ঢাকা ০৪:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

পাথর খনি ও সম্ভাবনার বাংলাদেশ

  • আপডেট সময় : ১০:৩০:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪
  • ২৫৬ বার পড়া হয়েছে

কাজী বনফুল : পৃথিবীতে কোনো জাতির উন্নতির নিজস্বতার দিকে যদি আমরা দৃষ্টিপাত করি তাহলে আমরা যেটা দেখতে পাবো সেটা হচ্ছে সে জাতির তার নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি সচেতনতা ও যথাযথ ব্যবহার। কোনো জাতির জন্য যে কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ প্রকৃতি কর্তৃক অমূল্য উপহার স্বরূপ। যার যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সে জাতি পরিনত হতে পারে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে।
ঠিক তেমনি আমাদের অনেকগুলো প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রাকৃতিক সম্পদ হচ্ছে পাথর খনি। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদটি বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়ায় অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ গ্রানাইট পাথরের খনি। যা প্রাকৃতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ।
পাথর খনিটি মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল) হিসাবে ০৪ আগস্ট ১৯৯৮ তারিখ নিবন্ধিত হয়। জুলাই ২০০১ সালের মধ্যে প্রকল্প সমাপ্তির সময় নির্ধারিত থাকলেও নাম ২৫ মে ২০০৭ সালে খনিটি এমজিএমসিএল-এর নিকট হস্তান্তর করে।
পরবর্তীতে দেশের ক্রমবর্ধনশীল ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে গ্রানাইট পাথর ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে খনির উন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে “গধহধমবসবহঃ ড়ভ ঙঢ়বৎধঃরড়হ ধহফ উবাবষড়ঢ়সবহঃ, চৎড়ফঁপঃরড়হ, গধরহঃবহধহপব ধহফ চৎড়ারংরড়হরহম ঝবৎারপবং ড়ভ গধফফযধঢ়ধৎধ ঐধৎফ জড়পশ গরহব” শীর্ষক চুক্তি স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড এবং জার্মানিয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) এর মধ্যে ২ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে ৬ বছর মেয়াদী বৈদেশিক ও স্থানীয় মুদ্রায় ১৭১.৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (১,৪০০ কোটি টাকা প্রায়) মূল্যমানের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের সাথে জার্মানীয়া- ট্রেষ্ট কনসোর্টিয়ামের মধ্যে কার চুক্তিটি এখনো চলমান রয়েছে। এবং তারা এই খনির পাথর উত্তলন বৃদ্ধি জন্য ব্যাপক ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে পরিমাণের দিক থেকে যত পণ্য আমদানি হয়, তার মধ্যে পাথর অন্যতম। অবকাঠামোর মান বাড়াতে ইটের খোয়ার পরিবর্তে পাথরের ব্যবহার বাড়তে থাকায় দেশে গত পাঁচ বছরে ধারাবাহিকভাবে এই পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। বড় বড় প্রকল্পে ব্যবহার হচ্ছে পাথর যার ফলে পাথরের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমাদের দেশে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্টের জন্য ইটের ভাটা গুলো অনেকাংশেই দ্বায়ী। বাংলাদেশের সর্বত্র বিষাক্ত পোকার মত গজিয়ে উঠছে ইটের ভাটা নামক পরিবেশ ধ্বংসকারী যন্ত্র। হাউস বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সটিউটের কর্মকর্তারা বলছেন, ইটভাটা গুলোতে প্রতি বছর ২০ লাখ টন জ্বালানি কাঠ ও ২০ লাখ টন কয়লা পোড়ানো হয়। তাদের হিসেবে বছরে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হয় প্রায় নব্বই লাখ টন। ইটভাটায় কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর জমি ব্যবহার করা হয়। ফলে এসব ইটভাটার কারণে কৃষিজমি উর্বরতা হারাচ্ছে।
