড়াই করছে তা তারা নিজেরাই জানে না।

বাতাসের বিরুদ্ধে পাগলের লাঠি ঘোরানোর দশা আর কি! বোঝা যাচ্ছে, প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের চলমান প্রচারণাকে ভয় পেয়েছে। সমাজের চাহিদাকে এবং সংগঠিত শক্তি হয়ে আমাদের সম্ভাব্য আবির্ভাবকে তারা হিসাবে নিয়েছে। তাই উদ্ভ্রান্ত হয়ে আপাতত বাতাসের সঙ্গেই লড়াইয়ে নেমেছে। এতে আমাদের উৎসাহিত হওয়ার সুযোগ আছে।

আমরা ফেসবুকে “হিন্দু আইন সংস্কার আন্দোলন” নামে একটি গ্রুপ খুলেছি। এই গ্রুপে যোগদানের জন্য হিন্দু আইনের অধিনস্ত সকল মানুষকে যোগদানের আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশে প্রচলিত প্রথানির্ভর হিন্দু আইন সংশোধন করে লিঙ্গবৈষম্যসহ সকল প্রকার অসঙ্গতি দূর করতে চাই।
কারণ:
১. ন্যায় প্রতিষ্ঠা: কাউকে মানুষ হিসেবে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা অন্যায়। বিদ্যমান আইন পুরুষকে একচেটিয়া কর্তৃত্ব দিয়েছে। নারী এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে নানাভাবে অমর্যাদা ও অধিকার বঞ্চিত করেছে। তাই ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য হিন্দু আইন সংশোধন দরকার।

২. উন্নতি: সমঅধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা হলে নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পারিবারিক ক্ষমতায়ন হবে। সমাজের পিছিয়ে পড়া অর্ধেক অংশের উন্নয়ন হলে মানবসম্পদ ও অর্থসম্পদের বিকাশ ঘটবে। ফলে হিন্দু সম্প্রদায় এবং দেশ উন্নত হবে।

৩. শক্তিবৃদ্ধি: পরিবারে নারীরা নির্ভরশীল না থেকে আত্মনির্ভর এবং আত্মমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হলে হিন্দু পরিবারগুলো শক্তিশালী হবে। নারী শিক্ষা বাড়বে এবং সংসার ও সম্পদ পরিচালনায় নারীরা আরও দক্ষ হয়ে উঠবে। নারী ”অবলা” থাকবে না। নারী শক্তি এগিয়ে আসায় সমাজে বাড়তি শক্তির যোগান হবে – যে শক্তিকে এতকাল যাবত দমিত করে রাখা হয়েছে।

৪. মর্যাদা বৃদ্ধি: আইন সংশোধন করে নারী ও ভিন্নলিঙ্গের মানুষকে সমঅধিকার ও সমমর্যাদা দেওয়া হলে বিশ্বসভায় হিন্দু সমাজের মর্যাদা বাড়বে। সভ্য দুনিয়ায় হিন্দুদের অবস্থান হবে প্রথম সারিতে। যেসব সম্প্রদায় বৈষম্যমূলক আইন ও নীতির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে তাদের জন্য হিন্দুরা অনুকরণীয় আদর্শ হবে।

৫. মামলা জটিলতা: সংবিধিবদ্ধ (ঈড়ফরভু) না হওয়ায় প্রাচীন আইনসমুহে অস্পষ্টতা, দ্ব্যর্থকতা, স্ববিরোধ ও অসঙ্গতি আছে। বিভিন্ন আদালতের বিভিন্ন রকম রায় এবং আধুনিক রাষ্ট্রীয় আইন ও বিধিবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিকতার কারণেও আদালতে মামলা পরিচালনায় অসুবিধা ঘটে। তাই হিন্দু আইনের সংশোধন, সুস্পষ্টিকরণ, আধুনিকায়ন ও সংবিধিবদ্ধকরণ জরুরি।

