ঢাকা ০৫:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

নায়করাজ রাজ্জাককে হারানোর চার বছর

  • আপডেট সময় : ০১:১১:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ অগাস্ট ২০২১
  • ৬৬ বার পড়া হয়েছে

বিনোদন ডেস্ক : বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের কালজয়ী অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাককে হারানোর চার বছর পূর্ণ হলো গতকাল শনিবার (২১ আগস্ট)। ২০১৭ সালের ৭৫ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। গতকাল শনিবার থেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নায়করাজকে স্মরণ করতে শুরু করেছেন সাধারণ ভক্ত অনুরাগী থেকে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মানুষেরাও। বিশেষ করে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন ভার্চুয়াল গ্রুপগুলোতে নায়করাজের সৃষ্টিশীল কাজ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
নায়ক রাজ্জাককে স্মরণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শাকিব খান লেখেন, ‘দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের কয়েক প্রজন্মের কাছে তিনি আইকনিক অধ্যায়। একটা সময় আমাদের দেশে ভিনদেশী সিনেমার প্রভাব ছিল। তখন তার আবির্ভাব হয়। তিনি নায়ক রাজ রাজ্জাক। তিনি তার অভিনয় দিয়ে দর্শকদের বাংলা সিনেমামুখী করেছিলেন। নিজেই তৈরি করেছিলেন এক স্বতন্ত্র অবস্থান।’ ‘অভিনয় দক্ষতায় সব ধরণের মানুষের কাছে নায়কদের শিরোমনি হয়ে উঠেছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। তাই কোটি বাঙালির হৃদয়ে আজও তিনি বেঁচে আছেন। যতোদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলাদেশের সিনেমা থাকবে ততোদিনই তিনি আমাদের সকলের হৃদয়ে অহংকার হয়ে থাকবেন।’
বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা নিরব হোসেনের স্মৃতিতেও উজ্জ্বল নায়করাজ। তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে ফেসবুকে আবেগ ঝড়েছে তার লেখায়। নিরব লেখেন, ‘নায়করাজ রাজ্জাক সাহেব তার বর্ণিল ক্যারিয়ারে কিছু চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন। তার পরিচালনায় ‘মন দিয়ে তোমাকে’ চলচ্চিত্রে আমার কাজের সৌভাগ্য হয়েছিল। ছোট্ট ক্যারিয়ারে এটি একটি অর্জন বলে মনে করি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় নায়করাজের যুবক বয়সের একটি ছবি শেয়ার করে বাপ্পি লিখেছেন, ‘বাংলা চলচ্চিত্রের সুপারস্টার নায়করাজ রাজ্জাক। ২০১৭ সালের আজকের দিনে থেমে যায় তাঁর হৃদস্পন্দন। প্রায় অর্ধশত বছরের ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় তিনি কাটিয়েছেন চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। আমার প্রথম সিনেমা ‘ভালোবাসার রঙ’র প্রথম দৃশ্যটিই ছিল এই কিংবদন্তি অভিনেতার সঙ্গে। ক্যামেরার সামনে প্রথমবার মহান এই তারকার সঙ্গে শুটিং করার মুহূর্তটিই এখন অব্দি আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা মুহূর্ত। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভালোলাগা, সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ।’
নিজের জন্মস্থান কলকাতায় সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় রাজ্জাকের মঞ্চ নাটকে হাতেখড়ি। ১৯৬৪ সালে নতুন জীবন গড়তে সপরিবারে বাংলাদেশে পাড়ি জমানো অসহায় রাজ্জাক কঠোর পরিশ্রম আর সংগ্রাম করে ‘নায়করাজ’ উপাধি লাভ করেন। ‘মুখ ও মুখোশ’ চলচ্চিত্রের পরিচালক আব্দুল জব্বার খানের সহযোগিতায় বাংলাদেশি ফিল্মে কাজ করার সুযোগ লাভ করেন তিনি। ১৯৬৬ সালে ‘১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ চলচ্চিত্রে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তার অভিষেক। একই বছর জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে (লখিন্দর) অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেন তিনি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম মুক্তি পায় রাজ্জাক অভিনীত ‘মানুষের মন’ ছবি। ছবিটি ব্যবসাসফল হয়। এ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে সূচনা ঘটে নায়ক রাজ্জাক যুগের। তার পর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রথম ছবি ওরা ১১জন, ছন্দ হারিয়ে গেল, অবুঝ মন ছবিতে অভিনয় করে রাজ্জাক হয়ে যান বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের আইকন। প্রায় ৫০ বছরের অভিনয় জীবনে বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, এতটুকু আশা, নীল আকাশের নীচে, জীবন থেকে নেয়া, অবুঝ মন, রংবাজ, ওরা ১১জন, আলোর মিছিল, অশিক্ষিত, ছটির ঘণ্টা, বড় ভালো লোক ছিল, ও আমার দেশের মাটিসহ প্রায় ৫০০টি বাংলা ও উর্দু ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।১৬টি চলচ্চিত্রের পরিচালক রাজ্জাকের মালিকানাধীন রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশনের ব্যানার থেকে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের কয়েক দশকের প্রধান অভিনেতা হিসেবে বিবেচিত রাজ্জাক মোট পাঁচবার শ্রেষ্ঠ অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। সংস্কৃতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৫ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নায়করাজ রাজ্জাককে হারানোর চার বছর

