ঢাকা ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আশ্বাস: উপসচিব পরিচয়ে চার কোটি টাকা লোপাট!

  • আপডেট সময় : ০৩:১৮:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ১৬৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: শিক্ষা অধিদফতরের প্রোগ্রাম অফিসার ও উপসচিব পরিচয়ে অনিবন্ধিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আওতায় আনার আশ্বাসে চার কোটির বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। এই চক্রের সদস্য সন্দেহে দুই প্রতারককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতাররা হলেন- জুবায়ের ওরুফে মো. আসাদুজ্জামান মানিক ওরুফে লুৎফর রহমান (৪৭) এবং মো. আব্দুল গফফার ওরফে সুমন চৌধুরী ওরুফে সাইফুল (৭৭)। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) পৃথক অভিযানে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও রাজধানীর উত্তরা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গতকাল রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিবিআই (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির বিশেষ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, আমরা দুই প্রতারককে গ্রেফতার করেছি। তারা মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অফিসার পরিচয় দিয়ে ছদ্মনামে প্রতারণা করে বেড়াতো। এদের একজনের নাম আসাদুজ্জামান মানিক। তিনি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার ফলগাছা মাধ্যমিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। আরেকজন আব্দুল গফফার। তিনি রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে প্রভাষক পদ থেকে অবসরে গেছেন। ২০১৯ সালে আসাদুজ্জামান মানিকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপরই তারা প্রতারণার ছক আঁকেন। জাহাঙ্গীর আলম আরও জানান, আব্দুল গফফার স্যুট-টাই পরে ভুয়া উপসচিব সেজে ঘুরে বেড়াতেন। আর আসাদুজ্জামান মানিক প্রোগ্রাম অফিসার সাজেন। এরা বিভিন্ন মাদ্রাসা ও শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখতেন কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি পেন্ডিং আছে। এছাড়া লাইব্রেরিয়ান বা বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া দরকার এসব সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষদের মোবাইল নম্বর জোগাড় করে ফোন দিতেন। তারা অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগের চেষ্টা করার পর ভোলার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে সফল হন। ভুক্তভোগী ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য তাকে নিয়ে সচিবালয়ে প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর তাদের ১২ লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানান। এই টাকা পেলে কাজ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। সঙ্গে সঙ্গে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা দেয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীরা বিভিন্নভাবে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে বাকি টাকা দেয়। এভাবে আরও বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা নেন গ্রেফতার ব্যক্তিরা। টাকা দেওয়ার পরও যখন কাজ হচ্ছিল না তখন প্রতারক চক্রের খোঁজখবর নেন ভুক্তভোগীরা। তারা অধিদফতরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন এই নামে কেউ নেই। শেষ পর্যন্ত ভুক্তভোগীরা পিবিআইয়ের কাছে যান। পরে মামলার সূত্র ধরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বিশেষ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, এই দুই জন ২০১৯ সাল থেকে প্রতারণার কাজটি করে যাচ্ছিলেন। আমরা তাদের এখন পর্যন্ত বিকাশ বা নগদের লেনদেনের যে তথ্য সংগ্রহ করেছি তাতে মোট ৪ কোটি ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৭২ টাকা লেনদেন করেছে। প্রতারিত অনেক ভিকটিম আমাদের কাছ আসছে। আমরা তাদের কাছ থেকে তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করবো। বর্তমানে প্রতারকদের আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে এসেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের গ্রেফতাররা জানান তারা পূর্ব হাজার বটতলা সিনিয়র মাদ্রাসা বরগুনা থেকে ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা, নাটোরের বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে ৮৫ হাজার টাকা, ভোলার উত্তর চরমানিকা লতিফীয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, জয়পুরহাটের মোহাব্বতপুর আমিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ আরও অন্যান্য মাদ্রাসা শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি বাতিল করার ভয়-ভীতি দেখিয়ে সর্বমোট ৪ কোটি ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৭২ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আশ্বাস: উপসচিব পরিচয়ে চার কোটি টাকা লোপাট!

