গাজীপুর প্রতিনিধি : গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হলো বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা। গতকাল বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাদ জোহর বাংলাদেশের মাওলানা রবিউল হকের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। বিশ্ব ইজতেমার মাওলানা জোবায়ের অনুসারী মুরুব্বি মুফতি জহির ইবনে মুসল্লি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব ইজতেমা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লোকজন বেশি হওয়ায় এবং ময়দান পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় একদিন আগেই বৃহস্পতিবার বাদ জোহর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। এর আগে বাদ ফজর আমলি বয়ান করেন হিন্দুস্তানের মাওলানা আহমদ লাট। বাদ আছর বাংলাদেশের মাওলানা ফারুক, বাদ মাগরিব বয়ান করবেন হিন্দুস্তানের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব।
চার দিন পর আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব পরিচালনা করবেন মাওলানা সাদ অনুসারীরা। একইভাবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি (রোববার) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের (২০২৪ সালের) বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা। ইতোমধ্যে বিশ্ব ইজতেমার ময়দান দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের আগমনে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। পুরো ময়দান এবং আশপাশ এলাকাজুড়ে অবস্থান নিয়েছেন মুসল্লিরা। বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেওয়া লাখ লাখ মুসল্লিদের নিরাপত্তায় রয়েছেন র্যাব-পুলিশ, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কয়েক হাজার সদস্য।
ইজতেমা ময়দানে ৩৬ দেশের সাড়ে ৭শ মেহমান
ইতোমধ্যে বিশ্বের ৩৬ দেশের ৭৫৯ জন বিদেশি মেহমান ইজতেমা ময়দানে অবস্থান করছেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশের কয়েক হাজার মুসল্লিও ইজতেমাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন।
ভারত, পাকিস্তান, কুয়েত, সৌদি আরব, আফগানিস্তান, জাপান, ওমান, কানাডা, মোজাম্বিক, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কিরগিজস্তান, সিঙ্গাপুর, ইতালি, জর্দান ও যুক্তরাজ্য থেকে তারা এসেছেন। ইজতেমার বিদেশি খিত্তায় দায়িত্বরত একজন সরকারি কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিদেশি মেহমানদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ইজতেমা প্রশাসন। তাদের খিত্তাকে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। বিদেশি খিত্তার পাশে পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপনিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে ইজতেমায় আসা বিদেশি মেহমানদের থাকা-খাওয়া, যাতায়াত ও ভ্রমণের ওপর।
নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে রাখা হয়েছে ইজতেমা এলাকা: জিএমপি কমিশনার
এদিকে বিশ্ব ইজতেমা এলাকাকে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মাহাবুব আলম। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে নিরাপত্তায় র্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ৬ হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহাবুব আলম। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা জানান তিনি।
মাহাবুব আলম বলেন, আজ থেকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ইজতেমা এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে মাঠে থাকবে। এজন্য পুরো ইজতেমা মাঠে ছয় হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করবে। পাশাপাশি ইজতেমা এলাকায় ট্র্যাফিক জোরদার করা হয়েছে। তিনি জানান, উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরা ব্যবহার করে বিভিন্ন যানবাহনের গতিবিধি মনিটরিং করা হচ্ছে। একই সঙ্গে র্যাবের একাধিক ইউনিট ইজতেমা ময়দানে সতর্ক থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ পর্ব। চারদিনের বিরতির পর ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব।