জবি সংবাদদাতা : শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের দায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের প্রভাষক আবু শাহেদ ইমনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর সঙ্গে শিক্ষার্থীকে অসহযোগিতা করার জন্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.জুনায়েদ হালিমকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) বিকালে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। সিন্ডিকেট সভা শেষে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড সাদেকা হালিম। এদিকে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তোলা কাজী ফারজানা মিমের ডিগ্রিপ্রাপ্তির পথ খুলতে স্নাতক ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের সম্পূরক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগ। গতকাল বৃহস্পতিবার ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও বিভাগটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনায়েদ আহমদ হালিম স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, স্নাতক ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের যে সকল শিক্ষার্থী বিভিন্ন সেমিস্টারে যে কয়টি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে, তাদেরকে আগামী ২৩ মার্চ থেকে ২৭ মার্চের মধ্যে সেসব বিষয়ে সম্পূরক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বিভাগে আবেদন করতে হবে। অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “এটা আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সাধারণত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কোর্সে অকৃতকার্য হলে তারা সাপলিমেন্টারি পরীক্ষা দিতে পারে। এটা শুধু এই ব্যাচের না, বিভিন্ন ব্যাচের অকৃতকার্যরা এই পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায়।” তবে ওই শিক্ষাবর্ষে কোন কোর্সে কতজন পরীক্ষায় ফেল করেছে জানতে চাইলে বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, সঠিক হিসাব এখন তার কাছে নেই। এই বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী কাজী ফারজানা মিম স¤প্রতি অভিযোগ করেন, তার কোর্স শিক্ষক প্রভাষক আবু শাহেদ ইমন ২০২১ সালে অ্যাকাডেমিক কাজে তাকে নিজের কক্ষে ডেকে ‘যৌন হয়রানি’ করেন। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করায় বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনায়েদ আহমদ হালিম তাকে ‘ফেল করিয়ে দেন’ বলেও মিমের অভিযোগ। এক শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যা নিয়ে আলোচনার মধেই মিমের এমন অভিযোগ নতুন আলোচনার জন্ম দেয়। মিমের অভিযোগ ‘পুরোপুরি ভিত্তিহীন’ দাবি করে প্রভাষক আবু শাহেদ ইমন এর আগে বলেন, “অবন্তিকার মৃত্যুতে তার সহানুভ‚তিকে পুঁজি করে সে (মিম) গণমাধ্যমের মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করছে।” আর মিমকে ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তার বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম বলছিলেন, “মিম ক্লাসই করত না। যেখানে ৬০ ভাগ ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসতে পারে না, সেখানে মিম পরীক্ষা দিয়েছে। ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে তাকে নম্বর দেওয়ার তো কোনো সুযোগই নাই।” দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনেরও শরণাপন্ন হন মিম। মঙ্গলবার বঙ্গভবনে জমা দেওয়া এক লিখিত আবেদনে ‘বুলিং ও যৌন নিপীড়নের দৃষ্টান্তমূলক বিচার’ চান এই শিক্ষার্থী। সেই সঙ্গে তার জীবনটাকে ‘পুনরুদ্ধার করার’ আকুল আর্জি জানান। তার আগে মিম গোয়েন্দা পুলিশের দপ্তরে গিয়েও ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে আসেন। বিষয়টি নিয়ে বুধবার ডিবি কার্যালয়ে ওই ছাত্রী এবং দুই শিক্ষককে ডাকা হয়। তাদের বক্তব্য শোনেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ। এরপর বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে গিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মিম। তিনি বলেন, বিভাগের চেয়ারম্যানের কারণে তিনি ‘ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না’। “যেখানে তিনি বিভাগের চেয়ারম্যান, আমার অভিভাবক। তাকে আমার পাশে থাকার কথা, তিনি উল্টো আমার বিরুদ্ধে গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে প্রশ্রয় দিচ্ছেন।”
জবি শিক্ষক সাহেদ ইমনকে সাময়িক বহিষ্কার মিমের পরীক্ষা দেওয়ার পথ খুলল
জনপ্রিয় সংবাদ
























