ঢাকা ০৪:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চোর কাঠবিড়ালী ও গোয়েন্দা বাপ্পি

  • আপডেট সময় : ১২:১৬:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২১
  • ৮৯ বার পড়া হয়েছে

সাঈদুর রহমান লিটন : বাড়ির উঠোনে আমরা গাছ। এ বছর খুব আমরা ধরেছে। এখনো আমরা খাওয়ার মত হয়নি। সবুজ আমরা দেখতে খুব সুন্দর। আমরা খেতে বাপ্পি খুব ভালবাসে।আমরা, খাওয়ার উপযুক্ত না হলে ও বাপ্পি মাঝে মাঝে বড় বড় দেখে আমরা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়।লবন আর শুকনো মরিচের ঝাল দিয়ে আমরা খেতে খুব মজা লাগে।বাপ্পি টসটস করে খায়। আর বাপ্পির আম্মু দেখে মনে মনে হাসে।বাপ্পির আম্মু ও বাপ্পির সাথে ভাগ বসায়।এ নিয়ে দু’একবার মায়ে ছেলে বাকবিত-া হয়।
গাছ তলায় ইদানিং খাওয়া খাওয়া আমরা পড়ে থাকতে দেখা যায়। বাপ্পি নিজেই গোয়েন্দা হয়েছে, কে খায় সেই চোর ধরবে। একদিন আমরা গাছ থেকে অদূরে বসে থেকে আমরা চোর শনাক্ত করতে পারলো। কিন্তু চোর ধরা সম্ভব হলো না।কেন না আমরা চোরের সাথে বাপ্পির পেরে ওঠা সম্ভব না।
আমরা চোর যে কাঠবিড়ালী। সে দ্রুত দৌড়াতে ও গাছে চড়তে জানে।চোখের পলকে গাছ থেকে নেমে দেয় ভোঁ দৌড়।তখন আর করার কিছু থাকে না।শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতে হয়।বাপ্পি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে করেই হোক এই চোর কে ধরবে।মনে মনে ভাবে, বাপ্পি গোয়েন্দা কে চেনো না। ধরে এমন শাস্তি দিবো সারা জীবন আর ছাড়া পাবে না।
বাপ্পির আমরা চোর ধরার প্রথম অভিযান শুরু হলো।
আমরা গাছের পাশেই চাল কুমড়ো গাছের জাঙ্গলা। জাঙ্গলা তলায় পাটি পেতে বসে রইল বাপ্পি। কিছুক্ষণ পর চোর কাঠবিড়ালী কোত্থকে দৌড়ে এসে লাফিয়ে লাফিয়ে লেজ উঁচু করে গাছে উঠে গেল। গাছে উঠে সবচেয়ে সুন্দর বড় আমরা আমরাটি কট কট করে খাওয়া শুরু করলো। আমরার রস খেয়ে অবশিষ্ট গুঁড়া অংশ নিচে ফেলতে লাগলো। বাপ্পি গোয়েন্দা মনে মনে বলল, এইবার বুঝবে বাছাধন কত ধানে কত চাল। বাপ্পি, একটা লাঠি নিয়ে আমরা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে রইল।গাছের গোড়া দিয়েই তো নামতে হবে। যখন নামতে যাবে তখন এক বারিতে চোর কাঠবিড়ালীকে নিচে ফেলে দিবে। প্রায় ঘন্টা খানেক আমরা গাছের গোড়ায় দাঁড়িয়ে রইল বাপ্পি।কাঠবিড়ালী মনের সুখে কয়েকটি আমরা খেয়ে নিচে নামতে শুরু করল।বাপ্পি লাঠি উঁচু করতে করতে, কাঠবিড়ালী গাছ বেয়ে নেমে আজ ও দৌড়,কাল ও কাল ও দৌড়।বাপ্পি অবাক তাকিয়ে রইল।
আমরা চোর ধরার দ্বিতীয় অভিযানে বাপ্পি ভাবল, আমরা গাছে সুপার গ্লু লাগিয়ে রাখবে। গাছ বেয়ে উপরে ওঠার সময় গায়ে আঠা লেগে গাছের সাথে আটকে যাবে।পরদিন বাপ্পি আমরা গাছের গোড়া থেকে কয়েক ফুট পর্যন্ত সুপার গ্লু লাগিয়ে রাখলো। বাপ্পি ভাবল, এবার আর পার পাবে না। বারে বারে ঘুঘু তুই খেয়ে যাস ধান..