আবার ইটভাটার ছাই ভস্ম ও ধোঁয়া আশেপাশের ফসল উৎপাদনের ক্ষতি করছে। তাই আমরা যদি ইটের পরিবর্তে পাথরের ব্যবহারের দিকে মনোযোগ দেই তাহলে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা হবে অপর দিকে নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদেরও যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত হবে। এই পাথর প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে যে স্টোন ডাস্ট বের হয় সেই স্টোন ডাস্ট ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই স্টোন ডাস্ট রাস্তার পিচ ঢালাই এর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে পাথর আমদানি হয়েছে ২ কোটি ৪৮ লাখ টন। প্রতি টন ৩ হাজার ৬০০ টাকা গড় দরে এই পাথরের স্থানীয় বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা।
গুণগত মানের দিক থেকে মধ্যপাড়া খনির পাথর বিদেশ থেকে আমদানি করা পাথরের তুলনায় উন্নত মানের। দামের দিক থেকেও মধ্যপাড়া গ্রানাইট পাথর (টনপ্রতি ৩৫ ডলার) ভারত থেকে আমদানি করা পাথরের ((টনপ্রতি ৪০ ডলার) তুলনায় সাশ্রয়ী। মধ্যপাড়া পাথরের টুকরোর সাইজ চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করা সম্ভব।
দেশে বছরে ১ থেকে দেড় কোটি মেট্রিক টন পাথরের চাহিদা রয়েছে। এর অধিকাংশই আমদানি করে আনতে হচ্ছে। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৯ লাখ ৬৩ হাজার টন পাথর তোলা হয়েছে। আর বিক্রি হয়েছে ১০ লাখ ৯৬ হাজার টন। এতে রাজস্ব আয় হয়েছে ২৫৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরে কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ১৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর আগের তিন অর্থবছরেও গড়ে বার্ষিক নয় লাখ টন করে পাথর উত্তোলন করা হয়েছিল।
এই গ্রানাইট পাথর খুবই উন্নত মানের যা প্রায় ২৫ হাজার পিএসআই চাপ ধারণ ক্ষমতার সক্ষমতা রয়েছে এ পাথরের। এর উৎপাদন দ্বিগুণ করা গেলে অনেকটা বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা যাবে। যা অর্থনৈতিক ভাবে আমাদের ডলার সাশ্রয় করবে এবং আমদানি ও হ্রাস পাবে। এখন বর্তমানে এই পাথর খনি থেকে বছরে প্রায় ১৬ লক্ষ মেট্রিকটন পাথর উত্তলন করা হয়। যা বাংলাদেশের বছরের সামগ্রিক পাথরের চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত নগন্য। বাংলাদেশে বছরে পাথরের চাহিদা হচ্ছে ১ থেকে দেড় কোটি মেট্রিক টন। ফলে দেখা যাচ্ছে এই ১৬ লক্ষ মেট্রিক টন বাংলাদেশের চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত নগন্য। যার ফলে আমাদের অন্য দেশ থেকে পাথর আমদানি করতে হয়। সরকার ইতিমধ্যে সেই বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পাথর উত্তলন বৃদ্ধির দিকে মনযোগ প্রদান করেছে। আশাকরি খুব দ্রুত আমরা নিজেদের পাথর দিয়ে দেশীয় চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করতে পারবো।
কোনো প্রকার অব্যবস্থাপনার কারণে যেন এমন সম্ভাবনাময় একটি প্রাকৃতিক সম্পদ তার গ্রহণযোগ্যতা না হারায় বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়ে অবশ্যই অনেক বেশি সচেতন যার প্রমাণ আমরা ইতিমধ্যে প্রত্যক্ষ করেছি। আরো দুটি কূপ থেকে পাথর উত্তলনের সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে। আর এর মাধ্যমে আমরা নিজস্ব পাথর দিয়ে আমাদের সার্বিক প্রয়োজনকে অনেকাংশে পূরণ করতে সক্ষম হবো।
আমরা যে পরিমাণ ডলার খরচ করে পাথর আমদানি করি সেটা কমে আসবে এবং আমাদের রিজার্ভ ডলার সঞ্চিত থাকবে যা আমরা অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারবো। যেটা একটি দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ সরকারের এই খনির বিষয়ে সামগ্রিক সচেতনতা একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ যা পরবর্তী ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।

লেখক: কলামিস্ট ও গবেষক।

 

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পাথর খনি ও সম্ভাবনার বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ১০:৩০:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪

কাজী বনফুল : পৃথিবীতে কোনো জাতির উন্নতির নিজস্বতার দিকে যদি আমরা দৃষ্টিপাত করি তাহলে আমরা যেটা দেখতে পাবো সেটা হচ্ছে সে জাতির তার নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি সচেতনতা ও যথাযথ ব্যবহার। কোনো জাতির জন্য যে কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ প্রকৃতি কর্তৃক অমূল্য উপহার স্বরূপ। যার যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সে জাতি পরিনত হতে পারে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে।
ঠিক তেমনি আমাদের অনেকগুলো প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রাকৃতিক সম্পদ হচ্ছে পাথর খনি। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদটি বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়ায় অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ গ্রানাইট পাথরের খনি। যা প্রাকৃতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ।
পাথর খনিটি মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল) হিসাবে ০৪ আগস্ট ১৯৯৮ তারিখ নিবন্ধিত হয়। জুলাই ২০০১ সালের মধ্যে প্রকল্প সমাপ্তির সময় নির্ধারিত থাকলেও নাম ২৫ মে ২০০৭ সালে খনিটি এমজিএমসিএল-এর নিকট হস্তান্তর করে।
পরবর্তীতে দেশের ক্রমবর্ধনশীল ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে গ্রানাইট পাথর ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে খনির উন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে “গধহধমবসবহঃ ড়ভ ঙঢ়বৎধঃরড়হ ধহফ উবাবষড়ঢ়সবহঃ, চৎড়ফঁপঃরড়হ, গধরহঃবহধহপব ধহফ চৎড়ারংরড়হরহম ঝবৎারপবং ড়ভ গধফফযধঢ়ধৎধ ঐধৎফ জড়পশ গরহব” শীর্ষক চুক্তি স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড এবং জার্মানিয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) এর মধ্যে ২ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে ৬ বছর মেয়াদী বৈদেশিক ও স্থানীয় মুদ্রায় ১৭১.৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (১,৪০০ কোটি টাকা প্রায়) মূল্যমানের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের সাথে জার্মানীয়া- ট্রেষ্ট কনসোর্টিয়ামের মধ্যে কার চুক্তিটি এখনো চলমান রয়েছে। এবং তারা এই খনির পাথর উত্তলন বৃদ্ধি জন্য ব্যাপক ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে পরিমাণের দিক থেকে যত পণ্য আমদানি হয়, তার মধ্যে পাথর অন্যতম। অবকাঠামোর মান বাড়াতে ইটের খোয়ার পরিবর্তে পাথরের ব্যবহার বাড়তে থাকায় দেশে গত পাঁচ বছরে ধারাবাহিকভাবে এই পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। বড় বড় প্রকল্পে ব্যবহার হচ্ছে পাথর যার ফলে পাথরের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমাদের দেশে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্টের জন্য ইটের ভাটা গুলো অনেকাংশেই দ্বায়ী। বাংলাদেশের সর্বত্র বিষাক্ত পোকার মত গজিয়ে উঠছে ইটের ভাটা নামক পরিবেশ ধ্বংসকারী যন্ত্র। হাউস বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সটিউটের কর্মকর্তারা বলছেন, ইটভাটা গুলোতে প্রতি বছর ২০ লাখ টন জ্বালানি কাঠ ও ২০ লাখ টন কয়লা পোড়ানো হয়। তাদের হিসেবে বছরে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হয় প্রায় নব্বই লাখ টন। ইটভাটায় কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর জমি ব্যবহার করা হয়। ফলে এসব ইটভাটার কারণে কৃষিজমি উর্বরতা হারাচ্ছে।
