ঢাকা ০৩:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

হেফাজত আমির জুনায়েদ বাবুনগরী আর নেই

  • আপডেট সময় : ০২:০৭:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২১
  • ১৩১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান।
বাবুনগরীর কর্মস্থল হাটহাজারি মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মাওলানা ইয়াহিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি স্ট্রোক করায় বেলা ১১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এর আগে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে বাবুনগরীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। বৃহস্পতিবার তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। পরে তড়িঘড়ি করে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এর আগেও তিনি কয়েকবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী তিনি ৫ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক ছিলেন। তিনি ১৯৫৩ সালের ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার বাবুনগর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবুল হাসান ও মাতা ফাতেমা খাতুন। হারুন বাবুনগরী তার নানা।
তিনি ৫ বছর বয়সে আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগরে ভর্তি হন। এখানে তিনি মক্তব, হেফজ ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। কুরআনের হেফজ শেষ করার পর আজহারুল ইসলাম ধর্মপুরীর কাছে তিনি পুরো কুরআন মুখস্থ শুনিয়েছিলেন। এরপর তিনি ভর্তি হন দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসায়। ১৯৭৬ সালে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।
তারপর উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি পাকিস্তান যান। ১৯৭৬ সালে করাচিতে অবস্থিত জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় তাখাচ্ছুছাত ফিল উলুমুল হাদিস তথা উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগে ভর্তি হন। ২ বছর হাদিস নিয়ে গবেষণা সম্পন্ন করে তিনি আরবি ভাষায় ‘সীরাতুল ইমামিদ দারিমী ওয়াত তারিখ বি শায়খিহী’ (ইমাম দারিমী ও তার শিক্ষকগণের জীবন বৃত্তান্ত) শীর্ষক অভিসন্দর্ভ জমা দেন। এই অভিসন্দর্ভ জমা দেওয়ার পর তিনি জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়া থেকে হাদিসের সর্বোচ্চ সনদ লাভ করেন।
১৯৭৮ সালের শেষের দিকে তিনি দেশে ফিরে বাবুনগর মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। বাংলাদেশের মাদরাসা সমূহের সর্বপ্রথম বাবুনগর মাদরাসায় তিনি উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগ চালু করেন। ২০০৩ সালে তিনি দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসায় যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি হাটহাজারী মাদরাসার সহকারী পরিচালক নিযুক্ত হন। ২০২০ সালের ১৭ জুন মাদরাসা কমিটি সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়। তার স্থলে মাদরাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক শেখ আহমদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি হাটহাজারী মাদরাসার শাইখুল হাদীস এবং শিক্ষাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম নূরানী তালীমুল কুরআন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং মাসিক মুঈনুল ইসলামের প্রধান সম্পাদক, মাসিক দাওয়াতুল হকের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
আরবি, উর্দু ও বাংলায় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ত্রিশটি। দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামার আরবি পত্রিকা আল বাসুল ইসলামি, দারুল উলুম দেওবন্দের মাসিক পত্রিকা আদ দায়ী, দারুল উলুম হাটহাজারীর মাসিক আল মুঈনসহ বিভিন্ন সাময়িকীতে অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ভারতের কোচ গম্ভীরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ সাবেক ওপেনারের

হেফাজত আমির জুনায়েদ বাবুনগরী আর নেই

আপডেট সময় : ০২:০৭:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান।
বাবুনগরীর কর্মস্থল হাটহাজারি মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মাওলানা ইয়াহিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি স্ট্রোক করায় বেলা ১১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এর আগে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে বাবুনগরীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। বৃহস্পতিবার তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। পরে তড়িঘড়ি করে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এর আগেও তিনি কয়েকবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী তিনি ৫ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক ছিলেন। তিনি ১৯৫৩ সালের ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার বাবুনগর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবুল হাসান ও মাতা ফাতেমা খাতুন। হারুন বাবুনগরী তার নানা।
তিনি ৫ বছর বয়সে আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগরে ভর্তি হন। এখানে তিনি মক্তব, হেফজ ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। কুরআনের হেফজ শেষ করার পর আজহারুল ইসলাম ধর্মপুরীর কাছে তিনি পুরো কুরআন মুখস্থ শুনিয়েছিলেন। এরপর তিনি ভর্তি হন দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসায়। ১৯৭৬ সালে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।
তারপর উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি পাকিস্তান যান। ১৯৭৬ সালে করাচিতে অবস্থিত জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় তাখাচ্ছুছাত ফিল উলুমুল হাদিস তথা উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগে ভর্তি হন। ২ বছর হাদিস নিয়ে গবেষণা সম্পন্ন করে তিনি আরবি ভাষায় ‘সীরাতুল ইমামিদ দারিমী ওয়াত তারিখ বি শায়খিহী’ (ইমাম দারিমী ও তার শিক্ষকগণের জীবন বৃত্তান্ত) শীর্ষক অভিসন্দর্ভ জমা দেন। এই অভিসন্দর্ভ জমা দেওয়ার পর তিনি জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়া থেকে হাদিসের সর্বোচ্চ সনদ লাভ করেন।
১৯৭৮ সালের শেষের দিকে তিনি দেশে ফিরে বাবুনগর মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। বাংলাদেশের মাদরাসা সমূহের সর্বপ্রথম বাবুনগর মাদরাসায় তিনি উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগ চালু করেন। ২০০৩ সালে তিনি দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসায় যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি হাটহাজারী মাদরাসার সহকারী পরিচালক নিযুক্ত হন। ২০২০ সালের ১৭ জুন মাদরাসা কমিটি সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়। তার স্থলে মাদরাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক শেখ আহমদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি হাটহাজারী মাদরাসার শাইখুল হাদীস এবং শিক্ষাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম নূরানী তালীমুল কুরআন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং মাসিক মুঈনুল ইসলামের প্রধান সম্পাদক, মাসিক দাওয়াতুল হকের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
আরবি, উর্দু ও বাংলায় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ত্রিশটি। দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামার আরবি পত্রিকা আল বাসুল ইসলামি, দারুল উলুম দেওবন্দের মাসিক পত্রিকা আদ দায়ী, দারুল উলুম হাটহাজারীর মাসিক আল মুঈনসহ বিভিন্ন সাময়িকীতে অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন তিনি।