৬. বিভিন্ন দেশে আইন সংশোধন: হিন্দু আইন নামে বাংলাদেশে যা প্রচলিত আছে তা কোনো ধর্মীয় আইন নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্নরকম প্রথাভিত্তিক হিন্দু আইন চালু আছে। ভারতেও বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম প্রথাভিত্তিক হিন্দু আইন চালু ছিল। ভারত, নেপাল এবং মরিশাসে হিন্দু আইন সংশোধন করে সবার সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। হিন্দু আইন ধর্মের কোনো আবশ্যিক শর্ত হলে হিন্দু প্রধান ঐ দেশগুলো আইন সংশোধন করতো না।

৭. ধর্মের মূল চেতনা প্রতিষ্ঠা: বিদ্যমান হিন্দু আইন সনাতন ধর্মের এবং বৌদ্ধ ধর্মের মূল চেতনা থেকে বিচ্যুত ও বিকৃত। নারীকে শক্তিহীন, অধিকারহীন, দুর্বল ও আশ্রিত করে রাখা এবং লিঙ্গ বিবেচনায় মানুষের প্রতি বৈষম্য করা সনাতন এবং বৌদ্ধ উভয় ধর্মমতের বিরোধী। সনাতন ধর্মে নারীকে জগন্মাতার অধিষ্ঠান ও শক্তির আধার হিসেবে দেখা হয়। নারীরা দেবী দুর্গার বহুরূপের প্রকাশ; সৃষ্টি, স্থিতি এবং বিনাশের শক্তি। ঈশ্বর সর্বভূতে শক্তিরূপে এবং মাতৃরূপে বিরাজিতা। শক্তিময়ী নারীকে শক্তিহীন ও দুর্বল ভাবা; জগতের বাণীমূর্তি নারীকে “অবলা” বিবেচনা করা এবং আইনগতভাবে পুরুষের আশ্রিত করে রাখা ধর্মের পরিপন্থী। মানুষ ও ধর্মের জাগরণের জন্য মাতৃশক্তির প্রকৃত বোধন দরকার।

৮. হিন্দু সম্প্রদায়কে রক্ষা: নারীর প্রতি বৈষম্য ও বঞ্চনার কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে কখনো কখনো হিন্দু নারীরা অন্য ধর্মের মানুষদের দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে ধর্মান্তরীত হন। অর্থহীন, বিত্তহীন, অধিকারহীন, আত্মবিশ্বাসহীন, পরনির্ভর, মেধায়, মননে ও আইনগতভাবে দুর্বল করে রাখায় অনেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। তাদের কেউ কেউ ভিন্নধর্মের মানুষের পাল্লায় পরে তাদের মিথ্যাবাণীতে বিভ্রান্ত হন।

নারীদের সমঅধিকার দিলে তাদের ক্ষমতায়ন ঘটবে। আত্মশক্তিতে বলিয়ান একজন মানুষকে সহজে বিভ্রান্ত করা যায় না। ফলে ভুলিয়ে বা বলপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে বা ধর্মান্তরিত করা কঠিন হবে। তাছাড়া, উত্তরাধিকারে নারীরা সমঅংশীদার হলে তাদের মধ্যে সম্পদ হারানোর ভয়ও যুক্ত হবে। কারণ আইন অনুযায়ী কেউ ধর্মান্তরিত হলে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এতে বাংলাদেশের ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু সম্প্রদায় সুরক্ষিত হবে।

লেখক : সাংবাদিক, সমাজকর্মী

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

হিন্দু আইন সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে

আপডেট সময় : ১১:০০:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ অগাস্ট ২০২১

