চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : এলএনজি টার্মিনালে সমস্যার কারণে হঠাৎ করেই চট্টগ্রামে বাসাবাড়ি ও শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাস না থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন আবাসিক গ্রাহকরা। সকালে চুলায় গ্যাস জ্বলতে না দেখে অনেকে খাবারের দোকান, হোটেল- রেস্তোরাঁ ছুটে যান। কিন্তু চাহিদার তুলনায় খাবার কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেককেই ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে সরবরাহ লাইন থেকে গ্রাহকরা গ্যাস পাননি বলে জানা গেছে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ( কেজিডিসিএল) কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
নগরীর বিভিন্ন সিএনজি স্টেশনগুলোতেও গ্যাস মিলছে না। গ্যাস না পাওয়ায় নগরীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চলাচলও কমে গেছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন। হাতেগোনা কিছু অটোরিকশা মিললেও সেগুলেতে বেশি ভাড়া হাঁকা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
এমনিতেই গত কয়েকমাস ধরে চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট চলছে। তার মধ্যে কোনো ঘোষণা ছাড়াই গ্যাস সরবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। বাদুরতলা এলাকার বাসিন্দা সাইফুল সরকার বলেন, কয়েকমাস ধরে লাইনে গ্যাস মিলছে না সকাল থেকে দুপুর বা বিকেল পর্যন্ত। শুক্রবার ভোর থেকেই কোন ঘোষণা ছাড়াই গ্যাস বন্ধ। গ্যাস না থাকায় বন্দরনগীর ফিলিং স্টেশনগুলোতে যানবাহনের লম্বা লাইন পড়ে গেছে। বন্ধের দিনে এই যন্ত্রণা পেতে হচ্ছে। কবে এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে জানি না। কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক মো. আমিনুর রহমান বলেন, এলএনজি টার্মিনালের সমস্যার কারণে ভোর থেকেই চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ আছে। “মহেশখালীর দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ হচ্ছে না। সেকারণে এই সংকট। সংস্কার হয়ে আসা একটি টার্মিনাল কমিশনিং করতে গিয়ে সমস্যা হওয়ায় গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।” সেটি থেকে সরবরাহ হলে চট্টগ্রামে গ্যাস মিলবে বলে জানান তিনি।
তবে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হতে কত সময় লাগবে, তা জানাতে পারেননি কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক।
চট্টগ্রামে আবাসিক ও শিল্প কারখানা মিলিয়ে গ্যাসের প্রয়োজন হয় ৩২৫ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। ২৯০ মিলিয়নের মতো মিললে আবাসিকসহ শিল্প কারখানায় সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যায়।
এদিকে হঠাৎ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসা-বাড়ি ও কলকারখানার গ্রাহকেরা। চট্টগ্রামের কাফকো, সিইউএফএল, শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ গ্যাসনির্ভর সব শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাস নেই ৬৮টি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনসহ কয়েক হাজার বাণিজ্যিক এবং ৬ লাখেরও বেশি আবাসিক গ্রাহকের সংযোগে। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) রাত ২টা থেকে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। যার কারণে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলএনজি টার্মিনালের সঙ্গে পাইপ লাইনের সংযোগ দেয়ার চেষ্টা চলছে। তবে এতে কতক্ষণ সময় লাগবে তা নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ শুরু হলেও চট্টগ্রাম পর্যন্ত সেই গ্যাস এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে ঘন্টা কয়েক লেগে যাবে। কেজিডিসিএল’র বিপণণ বিভাগের উপ মহাব্যবস্থাপক (দক্ষিণ) প্রকৌশলী অনুপম দত্ত বলেন, এলএনজি টার্মিনালে টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ আছে। মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, দ্রুততার সঙ্গে এ সংকটের সমাধান হবে। ’ এদিকে শুক্রবার ছুটির দিনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সকাল থেকে হোটেলগুলোতে খাবার কিনতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। সুযোগ বুঝে অসাধু দোকানিরা খাবারের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হঠাৎ গ্যাসশূন্য চট্টগ্রাম, বিপাকে মানুষ
জনপ্রিয় সংবাদ

