আপডেট সময় : ০১:১১:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ অগাস্ট ২০২১

বিনোদন ডেস্ক : বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের কালজয়ী অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাককে হারানোর চার বছর পূর্ণ হলো গতকাল শনিবার (২১ আগস্ট)। ২০১৭ সালের ৭৫ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। গতকাল শনিবার থেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নায়করাজকে স্মরণ করতে শুরু করেছেন সাধারণ ভক্ত অনুরাগী থেকে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মানুষেরাও। বিশেষ করে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন ভার্চুয়াল গ্রুপগুলোতে নায়করাজের সৃষ্টিশীল কাজ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
নায়ক রাজ্জাককে স্মরণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শাকিব খান লেখেন, ‘দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের কয়েক প্রজন্মের কাছে তিনি আইকনিক অধ্যায়। একটা সময় আমাদের দেশে ভিনদেশী সিনেমার প্রভাব ছিল। তখন তার আবির্ভাব হয়। তিনি নায়ক রাজ রাজ্জাক। তিনি তার অভিনয় দিয়ে দর্শকদের বাংলা সিনেমামুখী করেছিলেন। নিজেই তৈরি করেছিলেন এক স্বতন্ত্র অবস্থান।’ ‘অভিনয় দক্ষতায় সব ধরণের মানুষের কাছে নায়কদের শিরোমনি হয়ে উঠেছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। তাই কোটি বাঙালির হৃদয়ে আজও তিনি বেঁচে আছেন। যতোদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলাদেশের সিনেমা থাকবে ততোদিনই তিনি আমাদের সকলের হৃদয়ে অহংকার হয়ে থাকবেন।’
বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা নিরব হোসেনের স্মৃতিতেও উজ্জ্বল নায়করাজ। তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে ফেসবুকে আবেগ ঝড়েছে তার লেখায়। নিরব লেখেন, ‘নায়করাজ রাজ্জাক সাহেব তার বর্ণিল ক্যারিয়ারে কিছু চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন। তার পরিচালনায় ‘মন দিয়ে তোমাকে’ চলচ্চিত্রে আমার কাজের সৌভাগ্য হয়েছিল। ছোট্ট ক্যারিয়ারে এটি একটি অর্জন বলে মনে করি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় নায়করাজের যুবক বয়সের একটি ছবি শেয়ার করে বাপ্পি লিখেছেন, ‘বাংলা চলচ্চিত্রের সুপারস্টার নায়করাজ রাজ্জাক। ২০১৭ সালের আজকের দিনে থেমে যায় তাঁর হৃদস্পন্দন। প্রায় অর্ধশত বছরের ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় তিনি কাটিয়েছেন চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। আমার প্রথম সিনেমা ‘ভালোবাসার রঙ’র প্রথম দৃশ্যটিই ছিল এই কিংবদন্তি অভিনেতার সঙ্গে। ক্যামেরার সামনে প্রথমবার মহান এই তারকার সঙ্গে শুটিং করার মুহূর্তটিই এখন অব্দি আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা মুহূর্ত। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভালোলাগা, সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ।’
নিজের জন্মস্থান কলকাতায় সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় রাজ্জাকের মঞ্চ নাটকে হাতেখড়ি। ১৯৬৪ সালে নতুন জীবন গড়তে সপরিবারে বাংলাদেশে পাড়ি জমানো অসহায় রাজ্জাক কঠোর পরিশ্রম আর সংগ্রাম করে ‘নায়করাজ’ উপাধি লাভ করেন। ‘মুখ ও মুখোশ’ চলচ্চিত্রের পরিচালক আব্দুল জব্বার খানের সহযোগিতায় বাংলাদেশি ফিল্মে কাজ করার সুযোগ লাভ করেন তিনি। ১৯৬৬ সালে ‘১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ চলচ্চিত্রে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তার অভিষেক। একই বছর জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে (লখিন্দর) অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেন তিনি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম মুক্তি পায় রাজ্জাক অভিনীত ‘মানুষের মন’ ছবি। ছবিটি ব্যবসাসফল হয়। এ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে সূচনা ঘটে নায়ক রাজ্জাক যুগের। তার পর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রথম ছবি ওরা ১১জন, ছন্দ হারিয়ে গেল, অবুঝ মন ছবিতে অভিনয় করে রাজ্জাক হয়ে যান বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের আইকন। প্রায় ৫০ বছরের অভিনয় জীবনে বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, এতটুকু আশা, নীল আকাশের নীচে, জীবন থেকে নেয়া, অবুঝ মন, রংবাজ, ওরা ১১জন, আলোর মিছিল, অশিক্ষিত, ছটির ঘণ্টা, বড় ভালো লোক ছিল, ও আমার দেশের মাটিসহ প্রায় ৫০০টি বাংলা ও উর্দু ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।১৬টি চলচ্চিত্রের পরিচালক রাজ্জাকের মালিকানাধীন রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশনের ব্যানার থেকে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের কয়েক দশকের প্রধান অভিনেতা হিসেবে বিবেচিত রাজ্জাক মোট পাঁচবার শ্রেষ্ঠ অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। সংস্কৃতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৫ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেন।