ঢাকা ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

আলুর প্রত্যাশিত দামে চাষিদের আনন্দ

  • আপডেট সময় : ১০:১৭:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ মার্চ ২০২৪
  • ৭২ বার পড়া হয়েছে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামে আলুর ফলন তুলনামূলক কম হলেও প্রত্যাশিত দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। মাঠেই প্রত্যাশিত দাম পেয়ে খুশি আলুচাষিরা। আলু তুলেই লাভের মুখ দেখতে পাওয়ায় স্বস্তির ঢেকুর তুলছেন তারা। তবে হিমাগারে রাখার পর শেষ পর্যন্ত আলুর দাম কেমন মিলবে তা নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নে একাধিক আলু চাষি ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। চাষিরা বলছেন, এ বছর আলুর ফলন কিছুটা কম হলেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোগবালাই কম হয়েছে। আলুর স্বাস্থ্য, মান ও আকার অনেক ভালো। উৎপাদন কিছুটা কম হলেও চাহিদা ভালো। জমিতেই রকমভেদে প্রতি কেজি আলু ২৮ টাকা থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রত্যাশিত দামের চেয়ে বেশি দাম পাওয়ায় কৃষকরা এবার খুশি আলুতে। কাঁঠালবাড়ির রায়পুর এলাকার আলুচাষি আবুল কাশেম দুলাল জানান, এ বছর তিনি ছয় একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। প্রতি একরে গড়ে প্রায় ১০ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। একরপ্রতি ব্যয় হয়েছে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ প্রায় ১৮ টাকা পড়েছে। জমিতে প্রতি কেজি আলু বিক্রি করছেন ৩০ টাকা। কেজিপ্রতি লাভ গুনছেন ১২ টাকা। যদিও সব আলুচাষির উৎপাদন খরচ এক নয়। তবে এ বছর প্রায় সকল চাষি আলুতে লাভের মুখ দেখছেন বলে জানান এই কৃষক। একই ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামের আরেক আলুচাষি শরিফুল আলম। তিনি আলু চাষ করেছেন প্রায় পাঁচ একর জমিতে। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে তিনিও প্রতি কেজি আলুতে ১২ থেকে ১৩ টাকা লাভ করছেন। তবে মাঠে আলুতে লাভ দেখলেও হিমাগারে রক্ষিত আলু নিয়ে চাষি ও ব্যবসায়ীদের কপালে কিছুটা ভাঁজ দেখা গেছে। তারা বলছেন, মাঠে আলুর দাম ভালো পেলেও চটের ব্যাগ, পরিবহন ব্যয় ও হিমাগার ভাড়া মিলে প্রতি কেজি আলুতে আরও ১০ টাকা খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সে হিসেবে প্রতি কেজি আলুর দাম দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২৮ টাকা। শেষ পর্যন্ত বাজারদর ভালো না থাকলে তখন কৃষক ও ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হতে পারে।
রায়পুরের আলুচাষি ও ব্যবসায়ী কাজল বলেন, ‘কৃষক জমিতে লাভ করছেন। কিন্তু হিমাগারে রাখার পর সরকার যদি কয়েক মাস পর আলুর দাম বেঁধে দেয় এবং তা যদি সার্বিক ব্যয়ের চেয়ে কম হয় তাহলে কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এজন্য আমরা চাই সরকার ন্যায্যতার ভিত্তিতে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে মূল্য নির্ধারণ করবে। তাতে সকল পক্ষই উপকৃত হবে। তা না হলে কৃষক আলু চাষে আগ্রহ হারাবে, ব্যবসায়ীরাও মুখ ফেরাবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, খামারবাড়ি কুড়িগ্রামের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ‘চলতি মৌসুমে জেলায় সাত হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তা অর্জিত হয়ে সাত হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে।’
ফলনের হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম উৎপাদন হয়েছে বলে জানান এই কৃষিবিদ। তিনি বলেন, ‘হেক্টরপ্রতি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৫ টন ধরা হলেও আবহাওয়ার কারণে তা কিছুটা কম হয়েছে। এখন পর্যন্ত হেক্টরপ্রতি ২৩-২৪ টন উৎপাদন অর্জিত হয়েছে।’
কৃষি বিপণন অধিদফতর কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী ১৫ মার্চ নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ এবং যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করেছে। তাতে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ধরা হয়েছে ১৩ টাকা ৯০ পয়সা। উৎপাদক পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য ১৯ টাকা ৪৮ পয়সা এবং পাইকারি পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য ২৩ টাকা ৩০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। খুচরা পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ টাকা ৫৫ পয়সা।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আলুর প্রত্যাশিত দামে চাষিদের আনন্দ

