ঢাকা ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় প্রস্তুতি

  • আপডেট সময় : ১২:৪৫:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪
  • ৮৪ বার পড়া হয়েছে

দেশের খবর ডেস্ক : ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে উপকূলীয় জেলাগুলোর স্থানীয় প্রশাসন। এতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা ছাড়াও প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবীদেরকে। এ ছাড়া শুকনো খাবার ও চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরঃ
ভোলা উপকূলে মাইকিংয়ে সতর্কীকরণ
ভোলা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় তিন ধাপের প্রস্তুতি নিয়েছে ভোলার জেলা প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড়ের আগে, ঘূর্ণিঝড়ের সময় এবং ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী এই তিন ধাপের প্রস্তুতির মধ্যে প্রথম ধাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জেলার ৮৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৩ হাজার ৮৬০ জন সিপিপি স্বেচ্ছাসেবীকে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এসএম দেলোয়ার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ৮৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ৪৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রাথমিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সব কর্মকর্তাদের সতর্ক রাখা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল বিষয়ে সতর্ক করতে গতকাল শনিবার সকাল থেকেই উপকূলের বাসিন্দাদের নিরাপদে অবস্থান করতে মাইকিং করছে কোস্টগার্ড। সদরের তুলাতলিসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক করছে কোস্টগার্ড। ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান বলেন, জেলার ৩৩৫ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে, এসব বাঁধ মোটামুটি সুরক্ষিত রয়েছে। কোথায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ নেই। তারপরেও বিষয়টির মনিটরিং করা হচ্ছে। এদিকে ঝড় নিয়ে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠার কথা জানান উপকূলের মানুষ। লোকমান, জাহিদ ও মোতাজার বলেন, ঝড় আসবে এমন খবর পেয়েছি আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি। ভোলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষক মো. মনির বলেন, পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে। বিকেল ৩টা নাগাদ ঝড়টি পায়রা বন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে।
বাগেরহাটে বৈরী আবহাওয়া
বাগেরহাট সংবাদদাতা জানান, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। গতকাল শনিবার (২৫ মে) সকাল থেকে নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে কখনো রোদ আবার কখনো আকাশ মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া বিরাজ করছে। দুপুরের দিকে কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। প্রকৃতির এমন আচরণে আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলবাসীর মধ্যে।
এদিকে, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় রেমালের খবরে উপকূলজুড়ে শঙ্কায় রয়েছে বেড়িবাঁধের পাশে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা। তবে জেলা প্রশাসন প্রাথমিকভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, মে মাস উপকূলবাসীর কাছে আতঙ্কের মাস। প্রতিবছর এই মাসের শেষে সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়ে প্রলয়ংকরী সব ঘূর্ণিঝড়। ৫ বছর আগে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জলোচ্ছ্বাস আইলাও আঘাত হেনেছিল এই মে মাসের ২৫ তারিখ। আজ রবিবার আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এমন বার্তায় চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন নদীতীরবর্তী মানুষ। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার (২৩ মে) প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। জেলার ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বরগুনায় প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল
বরগুনা সংবাদদাতা জানান, বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বাড়তে শুরু করেছে জোয়ারের পানির উচ্চতা। এতে বিষখালী, পায়রা ও বলেশ্বর নদীর পানি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রায় দুই থেকে তিন ফুট বেড়েছে বলে জানিয়েছেন এসব এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকাল শনিবার সরেজমিনে বরগুনার বড়ইতলা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পানি বেড়ে বেড়িবাঁধ ছুঁই ছুঁই হয়েছে। এখন পর্যন্ত বেড়িবাঁধের ভেতরের এলাকায় পানি প্রবেশ না করলেও বাইরের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। জোয়ারে পানির তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পেলে বেড়িবাঁধ টপকে পানি বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন এসব এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা। বড়ইতলা ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, দুইদিন ধরেই জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে গতকালের তুলনায় আজকে পানির তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। একই এলাকার ইউনুস নামের এক বাসিন্দা বলেন, আমরা ঘূর্ণিঝড় শুনলেই আতঙ্কে থাকি। রেমালের নাম শুনেছি এখন দেখি নদীর পানির উচ্চতাও বাড়ছে। পানি যেভাবে বাড়তে শুরু করেছে আর যদি দেড় থেকে দুই ফুট পানি বাড়ে তাহলে বাড়িঘরে পানি ঢোকা শুরু করবে। বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক মাহতাব হোসেন বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় বরগুনায় পানির উচ্চতা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।
খুলনায় প্রস্তুত ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র
খুলনা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় খুলনায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র। এছাড়া ৩টি মুজিব কিল্লা ও ৫ সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তত রয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৩ লাখ ১৫ হাজার মানুষ থাকতে পারবে। খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। সতর্ক থাকার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিপদ সংকেত জারি হলে তারা এলাকায় মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করবেন। শুকনো খাবার, ওষুধ, ঢেউটিন ও নগদ টাকা প্রস্তত রাখা হয়েছে। প্রস্তত রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌ বাহিনী, কোস্টগার্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ড। খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন। এসব সাইক্লোন শেল্টারে মোট ৩ লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এছাড়া ৩টি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ জন মানুষ ও ৫৬০টি গবাদি পশু রাখা যাবে। কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরায় প্রস্তুত ১৮৭ সাইক্লোন শেল্টার
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবেলায় সাতক্ষীরায় প্রস্তুত রয়েছে ১৮৭টি সাইক্লোন শেল্টার। এসব সাইক্লোন শেল্টারে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এ ছাড়া জরুরি ত্রাণ কার্যে ব্যবহারের জন্য ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে। এছাড়াও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে প্রায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। প্রস্তত রাখা হয়েছে শুকনো খাবার, ওষুধ ও পানি। প্রস্তত রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌ বাহিনী ও কোস্টগার্ড। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্টেশন ত্যাগ না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে এ মৌসুমে একটি সাধারণ প্রস্তুতি আমাদের থাকেই। তার পরেও এই উপলক্ষ্যে আমাদের উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনিসহ কালিগঞ্জ দেবহাটা এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা; শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা; জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মচারীরা যেন নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করেন; একই সঙ্গে প্রত্যেক ইউনিয়নে মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত করা; পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও খাওয়ার পানি মজুত রাখা; দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, বর্তমানে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের যে গতিপথ আছে তা পরিবর্তন না হলে আপাতত ঘূর্ণিঝড় সাতক্ষীরা থেকে পটুয়াখালীর উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা আছে।
প্রসঙ্গত, ‘রেমাল’ একটি আরবি শব্দ, যার বাংলা অর্থ বালু। নামটি দিয়েছে ওমান। আজ রবিবার রাতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মাঝখান দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করতে পারে। উপকূলে আঘাত হানার সময় এটির কেন্দ্রের গতিবেগ উঠতে পারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রধান উপদেষ্টা হতাশ-ক্ষুব্ধ, ‘পদত্যাগ’ নিয়ে আলোচনা

ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় প্রস্তুতি

আপডেট সময় : ১২:৪৫:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪

দেশের খবর ডেস্ক : ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে উপকূলীয় জেলাগুলোর স্থানীয় প্রশাসন। এতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা ছাড়াও প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবীদেরকে। এ ছাড়া শুকনো খাবার ও চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরঃ
ভোলা উপকূলে মাইকিংয়ে সতর্কীকরণ
ভোলা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় তিন ধাপের প্রস্তুতি নিয়েছে ভোলার জেলা প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড়ের আগে, ঘূর্ণিঝড়ের সময় এবং ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী এই তিন ধাপের প্রস্তুতির মধ্যে প্রথম ধাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জেলার ৮৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৩ হাজার ৮৬০ জন সিপিপি স্বেচ্ছাসেবীকে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এসএম দেলোয়ার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ৮৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ৪৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রাথমিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সব কর্মকর্তাদের সতর্ক রাখা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল বিষয়ে সতর্ক করতে গতকাল শনিবার সকাল থেকেই উপকূলের বাসিন্দাদের নিরাপদে অবস্থান করতে মাইকিং করছে কোস্টগার্ড। সদরের তুলাতলিসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক করছে কোস্টগার্ড। ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান বলেন, জেলার ৩৩৫ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে, এসব বাঁধ মোটামুটি সুরক্ষিত রয়েছে। কোথায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ নেই। তারপরেও বিষয়টির মনিটরিং করা হচ্ছে। এদিকে ঝড় নিয়ে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠার কথা জানান উপকূলের মানুষ। লোকমান, জাহিদ ও মোতাজার বলেন, ঝড় আসবে এমন খবর পেয়েছি আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি। ভোলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষক মো. মনির বলেন, পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে। বিকেল ৩টা নাগাদ ঝড়টি পায়রা বন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে।
বাগেরহাটে বৈরী আবহাওয়া
বাগেরহাট সংবাদদাতা জানান, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। গতকাল শনিবার (২৫ মে) সকাল থেকে নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে কখনো রোদ আবার কখনো আকাশ মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া বিরাজ করছে। দুপুরের দিকে কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। প্রকৃতির এমন আচরণে আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলবাসীর মধ্যে।
এদিকে, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় রেমালের খবরে উপকূলজুড়ে শঙ্কায় রয়েছে বেড়িবাঁধের পাশে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা। তবে জেলা প্রশাসন প্রাথমিকভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, মে মাস উপকূলবাসীর কাছে আতঙ্কের মাস। প্রতিবছর এই মাসের শেষে সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়ে প্রলয়ংকরী সব ঘূর্ণিঝড়। ৫ বছর আগে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জলোচ্ছ্বাস আইলাও আঘাত হেনেছিল এই মে মাসের ২৫ তারিখ। আজ রবিবার আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এমন বার্তায় চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন নদীতীরবর্তী মানুষ। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার (২৩ মে) প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। জেলার ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বরগুনায় প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল
বরগুনা সংবাদদাতা জানান, বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বাড়তে শুরু করেছে জোয়ারের পানির উচ্চতা। এতে বিষখালী, পায়রা ও বলেশ্বর নদীর পানি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রায় দুই থেকে তিন ফুট বেড়েছে বলে জানিয়েছেন এসব এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকাল শনিবার সরেজমিনে বরগুনার বড়ইতলা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পানি বেড়ে বেড়িবাঁধ ছুঁই ছুঁই হয়েছে। এখন পর্যন্ত বেড়িবাঁধের ভেতরের এলাকায় পানি প্রবেশ না করলেও বাইরের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। জোয়ারে পানির তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পেলে বেড়িবাঁধ টপকে পানি বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন এসব এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা। বড়ইতলা ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, দুইদিন ধরেই জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে গতকালের তুলনায় আজকে পানির তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। একই এলাকার ইউনুস নামের এক বাসিন্দা বলেন, আমরা ঘূর্ণিঝড় শুনলেই আতঙ্কে থাকি। রেমালের নাম শুনেছি এখন দেখি নদীর পানির উচ্চতাও বাড়ছে। পানি যেভাবে বাড়তে শুরু করেছে আর যদি দেড় থেকে দুই ফুট পানি বাড়ে তাহলে বাড়িঘরে পানি ঢোকা শুরু করবে। বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক মাহতাব হোসেন বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় বরগুনায় পানির উচ্চতা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।
খুলনায় প্রস্তুত ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র
খুলনা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় খুলনায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র। এছাড়া ৩টি মুজিব কিল্লা ও ৫ সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তত রয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৩ লাখ ১৫ হাজার মানুষ থাকতে পারবে। খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। সতর্ক থাকার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিপদ সংকেত জারি হলে তারা এলাকায় মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করবেন। শুকনো খাবার, ওষুধ, ঢেউটিন ও নগদ টাকা প্রস্তত রাখা হয়েছে। প্রস্তত রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌ বাহিনী, কোস্টগার্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ড। খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন। এসব সাইক্লোন শেল্টারে মোট ৩ লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এছাড়া ৩টি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ জন মানুষ ও ৫৬০টি গবাদি পশু রাখা যাবে। কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরায় প্রস্তুত ১৮৭ সাইক্লোন শেল্টার
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবেলায় সাতক্ষীরায় প্রস্তুত রয়েছে ১৮৭টি সাইক্লোন শেল্টার। এসব সাইক্লোন শেল্টারে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এ ছাড়া জরুরি ত্রাণ কার্যে ব্যবহারের জন্য ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে। এছাড়াও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে প্রায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। প্রস্তত রাখা হয়েছে শুকনো খাবার, ওষুধ ও পানি। প্রস্তত রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌ বাহিনী ও কোস্টগার্ড। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্টেশন ত্যাগ না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে এ মৌসুমে একটি সাধারণ প্রস্তুতি আমাদের থাকেই। তার পরেও এই উপলক্ষ্যে আমাদের উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনিসহ কালিগঞ্জ দেবহাটা এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা; শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা; জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মচারীরা যেন নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করেন; একই সঙ্গে প্রত্যেক ইউনিয়নে মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত করা; পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও খাওয়ার পানি মজুত রাখা; দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, বর্তমানে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের যে গতিপথ আছে তা পরিবর্তন না হলে আপাতত ঘূর্ণিঝড় সাতক্ষীরা থেকে পটুয়াখালীর উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা আছে।
প্রসঙ্গত, ‘রেমাল’ একটি আরবি শব্দ, যার বাংলা অর্থ বালু। নামটি দিয়েছে ওমান। আজ রবিবার রাতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মাঝখান দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করতে পারে। উপকূলে আঘাত হানার সময় এটির কেন্দ্রের গতিবেগ উঠতে পারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত।