ঢাকা ০৩:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

নিউ ইয়র্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জনস্বাস্থ্য ঝুঁ^কি

  • আপডেট সময় : ১২:২১:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪
  • ৮৬ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহর।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বড় শহর হিসেবে নিউ ইয়র্ক এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে উঠে এসেছে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে। গেল বুধবার দেওয়া এক ভাষণে বিষয়টি নিশ্চিত করে শহরটির মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, “টিকটক, ইউটিউব, ফেইসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলো বিভিন্ন আসক্তিমূলক ও বিপজ্জনক ফিচার বানিয়ে নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের ইন্ধন দিচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, সামাজিক মাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য সুপারিশ দাখিল করেছেন নিউ ইয়র্কের স্বাস্থ্য কমিশনার অশ্বিন ভাসান। “বন্দুক ও তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল যে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন, সামাজিক মাধ্যমকেও আমরা একই ধরনের জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে দেখি। আর এটা নিশ্চিতভাবেই বন্ধ করতে হবে,” বলেন অ্যাডামস। একই দিনে জারি করা আরেক সুপারিশে নিউ ইয়র্কের কিশোর ব্যবহারকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য অবনতির বিষয়টি তুলে ধরেছেন ভাসান। পাশাপাশি, সামাজিক মাধ্যমের স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবহার যেমন, প্রযুক্তিবিহীন সময় কাটানো, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের সময় ব্যবহারকারীর অনুভূতি মনিটরিং করা ও প্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক অভিজ্ঞতা শেয়ার করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মার্কিন কিশোর কিশোরীদের ৯৫ শতাংশই কোনো না কোনো সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে থাকেন। তবে, তারা যে ধরনের গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন, তার কারণ হিসেবে অনেকে সামাজিক মাধ্যমকেই দায়ী করছেন। এছাড়া, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের আসক্তি নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। ওয়াশিংটন পোস্টের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, এমন সমালোচনার জবাবে টিকটক ও ইউটিউবসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি শিশুদের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ওপর অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে ও অনলাইনে কাটানো সময় বেঁধে দিতে নতুন কিছু ফিচার নিয়ে এসেছে। এ প্রসঙ্গে ওয়াশিংটন পোস্ট টিকটক, গুগল ও মেটার বক্তব্য জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক সাড়া মেলেনি। গত বছরের মে মাসে একটি সুপারিশ জারি করেন যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল বিবেক এইচ মুর্তি। এতে উল্লেখ ছিল, সামাজিক মাধ্যম যে ‘শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ’, তার যথেষ্ট প্রমাণ নেই। সে সময় ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক মতামত নিবন্ধে তিনি লেখেন, “কম বয়সী ব্যবহারকারীর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চলমান সংকটের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে, সামাজিক মাধ্যম লাখ লাখ শিশু ও পরিবারকে যে ভোগান্তি দিচ্ছে, সেটা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।”
বুধবার নিউ ইয়র্ক শহরের স্বাস্থ্যবিষয়ক কমিশনার কর্তৃক প্রকাশিত উপদেশ বার্তায় বলা হয়, ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে শহরটির হাই স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে হতাশা বেড়ে যাওয়ার হার ৪২ শতাংশের বেশি। আর তাদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেড়েছে ৩৪ শতাংশের বেশি।
এদিকে, সামাজিক মাধ্যমকে একেবারে নির্মূল না করে বরং এর সম্ভাব্য ঝুঁকি তুলে ধরে নিউ ইয়র্ক শহরের উপদেশ বার্তা প্রকাশের বিষয়টিকে প্রশংসা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্ন’-এর অধ্যাপক ওফির টুরেল, যিনি এ ধরনের প্রযুক্তির আচরণগত প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন। এছাড়া, ‘বডি ইমেইজ বা শারীরিক ছবি, সামাজিক তুলনা, বিষন্নতা ও আসক্তির মতো’ বিষয়গুলোকে সামাজিক মাধ্যমের সম্ভাব্য ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করেন টুরেল। তবে, এর বিভিন্ন ইতিবাচক দিক থাকার বিষয়টিও স্বীকার করেছেন তিনি। পাশাপাশি, তিনি একে তুলনা করেছেন ‘ফুড রেগুলেশন মডেল’ নামের এক পদ্ধতির সঙ্গে, যেখানে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ না করেই বিভিন্ন খাবারের পুষ্টিগুণ মূল্যায়িত করা হয়।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নিউ ইয়র্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জনস্বাস্থ্য ঝুঁ^কি

আপডেট সময় : ১২:২১:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪

প্রত্যাশা ডেস্ক : তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহর।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বড় শহর হিসেবে নিউ ইয়র্ক এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে উঠে এসেছে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে। গেল বুধবার দেওয়া এক ভাষণে বিষয়টি নিশ্চিত করে শহরটির মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, “টিকটক, ইউটিউব, ফেইসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলো বিভিন্ন আসক্তিমূলক ও বিপজ্জনক ফিচার বানিয়ে নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের ইন্ধন দিচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, সামাজিক মাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য সুপারিশ দাখিল করেছেন নিউ ইয়র্কের স্বাস্থ্য কমিশনার অশ্বিন ভাসান। “বন্দুক ও তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল যে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন, সামাজিক মাধ্যমকেও আমরা একই ধরনের জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে দেখি। আর এটা নিশ্চিতভাবেই বন্ধ করতে হবে,” বলেন অ্যাডামস। একই দিনে জারি করা আরেক সুপারিশে নিউ ইয়র্কের কিশোর ব্যবহারকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য অবনতির বিষয়টি তুলে ধরেছেন ভাসান। পাশাপাশি, সামাজিক মাধ্যমের স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবহার যেমন, প্রযুক্তিবিহীন সময় কাটানো, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের সময় ব্যবহারকারীর অনুভূতি মনিটরিং করা ও প্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক অভিজ্ঞতা শেয়ার করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মার্কিন কিশোর কিশোরীদের ৯৫ শতাংশই কোনো না কোনো সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে থাকেন। তবে, তারা যে ধরনের গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন, তার কারণ হিসেবে অনেকে সামাজিক মাধ্যমকেই দায়ী করছেন। এছাড়া, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের আসক্তি নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। ওয়াশিংটন পোস্টের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, এমন সমালোচনার জবাবে টিকটক ও ইউটিউবসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি শিশুদের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ওপর অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে ও অনলাইনে কাটানো সময় বেঁধে দিতে নতুন কিছু ফিচার নিয়ে এসেছে। এ প্রসঙ্গে ওয়াশিংটন পোস্ট টিকটক, গুগল ও মেটার বক্তব্য জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক সাড়া মেলেনি। গত বছরের মে মাসে একটি সুপারিশ জারি করেন যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল বিবেক এইচ মুর্তি। এতে উল্লেখ ছিল, সামাজিক মাধ্যম যে ‘শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ’, তার যথেষ্ট প্রমাণ নেই। সে সময় ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক মতামত নিবন্ধে তিনি লেখেন, “কম বয়সী ব্যবহারকারীর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চলমান সংকটের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে, সামাজিক মাধ্যম লাখ লাখ শিশু ও পরিবারকে যে ভোগান্তি দিচ্ছে, সেটা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।”
বুধবার নিউ ইয়র্ক শহরের স্বাস্থ্যবিষয়ক কমিশনার কর্তৃক প্রকাশিত উপদেশ বার্তায় বলা হয়, ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে শহরটির হাই স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে হতাশা বেড়ে যাওয়ার হার ৪২ শতাংশের বেশি। আর তাদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেড়েছে ৩৪ শতাংশের বেশি।
এদিকে, সামাজিক মাধ্যমকে একেবারে নির্মূল না করে বরং এর সম্ভাব্য ঝুঁকি তুলে ধরে নিউ ইয়র্ক শহরের উপদেশ বার্তা প্রকাশের বিষয়টিকে প্রশংসা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্ন’-এর অধ্যাপক ওফির টুরেল, যিনি এ ধরনের প্রযুক্তির আচরণগত প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন। এছাড়া, ‘বডি ইমেইজ বা শারীরিক ছবি, সামাজিক তুলনা, বিষন্নতা ও আসক্তির মতো’ বিষয়গুলোকে সামাজিক মাধ্যমের সম্ভাব্য ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করেন টুরেল। তবে, এর বিভিন্ন ইতিবাচক দিক থাকার বিষয়টিও স্বীকার করেছেন তিনি। পাশাপাশি, তিনি একে তুলনা করেছেন ‘ফুড রেগুলেশন মডেল’ নামের এক পদ্ধতির সঙ্গে, যেখানে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ না করেই বিভিন্ন খাবারের পুষ্টিগুণ মূল্যায়িত করা হয়।