আপডেট সময় : ১০:১৭:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ মার্চ ২০২৪

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামে আলুর ফলন তুলনামূলক কম হলেও প্রত্যাশিত দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। মাঠেই প্রত্যাশিত দাম পেয়ে খুশি আলুচাষিরা। আলু তুলেই লাভের মুখ দেখতে পাওয়ায় স্বস্তির ঢেকুর তুলছেন তারা। তবে হিমাগারে রাখার পর শেষ পর্যন্ত আলুর দাম কেমন মিলবে তা নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নে একাধিক আলু চাষি ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। চাষিরা বলছেন, এ বছর আলুর ফলন কিছুটা কম হলেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোগবালাই কম হয়েছে। আলুর স্বাস্থ্য, মান ও আকার অনেক ভালো। উৎপাদন কিছুটা কম হলেও চাহিদা ভালো। জমিতেই রকমভেদে প্রতি কেজি আলু ২৮ টাকা থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রত্যাশিত দামের চেয়ে বেশি দাম পাওয়ায় কৃষকরা এবার খুশি আলুতে। কাঁঠালবাড়ির রায়পুর এলাকার আলুচাষি আবুল কাশেম দুলাল জানান, এ বছর তিনি ছয় একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। প্রতি একরে গড়ে প্রায় ১০ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। একরপ্রতি ব্যয় হয়েছে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ প্রায় ১৮ টাকা পড়েছে। জমিতে প্রতি কেজি আলু বিক্রি করছেন ৩০ টাকা। কেজিপ্রতি লাভ গুনছেন ১২ টাকা। যদিও সব আলুচাষির উৎপাদন খরচ এক নয়। তবে এ বছর প্রায় সকল চাষি আলুতে লাভের মুখ দেখছেন বলে জানান এই কৃষক। একই ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামের আরেক আলুচাষি শরিফুল আলম। তিনি আলু চাষ করেছেন প্রায় পাঁচ একর জমিতে। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে তিনিও প্রতি কেজি আলুতে ১২ থেকে ১৩ টাকা লাভ করছেন। তবে মাঠে আলুতে লাভ দেখলেও হিমাগারে রক্ষিত আলু নিয়ে চাষি ও ব্যবসায়ীদের কপালে কিছুটা ভাঁজ দেখা গেছে। তারা বলছেন, মাঠে আলুর দাম ভালো পেলেও চটের ব্যাগ, পরিবহন ব্যয় ও হিমাগার ভাড়া মিলে প্রতি কেজি আলুতে আরও ১০ টাকা খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সে হিসেবে প্রতি কেজি আলুর দাম দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২৮ টাকা। শেষ পর্যন্ত বাজারদর ভালো না থাকলে তখন কৃষক ও ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হতে পারে।
রায়পুরের আলুচাষি ও ব্যবসায়ী কাজল বলেন, ‘কৃষক জমিতে লাভ করছেন। কিন্তু হিমাগারে রাখার পর সরকার যদি কয়েক মাস পর আলুর দাম বেঁধে দেয় এবং তা যদি সার্বিক ব্যয়ের চেয়ে কম হয় তাহলে কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এজন্য আমরা চাই সরকার ন্যায্যতার ভিত্তিতে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে মূল্য নির্ধারণ করবে। তাতে সকল পক্ষই উপকৃত হবে। তা না হলে কৃষক আলু চাষে আগ্রহ হারাবে, ব্যবসায়ীরাও মুখ ফেরাবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, খামারবাড়ি কুড়িগ্রামের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ‘চলতি মৌসুমে জেলায় সাত হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তা অর্জিত হয়ে সাত হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে।’
ফলনের হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম উৎপাদন হয়েছে বলে জানান এই কৃষিবিদ। তিনি বলেন, ‘হেক্টরপ্রতি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৫ টন ধরা হলেও আবহাওয়ার কারণে তা কিছুটা কম হয়েছে। এখন পর্যন্ত হেক্টরপ্রতি ২৩-২৪ টন উৎপাদন অর্জিত হয়েছে।’
কৃষি বিপণন অধিদফতর কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী ১৫ মার্চ নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ এবং যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করেছে। তাতে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ধরা হয়েছে ১৩ টাকা ৯০ পয়সা। উৎপাদক পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য ১৯ টাকা ৪৮ পয়সা এবং পাইকারি পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য ২৩ টাকা ৩০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। খুচরা পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ টাকা ৫৫ পয়সা।