ঢাকা ০৪:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

বেতন-বোনাসের দাবিতে পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ

  • আপডেট সময় : ১১:৪২:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪
  • ৮৮ বার পড়া হয়েছে

গাজীপুর প্রতিনিধি : গাজীপুর মহানগরীর জরুন এলাকায় বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে কেয়া নিট কম্পোজিট পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। সকাল ৭টার দিকে শ্রমিকরা কোনাবাড়ী-কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে ১০টার দিকে শিল্পপুলিশ এসে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনেও তারা এ বিক্ষোভ করেন। বর্তমানে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে কারখানার ভেতরে অবস্থান করছেন। এর আগে সোমবার (১ এপ্রিল) বিকালে আন্দোলনের মুখে শুধু কেয়া স্পিনিং মিলের শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বকেয়া বেতনের দাবিতে তারা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখেন। শ্রমিকরা জানান, গত ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস দেওয়া হয়নি। ২২ মার্চ বকেয়া ও বোনাস দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের কথা রাখেনি। শ্রমিকদের পাশাপাশি স্টাফদের বেতনও বেশ কয়েক মাস ধরে বাকি রাখা হয়েছে। কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেডের কেয়া স্পিনিং মিলস, কেয়া কটন, কেয়া ইয়ার্ন মিলস, কেয়া নিট কম্পোজিট, কেয়া ডাইং অ্যান্ড নিটিং এবং কেয়া কসমেটিকস শাখার প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক বিক্ষোভে অংশ নেন। গত দুই বছরের ছুটির টাকাও পরিশোধ করা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। নারী শ্রমিক সালেহা আক্তার বলেন, ‘আমরা কাজ করতে এসেছি। আন্দোলন করতে আসিনি। পেটের ক্ষুধায় আন্দোলন করছি। বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস ও বাৎসরিক ছুটির টাকা না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’ শ্রমিক মারুফ জানান, আন্দোলন করার ফলে কেয়া স্পিনিং মিলস, কেয়া কটন, কেয়া ইয়ার্ন মিলসে ঈদ বোনাস দেওয়া হয়েছে। তবে কেয়া নিট কম্পোজিট (গার্মেন্টস), কেয়া ডাইং অ্যান্ড নিটিং এবং কেয়া কসমেটিকসে ঈদ বোনাস দেওয়া হয়নি। তাই আন্দোলন, বিক্ষোভ চলমান রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্টাফ বলেন, ‘বেতন চাইলেই চাকরি নাই। এজন্য আমরা আন্দোলন করতেও সাহস করি না। গত ছয় মাস যাবৎ বেতন পাচ্ছি না। আমরা কীভাবে চলবো? গাজীপুর শিল্পপুলিশের কাশিমপুর জোনের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) দিপক চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘সোমবার থেকে কেয়া নিট কম্পোজিট পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বেতন ও বোনাসের দাবিতে আন্দোলন করছে। আমরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছি। তবে তারা বলছে বকেয়া পরিশোধ না করলে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’ কেয়া নিট কম্পোজিট পোশাক কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুমন মিয়া জানান, কারখানা শ্রমিকরা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন ও বোনাস পাবেন। তাদের বকেয়া বেতন-বোনাস দেওয়া হবে এবং কিছু সেকশনে বোনাস দেওয়া হয়েছে।
অসুস্থতায় ছুটি পাননি, মারা গেলেন নারী শ্রমিক
এদিকে গাজীপুরের সদর উপজেলাধীন মির্জাপুর ইউনিয়নের তালতলী এলাকায় একটি কারখানায় কাজ করার সময় এক নারী শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। বিকেলে কারখানা ছুটির পর তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। মৃত্যুবরণকারী নারী কর্মীর নাম হাসিনা বেগম (৩৫)। তিনি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থানার দেবহাট এলাকার ভাসান আলীর মেয়ে। তিনি জয়দেবপুরের তালতলী এলাকায় কারখানার পাশেই একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। জয়দেবপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইবরাহিম খলিল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গাজীপুর সদর উপজেলার জয়দেবপুর থানাধীন মির্জাপুর ইউনিয়নের বিকেবাড়ী তালতলী এলাকায় সিলভার কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড এ সুইং শাখায় কাজ করতেন হাসিনা বেগম। তিনি অন্যান্য দিনের ন্যায় সোমবারও সকালে কারখানায় প্রবেশ করেন। সেখানে কাজ করার সময় দুপুরের দিকে অসুস্থ বোধ করলে ছুটি চান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। পরে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে কারখানা ছুটি হলে তিনি বের হওয়ার সময় আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে তালতলী এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে নেওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কারখানার অন্য শ্রমিকরা প্রতিবাদ করে কারখানার সামনে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ব্যাপারে সিলভার কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করলে কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি। পরবর্তী সময়ে কারখানার কর্তৃপক্ষকে কল দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। জয়দেবপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইবরাহিম খলিল বলেন, এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলেও পরে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনায় বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে। কারখানার মালিকপক্ষ শ্রমিকদের দাফন-কাফনের জন্য ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেন। পরে নিহতের স্বজনরা মরদেহ নিয়ে দেশের বাড়ি চলে যায়। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

‘ক্ষমতায় থাকতে’ ইউনূস মৌলবাদীদের ‘একখানে করেছেন’: গয়েশ্বর

বেতন-বোনাসের দাবিতে পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ

আপডেট সময় : ১১:৪২:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪

গাজীপুর প্রতিনিধি : গাজীপুর মহানগরীর জরুন এলাকায় বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে কেয়া নিট কম্পোজিট পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। সকাল ৭টার দিকে শ্রমিকরা কোনাবাড়ী-কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে ১০টার দিকে শিল্পপুলিশ এসে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনেও তারা এ বিক্ষোভ করেন। বর্তমানে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে কারখানার ভেতরে অবস্থান করছেন। এর আগে সোমবার (১ এপ্রিল) বিকালে আন্দোলনের মুখে শুধু কেয়া স্পিনিং মিলের শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বকেয়া বেতনের দাবিতে তারা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখেন। শ্রমিকরা জানান, গত ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস দেওয়া হয়নি। ২২ মার্চ বকেয়া ও বোনাস দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের কথা রাখেনি। শ্রমিকদের পাশাপাশি স্টাফদের বেতনও বেশ কয়েক মাস ধরে বাকি রাখা হয়েছে। কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেডের কেয়া স্পিনিং মিলস, কেয়া কটন, কেয়া ইয়ার্ন মিলস, কেয়া নিট কম্পোজিট, কেয়া ডাইং অ্যান্ড নিটিং এবং কেয়া কসমেটিকস শাখার প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক বিক্ষোভে অংশ নেন। গত দুই বছরের ছুটির টাকাও পরিশোধ করা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। নারী শ্রমিক সালেহা আক্তার বলেন, ‘আমরা কাজ করতে এসেছি। আন্দোলন করতে আসিনি। পেটের ক্ষুধায় আন্দোলন করছি। বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস ও বাৎসরিক ছুটির টাকা না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’ শ্রমিক মারুফ জানান, আন্দোলন করার ফলে কেয়া স্পিনিং মিলস, কেয়া কটন, কেয়া ইয়ার্ন মিলসে ঈদ বোনাস দেওয়া হয়েছে। তবে কেয়া নিট কম্পোজিট (গার্মেন্টস), কেয়া ডাইং অ্যান্ড নিটিং এবং কেয়া কসমেটিকসে ঈদ বোনাস দেওয়া হয়নি। তাই আন্দোলন, বিক্ষোভ চলমান রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্টাফ বলেন, ‘বেতন চাইলেই চাকরি নাই। এজন্য আমরা আন্দোলন করতেও সাহস করি না। গত ছয় মাস যাবৎ বেতন পাচ্ছি না। আমরা কীভাবে চলবো? গাজীপুর শিল্পপুলিশের কাশিমপুর জোনের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) দিপক চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘সোমবার থেকে কেয়া নিট কম্পোজিট পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বেতন ও বোনাসের দাবিতে আন্দোলন করছে। আমরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছি। তবে তারা বলছে বকেয়া পরিশোধ না করলে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’ কেয়া নিট কম্পোজিট পোশাক কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুমন মিয়া জানান, কারখানা শ্রমিকরা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন ও বোনাস পাবেন। তাদের বকেয়া বেতন-বোনাস দেওয়া হবে এবং কিছু সেকশনে বোনাস দেওয়া হয়েছে।
অসুস্থতায় ছুটি পাননি, মারা গেলেন নারী শ্রমিক
এদিকে গাজীপুরের সদর উপজেলাধীন মির্জাপুর ইউনিয়নের তালতলী এলাকায় একটি কারখানায় কাজ করার সময় এক নারী শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। বিকেলে কারখানা ছুটির পর তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। মৃত্যুবরণকারী নারী কর্মীর নাম হাসিনা বেগম (৩৫)। তিনি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থানার দেবহাট এলাকার ভাসান আলীর মেয়ে। তিনি জয়দেবপুরের তালতলী এলাকায় কারখানার পাশেই একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। জয়দেবপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইবরাহিম খলিল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গাজীপুর সদর উপজেলার জয়দেবপুর থানাধীন মির্জাপুর ইউনিয়নের বিকেবাড়ী তালতলী এলাকায় সিলভার কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড এ সুইং শাখায় কাজ করতেন হাসিনা বেগম। তিনি অন্যান্য দিনের ন্যায় সোমবারও সকালে কারখানায় প্রবেশ করেন। সেখানে কাজ করার সময় দুপুরের দিকে অসুস্থ বোধ করলে ছুটি চান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। পরে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে কারখানা ছুটি হলে তিনি বের হওয়ার সময় আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে তালতলী এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে নেওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কারখানার অন্য শ্রমিকরা প্রতিবাদ করে কারখানার সামনে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ব্যাপারে সিলভার কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করলে কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি। পরবর্তী সময়ে কারখানার কর্তৃপক্ষকে কল দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। জয়দেবপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইবরাহিম খলিল বলেন, এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলেও পরে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনায় বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে। কারখানার মালিকপক্ষ শ্রমিকদের দাফন-কাফনের জন্য ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেন। পরে নিহতের স্বজনরা মরদেহ নিয়ে দেশের বাড়ি চলে যায়। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।