ঢাকা ০৭:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫

‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ যাত্রায় নবসজ্জায় হাসিনার মন্ত্রিসভা

  • আপডেট সময় : ১০:১৯:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৪
  • ৬৮ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : স্বপ্ন দস্মার্ট’ বাংলাদেশ গড়া, লক্ষ্য অর্থনীতির পুনরুদ্ধার- মূল্যস্ফীতি কমানো আর কোটি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। এই স্বপ্ন আর লক্ষ্য পূরণে টানা তিন মেয়াদে ১৫ বছর দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ শেখ হাসিনা নতুন সরকার সাজালেন অভিজ্ঞ ও নতুনদের মিশেলে। আগে কখনো সরকারে না থাকা ১৪ জনকে মন্ত্রিসভায় আনা হয়েছে; দপ্তর বণ্টনে ১৭ মন্ত্রণালয়ে এসেছেন নতুন মন্ত্রী এবং ৭ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একেবারে নবীনদের। বিদায়ী সরকারে থাকা দুইজন মন্ত্রীর দপ্তর বদল করেছেন প্রধানমন্ত্রী; প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা তিনজনকে করেছেন পূর্ণ মন্ত্রী। বিদায়ী সরকারের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামালরা আছেন একই দায়িত্বে। তেমনি পরীক্ষিত আবুল হাসান মাহমুদ আলী, জাহাঙ্গীর কবির নানককে ফিরিয়ে আনা হয়েছে নতুন দায়িত্বে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, নতুন সরকারের সামনে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে। শপথ নেওয়ার আগে সংবাদকর্মীদের তিনি বলেন, “প্রথম দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। এরপর তরুণদের কর্মসংস্থান। পাঁচ বছরে এক কোটি তরুণের কর্মসংস্থান। সুশাসনও চ্যালেঞ্জিং, এটা ক্রমান্বয়ে উন্নতি করবে।”
অর্থনীতি আর রাজনীতির বিশ্লেষকরাও চাইছেন, মূল্যস্ফীতি কমানো হোক নতুন সরকারের অগ্রাধিকার। সেজন্য অর্থ, বাণিজ্য আর কৃষিতে জোর দেওয়ার তাগিদ তাদের। নতুন মন্ত্রিসভার বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, “একটা স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হলে একটা স্মার্ট কেবিনেট দরকার। আমরা চাই যে তেমন কেবিনেট হোক। তারা কাজে কর্মে আচার আচরণে সেই স্মার্টনেস দেখাবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।” তিনি বলেন, “সার্বিক দায় দায়িত্ব তো প্রধানমন্ত্রীর। উনি যেটা মনে করেছেন সেটাই ঠিক আছে। এখন আমাদের কথা হচ্ছে, আমরা অপেক্ষা করে দেখতে পারি, তারা কেমন চালায়।”
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, “মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা কীভাবে মন্ত্রণালয়গুলো পরিচালনা করবেন, তার ওপরই তাদের সফলতা নির্ভর করবে। আমরা তাদের ওপরই ভরসা করছি। আশা করছি, তারা তাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মাধ্যমেই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।” সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোশাররফ হোসেনও মনে করছেন, নতুন ও পুরনোদের মিশ্রণে এ মন্ত্রিসভা ‘ভালোই’ হয়েছে।
“স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন, তা বাস্তবায়নে যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, এগুলো আন্তরিকতার সঙ্গে নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।”
মন্ত্রিপরিষদের ওপর প্রত্যাশা কী, সে প্রশ্নে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “একজন মন্ত্রীর ওপর নির্ভর না করে পুরো মন্ত্রিপরিষদ যদি দুর্নীতির, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও নারী নির্যাতনের লাগাম টানতে পারে, সেটাই আমাদের প্রাপ্তি হবে। এছাড়াও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে যদি রাশ টানতে পারে, তবে জনমনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে।” তার দৃষ্টিতে নতুন সরকারের কয়েকজন আগেই তাদের কাজে প্রমাণ দিয়েছেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে নতুন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সিমিন হোসেন রিমি কাপাসিয়াকে মাতৃমৃত্যু মুক্ত করেছেন। উনি ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কাজ করেন না। নীরবে কাজ করে যান।

“এই মন্ত্রণালয় একজন অভিভাবক পেল। তিনি তাজউদ্দিন আহমেদের সন্তান, উনারা লাভ-লোকসানের কথা চিন্তা করে রাজনীতি করেননি কখনো। এই আদর্শের একজন মানুষকে যদি সুযোগ দেওয়া হয়, সে অনেক কিছু করতে পারবে।”
নতুন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের কাছেও রাশেদা কে চৌধুরীর প্রত্যাশা অনেক। “তিনিও একটি রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছেন। শিক্ষা ব্যবস্থায় যে সংস্কার এসেছে, এর বাস্তবায়নে নওফেল শক্ত অবস্থান নেবেন আশা করি। স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে নতি স্বীকার না করে উনি এগিয়ে নিয়ে যাবেন শিক্ষা খাতকে।”
আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে: গুরুত্বপূর্ণ অর্থ, পরিকল্পনা, কৃষি, বাণিজ্য- এই চার মন্ত্রণালয়ের তিনটিতেই পুরোপুরি নতুন মুখ। অর্থের দায়িত্ব পাওয়া আবুল হাসান মাহমুদ আলীর মন্ত্রিসভায় থাকার অভিজ্ঞতা থাকলেও এ মন্ত্রণালয় সামলাবেন প্রথমবারের মতো। অর্থ মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করবে যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, সেখানেও আনকোরা মুখ। ময়মনসিংহ-৯ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম সামলাবেন এই দায়িত্ব। বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন নতুন সরকারের জন্য তিনটি চ্যালেঞ্জ দেখছেন। ১. মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা, ২. ডলার সংকট মোকাবিলা করে একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আসা এবং ৩. আর্থিক খাতের ঝুঁকি, বিশেষ করে দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদ (খেলাপিঋণ) এর ব্যবস্থাপনা। এই ‘যুদ্ধে’ শেখ হাসিনা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভার দিয়েছেন আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে, যিনি পাঁচ বছর আগে সামলেছেন পররাষ্ট্রের বিষয়াবলী। পেশাদার কূটনীতিক থেকে রাজনীতিতে আসা এই বীর মুক্তিযোদ্ধার কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা দিয়েই। দুই বছর ছাত্র পড়ানোর পর যোগ দেন পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে। সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির বলেন, “আবুল হাসান মাহমুদ আলী, যোগ্য মানুষ। তিনি আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন, গতবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। কাজেই তার মন্ত্রণালয় চালানোর অভিজ্ঞতা আছে আর তিনি পেশাদার মানুষ। দুইদিক থেকেই তার অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং এই পদের জন্য তার উপযুক্ততা রয়েছে।”
মৌলভীবাজার-৪ আসনটি ১৯৯১ সাল থেকে নিজের করে নেওয়া আব্দুস শহীদ প্রথমবার সরকারে এসে পেয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়। উৎপাদন বাড়িয়ে কৃষকের স্বার্থের পাশাপাশি ভোক্তার ওপর চাপ কমানোর চ্যালেঞ্জ থাকছে তার ওপর। নতুন কৃষিমন্ত্রী বলেন, “এতদিন শুধু আমার সংসদীয় এলাকায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এখন সারা দেশে কাজ করার সুযোগ পাব।” বাণিজ্যে পূর্ণ মন্ত্রী না দিয়ে টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম টিটুকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন শেখ হাসিনা।
ঢাকা-৯ আসনের (সে সময়ের ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর) প্রয়াত সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের ছেলে টিটু ১৯৯৩ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যপদ পান। ২০১৩ সালে তিনি দেশের প্রধান এ স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সাংস্কৃতিক সংগঠক রামেন্দু মজুমদার বলেন, “এই সরকারের প্রথম কাজ হওয়া উচিত দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা। সাধারণ মানুষ ভীষণ রকম কষ্টে আছে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীনতার কারণে। এটাকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।” তিনি বলেন, “ব্যাংকিং খাতে অব্যস্থাপনা নিয়েও জনমনে অসন্তুষ্টি আছে। এটা দূর করতে হবে। আর দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। এই বিষয়টিও সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা উচিত।”
‘পরীক্ষিত চিকিৎসক’ সামন্তলালের ওপর অনেক দায়িত্ব: মন্ত্রিসভায় বড় চমক এবার সামন্তলাল সেন। বুধবার তাকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে শপথের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর পর অনুমেয় ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবার এক চিকিৎসকের অধীনে যাচ্ছে। সেটিই সত্য হল। বাংলাদেশে পোড়া রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে পরিচিত মুখ সামন্তলাল দেশের বার্ন ইনস্টিটিউটগুলোর জাতীয় সমন্বয়ক। বহুবিধ সমস্যায় জর্জর স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের কষ্টসাধ্য কাজটি করতে হবে তাকে। নির্বাচনি ইশতেহারে দেওয়া ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দেশের প্রতিটি মানুষকে দিতে হবে ‘ইউনিক হেলথ আইডি’। হাসপাতালে অটোমেশন চালুর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব তার ওপর। সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্য বীমা চালু, প্রবীণদের অসংক্রামক রোগ নিরাময় এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরির প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের কেন্দ্রেও থাকবেন নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বলেন, “করোনাভাইরাস, ডেঙ্গুর মতো মহামারী মোকাবেলায় গুরুত্ব দিতে হবে। এসব মোকাবিলায় বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরতা কমাতে হবে। এগুলো করা না হলে স্বাস্থ্য খাতের উন্নতি হবে না। এগুলো যদি করা না হয় তাহলে ডেঙ্গুর মত অবস্থা হবে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতের অর্জন ভালো না। নতুন মন্ত্রিসভাকে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির সব কাজ শেষ করে ফেলতে হবে।”
তথ্যে থেকে পররাষ্ট্রে হাছানের ‘অনেক চ্যালেঞ্জ’: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পরাশক্তিগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যে এবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামলাবেন হাছান মাহমুদ। অবশ্য এ দপ্তর তার একেবারে অচেনা নয়। গত দশ বছর তথ্য ও সম্প্রচার এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগে কিছুদিন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর চেয়ারেও তিনি বসেছেন। এবারের নির্বাচন নিয়ে তৎপর ছিল পশ্চিমা মিশনগুলো। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্তকারী সরকারি কর্মকর্তা, বিরোধীদলীয় কর্মী ও বিচারকসহ সবার উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করে ২০২৩ সালে। পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন চলার মধ্যে শ্রম অধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাপী একটি স্মারক ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘন হলে নিষেধাজ্ঞা ও বাণিজ্য বিধিনিষেধও আরোপ করবে তারা। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর দেশটির প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে ভিন্নতা।