কিছুক্ষণ পর কাঠবিড়ালী অনায়াসে গাছে উঠে গেল। বাপ্পি দূর থেকে কাঠ বিড়ালীর আমরা খাওয়া দেখতে লাগলো।কাঠবিড়ালী মাঝে মাঝে বাপ্পির দিকে তাকায়।আর বাপ্পি ভাবে বাপ্পিকে তিরস্কার করছে।বাপ্পির মনে আরো জেদ ধরে।কাঠবিড়ালীকে বাপ্পি ধরবেই।
এবার বাপ্পি অন্য কৌশল আঁটে। গরুর লেজের শক্ত চুল দিয়ে ঢোয়া তৈরি করে তার সাথে লাইলন সুতার গিঁট্টু দিয়ে গাছের গোড়া থেকে কয়েক গজ পর্যন্ত ফাঁদ পেতে রাখে।যাতে কাঠবিড়ালীর পায়ে আঁটকে যায়।কাঠবিড়ালী যথারিতি আসে। গাছ বেড়ে উঠতে থাকে। মাঝ বরাবর আসলেই সেই ফাঁদে কাঠবিড়ালীর পা আঁটকে যায়।বাপ্পির খুশি দেখে কে? বাপ্পি কাছে আসতে না আসতেই কাঠবিড়ালী ফাঁদ সহ পালিয়ে যায়। বাপ্পি তাকিয়ে থাকে।তবে বাপ্পি ভাবে এই কৌশলে ধরা যাবে।পরদিন কাঠবিড়ালি এলো না।বাপ্পি ফাঁদ পেতে বসে রইল।তারপর দিন ও এলো না।বাপ্পি মনে করে নিল, ভয় পেয়েছে আর আসবে না।খুশিই হলো আমরা আর খাবে না।তবে তৃতীয় দিন কাঠবিড়ালী এলো। সাথে তার আরেক বন্ধু নিয়ে।বাপ্পি যথারিতি ফাঁদ পেতে রেখেছে গাছে।কাঠবিড়ালী এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে আমরা গাছের পাশে সুপারি গাছ বেয়ে উঠে আমরা গাছে চলে গেল।কয়েক দিন ফাঁদ পেতে রাখার পর যখন বাপ্পি বুঝতে পারলো আমরা গাছ দিয়ে আর কাঠবিড়ালী উঠবে না তখন বাপ্পি অন্য মতলব আটতে লাগলো।
আমরা পাকতে শুরু করল।গাছে কাঠবিড়ালীর সংখ্যা বাড়তে লাগলো।
গাছের তলায় শত শত আমরা খেয়ে খেয়ে ফেলতে লাগলো।বাপ্পি ভাবে, তার সাথে শত্রুতা করেই কাঠবিড়ালীরা ঝাঁক ধরে এসে, বেশি বেশি আমরা খাওয়া শুরু করেছে।
আমরা এখন শুধু খাচ্ছেই না বরং নষ্ট করছে ও।বাপ্পি হাল ছাড়ার পাত্র নয়।এবার বাপ্পির চোর মারার জন্য ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবহার করবে।তার ক্ষেপনাস্ত্র হলো গুলেন্তি। গুলেন্তি ব্যবহারে বাপ্পি সিদ্ধহস্ত।যেই কাঠবিড়ালী গাছে আমরা খেতে আসে অমনি বাপ্পি গুলেন্তি মারে। কাঠবিড়ালী মুহুর্তেই অন্য ডালে যায়।যেন বাপ্পির সাথে খেলা করছে।বাপ্পি রাগে গরগর করছে।সামান্য কাঠবিড়ালীর সাথে পাড়ছে না। এটা ভাবা যায়। এ দিকে আমরার বারোটা বাজিয়ে ছাড়ছে কাঠবিড়ালী।বাপ্পি গোয়েন্দা আবার চোর ধরার নতুন ফন্দি এঁটে ফেলেছে মনে মনে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

