ঢাকা ০৩:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গণ টিকা বরাদ্দের চেয়ে চাপ বেশি

  • আপডেট সময় : ০২:৩৯:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ অগাস্ট ২০২১
  • ৫০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে চলা গণ টিকাদান কর্মসূচিতে ‘ধারণার চেয়ে বেশি’ মানুষের চাপ সামলাতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
গতকাল সোমবার কর্মসূচির তৃতীয় দিনেও মানুষের চাপ বাড়ায় সবাইকে টিকা দেওয়া যায়নি। টিকাকেন্দ্রে আসা মানুষের তুলনায় বরাদ্দ পাওয়া টিকার পরিমাণ কম থাকায় আগ্রহী অনেককে ফিরিয়ে দিচ্ছেন তারা। ছয় দিনের এই কর্মসূচির প্রথম দুই দিনে ৩৫ লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, বরাদ্দ পাওয়া টিকা কমে আসায় কোনো কোনো এলাকায় দৈনিক ডোজের পরিমাণও কমিয়ে আনতে হচ্ছে। গত দুই দিনের মত সোমবারও ঢাকা মহানগরীর টিকাকেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড় ছিল। কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোর থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন আগ্রহীরা। তবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের টিকাকেন্দ্রগুলোতে দৈনিক ৩৫০ ডোজ টিকার বরাদ্দ থাকায় টিকা পাননি অনেকেই। এত মানুষ টিকা নিতে আসবেন, সেটি যে ধারণার বাইরে ছিল; তা জানালেন ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান। তিনি বলেন, “মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি। আমাদের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি মানুষের চাপ। সে তুলনায় টিকার সাপ্লাই দেওয়া যাচ্ছে না।”
সিটি করপোরেশনের বাইরে ঢাকা জেলার অন্য অংশগুলোতে গণটিকাদানের ‘লক্ষ্য অর্জন হয়ে’ যাওয়ায় এ কর্মসূচির আওতায় আর টিকা দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান তিনি। সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকাতেও কয়েকগুণ মানুষ কেন্দ্রে গেছেন টিকা নিতে। তবে পর্যাপ্ত টিকা না থাকায় ডোজের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হয়েছে।
সিলেটের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, “সিটি করপোরেশন এলাকায় অনেক বেশি মানুষ আসছে। কিন্তু আমাদের দৈনিক বরাদ্দ তো নির্ধারিত। আমাদের কাছে অফুরন্ত টিকা নেই যে আমরা যে আসছে তাকেই দিতে পারব।
“আমরা সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডের বুথে ৩০০ করে টিকা দিচ্ছি প্রতিদিন। গতকাল তাই দিয়েছি। কিন্তু আজ সেটা ২০০ তে নামিয়ে এনেছি। এর চেয়ে ৬ থেকে ৭ গুণ মানুষ বেশি আসছে।” অতিরিক্ত চাপ থাকায় ‘অগ্রাধিকারভিত্তিতে’ টিকা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “নারী-পুরুষ অনুপাতটা সমান রাখার চেষ্টা করছি।”
সিলেট বিভাগে এই কর্মসূচির আওতায় ১ লাখ ১১ হাজার পুরুষ ও ৯৮ হাজার নারীকে টিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তবে বরাদ্দ শেষ হয়ে যাওয়ায় রংপুর সিটি করপোরেশনে এই কর্মসূচি আর চলছে না বলে জানালেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোতাহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমাদের বিভাগে আজকে কোনো টিকাদান চলছে না। ৭ ও ৮ অগাস্ট চলেছে। প্রচুর মানুষ এসেছে টিকা দিতে।”
তৃতীয় দিন জেলা সদরে গণটিকাদান কর্মসূচি বন্ধ থাকলেও দুর্গম এলাকাগুলোতে টিকা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান জেলার সিভিল সার্জন ডা. অংসুইপ্রু মারমা। তিনি বলেন, “আমাদের দুর্গম এলাকায় রুমা এবং থানচি- যেখানে কাভারেজটা কম হয়েছে, সেখানে আমরা বলেছি আবহাওয়া ভাল থাকলে টিকাদান কর্মসূচি চালাতে। কারণ বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি এলাকার মানুষ বাইরে বের হতে পারে না। তারপরও আমাদের কাভারেজটা ভালো।”