ভারত, চীন ও রাশিয়া নির্বাচনের ফলকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতিতে দিলেও প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। সমালোচনা করলেও সরকারের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখার কথা বলেছে যুক্তরাজ্য। সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেন, “বহির্বিশ্বে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশের ভাবমূর্তিগতভাবে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, সেটা নিয়ে কাজ করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ ভূমিকা থাকবে। “হাছান মাহমুদ তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে তাকে বাড়তি আরও কাজ করতে হবে। বাণিজ্যের ব্যাপারেও আমাদের চাপ আছে। আমাদের প্রবৃদ্ধিও কমে এসেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থাটাও চাপে থাকবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও আমাদের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” হাছান মাহমুদ এই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, “সব কিছু মোকাবিলা করে দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব বলে দৃঢ় বিশ্বাস করি। যেই চ্যালেঞ্জই আসুক না কেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি স্মার্ট মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন। এই মন্ত্রিসভার মাধ্যমে তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
অন্য কারা কোথায়: আগের মন্ত্রিসভার সদস্য দীপু মণি শিক্ষা থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এসেছেন। মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষা উপমন্ত্রী থেকে পদোন্নতি পেয়ে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হয়েছেন। শপথ নিয়ে তিনি বলেন, “এটাকে আমি কোনোভাবেই পুরস্কার হিসেবে দেখতে চাই না। দুর্নীতি না হয়, স্বচ্ছতা থাকে, সেবা পেতে অসুবিধা না হয়, জবাবদিহিতা থাকে- সে জায়গাগুলোতে আমাদের সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। সেগুলো উন্নত হলে কর্মসংস্থানও বাড়বে।” গত পাঁচ বছর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হওয়া ফরহাদ হোসেন বলেন, “আগামী পাঁচ বছর বিগত পাঁচ বছরের চেয়েও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি আমার সব চেষ্টা নিয়ে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যেন পালন করতে পারি, সেই চেষ্টাই থাকবে।” গত সরকারে ফরিদুল হক খান ধর্ম মন্ত্রণালয়ে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। তিনিও পদোন্নতি পেয়ে একই মন্ত্রণালয়ে আছেন। মন্ত্রিসভায় আনকোরা র, আ, ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, মো. আব্দুর রহমান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, জিল্লুল হাকিম রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং নাজমুল হাসান পাপন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় পেয়েছেন। শপথ নিয়ে আব্দুর রহমান বলেন, “আমার দায়িত্ব, কর্তব্য বাড়ল। সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করাই আমার বড় চ্যালেঞ্জ।” নাজমুল হাসান এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি। মন্ত্রী হয়ে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী একেবারেই নতুন একটি দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রথমেই কাজটি বোঝার চেষ্টা করব।” জিল্লুল হাকিম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমার ওপর যে আস্থা রেখেছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আমি এই আস্থার প্রতিদান দিতে চাই।”
প্রথমবারের মতো সরকারে আসা র, আ, ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী পেয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, আব্দুর রহমান পেয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নাজমুল হাসান পাপন পেয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জিল্লুল হাকিম পেয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়। এক সময় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা জাহাঙ্গীর কবির নানক এবার বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন।
২০১৪ সালের সরকারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা নারায়ণ চন্দ্র চন্দ পেয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয়; ১৯৯৬-২০০১ সরকারে উপমন্ত্রীর সাবের হোসেন চৌধুরীকে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়েছে। সাবের চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা যখন টেকসই উন্নয়নের কথা বলি তখন বন, পরিবেশ, জলবায়ু এই বিষয়টাকে বিবেচনায় রাখতে হবে।” তিনি বলেন, “বাংলাদেশ হচ্ছে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এবং এই ক্ষতির জন্য আমরা মোটেও দায়ী না। পৃথিবীতে নানা তহবিল গঠন করা হচ্ছে। সে তহবিল থেকে আমরা কী পরিমাণ অর্থ আদায় করব, এটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।” ২০০৯ সালের সরকারে প্রথমে বাণিজ্য মন্ত্রী ছিলেন ফারুক খান। পরে হন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী। তবে গত দুই সরকারে ছিলেন না। সব শেষ যে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেই দায়িত্ব নিয়েই ফিরেছেন।