চোর কাঠবিড়ালী ও গোয়েন্দা বাপ্পি

আপডেট সময় : ১২:১৬:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২১

সাঈদুর রহমান লিটন : বাড়ির উঠোনে আমরা গাছ। এ বছর খুব আমরা ধরেছে। এখনো আমরা খাওয়ার মত হয়নি। সবুজ আমরা দেখতে খুব সুন্দর। আমরা খেতে বাপ্পি খুব ভালবাসে।আমরা, খাওয়ার উপযুক্ত না হলে ও বাপ্পি মাঝে মাঝে বড় বড় দেখে আমরা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়।লবন আর শুকনো মরিচের ঝাল দিয়ে আমরা খেতে খুব মজা লাগে।বাপ্পি টসটস করে খায়। আর বাপ্পির আম্মু দেখে মনে মনে হাসে।বাপ্পির আম্মু ও বাপ্পির সাথে ভাগ বসায়।এ নিয়ে দু’একবার মায়ে ছেলে বাকবিত-া হয়।
গাছ তলায় ইদানিং খাওয়া খাওয়া আমরা পড়ে থাকতে দেখা যায়। বাপ্পি নিজেই গোয়েন্দা হয়েছে, কে খায় সেই চোর ধরবে। একদিন আমরা গাছ থেকে অদূরে বসে থেকে আমরা চোর শনাক্ত করতে পারলো। কিন্তু চোর ধরা সম্ভব হলো না।কেন না আমরা চোরের সাথে বাপ্পির পেরে ওঠা সম্ভব না।
আমরা চোর যে কাঠবিড়ালী। সে দ্রুত দৌড়াতে ও গাছে চড়তে জানে।চোখের পলকে গাছ থেকে নেমে দেয় ভোঁ দৌড়।তখন আর করার কিছু থাকে না।শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতে হয়।বাপ্পি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে করেই হোক এই চোর কে ধরবে।মনে মনে ভাবে, বাপ্পি গোয়েন্দা কে চেনো না। ধরে এমন শাস্তি দিবো সারা জীবন আর ছাড়া পাবে না।
বাপ্পির আমরা চোর ধরার প্রথম অভিযান শুরু হলো।
আমরা গাছের পাশেই চাল কুমড়ো গাছের জাঙ্গলা। জাঙ্গলা তলায় পাটি পেতে বসে রইল বাপ্পি। কিছুক্ষণ পর চোর কাঠবিড়ালী কোত্থকে দৌড়ে এসে লাফিয়ে লাফিয়ে লেজ উঁচু করে গাছে উঠে গেল। গাছে উঠে সবচেয়ে সুন্দর বড় আমরা আমরাটি কট কট করে খাওয়া শুরু করলো। আমরার রস খেয়ে অবশিষ্ট গুঁড়া অংশ নিচে ফেলতে লাগলো। বাপ্পি গোয়েন্দা মনে মনে বলল, এইবার বুঝবে বাছাধন কত ধানে কত চাল। বাপ্পি, একটা লাঠি নিয়ে আমরা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে রইল।গাছের গোড়া দিয়েই তো নামতে হবে। যখন নামতে যাবে তখন এক বারিতে চোর কাঠবিড়ালীকে নিচে ফেলে দিবে। প্রায় ঘন্টা খানেক আমরা গাছের গোড়ায় দাঁড়িয়ে রইল বাপ্পি।কাঠবিড়ালী মনের সুখে কয়েকটি আমরা খেয়ে নিচে নামতে শুরু করল।বাপ্পি লাঠি উঁচু করতে করতে, কাঠবিড়ালী গাছ বেয়ে নেমে আজ ও দৌড়,কাল ও কাল ও দৌড়।বাপ্পি অবাক তাকিয়ে রইল।
আমরা চোর ধরার দ্বিতীয় অভিযানে বাপ্পি ভাবল, আমরা গাছে সুপার গ্লু লাগিয়ে রাখবে। গাছ বেয়ে উপরে ওঠার সময় গায়ে আঠা লেগে গাছের সাথে আটকে যাবে।পরদিন বাপ্পি আমরা গাছের গোড়া থেকে কয়েক ফুট পর্যন্ত সুপার গ্লু লাগিয়ে রাখলো। বাপ্পি ভাবল, এবার আর পার পাবে না। বারে বারে ঘুঘু তুই খেয়ে যাস ধান..

