দেশের খবর ডেস্ক : তীব্র তাপদাহ থেকে পরিত্রাণের জন্য আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চেয়ে তওবা, ইস্তিস্কার নামাজ ও দোয়া আদায় করেছেন বিভিন্ন জেলার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এসব নামাজে হাজার হাজার মুসল্লি অংশ নেন। প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরঃ
হাতীবান্ধায় তওবা, ইস্তিস্কার নামাজ ও দোয়া
লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, লালমনিরহাট জুড়েও তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত৷ পরিত্রাণের জন্য আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চেয়ে তওবা, ইস্তিস্কার নামাজ ও দোয়া আদায় করেছেন হাতীবান্ধার মুসলমানরা । এসময় কয়েক হাজার মুসল্লি নামাজে অংশ নেন। গতকাল মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুর ১২ টায় লালমনিরহাটে উপজেলার বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইস্তিস্কার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজের ইমামতি ও দোয়া পরিচালনা করেন বড়খাতা নূরানী জামে মসজিদের খতিব মাওলানা নাজমুল হুদা। হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা বাজার ব্যবসায়ী ও ওলামা সমিতির উদ্যোগে এ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে খোলা আকাশের নিচে প্রথমে মুসল্লিরা পাপ মোচনের জন্য তওবা করেন। পরে সালাতুল ইস্তিস্কার নামাজ শেষে ঘণ্টাব্যাপী দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এসময় শত শত মুসল্লি আল্লাহর কাছে চোখের পানি ফেলে অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তির জন্য মোনাজাত করেন। ফকিরপাড়ায় ইউনিয়নের গ্রামের আব্দুস সালাম বলেন, প্রায় এক মাস ধরে এলাকায় কোনো বৃষ্টিপাত নেই। শ্যালো মেশিন দিয়েও চাষাবাদ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। প্রচন্ড তাপদাহে ভুট্টার ক্ষেতও পুড়ে যাচ্ছে। জমিতে কোনো রস নাই। পাট ক্ষেতের অবস্থা আরও খারাপ। বৃষ্টির জন্য নামাজ হবে এ কথা শুনেই ছুটে এসেছি। বড়খাতা নূরানী জামে মসজিদের খতিব মাওলানা নাজমুল হুদা বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে বড়খাতার ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন এলাকার মানুষ মিলে ইস্তিস্কার নামাজ আদায় করেছি। ফসল পশুপাখি কষ্টে আছে। দোয়া করেছি আল্লাহ যেন এই এলাকায় রহমতের বৃষ্টি দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেন। বড়খাতা বাজার কমিটির সদস্য আহসান হাবীব লাভলু বলেন, বৃষ্টির অভাবে ধান, ভুট্টা ও পাট ক্ষেত পুড়ে যাচ্ছে। এজন্য আমরা বড়খাতা বাজার ব্যবসায়ী ওলামা সমিতি মিলে নামাজ ও বিশেষ দোয়ার আয়োজন করেছি।
বৃষ্টির জন্য আকুতি, ইসতিসকার মোনাজাতে কান্না
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা জানান, অতি তীব্র দাবদাহ, সাথে কড়া রোদ আর অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে চুয়াডাঙ্গাসহ এ অঞ্চলের জনজীবন। তীব্র এই গরম থেকে পরিত্রাণের জন্য আল্লাহর কাছে পানাহ চেয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের টাউন ফুটবল মাঠে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন এলাকাবাসী। চুয়াডাঙ্গা জেলা সম্মিলিত উলামা কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে এ নামাজে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। ইসতিসকার নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা নুরুদ্দীন। নামাজ শেষে দেশের ওপর দিয়ে বয়ে চলা তীব্র দাবদাহ থেকে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে পানাহ চাওয়া হয়। নামাজ শেষে অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা সম্মিলিত উলামা কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আলহাজ মাওলানা বশির আহমেদ।
পাথরঘাটায় বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ
পাথরঘাটা (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে তাপমাত্রার পারদ। প্রাণীকুলের নেই স্বস্তি। প্রকৃতির বাতাসে গরম হাওয়া। অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। খরা আর তীব্র গরমে নষ্ট হচ্ছে ফসল। গরম থেকে পরিত্রাণ পেতে রহমতের বৃষ্টির আশায় মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট বৃষ্টি চেয়ে সালাতুল ইস্তিসকার নামাজ আদায় ও বিশেষ মোনাজাতে দোয়া করেছেন পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের আলেম সমাজ ও স্থানীয় জনগণ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পাথরঘাটা উপজেলার ১নম্বর রায়হানপুর ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের খাঁন বাড়ি ঈদগাহ মাঠে প্রায় শতাধিক মুসল্লির উপস্থিতিতে সালাতুল ইস্তিসকার নামাজ আদায় করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নামাজে ইমামতি করেন রায়হানপুর সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক মাওঃ হাফিজুর রহমান। নামাজের পূর্বে আগত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বয়ান করেন, মাওঃ আবু হানিফ ও মাওঃ আবু বকর প্রমুখ। নামাজ শেষে অনাবৃষ্টি এবং গরম থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর রহমত কামনা করে মোনাজাত করেন রায়হানপুর সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার (অবঃ) শিক্ষক মৌলভী সামছুল হক। এ সময় মুসল্লিরা অঝোরে চোখের পানি ছেড়ে মোনাজাত করেন এবং তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এছাড়াও মোনাজাতে চলমান বৈশ্বিক সংকট থেকে মুক্তির দোয়াও করা হয়। নামাজে অংশ গ্রহণকারী মুসল্লিরা জানান, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় মানুষ খুব বিপদে আছে। বিপদের সময় আল্লাহ নামাজের মাধ্যমে চাইতে বলেছেন। বৃষ্টির জন্য এই নামাজ আদায় করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। তাই আমরা সবাই একত্র হয়ে এ নামাজ আদায় করেছি। প্রসঙ্গত, বৃষ্টি প্রার্থনায় সম্মিলিতভাবে আজান, একামত ছাড়াই জামাতের সাথে দুই রাকাত নামাজ আদায় ও হাত উল্টে দোয়া করা হয়। এটাকে বলা হয় ‘সালাতুল ইস্তিসকা বা বৃষ্টির নামাজ’ ইমাম সাহেব কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত প্রসারিত করে রহমতের বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন। মুসল্লিরাও তখন কায়মনোবাক্যে দোয়া-প্রার্থনা করেন। বস্তুত পাপমোচনের জন্য আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠ অন্তরে তওবা-ইস্তেগফার করতে হয়। তবেই আল্লাহ তাআলা মানুষের মনোকামনা পূরণ করেন এবং বৃষ্টি দিয়ে নিসর্গ সিক্ত করেন।
সাতক্ষীরায় বৃষ্টির আশায় নামাজ আদায়
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, বৈশাখ মাস প্রায় অর্ধেক হয়ে গেলেও নেই বৃষ্টি। বৃষ্টির না হওয়ার কারণে নষ্ট হচ্ছে ফসল। নেমে গেছে পানির স্তর। দেখা দিয়েছে পানির তীব্র সংকট। রোদ আর গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। প্রচ- খরতাপে পুড়ছে জনজীবন। তাই তীব্র দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে ও বৃষ্টির আশায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের কাছারি ব্রিজ ঈদগাহ মাঠে বিশেষ নামাজ (সালাতুল ইস্তেখারা) আদায় করেছেন গ্রামবাসী। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কাছারি ব্রিজ ঈদগাহের খোলা আকাশের নিচে ফাঁকা মাঠে এ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে তীব্র দাবদাহ ও অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা ওয়াহিদুজ্জামান। মাওলানা আব্দুর রউফ গাজীর সঞ্চালনায় এ বিষয়ে আলোচনা করেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়ার পিএইচডি গবেষক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন, মাওলানা আব্দুল হামিদ, মাওলানা আতিকুল্লাহ, মাওলানা সাইফুল ইসলাম ও মাওলানা নুরুল হুদা। এ বিষয়ে ইমাম অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, তীব্র দাবদাহ ও দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় মানুষ পানির জন্য খুব বিপদে আছে। বৃষ্টি বা পানির জন্য আল্লাহ সালাতের মাধ্যমে চাইতে বলেছেন। আল্লাহর কাছে চাওয়া সুন্নাত। আর চাওয়াকে আরবিতে সালাতুল ইস্তেখারা বলা হয় অর্থাৎ পানির জন্য দোয়া।
তীব্র তাপদাহ বৃষ্টির জন্য নামাজে কাঁদলেন হাজারো মুসল্লি
জনপ্রিয় সংবাদ