পুলক ঘটক : বাংলাদেশ সরকার হিন্দু আইন সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সরকারের কেউ বলেনি তারা আইন সংশোধন করবে কিংবা করতে যাচ্ছে। আমরা কিছু মানুষ হিন্দু আইন সংস্কারের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছি এবং একটি সংগঠন গড়ে তোলার জন্য সমাজের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছি।
এই অবস্থায় নারীর অধিকার বিরোধী, মানবাধিকার বিরোধী অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়াশীল একটি হিন্দু তালেবানি চক্র হিন্দু আইন সংস্কারের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করা হবে- এই কথা প্রচার করে তারা লোকজন জড়ো করার চেষ্টা করেছে। তারপরও তাদের কর্মসূচিতে মাত্র ২১৯ জন মানুষ উপস্থিত ছিল। এরা হিন্দু সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী নয়। তাদের কর্মসূচিতে বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তাদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল অপরিপক্ক চিন্তার ফসল। কারণ তারা হাওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কার সাথে কি জন্য লড়াই করছে তা তারা নিজেরাই জানে না।

বাতাসের বিরুদ্ধে পাগলের লাঠি ঘোরানোর দশা আর কি! বোঝা যাচ্ছে, প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের চলমান প্রচারণাকে ভয় পেয়েছে। সমাজের চাহিদাকে এবং সংগঠিত শক্তি হয়ে আমাদের সম্ভাব্য আবির্ভাবকে তারা হিসাবে নিয়েছে। তাই উদ্ভ্রান্ত হয়ে আপাতত বাতাসের সঙ্গেই লড়াইয়ে নেমেছে। এতে আমাদের উৎসাহিত হওয়ার সুযোগ আছে।

আমরা ফেসবুকে “হিন্দু আইন সংস্কার আন্দোলন” নামে একটি গ্রুপ খুলেছি। এই গ্রুপে যোগদানের জন্য হিন্দু আইনের অধিনস্ত সকল মানুষকে যোগদানের আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশে প্রচলিত প্রথানির্ভর হিন্দু আইন সংশোধন করে লিঙ্গবৈষম্যসহ সকল প্রকার অসঙ্গতি দূর করতে চাই।
কারণ:
১. ন্যায় প্রতিষ্ঠা: কাউকে মানুষ হিসেবে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা অন্যায়। বিদ্যমান আইন পুরুষকে একচেটিয়া কর্তৃত্ব দিয়েছে। নারী এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে নানাভাবে অমর্যাদা ও অধিকার বঞ্চিত করেছে। তাই ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য হিন্দু আইন সংশোধন দরকার।

২. উন্নতি: সমঅধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা হলে নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পারিবারিক ক্ষমতায়ন হবে। সমাজের পিছিয়ে পড়া অর্ধেক অংশের উন্নয়ন হলে মানবসম্পদ ও অর্থসম্পদের বিকাশ ঘটবে। ফলে হিন্দু সম্প্রদায় এবং দেশ উন্নত হবে।

৩. শক্তিবৃদ্ধি: পরিবারে নারীরা নির্ভরশীল না থেকে আত্মনির্ভর এবং আত্মমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হলে হিন্দু পরিবারগুলো শক্তিশালী হবে। নারী শিক্ষা বাড়বে এবং সংসার ও সম্পদ পরিচালনায় নারীরা আরও দক্ষ হয়ে উঠবে। নারী ”অবলা” থাকবে না। নারী শক্তি এগিয়ে আসায় সমাজে বাড়তি শক্তির যোগান হবে – যে শক্তিকে এতকাল যাবত দমিত করে রাখা হয়েছে।

৪. মর্যাদা বৃদ্ধি: আইন সংশোধন করে নারী ও ভিন্নলিঙ্গের মানুষকে সমঅধিকার ও সমমর্যাদা দেওয়া হলে বিশ্বসভায় হিন্দু সমাজের মর্যাদা বাড়বে। সভ্য দুনিয়ায় হিন্দুদের অবস্থান হবে প্রথম সারিতে। যেসব সম্প্রদায় বৈষম্যমূলক আইন ও নীতির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে তাদের জন্য হিন্দুরা অনুকরণীয় আদর্শ হবে।