আপডেট সময় : ০৩:১৮:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক: শিক্ষা অধিদফতরের প্রোগ্রাম অফিসার ও উপসচিব পরিচয়ে অনিবন্ধিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আওতায় আনার আশ্বাসে চার কোটির বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। এই চক্রের সদস্য সন্দেহে দুই প্রতারককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতাররা হলেন- জুবায়ের ওরুফে মো. আসাদুজ্জামান মানিক ওরুফে লুৎফর রহমান (৪৭) এবং মো. আব্দুল গফফার ওরফে সুমন চৌধুরী ওরুফে সাইফুল (৭৭)। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) পৃথক অভিযানে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও রাজধানীর উত্তরা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গতকাল রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিবিআই (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির বিশেষ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, আমরা দুই প্রতারককে গ্রেফতার করেছি। তারা মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অফিসার পরিচয় দিয়ে ছদ্মনামে প্রতারণা করে বেড়াতো। এদের একজনের নাম আসাদুজ্জামান মানিক। তিনি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার ফলগাছা মাধ্যমিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। আরেকজন আব্দুল গফফার। তিনি রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে প্রভাষক পদ থেকে অবসরে গেছেন। ২০১৯ সালে আসাদুজ্জামান মানিকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপরই তারা প্রতারণার ছক আঁকেন। জাহাঙ্গীর আলম আরও জানান, আব্দুল গফফার স্যুট-টাই পরে ভুয়া উপসচিব সেজে ঘুরে বেড়াতেন। আর আসাদুজ্জামান মানিক প্রোগ্রাম অফিসার সাজেন। এরা বিভিন্ন মাদ্রাসা ও শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখতেন কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি পেন্ডিং আছে। এছাড়া লাইব্রেরিয়ান বা বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া দরকার এসব সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষদের মোবাইল নম্বর জোগাড় করে ফোন দিতেন। তারা অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগের চেষ্টা করার পর ভোলার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে সফল হন। ভুক্তভোগী ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য তাকে নিয়ে সচিবালয়ে প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর তাদের ১২ লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানান। এই টাকা পেলে কাজ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। সঙ্গে সঙ্গে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা দেয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীরা বিভিন্নভাবে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে বাকি টাকা দেয়। এভাবে আরও বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা নেন গ্রেফতার ব্যক্তিরা। টাকা দেওয়ার পরও যখন কাজ হচ্ছিল না তখন প্রতারক চক্রের খোঁজখবর নেন ভুক্তভোগীরা। তারা অধিদফতরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন এই নামে কেউ নেই। শেষ পর্যন্ত ভুক্তভোগীরা পিবিআইয়ের কাছে যান। পরে মামলার সূত্র ধরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বিশেষ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, এই দুই জন ২০১৯ সাল থেকে প্রতারণার কাজটি করে যাচ্ছিলেন। আমরা তাদের এখন পর্যন্ত বিকাশ বা নগদের লেনদেনের যে তথ্য সংগ্রহ করেছি তাতে মোট ৪ কোটি ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৭২ টাকা লেনদেন করেছে। প্রতারিত অনেক ভিকটিম আমাদের কাছ আসছে। আমরা তাদের কাছ থেকে তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করবো। বর্তমানে প্রতারকদের আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে এসেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের গ্রেফতাররা জানান তারা পূর্ব হাজার বটতলা সিনিয়র মাদ্রাসা বরগুনা থেকে ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা, নাটোরের বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে ৮৫ হাজার টাকা, ভোলার উত্তর চরমানিকা লতিফীয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, জয়পুরহাটের মোহাব্বতপুর আমিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ আরও অন্যান্য মাদ্রাসা শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি বাতিল করার ভয়-ভীতি দেখিয়ে সর্বমোট ৪ কোটি ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৭২ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।