এ কর্মসূচি জেলায় টিকা নিতে ‘ব্যাপক আগ্রহ’ তৈরি করেছে জানিয়ে অংসুইপ্রু মারমা বলেন, “এই ক্যাম্পেইনে বান্দরবান সদরে ও বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রচুর মানুষ লাইনে ভিড় করেছে টিকার জন্য। প্রচুর মানুষ। মানুষকে টিকা দিয়ে শেষ করতে পারছি না। এখনও অনেক চাহিদা।”
কোভিড মহামারীতে আক্রান্ত ও মৃত্যু ঠেকাতে ১৪ কোটি নাগরিককে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে টিকা পেয়েছেন পৌনে দুই কোটির বেশি মানুষ।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে গণ টিকাদান শুরু হলেও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা টিকা সময়মতো না পাওয়ায় তার গতি ব্যাহত হয়।
ভারত থেকে টিকা না আসায় চীন থেকে টিকা কিনছে সরকার। পাশাপাশি টিকা সরবরাহের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকেও টিকা আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে দেশে মডার্না ও সিনোফার্মের পাশাপাশি দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের কেনা, উপহার পাওয়া এবং কোভ্যাক্সের মাধ্যমে পাওয়া টিকা মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে এসেছে ২ কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯২০ ডোজ টিকা। নতুন করে টিকা আসতে থাকায় বড় পরিসরে ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন করে বিরাট জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতেই পরীক্ষামূলক ধাপ হিসেবে এবার ৬ দিনের এ টিকা কর্মসূচি চলছে। সরকারের টিকাদান টাস্কফোর্স বলছে, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ নাগরিককে টিকা দিতে ১৩ কোটি ১৮ লাখ ডোজ টিকা লাগবে। আর ৬০ শতাংশকে টিকা দিতে লাগবে প্রায় ২০ কোটি ডোজ টিকা। বাংলাদেশ এখন যে হারে টিকা দিচ্ছে, তাতে এ বছর ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে বলে টাস্কফোর্সের অনুমান।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

গণ টিকা বরাদ্দের চেয়ে চাপ বেশি

আপডেট সময় : ০২:৩৯:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ অগাস্ট ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে চলা গণ টিকাদান কর্মসূচিতে ‘ধারণার চেয়ে বেশি’ মানুষের চাপ সামলাতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
গতকাল সোমবার কর্মসূচির তৃতীয় দিনেও মানুষের চাপ বাড়ায় সবাইকে টিকা দেওয়া যায়নি। টিকাকেন্দ্রে আসা মানুষের তুলনায় বরাদ্দ পাওয়া টিকার পরিমাণ কম থাকায় আগ্রহী অনেককে ফিরিয়ে দিচ্ছেন তারা। ছয় দিনের এই কর্মসূচির প্রথম দুই দিনে ৩৫ লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, বরাদ্দ পাওয়া টিকা কমে আসায় কোনো কোনো এলাকায় দৈনিক ডোজের পরিমাণও কমিয়ে আনতে হচ্ছে। গত দুই দিনের মত সোমবারও ঢাকা মহানগরীর টিকাকেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড় ছিল। কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোর থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন আগ্রহীরা। তবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের টিকাকেন্দ্রগুলোতে দৈনিক ৩৫০ ডোজ টিকার বরাদ্দ থাকায় টিকা পাননি অনেকেই। এত মানুষ টিকা নিতে আসবেন, সেটি যে ধারণার বাইরে ছিল; তা জানালেন ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান। তিনি বলেন, “মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি। আমাদের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি মানুষের চাপ। সে তুলনায় টিকার সাপ্লাই দেওয়া যাচ্ছে না।”
সিটি করপোরেশনের বাইরে ঢাকা জেলার অন্য অংশগুলোতে গণটিকাদানের ‘লক্ষ্য অর্জন হয়ে’ যাওয়ায় এ কর্মসূচির আওতায় আর টিকা দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান তিনি। সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকাতেও কয়েকগুণ মানুষ কেন্দ্রে গেছেন টিকা নিতে। তবে পর্যাপ্ত টিকা না থাকায় ডোজের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হয়েছে।
সিলেটের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, “সিটি করপোরেশন এলাকায় অনেক বেশি মানুষ আসছে। কিন্তু আমাদের দৈনিক বরাদ্দ তো নির্ধারিত। আমাদের কাছে অফুরন্ত টিকা নেই যে আমরা যে আসছে তাকেই দিতে পারব।
“আমরা সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডের বুথে ৩০০ করে টিকা দিচ্ছি প্রতিদিন। গতকাল তাই দিয়েছি। কিন্তু আজ সেটা ২০০ তে নামিয়ে এনেছি। এর চেয়ে ৬ থেকে ৭ গুণ মানুষ বেশি আসছে।” অতিরিক্ত চাপ থাকায় ‘অগ্রাধিকারভিত্তিতে’ টিকা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “নারী-পুরুষ অনুপাতটা সমান রাখার চেষ্টা করছি।”
সিলেট বিভাগে এই কর্মসূচির আওতায় ১ লাখ ১১ হাজার পুরুষ ও ৯৮ হাজার নারীকে টিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তবে বরাদ্দ শেষ হয়ে যাওয়ায় রংপুর সিটি করপোরেশনে এই কর্মসূচি আর চলছে না বলে জানালেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোতাহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমাদের বিভাগে আজকে কোনো টিকাদান চলছে না। ৭ ও ৮ অগাস্ট চলেছে। প্রচুর মানুষ এসেছে টিকা দিতে।”
তৃতীয় দিন জেলা সদরে গণটিকাদান কর্মসূচি বন্ধ থাকলেও দুর্গম এলাকাগুলোতে টিকা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান জেলার সিভিল সার্জন ডা. অংসুইপ্রু মারমা। তিনি বলেন, “আমাদের দুর্গম এলাকায় রুমা এবং থানচি- যেখানে কাভারেজটা কম হয়েছে, সেখানে আমরা বলেছি আবহাওয়া ভাল থাকলে টিকাদান কর্মসূচি চালাতে। কারণ বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি এলাকার মানুষ বাইরে বের হতে পারে না। তারপরও আমাদের কাভারেজটা ভালো।”
এ কর্মসূচি জেলায় টিকা নিতে ‘ব্যাপক আগ্রহ’ তৈরি করেছে জানিয়ে অংসুইপ্রু মারমা বলেন, “এই ক্যাম্পেইনে বান্দরবান সদরে ও বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রচুর মানুষ লাইনে ভিড় করেছে টিকার জন্য। প্রচুর মানুষ। মানুষকে টিকা দিয়ে শেষ করতে পারছি না। এখনও অনেক চাহিদা।”
কোভিড মহামারীতে আক্রান্ত ও মৃত্যু ঠেকাতে ১৪ কোটি নাগরিককে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে টিকা পেয়েছেন পৌনে দুই কোটির বেশি মানুষ।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে গণ টিকাদান শুরু হলেও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা টিকা সময়মতো না পাওয়ায় তার গতি ব্যাহত হয়।
ভারত থেকে টিকা না আসায় চীন থেকে টিকা কিনছে সরকার। পাশাপাশি টিকা সরবরাহের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকেও টিকা আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে দেশে মডার্না ও সিনোফার্মের পাশাপাশি দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের কেনা, উপহার পাওয়া এবং কোভ্যাক্সের মাধ্যমে পাওয়া টিকা মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে এসেছে ২ কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯২০ ডোজ টিকা। নতুন করে টিকা আসতে থাকায় বড় পরিসরে ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন করে বিরাট জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতেই পরীক্ষামূলক ধাপ হিসেবে এবার ৬ দিনের এ টিকা কর্মসূচি চলছে। সরকারের টিকাদান টাস্কফোর্স বলছে, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ নাগরিককে টিকা দিতে ১৩ কোটি ১৮ লাখ ডোজ টিকা লাগবে। আর ৬০ শতাংশকে টিকা দিতে লাগবে প্রায় ২০ কোটি ডোজ টিকা। বাংলাদেশ এখন যে হারে টিকা দিচ্ছে, তাতে এ বছর ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে বলে টাস্কফোর্সের অনুমান।