৫. মামলা জটিলতা: সংবিধিবদ্ধ (ঈড়ফরভু) না হওয়ায় প্রাচীন আইনসমুহে অস্পষ্টতা, দ্ব্যর্থকতা, স্ববিরোধ ও অসঙ্গতি আছে। বিভিন্ন আদালতের বিভিন্ন রকম রায় এবং আধুনিক রাষ্ট্রীয় আইন ও বিধিবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিকতার কারণেও আদালতে মামলা পরিচালনায় অসুবিধা ঘটে। তাই হিন্দু আইনের সংশোধন, সুস্পষ্টিকরণ, আধুনিকায়ন ও সংবিধিবদ্ধকরণ জরুরি।

৬. বিভিন্ন দেশে আইন সংশোধন: হিন্দু আইন নামে বাংলাদেশে যা প্রচলিত আছে তা কোনো ধর্মীয় আইন নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্নরকম প্রথাভিত্তিক হিন্দু আইন চালু আছে। ভারতেও বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম প্রথাভিত্তিক হিন্দু আইন চালু ছিল। ভারত, নেপাল এবং মরিশাসে হিন্দু আইন সংশোধন করে সবার সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। হিন্দু আইন ধর্মের কোনো আবশ্যিক শর্ত হলে হিন্দু প্রধান ঐ দেশগুলো আইন সংশোধন করতো না।

৭. ধর্মের মূল চেতনা প্রতিষ্ঠা: বিদ্যমান হিন্দু আইন সনাতন ধর্মের এবং বৌদ্ধ ধর্মের মূল চেতনা থেকে বিচ্যুত ও বিকৃত। নারীকে শক্তিহীন, অধিকারহীন, দুর্বল ও আশ্রিত করে রাখা এবং লিঙ্গ বিবেচনায় মানুষের প্রতি বৈষম্য করা সনাতন এবং বৌদ্ধ উভয় ধর্মমতের বিরোধী। সনাতন ধর্মে নারীকে জগন্মাতার অধিষ্ঠান ও শক্তির আধার হিসেবে দেখা হয়। নারীরা দেবী দুর্গার বহুরূপের প্রকাশ; সৃষ্টি, স্থিতি এবং বিনাশের শক্তি। ঈশ্বর সর্বভূতে শক্তিরূপে এবং মাতৃরূপে বিরাজিতা। শক্তিময়ী নারীকে শক্তিহীন ও দুর্বল ভাবা; জগতের বাণীমূর্তি নারীকে “অবলা” বিবেচনা করা এবং আইনগতভাবে পুরুষের আশ্রিত করে রাখা ধর্মের পরিপন্থী। মানুষ ও ধর্মের জাগরণের জন্য মাতৃশক্তির প্রকৃত বোধন দরকার।

৮. হিন্দু সম্প্রদায়কে রক্ষা: নারীর প্রতি বৈষম্য ও বঞ্চনার কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে কখনো কখনো হিন্দু নারীরা অন্য ধর্মের মানুষদের দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে ধর্মান্তরীত হন। অর্থহীন, বিত্তহীন, অধিকারহীন, আত্মবিশ্বাসহীন, পরনির্ভর, মেধায়, মননে ও আইনগতভাবে দুর্বল করে রাখায় অনেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। তাদের কেউ কেউ ভিন্নধর্মের মানুষের পাল্লায় পরে তাদের মিথ্যাবাণীতে বিভ্রান্ত হন।

নারীদের সমঅধিকার দিলে তাদের ক্ষমতায়ন ঘটবে। আত্মশক্তিতে বলিয়ান একজন মানুষকে সহজে বিভ্রান্ত করা যায় না। ফলে ভুলিয়ে বা বলপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে বা ধর্মান্তরিত করা কঠিন হবে। তাছাড়া, উত্তরাধিকারে নারীরা সমঅংশীদার হলে তাদের মধ্যে সম্পদ হারানোর ভয়ও যুক্ত হবে। কারণ আইন অনুযায়ী কেউ ধর্মান্তরিত হলে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এতে বাংলাদেশের ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু সম্প্রদায় সুরক্ষিত হবে।

লেখক : সাংবাদিক, সমাজকর্মী