আবার ইটভাটার ছাই ভস্ম ও ধোঁয়া আশেপাশের ফসল উৎপাদনের ক্ষতি করছে। তাই আমরা যদি ইটের পরিবর্তে পাথরের ব্যবহারের দিকে মনোযোগ দেই তাহলে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা হবে অপর দিকে নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদেরও যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত হবে। এই পাথর প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে যে স্টোন ডাস্ট বের হয় সেই স্টোন ডাস্ট ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই স্টোন ডাস্ট রাস্তার পিচ ঢালাই এর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে পাথর আমদানি হয়েছে ২ কোটি ৪৮ লাখ টন। প্রতি টন ৩ হাজার ৬০০ টাকা গড় দরে এই পাথরের স্থানীয় বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা।
গুণগত মানের দিক থেকে মধ্যপাড়া খনির পাথর বিদেশ থেকে আমদানি করা পাথরের তুলনায় উন্নত মানের। দামের দিক থেকেও মধ্যপাড়া গ্রানাইট পাথর (টনপ্রতি ৩৫ ডলার) ভারত থেকে আমদানি করা পাথরের ((টনপ্রতি ৪০ ডলার) তুলনায় সাশ্রয়ী। মধ্যপাড়া পাথরের টুকরোর সাইজ চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করা সম্ভব।
দেশে বছরে ১ থেকে দেড় কোটি মেট্রিক টন পাথরের চাহিদা রয়েছে। এর অধিকাংশই আমদানি করে আনতে হচ্ছে। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৯ লাখ ৬৩ হাজার টন পাথর তোলা হয়েছে। আর বিক্রি হয়েছে ১০ লাখ ৯৬ হাজার টন। এতে রাজস্ব আয় হয়েছে ২৫৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরে কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ১৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর আগের তিন অর্থবছরেও গড়ে বার্ষিক নয় লাখ টন করে পাথর উত্তোলন করা হয়েছিল।
এই গ্রানাইট পাথর খুবই উন্নত মানের যা প্রায় ২৫ হাজার পিএসআই চাপ ধারণ ক্ষমতার সক্ষমতা রয়েছে এ পাথরের। এর উৎপাদন দ্বিগুণ করা গেলে অনেকটা বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা যাবে। যা অর্থনৈতিক ভাবে আমাদের ডলার সাশ্রয় করবে এবং আমদানি ও হ্রাস পাবে। এখন বর্তমানে এই পাথর খনি থেকে বছরে প্রায় ১৬ লক্ষ মেট্রিকটন পাথর উত্তলন করা হয়। যা বাংলাদেশের বছরের সামগ্রিক পাথরের চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত নগন্য। বাংলাদেশে বছরে পাথরের চাহিদা হচ্ছে ১ থেকে দেড় কোটি মেট্রিক টন। ফলে দেখা যাচ্ছে এই ১৬ লক্ষ মেট্রিক টন বাংলাদেশের চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত নগন্য। যার ফলে আমাদের অন্য দেশ থেকে পাথর আমদানি করতে হয়। সরকার ইতিমধ্যে সেই বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পাথর উত্তলন বৃদ্ধির দিকে মনযোগ প্রদান করেছে। আশাকরি খুব দ্রুত আমরা নিজেদের পাথর দিয়ে দেশীয় চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করতে পারবো।
কোনো প্রকার অব্যবস্থাপনার কারণে যেন এমন সম্ভাবনাময় একটি প্রাকৃতিক সম্পদ তার গ্রহণযোগ্যতা না হারায় বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়ে অবশ্যই অনেক বেশি সচেতন যার প্রমাণ আমরা ইতিমধ্যে প্রত্যক্ষ করেছি। আরো দুটি কূপ থেকে পাথর উত্তলনের সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে। আর এর মাধ্যমে আমরা নিজস্ব পাথর দিয়ে আমাদের সার্বিক প্রয়োজনকে অনেকাংশে পূরণ করতে সক্ষম হবো।
আমরা যে পরিমাণ ডলার খরচ করে পাথর আমদানি করি সেটা কমে আসবে এবং আমাদের রিজার্ভ ডলার সঞ্চিত থাকবে যা আমরা অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারবো। যেটা একটি দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ সরকারের এই খনির বিষয়ে সামগ্রিক সচেতনতা একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ যা পরবর্তী ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।

লেখক: কলামিস্ট ও গবেষক।