নিজস্ব প্রতিবেদক : গত বছরের শেষ দুই মাসের ধারাবাহিকতা নতুন বছরে থাকল না। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে পৌঁছানোর খবর দিল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। অর্থাৎ গত বছরের জানুয়ারি মাসে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, তা এ বছরের জানুয়াতে পেতে ১০৯ টাকা ৮৬ পয়সা ব্যয় করতে হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে বিবিএস অনলাইনে মূল্যস্ফীতির এই হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে। গত বছরের শেষ দুই মাস নভেম্বর ও ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার কমে যথাক্রমে ৯ দশমিক ৪৯ এবং ৯ দশমিক ৪১ শতাংশে নেমেছিল। তার আগের মাস অক্টোবরে এই হার উঠেছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে। আর গত বছরের মে মাসে এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে উঠেছিল মূল্যস্ফীতির পারদ। গত বছরের জানুয়ারি মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সে হিসাবে গত বছরের জানুয়ারি মাসের তুলনায় সাধারণ মূল্যস্ফীতি এ বছরের জানুয়ারি মাসে ১ দশমিক ২৯ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়েছে। বিবিএস এর তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতির কোপ সবচেয়ে বেশি পড়েছে দেশের শহরাঞ্চলে। শহরের সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। শহরাঞ্চলের খাদ্য উপখাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত উপখাতে ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর গ্রামাঞ্চলে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য উপখাতের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ; খাদ্য বহির্ভূত উপখাতে ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর একজন কর্মকর্তা বলেন, এ বছরের জানুয়ারি মাসে শীতকালীন সবজি ও চালের দাম গত বছরের একই মাসের তুলনায় বেশি ছিল। বিশেষ করে পেঁয়াজ, রসুনসহ সকল ধরনের সবজি গত বছরের একই মাসের তুলনায় বেশি থাকায় জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৫.৭৮ শতাংশ, হতাশা শিল্প ও সেবায়: ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বছর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশে। শিল্প ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি কমায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জিডিপির হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। বিবিএস প্রকাশিত জিডিপির হিসাবে দেখা গেছে, দেশের কৃষিতে উৎপাদন বাড়লেও শিল্প ও সেবা খাতে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। কৃষিতে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও হতাশার চিত্র শিল্প ও সেবা খাতে। শিল্প খাতে গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সবশেষ অর্থবছরে সেবা খাতেও প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশে, যা ২০২১-২২ অর্থবছরেও ছিল ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সময়ে দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশে। যা আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে একই প্রান্তিকে ছিল ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। বিবিএস জিডিপির প্রান্তিক হিসাব প্রকাশ করে বলছে, জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে বিবিএস নিয়মিতভাবে স্থূল দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রাক্কলন করে থাকে। সরকারের ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বরের সিদ্ধান্ত এবং পরবর্তীকালে আইএমএফের পরামর্শ মোতাবেক বিবিএসের মাধ্যমে ত্রৈমাসিক স্থূল দেশজ উৎপাদন প্রাক্কলনের কার্যক্রম নেওয়া হয়।
মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬০ টাকা: এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বছর শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশে। এছাড়া ডলারের হিসাবে কমলেও টাকার অঙ্কে মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬০ টাকা। সদ্য প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জিডিপির চূড়ান্ত হিসাবে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবিএস জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ লাখ ৪১ হাজার ৪৭ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ২ লাখ লাখ ১৯ হাজার ৭৩৮ টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ১ লাখ ৯৭ হাজার ১৯৯ টাকা। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে টাকায় প্রকাশ করা হয়েছে মাথাপিছু আয়।