পুরনো দায়িত্বেই তারা: যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে বহু মেগা প্রকল্পের সমাপ্তি ও চলমান থাকার মধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে টানা চতুর্থ দফায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার দায়িত্ব পালনের সময়ে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলসহ যোগাযোগ খাতে বহু মেগাপ্রকল্প পেয়েছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার ‘রানিং মেট’ হিসাবে মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়াকে ‘সৌভাগ্য’ হিসাবে দেখছেন কাদের। তিনি বলেন, “আমি একটা বিষয়ে বিশ্বাস করি- তোমার সময়ের আগে নয়, তোমার ভাগ্যের চেয়ে বেশি নয়।”
তৃতীয়বারের মত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আসাদুজ্জামান খান কামালের ওপর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দশম সংসদের পর গঠিত সরকারে কামালকে প্রথমে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী করা হয়। এর দেড় বছর পর ২০১৫ সালে তাকে মন্ত্রিত্বে উন্নীত করেন প্রধানমন্ত্রী। গত সাড়ে আট বছরের কাজের ধারাবাহিকতায় ঢাকা-১২ আসনের এই সংসদ সদস্যের কাঁধেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই গাজীপুরে জনতার প্রতিরোধ আন্দোলনের সংগঠক আ ক ম মোজাম্মেল হককে তৃতীয়বারের মত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্বে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার পর মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্য হিসাবে ২০১৪ সালে প্রথমবার তাকে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালে সরকার গঠনের পরও তাকে একই দায়িত্ব রাখা হয়। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে মোজাম্মেল হকের।
প্রতিমন্ত্রী কারা কোথায়: গত সরকারের দায়িত্ব পালন করা প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে কেবল চারজন এবারও একই দপ্তর নিয়ে মন্ত্রিসভায় থাকছেন। ২০১৪ সাল থেকে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা নসরুল হামিদের ওপর আবারও আস্থা রেখেছেন শেখ হাসিনা। নসরুল হামিদ জানান, কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনে লক্ষ্য থাকবে এবার। তিনি বলেন, “কয়লার বড় প্রজেক্টগুলো ঢুকে গেছে। তেল থেকে আমরা বেরিয়ে আসছি। ১২ হাজার মেগাওয়াট সোলার প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি। এগুলোকে দ্রুত সিস্টেমে নিয়ে আসা বড় চ্যালেঞ্জ।”
একইভাবে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুককে আবারও রেখেছেন শেখ হাসিনা। পলকের কাঁধে তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে এবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগও যুক্ত হয়েছে। এবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে কোনো মন্ত্রী রাখা হয়নি। প্রতিমন্ত্রী হিসাবে যারা শপথ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে সাত জন একেবারেই নতুন মুখ।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের মেয়ে সিমিনি হোসেন রিমি পেয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও গাজীপুরের প্রয়াত নেতা রহমত আলীর মেয়ে বেগম রুমানা আলী টুসি প্রথমবার সংসদে এসে পেয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর পদ। পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হয়ে থাকছেন কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। গত সরকারে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা বীর বাহাদুর উশৈসিং ছিলেন পূর্ণ মন্ত্রী। শপথ নিয়ে কুজেন্দ্র লাল বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম বহু রকম ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের বসবাস। তাদের সকলে যেন ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ পায়, আমি আমার অবস্থান থেকে সেজন্য কাজ করার চেষ্টা করব।”
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া মোহাম্মদ আলী আরাফাত ২০২৩ সালের উপনির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার আগের বছরেই তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন। এবারের নির্বাচনে আবার মনোনয়ন পান। আরাফাত বলেন, “বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বের মাধ্যমে সেটা সম্ভব। উনাকে সমর্থন করে যাওয়া, উনার হাতকে শক্তিশালী করাই আমার রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য।” পটুয়াখালীর আওয়ামী লীগ নেতা মহিববুর রহমান মুহিব দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। কলাপাড়ার ধুলাসারের আলহাজ্ব জালাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মুহিব জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। দ্বিতীয়বারের মত তিনি পটুয়াখালী-৪ আসনে জিতেছেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়েছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতা শফিকুর রহমান চৌধুরীকে। নবম সংসদের এই সদস্য ১০ বছর পর আবার সংসদে ফিরেছেন। (প্রতিবেদনটি বিডিনিউজের সৌজন্যে)

 

