নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদকে সামনে রেখে ফুটপাতের টাকার হাটেও বাড়ে নতুন টাকার চাহিদা। রাজধানীর গুলিস্তান ও মতিঝিলে এরই মধ্যে জমে উঠেছে অস্থায়ী টাকার হাট। তবে এবার নতুন টাকার সরবরাহ কম থাকার অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। ফুটপাতের এসব বিক্রেতা নতুন টাকা সংগ্রহ করেন বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে। পরে তারা এ টাকা বিক্রি করেন সাধারণ মানুষের কাছে। গুলিস্তান ও মতিঝিলের অস্থায়ী হাটে নতুন টাকা বিক্রি হয় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও এখানে ক্রেতা আসেন টাকা সংগ্রহ করতে। নতুন টাকা কিনতে গুলিস্তানে আসেন শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই এখান থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করে থাকি। ব্যাংকে অনেক ভিড় থাকে, আবার নিজেরও অফিস আছে। সব মিলিয়ে বাড়তি ভোগান্তি এড়াতে গুলিস্তান থেকে নতুন টাকা কিনে বাড়ি পাঠাই। তবে এবার বিক্রেতারা অতিরিক্ত দাম চাচ্ছেন। প্রতি বান্ডিল বা ১০০ পিস টাকার দাম (পরিমাণভেদে) ৮০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি নেওয়া হচ্ছে।’ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এখনো এবারের ঈদের জন্য নতুন টাকা ছাড়া হয়নি। এ কারণে মার্কেটে এখনো সেভাবে নতুন টাকা মিলছে না। যাদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে সেখান থেকে বাড়তি দামেই টাকা কিনতে হচ্ছে। এতে টাকার দাম কিছুটা বাড়তি মনে হতে পারে। একই অভিযোগ তানিশা নামের আরেক ক্রেতার। জাগো নিউজকে তানিশা বলেন, ‘দুই টাকা ও পাঁচ টাকার কয়েক বান্ডিল নতুন নোট লাগবে আমার। এসে দেখি গুলিস্তান ও মতিঝিলের ফুটপাতে নতুন টাকার দাম গতবারের তুলনায় অনেক বেশি। গত বছর ঈদে দুই টাকার এক বান্ডিল নোট কিনেছিলাম ২৮০ টাকায়। এবার তা ৩৮০ থেকে ৩৯০ টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে। পাঁচ টাকার বান্ডিলে গতবারের চেয়ে ১০০ টাকা বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা। এভাবে টাকার দাম বাড়ানোর মানে কী বুঝলাম না।’ তবে বিক্রেতারা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এখনো ঈদের জন্য নতুন টাকা ছাড়া হয়নি। এ কারণে মার্কেটে এখনো সেভাবে নতুন টাকা মিলছে না। যাদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে সেখান থেকে বাড়তি দামেই টাকা কিনতে হচ্ছে।’ গুলিস্তানের টাকা বিক্রেতা সোহেল বলেন, ‘এখনো নতুন টাকা আসা শুরু হয়নি। গত বছরের টাকাই বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে দাম কিছুটা বেশি। তবে খুব বেশি বাড়েনি। আবার বেচাকেনাও সেভাবে বাড়েনি। ব্যবসা তেমন ভালো যাচ্ছে না।’ আরেক বিক্রেতা আনিস বলেন, ‘আমরা যে দামে টাকা (বান্ডিল) সংগ্রহ করি তার চেয়ে ২০ টাকা বেশি রাখি। ক্রেতা বেশি হলে দাম বেশি রাখা হয় এ অভিযোগ সঠিক নয়। ঝড়-বৃষ্টি, রোদ উপেক্ষা করে সারাদিন খোলা জায়গায় বসে আমরা টাকা বিক্রি করি। এতে দিনে কারও ৫০০ টাকা লাভ থাকে, কারওবা ৭০০ টাকা। যা দিয়ে সংসার-সন্তানের খরচ মেটাই।’ আজ ৩১ মার্চ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্ধারিত শাখা থেকে নতুন নোট সংগ্রহ করতে পারবেন গ্রাহকরা। এবার ঈদ উপলক্ষে ৫, ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকা মূল্যমানের নতুন নোট নিতে পারবেন গ্রাহকরা। তবে একই ব্যক্তি একাধিকবার নতুন টাকার নোট নিতে পারবেন না। বাজারে নতুন টাকার সরবরাহ বাড়লে দাম ওঠানামা করতে পারে বলেও জানান আনিস। এবার সবচেয়ে বেশি দাম রাখা হচ্ছে দুই টাকার নতুন নোটে। দুই টাকার প্রতি বান্ডিলের (১০০ পিস নোট) দাম ২০০ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি বান্ডিলে বাড়তি রাখা হচ্ছে ১৮০ টাকা। পাঁচ টাকার বান্ডিল (৫০০ টাকা) বিক্রি হচ্ছে ৬২০ থেকে ৬৩০ টাকায়। ১০ টাকার বান্ডিল (এক হাজার টাকা) বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১৮০ টাকায়। এছাড়া ২০ টাকার বান্ডিল (২ হাজার টাকা) ২ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫০ টাকার বান্ডিল (৫ হাজার টাকা) বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকা। এছাড়া ১০০ টাকার বান্ডিলে ২০০ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। ৩০০ টাকা বাড়তি রাখা হচ্ছে ২০০ টাকার বান্ডিলে। আজ থেকে সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৮০টি শাখা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন অফিসের মাধ্যমে নতুন টাকা বিনিময় করা হবে। এবার ঈদ উপলক্ষে ৫, ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকা মূল্যমানের নতুন নোট নিতে পারবেন গ্রাহকরা। আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে নোট বিনিময়।
নতুন টাকা পাওয়া যাবে ব্যাংকের যেসব শাখায়
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আজ রোববার (৩১ মার্চ) থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত জনসাধারণ ও গ্রাহকদের মধ্যে নতুন নোট বিনিময় করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সময় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও গাজীপুরের কয়েকটি তফসিলি ব্যাংকের শাখা থেকেও নতুন নোট সংগ্রহ করা যাবে। এবার ঈদ উপলক্ষে ৫, ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকা মূল্যমান পর্যন্ত নতুন নোট বিশেষ ব্যবস্থায় বিনিময় করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, একই ব্যক্তি একাধিকবার নতুন নোট নিতে পারবেন না।
যেসব শাখায় মিলবে নতুন নোট-
জনতা ব্যাংকের পোস্তগোলা শাখা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের বনানী শাখা, এনসিসি ব্যাংকের যাত্রাবাড়ী শাখা, ব্যাংক এশিয়ার বনানী-১১ শাখা, উত্তরা ব্যাংকের যাত্রাবাড়ী শাখা, আইএফআইসি ব্যাংকের গুলশান শাখা, পূবালী ব্যাংকের সদরঘাট শাখা, যমুনা ব্যাংকের গুলশান কর্পোরেট শাখা, মিউচ্যুয়াল ট্রাষ্ট ব্যাংকের বাবু বাজার শাখা, ন্যাশনাল ব্যাংকের মহাখালী শাখা, দি সিটি ব্যাংকের ইসলামপুর শাখা, এসবিএসির বিজয়নগর শাখা, জনতা ব্যাংকের হাটখোলা রোড শাখা (মহিলা), সাউথইস্ট ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখা, ওয়ান ব্যাংকের লালবাগ শাখা, ট্রাস্ট ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখা, জনতা ব্যাংকের আব্দুল গণি রোড কর্পোরেট শাখা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বসুন্ধরা সিটি (পান্থপথ) শাখা, অগ্রণী ব্যাংকের জাতীয় প্রেস ক্লাব কর্পোরেট শাখা, প্রাইম ব্যাংকের এ্যালিফেন্ট রোড শাখা, জনতা ব্যাংকের টিএসসি কর্পোরেট শাখা, সোনালী ব্যাংকের জাতীয় সংসদ ভবন শাখা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখা, ব্র্যাক ব্যাংকের শ্যামলী শাখা, আইএফআইসি ব্যাংকের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ শাখা, সাউথইস্ট ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখা, সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখা, এনআরবিসি ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখা, ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের লোকাল অফিস শাখা, ব্র্যাক ব্যাংকের সাত মসজিদ রোড শাখা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মেইন ব্র্যাঞ্চ, দিলকুশা, যমুনা ব্যাংকের লালমাটিয়া শাখা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ঢাকা মেইন শাখা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের রায়ের বাজার শাখা, রূপালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসি, নিউমার্কেট শাখা, এক্সিম ব্যাংকের মতিঝিল শাখা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখা, এনসিসি ব্যাংকের দিলকুশা শাখা, এক্সিম ব্যাংক মিরপুর শাখা, সোনালী ব্যাংক রমনা কর্পোরেট শাখা, ব্র্যাক ব্যাংক মিরপুর-১ শাখা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক মৌলভীবাজার শাখা, অগ্রণী ব্যাংক মিরপুর শাখা, মিরপুর-১, উত্তরা ব্যাংক পিএলসি, বাবু বাজার শাখা, জনতা ব্যাংক পিএলসি, রজনীগন্ধা, ঢাকা (কচুক্ষেত কর্পোরেট শাখা)। দি সিটি ব্যাংক মগবাজার শাখা, সোনালী ব্যাংকইব্রাহীমপুর শাখা, এনসিসি ব্যাংক মগবাজার শাখা, ন্যাশনাল ব্যাংক উত্তরা শাখা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক মালিবাগ চৌধুরীপাড়া শাখা, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, উত্তরা মডেল টাউন শাখা, সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি, কাকরাইল শাখা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসি, এসএমই এন্ড এগ্রিকালচার শাখা,দক্ষিণখান, এনসিসি ব্যাংক পিএলসি, মালিবাগ শাখা, রূপালী ব্যাংক পিএলসি, উত্তরা মডেল টাউন কর্পো: শাখা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, খিলগাঁও শাখা,সোনালী ব্যাংক পিএলসি, কোর্ট বিল্ডিং শাখা, গাজীপুর, অগ্রণী ব্যাংক রামপুরা টিভি শাখা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ গাজীপুর চৌরাস্তা শাখা, এবি ব্যাংক প্রগতি স্বরণী শাখা, মার্কেন্টাইল ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ শাখা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক প্রগতি স্বরণী শাখা, এক্সিম ব্যাংক শিমরাইল শাখা, নারায়ণগঞ্জ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক দক্ষিণ বনশ্রী শাখা, এনআরবিসি ব্যাংক ভুলতা শাখা, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ব্যাংক বনশ্রী শাখা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ কাঁচপুর শাখা, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ব্যাংক নন্দীপাড়া শাখা, প্রিমিয়ার ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ শাখা, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক নন্দীপাড়া শাখা, মিউচ্যুয়াল ট্রাষ্ট ব্যাংক সাভার শাখা, ওয়ান ব্যাংক বাসাবো শাখা, প্রাইম ব্যাংক সাভার শাখা, ট্রাষ্ট ব্যাংক বসুন্ধরা শাখা, ট্রাষ্ট ব্যাংক কেরানীগঞ্জ শাখা, প্রিমিয়ার ব্যাংক বসুন্ধরা শাখা, সোনালী ব্যাংক মুন্সিগঞ্জ কর্পোরেট শাখা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক বনানী শাখা এবং ন্যাশনাল ব্যাংক শ্রীনগর শাখা, মুন্সিগঞ্জ।
বেড়েছে নতুন টাকার দাম
ট্যাগস :
বেড়েছে নতুন টাকার দাম
জনপ্রিয় সংবাদ