কিছুক্ষণ পর কাঠবিড়ালী অনায়াসে গাছে উঠে গেল। বাপ্পি দূর থেকে কাঠ বিড়ালীর আমরা খাওয়া দেখতে লাগলো।কাঠবিড়ালী মাঝে মাঝে বাপ্পির দিকে তাকায়।আর বাপ্পি ভাবে বাপ্পিকে তিরস্কার করছে।বাপ্পির মনে আরো জেদ ধরে।কাঠবিড়ালীকে বাপ্পি ধরবেই।
এবার বাপ্পি অন্য কৌশল আঁটে। গরুর লেজের শক্ত চুল দিয়ে ঢোয়া তৈরি করে তার সাথে লাইলন সুতার গিঁট্টু দিয়ে গাছের গোড়া থেকে কয়েক গজ পর্যন্ত ফাঁদ পেতে রাখে।যাতে কাঠবিড়ালীর পায়ে আঁটকে যায়।কাঠবিড়ালী যথারিতি আসে। গাছ বেড়ে উঠতে থাকে। মাঝ বরাবর আসলেই সেই ফাঁদে কাঠবিড়ালীর পা আঁটকে যায়।বাপ্পির খুশি দেখে কে? বাপ্পি কাছে আসতে না আসতেই কাঠবিড়ালী ফাঁদ সহ পালিয়ে যায়। বাপ্পি তাকিয়ে থাকে।তবে বাপ্পি ভাবে এই কৌশলে ধরা যাবে।পরদিন কাঠবিড়ালি এলো না।বাপ্পি ফাঁদ পেতে বসে রইল।তারপর দিন ও এলো না।বাপ্পি মনে করে নিল, ভয় পেয়েছে আর আসবে না।খুশিই হলো আমরা আর খাবে না।তবে তৃতীয় দিন কাঠবিড়ালী এলো। সাথে তার আরেক বন্ধু নিয়ে।বাপ্পি যথারিতি ফাঁদ পেতে রেখেছে গাছে।কাঠবিড়ালী এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে আমরা গাছের পাশে সুপারি গাছ বেয়ে উঠে আমরা গাছে চলে গেল।কয়েক দিন ফাঁদ পেতে রাখার পর যখন বাপ্পি বুঝতে পারলো আমরা গাছ দিয়ে আর কাঠবিড়ালী উঠবে না তখন বাপ্পি অন্য মতলব আটতে লাগলো।
আমরা পাকতে শুরু করল।গাছে কাঠবিড়ালীর সংখ্যা বাড়তে লাগলো।
গাছের তলায় শত শত আমরা খেয়ে খেয়ে ফেলতে লাগলো।বাপ্পি ভাবে, তার সাথে শত্রুতা করেই কাঠবিড়ালীরা ঝাঁক ধরে এসে, বেশি বেশি আমরা খাওয়া শুরু করেছে।
আমরা এখন শুধু খাচ্ছেই না বরং নষ্ট করছে ও।বাপ্পি হাল ছাড়ার পাত্র নয়।এবার বাপ্পির চোর মারার জন্য ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবহার করবে।তার ক্ষেপনাস্ত্র হলো গুলেন্তি। গুলেন্তি ব্যবহারে বাপ্পি সিদ্ধহস্ত।যেই কাঠবিড়ালী গাছে আমরা খেতে আসে অমনি বাপ্পি গুলেন্তি মারে। কাঠবিড়ালী মুহুর্তেই অন্য ডালে যায়।যেন বাপ্পির সাথে খেলা করছে।বাপ্পি রাগে গরগর করছে।সামান্য কাঠবিড়ালীর সাথে পাড়ছে না। এটা ভাবা যায়। এ দিকে আমরার বারোটা বাজিয়ে ছাড়ছে কাঠবিড়ালী।বাপ্পি গোয়েন্দা আবার চোর ধরার নতুন ফন্দি এঁটে ফেলেছে মনে মনে।