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ যাত্রায় নবসজ্জায় হাসিনার মন্ত্রিসভা

আপডেট সময় : ১০:১৯:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৪

প্রত্যাশা ডেস্ক : স্বপ্ন দস্মার্ট’ বাংলাদেশ গড়া, লক্ষ্য অর্থনীতির পুনরুদ্ধার- মূল্যস্ফীতি কমানো আর কোটি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। এই স্বপ্ন আর লক্ষ্য পূরণে টানা তিন মেয়াদে ১৫ বছর দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ শেখ হাসিনা নতুন সরকার সাজালেন অভিজ্ঞ ও নতুনদের মিশেলে। আগে কখনো সরকারে না থাকা ১৪ জনকে মন্ত্রিসভায় আনা হয়েছে; দপ্তর বণ্টনে ১৭ মন্ত্রণালয়ে এসেছেন নতুন মন্ত্রী এবং ৭ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একেবারে নবীনদের। বিদায়ী সরকারে থাকা দুইজন মন্ত্রীর দপ্তর বদল করেছেন প্রধানমন্ত্রী; প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা তিনজনকে করেছেন পূর্ণ মন্ত্রী। বিদায়ী সরকারের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামালরা আছেন একই দায়িত্বে। তেমনি পরীক্ষিত আবুল হাসান মাহমুদ আলী, জাহাঙ্গীর কবির নানককে ফিরিয়ে আনা হয়েছে নতুন দায়িত্বে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, নতুন সরকারের সামনে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে। শপথ নেওয়ার আগে সংবাদকর্মীদের তিনি বলেন, “প্রথম দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। এরপর তরুণদের কর্মসংস্থান। পাঁচ বছরে এক কোটি তরুণের কর্মসংস্থান। সুশাসনও চ্যালেঞ্জিং, এটা ক্রমান্বয়ে উন্নতি করবে।”
অর্থনীতি আর রাজনীতির বিশ্লেষকরাও চাইছেন, মূল্যস্ফীতি কমানো হোক নতুন সরকারের অগ্রাধিকার। সেজন্য অর্থ, বাণিজ্য আর কৃষিতে জোর দেওয়ার তাগিদ তাদের। নতুন মন্ত্রিসভার বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, “একটা স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হলে একটা স্মার্ট কেবিনেট দরকার। আমরা চাই যে তেমন কেবিনেট হোক। তারা কাজে কর্মে আচার আচরণে সেই স্মার্টনেস দেখাবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।” তিনি বলেন, “সার্বিক দায় দায়িত্ব তো প্রধানমন্ত্রীর। উনি যেটা মনে করেছেন সেটাই ঠিক আছে। এখন আমাদের কথা হচ্ছে, আমরা অপেক্ষা করে দেখতে পারি, তারা কেমন চালায়।”
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, “মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা কীভাবে মন্ত্রণালয়গুলো পরিচালনা করবেন, তার ওপরই তাদের সফলতা নির্ভর করবে। আমরা তাদের ওপরই ভরসা করছি। আশা করছি, তারা তাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মাধ্যমেই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।” সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোশাররফ হোসেনও মনে করছেন, নতুন ও পুরনোদের মিশ্রণে এ মন্ত্রিসভা ‘ভালোই’ হয়েছে।
“স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন, তা বাস্তবায়নে যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, এগুলো আন্তরিকতার সঙ্গে নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।”
মন্ত্রিপরিষদের ওপর প্রত্যাশা কী, সে প্রশ্নে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “একজন মন্ত্রীর ওপর নির্ভর না করে পুরো মন্ত্রিপরিষদ যদি দুর্নীতির, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও নারী নির্যাতনের লাগাম টানতে পারে, সেটাই আমাদের প্রাপ্তি হবে। এছাড়াও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে যদি রাশ টানতে পারে, তবে জনমনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে।” তার দৃষ্টিতে নতুন সরকারের কয়েকজন আগেই তাদের কাজে প্রমাণ দিয়েছেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে নতুন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সিমিন হোসেন রিমি কাপাসিয়াকে মাতৃমৃত্যু মুক্ত করেছেন। উনি ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কাজ করেন না। নীরবে কাজ করে যান।

“এই মন্ত্রণালয় একজন অভিভাবক পেল। তিনি তাজউদ্দিন আহমেদের সন্তান, উনারা লাভ-লোকসানের কথা চিন্তা করে রাজনীতি করেননি কখনো। এই আদর্শের একজন মানুষকে যদি সুযোগ দেওয়া হয়, সে অনেক কিছু করতে পারবে।”
নতুন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের কাছেও রাশেদা কে চৌধুরীর প্রত্যাশা অনেক। “তিনিও একটি রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছেন। শিক্ষা ব্যবস্থায় যে সংস্কার এসেছে, এর বাস্তবায়নে নওফেল শক্ত অবস্থান নেবেন আশা করি। স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে নতি স্বীকার না করে উনি এগিয়ে নিয়ে যাবেন শিক্ষা খাতকে।”
আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে: গুরুত্বপূর্ণ অর্থ, পরিকল্পনা, কৃষি, বাণিজ্য- এই চার মন্ত্রণালয়ের তিনটিতেই পুরোপুরি নতুন মুখ। অর্থের দায়িত্ব পাওয়া আবুল হাসান মাহমুদ আলীর মন্ত্রিসভায় থাকার অভিজ্ঞতা থাকলেও এ মন্ত্রণালয় সামলাবেন প্রথমবারের মতো। অর্থ মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করবে যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, সেখানেও আনকোরা মুখ। ময়মনসিংহ-৯ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম সামলাবেন এই দায়িত্ব। বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন নতুন সরকারের জন্য তিনটি চ্যালেঞ্জ দেখছেন। ১. মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা, ২. ডলার সংকট মোকাবিলা করে একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আসা এবং ৩. আর্থিক খাতের ঝুঁকি, বিশেষ করে দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদ (খেলাপিঋণ) এর ব্যবস্থাপনা। এই ‘যুদ্ধে’ শেখ হাসিনা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভার দিয়েছেন আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে, যিনি পাঁচ বছর আগে সামলেছেন পররাষ্ট্রের বিষয়াবলী। পেশাদার কূটনীতিক থেকে রাজনীতিতে আসা এই বীর মুক্তিযোদ্ধার কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা দিয়েই। দুই বছর ছাত্র পড়ানোর পর যোগ দেন পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে। সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির বলেন, “আবুল হাসান মাহমুদ আলী, যোগ্য মানুষ। তিনি আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন, গতবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। কাজেই তার মন্ত্রণালয় চালানোর অভিজ্ঞতা আছে আর তিনি পেশাদার মানুষ। দুইদিক থেকেই তার অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং এই পদের জন্য তার উপযুক্ততা রয়েছে।”
মৌলভীবাজার-৪ আসনটি ১৯৯১ সাল থেকে নিজের করে নেওয়া আব্দুস শহীদ প্রথমবার সরকারে এসে পেয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়। উৎপাদন বাড়িয়ে কৃষকের স্বার্থের পাশাপাশি ভোক্তার ওপর চাপ কমানোর চ্যালেঞ্জ থাকছে তার ওপর। নতুন কৃষিমন্ত্রী বলেন, “এতদিন শুধু আমার সংসদীয় এলাকায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এখন সারা দেশে কাজ করার সুযোগ পাব।” বাণিজ্যে পূর্ণ মন্ত্রী না দিয়ে টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম টিটুকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন শেখ হাসিনা।
ঢাকা-৯ আসনের (সে সময়ের ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর) প্রয়াত সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের ছেলে টিটু ১৯৯৩ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যপদ পান। ২০১৩ সালে তিনি দেশের প্রধান এ স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সাংস্কৃতিক সংগঠক রামেন্দু মজুমদার বলেন, “এই সরকারের প্রথম কাজ হওয়া উচিত দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা। সাধারণ মানুষ ভীষণ রকম কষ্টে আছে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীনতার কারণে। এটাকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।” তিনি বলেন, “ব্যাংকিং খাতে অব্যস্থাপনা নিয়েও জনমনে অসন্তুষ্টি আছে। এটা দূর করতে হবে। আর দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। এই বিষয়টিও সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা উচিত।”
‘পরীক্ষিত চিকিৎসক’ সামন্তলালের ওপর অনেক দায়িত্ব: মন্ত্রিসভায় বড় চমক এবার সামন্তলাল সেন। বুধবার তাকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে শপথের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর পর অনুমেয় ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবার এক চিকিৎসকের অধীনে যাচ্ছে। সেটিই সত্য হল। বাংলাদেশে পোড়া রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে পরিচিত মুখ সামন্তলাল দেশের বার্ন ইনস্টিটিউটগুলোর জাতীয় সমন্বয়ক। বহুবিধ সমস্যায় জর্জর স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের কষ্টসাধ্য কাজটি করতে হবে তাকে। নির্বাচনি ইশতেহারে দেওয়া ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দেশের প্রতিটি মানুষকে দিতে হবে ‘ইউনিক হেলথ আইডি’। হাসপাতালে অটোমেশন চালুর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব তার ওপর। সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্য বীমা চালু, প্রবীণদের অসংক্রামক রোগ নিরাময় এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরির প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের কেন্দ্রেও থাকবেন নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বলেন, “করোনাভাইরাস, ডেঙ্গুর মতো মহামারী মোকাবেলায় গুরুত্ব দিতে হবে। এসব মোকাবিলায় বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরতা কমাতে হবে। এগুলো করা না হলে স্বাস্থ্য খাতের উন্নতি হবে না। এগুলো যদি করা না হয় তাহলে ডেঙ্গুর মত অবস্থা হবে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতের অর্জন ভালো না। নতুন মন্ত্রিসভাকে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির সব কাজ শেষ করে ফেলতে হবে।”
তথ্যে থেকে পররাষ্ট্রে হাছানের ‘অনেক চ্যালেঞ্জ’: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পরাশক্তিগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যে এবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামলাবেন হাছান মাহমুদ। অবশ্য এ দপ্তর তার একেবারে অচেনা নয়। গত দশ বছর তথ্য ও সম্প্রচার এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগে কিছুদিন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর চেয়ারেও তিনি বসেছেন। এবারের নির্বাচন নিয়ে তৎপর ছিল পশ্চিমা মিশনগুলো। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্তকারী সরকারি কর্মকর্তা, বিরোধীদলীয় কর্মী ও বিচারকসহ সবার উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করে ২০২৩ সালে। পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন চলার মধ্যে শ্রম অধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাপী একটি স্মারক ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘন হলে নিষেধাজ্ঞা ও বাণিজ্য বিধিনিষেধও আরোপ করবে তারা। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর দেশটির প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে ভিন্নতা।
ভারত, চীন ও রাশিয়া নির্বাচনের ফলকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতিতে দিলেও প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। সমালোচনা করলেও সরকারের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখার কথা বলেছে যুক্তরাজ্য। সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেন, “বহির্বিশ্বে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশের ভাবমূর্তিগতভাবে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, সেটা নিয়ে কাজ করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ ভূমিকা থাকবে। “হাছান মাহমুদ তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে তাকে বাড়তি আরও কাজ করতে হবে। বাণিজ্যের ব্যাপারেও আমাদের চাপ আছে। আমাদের প্রবৃদ্ধিও কমে এসেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থাটাও চাপে থাকবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও আমাদের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” হাছান মাহমুদ এই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, “সব কিছু মোকাবিলা করে দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব বলে দৃঢ় বিশ্বাস করি। যেই চ্যালেঞ্জই আসুক না কেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি স্মার্ট মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন। এই মন্ত্রিসভার মাধ্যমে তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
অন্য কারা কোথায়: আগের মন্ত্রিসভার সদস্য দীপু মণি শিক্ষা থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এসেছেন। মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষা উপমন্ত্রী থেকে পদোন্নতি পেয়ে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হয়েছেন। শপথ নিয়ে তিনি বলেন, “এটাকে আমি কোনোভাবেই পুরস্কার হিসেবে দেখতে চাই না। দুর্নীতি না হয়, স্বচ্ছতা থাকে, সেবা পেতে অসুবিধা না হয়, জবাবদিহিতা থাকে- সে জায়গাগুলোতে আমাদের সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। সেগুলো উন্নত হলে কর্মসংস্থানও বাড়বে।” গত পাঁচ বছর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হওয়া ফরহাদ হোসেন বলেন, “আগামী পাঁচ বছর বিগত পাঁচ বছরের চেয়েও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি আমার সব চেষ্টা নিয়ে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যেন পালন করতে পারি, সেই চেষ্টাই থাকবে।” গত সরকারে ফরিদুল হক খান ধর্ম মন্ত্রণালয়ে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। তিনিও পদোন্নতি পেয়ে একই মন্ত্রণালয়ে আছেন। মন্ত্রিসভায় আনকোরা র, আ, ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, মো. আব্দুর রহমান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, জিল্লুল হাকিম রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং নাজমুল হাসান পাপন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় পেয়েছেন। শপথ নিয়ে আব্দুর রহমান বলেন, “আমার দায়িত্ব, কর্তব্য বাড়ল। সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করাই আমার বড় চ্যালেঞ্জ।” নাজমুল হাসান এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি। মন্ত্রী হয়ে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী একেবারেই নতুন একটি দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রথমেই কাজটি বোঝার চেষ্টা করব।” জিল্লুল হাকিম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমার ওপর যে আস্থা রেখেছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আমি এই আস্থার প্রতিদান দিতে চাই।”
প্রথমবারের মতো সরকারে আসা র, আ, ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী পেয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, আব্দুর রহমান পেয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নাজমুল হাসান পাপন পেয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জিল্লুল হাকিম পেয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়। এক সময় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা জাহাঙ্গীর কবির নানক এবার বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন।
২০১৪ সালের সরকারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা নারায়ণ চন্দ্র চন্দ পেয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয়; ১৯৯৬-২০০১ সরকারে উপমন্ত্রীর সাবের হোসেন চৌধুরীকে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়েছে। সাবের চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা যখন টেকসই উন্নয়নের কথা বলি তখন বন, পরিবেশ, জলবায়ু এই বিষয়টাকে বিবেচনায় রাখতে হবে।” তিনি বলেন, “বাংলাদেশ হচ্ছে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এবং এই ক্ষতির জন্য আমরা মোটেও দায়ী না। পৃথিবীতে নানা তহবিল গঠন করা হচ্ছে। সে তহবিল থেকে আমরা কী পরিমাণ অর্থ আদায় করব, এটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।” ২০০৯ সালের সরকারে প্রথমে বাণিজ্য মন্ত্রী ছিলেন ফারুক খান। পরে হন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী। তবে গত দুই সরকারে ছিলেন না। সব শেষ যে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেই দায়িত্ব নিয়েই ফিরেছেন।
পুরনো দায়িত্বেই তারা: যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে বহু মেগা প্রকল্পের সমাপ্তি ও চলমান থাকার মধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে টানা চতুর্থ দফায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার দায়িত্ব পালনের সময়ে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলসহ যোগাযোগ খাতে বহু মেগাপ্রকল্প পেয়েছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার ‘রানিং মেট’ হিসাবে মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়াকে ‘সৌভাগ্য’ হিসাবে দেখছেন কাদের। তিনি বলেন, “আমি একটা বিষয়ে বিশ্বাস করি- তোমার সময়ের আগে নয়, তোমার ভাগ্যের চেয়ে বেশি নয়।”
তৃতীয়বারের মত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আসাদুজ্জামান খান কামালের ওপর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দশম সংসদের পর গঠিত সরকারে কামালকে প্রথমে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী করা হয়। এর দেড় বছর পর ২০১৫ সালে তাকে মন্ত্রিত্বে উন্নীত করেন প্রধানমন্ত্রী। গত সাড়ে আট বছরের কাজের ধারাবাহিকতায় ঢাকা-১২ আসনের এই সংসদ সদস্যের কাঁধেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই গাজীপুরে জনতার প্রতিরোধ আন্দোলনের সংগঠক আ ক ম মোজাম্মেল হককে তৃতীয়বারের মত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্বে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার পর মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্য হিসাবে ২০১৪ সালে প্রথমবার তাকে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালে সরকার গঠনের পরও তাকে একই দায়িত্ব রাখা হয়। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে মোজাম্মেল হকের।
প্রতিমন্ত্রী কারা কোথায়: গত সরকারের দায়িত্ব পালন করা প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে কেবল চারজন এবারও একই দপ্তর নিয়ে মন্ত্রিসভায় থাকছেন। ২০১৪ সাল থেকে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা নসরুল হামিদের ওপর আবারও আস্থা রেখেছেন শেখ হাসিনা। নসরুল হামিদ জানান, কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনে লক্ষ্য থাকবে এবার। তিনি বলেন, “কয়লার বড় প্রজেক্টগুলো ঢুকে গেছে। তেল থেকে আমরা বেরিয়ে আসছি। ১২ হাজার মেগাওয়াট সোলার প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি। এগুলোকে দ্রুত সিস্টেমে নিয়ে আসা বড় চ্যালেঞ্জ।”
একইভাবে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুককে আবারও রেখেছেন শেখ হাসিনা। পলকের কাঁধে তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে এবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগও যুক্ত হয়েছে। এবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে কোনো মন্ত্রী রাখা হয়নি। প্রতিমন্ত্রী হিসাবে যারা শপথ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে সাত জন একেবারেই নতুন মুখ।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের মেয়ে সিমিনি হোসেন রিমি পেয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও গাজীপুরের প্রয়াত নেতা রহমত আলীর মেয়ে বেগম রুমানা আলী টুসি প্রথমবার সংসদে এসে পেয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর পদ। পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হয়ে থাকছেন কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। গত সরকারে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা বীর বাহাদুর উশৈসিং ছিলেন পূর্ণ মন্ত্রী। শপথ নিয়ে কুজেন্দ্র লাল বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম বহু রকম ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের বসবাস। তাদের সকলে যেন ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ পায়, আমি আমার অবস্থান থেকে সেজন্য কাজ করার চেষ্টা করব।”
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া মোহাম্মদ আলী আরাফাত ২০২৩ সালের উপনির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার আগের বছরেই তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন। এবারের নির্বাচনে আবার মনোনয়ন পান। আরাফাত বলেন, “বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বের মাধ্যমে সেটা সম্ভব। উনাকে সমর্থন করে যাওয়া, উনার হাতকে শক্তিশালী করাই আমার রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য।” পটুয়াখালীর আওয়ামী লীগ নেতা মহিববুর রহমান মুহিব দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। কলাপাড়ার ধুলাসারের আলহাজ্ব জালাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মুহিব জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। দ্বিতীয়বারের মত তিনি পটুয়াখালী-৪ আসনে জিতেছেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়েছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতা শফিকুর রহমান চৌধুরীকে। নবম সংসদের এই সদস্য ১০ বছর পর আবার সংসদে ফিরেছেন। (প্রতিবেদনটি বিডিনিউজের সৌজন্যে)